ন্যায়বিচারের স্বার্থে সব মামলায় পুনঃবিচার হতে হবে -ব্যারিস্টার রাজ্জাক
0 সালাহ উদ্দিনের ২ আইনজীবীকে শোকজ 0 গোলাম আযমের মামলা ২ দিনের জন্য মুলতবি
শহীদুল ইসলাম : বিচারপতি এটিএম ফজলে কবিরের নেতৃত্বে পুনর্গঠিত আন্তজাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ গতকাল সোমবার পূর্ব নির্ধারিত কোনো মামলার বিচারিক কাজ হয়নি। তবে ট্রাইব্যুনাল কয়েকটি আদেশ দিয়েছেন। অধ্যাপক গোলাম আযমের মামলা এবং সালাহ উদ্দিন কাদের চৌধুরীর মামলা আগামীকাল বুধবার পর্যন্ত মুলতবি করেছেন ট্রাইব্যুনাল-১। একই সাথে সালাহ উদ্দিন কাদের চৌধুরীর দুই আইনজীবী এডভোকেট আহসানুল হক হেনা এবং ব্যারিস্টার ফখরুল ইসলাম ট্রাইব্যুনালে উপস্থিত না হওয়ায় তাদেরকে শোকজ করা হয়েছে। মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর সাথে তার আইনজীবীদের সাক্ষাৎ করার আবেদন খারিজ করে দেয়া হয়েছে। ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক বলেছেন, সব মামলাই রিট্রায়াল হতে হবে। এর বিকল্প আমরা কিছু দেখছি না যাতে ন্যায়বিচার নিশ্চিন্ত হবে।
দ্বিতীয় দফায় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ পুনর্গঠিত হওয়ার পর গতকালই প্রথম এজলাসে বসেন নব নিযুক্ত চেয়ারম্যান বিচারপতি এটিএম ফজলে কবির, বিচারপতি জাহাঙ্গীর হোসেন ও বিচারপতি আনোয়ারুল হক গতকাল সোমবার বেলা পৌনে ১১টায় এজলাসে বসেন। চিফ প্রসিকিউটর গোলাম আরিফ টিপু এবং প্রধান ডিফেন্স কৌঁসুলি ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক নয়া চেয়ারম্যানকে অভিনন্দন জানান। এর জবাবে সবাইকে ধন্যবাদ জানান বিচারপতি ফজলে কবির। তিনি সংক্ষিপ্ত বক্তব্যে বিচারপতি নিজামুল হকের স্কাইপি কথোপকথন ও ই-মেইলে তথ্য আদান-প্রদান এবং তা গণমাধ্যমে প্রকাশের পর ট্রাইব্যুনাল-১-এর চেয়ারম্যানের পদত্যাগের প্রসঙ্গ উল্লেখ করে বলেন, এর মাধ্যমে বিচার প্রক্রিয়ায় বিলম্ব ও সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে। পুরো বিষয়টিরই একটি সুষ্ঠু তদন্ত হওয়া প্রয়োজন বলে উল্লেখ করেন বিচারপতি ফজলে কবির। তিনি বিচার প্রক্রিয়া দ্রুততর করা এবং তার স্বচ্ছতা তথা ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার জন্য উভয় পক্ষের আইনজীবী এবং সাংবাদিকসহ সকলের সহযোগিতা কামনা করেন।
গোলাম আযমের মামলা : দিনের প্রথম এজেন্ডা ছিল অধ্যাপক গোলাম আযামের মামলা। তাকে ট্রাইব্যুনালে অবশ্য হাজির করা হয়নি। অধ্যাপক গোলাম আযমের আইনজীবী এডভোকেট মিজানুল ইসলাম তার ব্যক্তিগত অসুবিধা উদ্ভূত পরিস্থিতির কারণে এই মামলার বিচার কার্য এক সপ্তআহ মুলতবি করার আবেদন জানান। দিনের কর্মসূচিতে প্রসিকিউশন আর্গুমেন্ট লেখা থাকার বিষয়টিও আলোচনায় আনে। মিজানুল ইসলাম বলেন, এক নম্বর ডিফেন্স সাক্ষীর জবানবন্দি চলছিল। এ অবস্থায় আর্গুমেন্ট হয় না। ট্রাইব্যুনাল আদেশে বলেছিলেন, দরখাস্ত নিয়ে আসলে বিবেচনা করা হবে। এ সময় ট্রাইব্যুাল আদেশসমূহের ফাইল পর্যবেক্ষণ করেন।
প্রসিকিউটর জিয়াদ আল মালুম বলেন, সাক্ষী হাজর করে দরখাস্ত করার কথা। ঐ দরখাস্তে যদি তারা কোর্টকে সন্তুষ্ট করতে পারেন তাদের অনুপস্থিতির বিষয়ে তাহলেই কেবল ট্রাইব্যুনাল ডিফেন্স সাক্ষী নেয়ার বিষয় পুনঃবিবেচনা করবেন। তিনি বলেন, তারা এই বিচার প্রক্রিয়ায় শুরু থেকেই বিলম্ব ও বাধাগ্রস্ত করার নানা ষড়যন্ত্র করে আসছে। সর্বশেষ ঘটনাসমূহ তারই অংশ। স্কাইপির সাথে এখন যোগ হয়েছে পুনঃবিচারের দাবি। এটা হলো বিচার বানচালেরই দাবি।
