শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪
Online Edition

চুয়াডাঙ্গার দর্শনা হল্ট রেলওয়ে স্টেশন নিরাপত্তাহীনতায় হ্রাস পাচ্ছে যাত্রী সংখ্যা

চুয়াডাঙ্গা সংবাদদাতাঃ চুয়াডাঙ্গার দর্শনা হল্ট রেলওয়ে স্টেশন নিরাপত্তাহীনতায় হ্রাস পাচ্ছে যাত্রী সংখ্যা। এখানে কর্মরত রেলওয়ে নিরাপত্তা বাহিনী (জিআরপি)র বিরুদ্ধে চোরাচালানে সহায়তা ও ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে টোল আদায়ের অভিযোগ রয়েছে। চুয়াডাঙ্গার দর্শনা হল্ট রেলওয়ে ষ্টেশনটি বর্তমানে নানা সমস্যায় জর্জরিত। প্রতিবছর রেল বিভাগ এ ষ্টেশনটি থেকে বিপুল পরিমান রাজস্ব আয় করলেও বাড়েনি যাত্রী সেবার মান। বর্তমানে ষ্টেশনটির নিরাপত্তা ব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে। চরম নিরাপত্তাহীনতার মধ্যে ট্রেনে উঠানামাসহ ষ্টেশনে অবস্থান করেন যাত্রীরা ফলে দিন দিন হ্রাস পাচ্ছে যাত্রীসংখ্যা।
জানা গেছে, চুয়াডাঙ্গা জেলার  দামুড়হুদা উপজেলার সীমান্তবর্তী শহর দর্শনা নানা দিক দিয়ে গুরুত্বপুর্ণ। এখানে রয়েছে দেশের সর্ববৃহৎ চিনিকল, ডিষ্টিলারী, রেল বন্দর, কাষ্টমস্ চেকপোষ্ট, পাইকারি কাঁচা বাজার, সরকারী অর্নাস কলেজসহ ডজন খানেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসহ প্রায় অর্ধশতাধিক সরকারি-বেসরকারি অফিস ও প্রতিষ্ঠান। প্রতিবছর সরকার এই দর্শনা থেকে কোটি কোটি টাকার রাজস্ব আয় করে থাকে। অথচ দর্শনার গুরুত্বপূর্ণ এই দর্শনা হল্ট ষ্টেশনটি আজও অবহেলিত। নানা সমস্যার মধ্যেও প্রতিদিন এ ষ্টেশন থেকে কয়েক হাজার যাত্রী রেলযোগে দেশের বিভিন্ন স্থানে যাতায়াত করে থাকে। ইংরেজি ১৯৫১ সালের ২১ এপ্রিলে দর্শনা-খুলনা রেলরুটের দর্শনা-যশোর লিংক লাইনটি চালু হওয়ার পর থেকে এ রুটে নিয়মিত রেল চলাচল শুরু হয়। বর্তমানে এ রেলরুটের দর্শনা হল্ট ষ্টেশনের উপর দিয়ে প্রতিদিন নকশিকাঁথা এক্সপ্রেস, কপোতাক্ষ এক্সপ্রেস, রূপসা এক্সপ্রেস, চিত্রা এক্সপ্রেস, রকেট মেইল, মহানন্দা এক্সপ্রেস, সাগরদাঁড়ি এক্সপ্রেস, সুন্দরবন এক্সপ্রেস ও সীমান্ত এক্সপ্রেসসহ ৬টি রুটে মোট ৯ জোড়া ট্রেন চলাচল করে।
এছাড়াও এ ষ্টেশনটির উপর দিয়ে দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে যশোর, বেনাপোল ও খুলনাগামী বিভিন্ন মালবাহী ট্রেন চলাচল করে। তাই এ ষ্টেশনটি খুবই ব্যস্ত ও গুরুত্বপূর্ণ। এত গুরুত্বপুর্ণ হওয়া সত্বেও দীর্ঘদিনে ষ্টেশনটির কপালে জোটেনি তেমন কোন উন্নয়ন। বর্তমানে নানা সমস্যার সাথে ষ্টেশনের নিরাপত্তা ব্যবস্থা খুবই নাজুক। ষ্টেশনের একপাশে প্লাটফর্ম রয়েছে এবং অপর পাশ রয়েছে স¤পুর্ণ খোলা। একপাশে প্লাটফর্ম থাকলেও কোন নিরাপত্তা প্রাচীর না থাকায় যাত্রীদের কোন নিরাপত্তা নেই।
উল্লেখ্য, এ স্টেশনে যাত্রীদের জন্য স্বল্প পরিসরে একটি বিশ্রামাগার থাকলেও সেটি বর্তমানে জিআরপি পুলিশের দখলে। সম্প্রতি স্টেশনের উপর যাত্রীদের জন্য নতুন করে আরেকটি বিশ্রামাগার নির্মিত হলেও অজ্ঞাত কারনে সেটিও থাকে তালাবদ্ধ। ফলে ট্রেনের অপেক্ষায় যাত্রীদের স্টেশনে অবস্থানের জন্য নিরাপদ কোন ব্যবস্থা নেই। ষ্টেশনে রেলের যাত্রীসাধারনের নিরাপত্তার জন্য জিআরপি পুলিশ ফাাঁড়ি থাকলেও যাত্রীসাধারনের নিরাপত্তাদানের ক্ষেত্রে এ ক্যা¤েপর সদস্যদের তেমন কোন ভুমিকা চোখে পড়ে না। প্রায়ই ষ্টেশনের প্লাটফর্মে অবস্থানরত যাত্রীদের ব্যাগ, টাকা-পয়সা ও গহনাসহ বিভিন্ন ব্যবসায়িক মালামাল ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটে।
এছাড়া সন্ধ্যার পর ষ্টেশন ও তৎসংলগ্ন এলাকাটি পরিনত হয় অসামাজিক কার্যকলাপ ও মাদকসেবীদের অভয়ারণ্যে। প্রকাশ্যেই চলে নানারকম মাদকের অবাধ বেচাকেনা। ফলে দিনরাত ষ্টেশন এলাকায় চলে চোরাচালানী ও বখাটেদের দৌরাত্ম্য।
অভিযোগ আছে, মোটা অংকের অর্থের বিনিময়ে ষ্টেশনে অবস্থানরত জিআরপি পুলিশের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ সহযোগিতায় এ ষ্টেশন থেকে চোরাকারবারীরা ভারত হতে সীমান্তপথে অবৈধভাবে পাচার করে আনা মাদকদ্রব্যসহ নানাপ্রকার চোরাই পণ্য রেলযোগে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে পাচার করে থাকে। ফলে ফাঁড়ির পুলিশ সদস্যরা যাত্রীদের পরিবর্তে চোরাকারবারী ও তাদের মালামালের নিরাপত্তা দিতেই বেশি ব্যস্ত থাকে।
ষ্টেশনে ডিউটির সময় পুলিশ সদস্যদের ইউনিফর্ম পরার নিয়ম থাকলেও ডিউটির নামে অধিকাংশ সময় সাদা পোশাকেই প্লাটফর্মে ঘোরাঘুরি করতে দেখা যায়। উল্লেখ্য, নিরাপত্তাজনিত কারণে ঢাকাগামী ৭২৫ আপ সুন্দরবন ও খুলনাগামী ৭৬৪ ডাউন চিত্রা ট্রেন দুইটি রাতে চলাচল করায় এখানে ষ্টপেজ দেয়া হয়না বলে অভিযোগ রয়েছে।
এ ব্যাপারে জানতে দর্শনা হল্ট স্টেশনের জিআরপি ইনচার্জ তবিবুর রহমানের সাথে ১জুন বিকেলে তার ০১৭২৬-২৩৮৯২৪ নং মোবাইল ফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলে তিনি ফোন রিসিভ না করায় তার বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।
সড়কপথের চেয়ে রেলপথে ভ্রমন ও মালামাল পরিবহন নিরাপদ হলেও ষ্টেশনের নিরাপত্তার অভাবে এ ষ্টেশনে যাত্রীসংখ্যা দিনদিন হ্রাস পাচ্ছে বলে জানিয়েছেন অনেকে। তারা আরও জানান, এ অবস্থা চলতে থাকলে এক সময় এ এলাকার মানুষ রেলপথে যাতায়াত করা থেকে মুখ ফিরিয়ে নেবে।

অনলাইন আপডেট

আর্কাইভ