এডভোকেট মিজানুল ইসলাম বলেন, অবরোধ এবং হরতালের সময় পরিস্থিতি কি ছিল তা পত্রপত্রিকায় এবং ইলেকট্রনিক মিডিয়ায় খবর এসেছে। অন্যের সমস্যা না থাকলেও আমার ব্যক্তিগত অসুবিধা আছে। এটা সহজেই বলা যায়। আমি সেটাই বলেছি। হরতাল বা রাজনৈতিক কর্মসূচির বিষয়টি দরখাস্তের মধ্যে আনি নাই। এটা বিচার বাধাগ্রস্ত করা বা বন্ধ করার কোনো বিষয় নেই। ন্যায়বিচারের স্বার্থেই এক সপ্তাহ মুলতবি প্রয়োজন। এর মধ্যে আমরা পুনঃবিচারে আবেদন জানাবো। আর পুনঃবিচার কেন প্রয়োজন সেটা এখন বলতে চাই না। দরখাস্তেই উল্লেখ থাকবে।
ট্রাইব্যুনাল উভয় পক্ষের বক্তব্য শোনার পর আগামী ১৯ ডিসেম্বর পর্যন্ত অধ্যাপক গোলাম আযমের মামলার কার্যক্রম মুলতবি করে আদেশ দেন।
মাওলানা সাঈদীর মামলা : মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর পক্ষে এডভোকেট মিজানুল ইসলাম বর্তমান উদ্ভূত পরিস্থিতিতে আসামীর সাথে কারাগার দুইজন আইনজীবীর সাক্ষাতের আবেদন জানান। আবেদনে বলা হয়, মামলার সাক্ষ্যগ্রহণ ও আর্গুমেন্ট শেষ হয়েছে। কিন্তু ইতোমধ্যে ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান পদত্যাগ করেছেন। নতুন চেয়ারম্যান এসেছেন। এ অবস্থায় মামলার কি হবে তা নিয়ে আসামীর সাথে আইনজীবী পরামর্শ করার প্রয়োজন রয়েছে। এই আবেদনের বিরোধিতা করেন প্রসিকিউটর সৈয়দ হায়দার আলী। তিনি বলেন, এই মামলার সমস্ত কার্যক্রমই শেষ হয়ে গেছে। এখন শুধু রায়ের জন্য অপেক্ষা। এ পর্যায়ে প্রিজিলোজ কমিউনিকেশনের কোনো বিধান নেই। ট্রাইব্যুনাল উভয় পক্ষের বক্তব্য শোনার পর আবেদনটি খারিজ কর দেন।
সালাহ উদ্দিনের মামলা : দিনের দ্বিতীয় এজেন্ডা ছিল গতকাল বিএনপির নেতা সালাহ উদ্দিন কাদের চৌধুরীর মামলা। একজন মহিলা সাক্ষীর ক্যামেরা ট্রায়ালের দিন ধার্য ছিল। প্রসিকিউশন সাক্ষী হাজির করেন। এ সময় সবাই বেরিয়ে যান। তবে আসামী সালাহ উদ্দিন কাদের চৌধুরীকেও নিচতলায় হাজতখানা থেকে ওপরে এজলাস কক্ষে ওঠানো হয়নি। তার আইনজীবীরাও কেউ উপস্থিত হননি। এমতাবস্থায় ট্রাইব্যুনাল সালাহ উদ্দিনের আইনজীবী এডভোকেট আহসানুল হক হেনা ও ব্যারিস্টার ফখরুল ইসলাম কেন তাদের মক্কেলের পক্ষে আদালতে উপস্থিত থাকলেন না তার কারণ দর্শাতে বলেছেন। প্রায় আধা ঘণ্টা পরে এজলাস কক্ষ থেকে বেরিয়ে প্রসিকিউটর জিয়াদ আল মালুম বলেন, আমরা সাক্ষী এনেছিলাম। কিন্তু সাক্ষী হয়নি, ট্রাইব্যুনাল আসামী পক্ষের দুই আইনজীবীকে শোকজ করেছেন।
সালাহ উদ্দিন কাদের চৌধুরীর আইনজীবী ব্যারিস্টার ফখরুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, ক্যামেরা ট্রায়ালে সাক্ষ্য গ্রহণের সময় আসামীকেও উপস্থিত করা যাবে না- এমনটি কোনো আইনে নেই, প্রাকটিসেও নেই। সালাহ উদ্দিনকে হাজতখানা থেকে এজলাসে না নেয়ায় আমরা ট্রাইব্যুনালে প্রবেশ করি নাই।
ব্যারিস্টার রাজ্জাকের প্রেস ব্রিফিং : প্রধান ডিফেন্স কৌঁসুলি ব্যারিস্টা আব্দুর রাজ্জাক পরে সাংবাদিকদের ব্রিফিংকালে বলেন, ট্রাইব্যুনাল চেয়ারম্যানের ১৭ ঘণ্টার স্কাইপি সংলাপ এবং ২৩০টি ই-মেইল আদান-প্রদানের কিছু অংশ গণমাধ্যমে প্রকাশের মাধ্যমে যা বেরিয়ে এসেছে তার প্রেক্ষিতে পুনঃবিচার ছাড়া আমরা বিকল্প কিছু দেখছি না। ন্যায় বিচারনিশ্চিত করতে চাইলে অবশ্যই প্রতিটি মামলার পুনঃবিচার প্রয়োজন। বিচারপতি নিজামুল হক যা করেছেন তা বিচারকসুলভ আচরণ নয়। আমরা প্রত্যেকটি মামলার রিট্রায়ালের আবেদন জানাবো। মাওলানা সাঈদীর সাথে আইনজীবীর দেখা করার আবেদন খারিজ করে দেয়ার আদেশটি সঠিক হয়নি বলেও মন্তব্য করেন ব্যারিস্টার রাজ্জাক।
গতকাল বেলা পৌনে ১১টা থেকে পৌনে ১২টা পর্যন্ত চলে ট্রাইব্যুনাল-১।