শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪
Online Edition

যুদ্ধাপরাধের বিচার নিয়ে রাজনৈতিক গৃহবিবাদে উত্তপ্ত বাংলাদেশ

নাজমুল আহসান রাজু : আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের বিচার এবং এর চেয়ারম্যান বিচারপতি নিজামুল হকের পদত্যাগের ঘটনায় বিশ্বের গণমাধ্যমে চলছে তোলপাড়। বিশ্ব গণমাধ্যমে প্রতিদিনই বাংলাদেশের আলোচিত যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনাল নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশিত হচ্ছে। মধ্যপ্রাচ্যের জনপ্রিয় সংবাদপত্র ‘আরব নিউজ' গত ১৪ ডিসেম্বর এ বিষয়ে ‘মকারি অব জাস্টিস ইন বাংলাদেশ'-বাংলাদেশের প্রহসনের বিচার শিরোনামে একটি নিবন্ধ প্রকাশ করেছে। নিবন্ধটির লেখক আইজাজ জাকা সাঈদ। তিনি মধ্যপ্রাচ্য বিষয়ক লেখক হিসেবে পরিচিত। প্রকাশিত নিবন্ধের নির্বাচিত অংশ এখানে দৈনিক সংগ্রামে প্রকাশিত হলো-

প্রতিবেদনে বলা হয় ১৯৭১ সালের ঘটনায় যুদ্ধাপরাধের অভিযোগ তোলায় বাংলাদেশ রাজনৈতিক গৃহবিবাদ এবং পাল্টা অভিযোগে দ্রুত উত্তপ্ত হয়ে ওঠেছে। প্রকৃতপক্ষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ যখন ক্ষমতায় আসে প্রতিবারই বিরোধীদলের সঙ্গে এ ধরনের খেলা বার বার হয়, এটা শাসকদলের চালমাত্র। তারা বিরোধীদলের সঙ্গে অভিনয় করে যাচ্ছে আবার ডাইনী খোঁজা শুরু করেছে যা বিষয়টিকে সম্পূর্ণ নতুনমাত্রায় নিয়ে গেছে। এমনভাবে করা হচ্ছে যে জামায়াতে ইসলামীর সম্পূর্ণ ঊর্ধ্বতন নেতৃত্বকে যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে আটক করা হয়েছে ১৯৭১ সালের স্বাধীনতায় বিরোধীর ভূমিকার কারণে।

এ কারণে নববই বছর বয়স্ক জামায়াতে ইসলামীর সাবেক আমীর (প্রধান) অধ্যাপক গোলাম আযম এবং বর্তমান আমীর মতিউর রহমান নিজামী এবং দলটির বেশিরভাগ ঊধ্বর্তন নেতাকে যুদ্ধাপরাধের অযৌক্তিক অভিযোগে অবরুদ্ধ করে রেখেছে। তাদের বিরুদ্ধে ১৯৭১ সালে যুদ্ধাপরাধ, ধর্ষণ, নৃশংসতাসহ গুরুতর অপরাধের অভিযোগ এনেছে সরকার।

দলটি (জামায়াতে ইসলামী) এখন প্রকাশ্যে নিড়ীড়নের শিকার, যারা সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার নেতৃত্বাধীন ১৮ দলীয় জোটের শরিক। এর বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার গ্রুপ, আইন বিশেষজ্ঞ এবং আইনপ্রণেতারা তীব্র নিন্দা জানিয়েছে।

দলটির নেতা-কর্মীরা মনে করে যুদ্ধাপরাধের অভিযোগ সন্দেহাতীতভাবে একটি নোংরা প্রচারণার অংশ। এ কারণে তারা গত সপ্তাহে দেশব্যাপী হরতাল এবং বিক্ষোভ পালন করেছে। ১৮ দলীয় জোটের অন্যান্য শরীক দল অধ্যাপক গোলাম আযম ও মতিউর রহমান নিজামীসহ আটক নেতাদের মুক্তির পক্ষে সমর্থন দিয়ে যাচ্ছে।

বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের পর শেখ মুজিবুর রহমান নতুন করে শুরু করার আহবান জানিয়ে বলেছিলেন, আমরা ক্ষমাশীল জাতি, শান্তি এবং সমৃদ্ধির স্বার্থে বাংলাদেশের উচিত ভবিষ্যতের দিকে তাকানো। এ কারণে ১৯৭৩ সালে বাংলাদেশ, ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে ত্রিপক্ষীয় চুক্তির মাধ্যমে একই ধরনের বিচারের উদ্যোগ বাতিল করে দেয়া হয়েছিল।

তার পিতার এই প্রাজ্ঞ সিদ্ধান্তের প্রতি অবজ্ঞা করা শেখ হাসিনার জন্য সঠিক হবে না। মহান ত্যাগের পর বিচারের এই হেঁয়ালি সিদ্ধান্ত শুধুমাত্র পুরনো ক্ষতকে নতুনভাবে জীবিত করবে এবং জাতি দ্বিধাবিভক্ত হয়ে পড়বে। বাংলাদেশ এর পরিশ্রমী জনগণের কারণে বিশ্বের কাছ থেকে সম্মান এবং ধন্যবাদ অর্জন করেছে এবং উন্নতির দিকে যাচ্ছে। অতীত তুলে এবং ১৯৭১ সালের ত্যাগকে জাগ্রত করে কাউকে সাহায্য করবে না। তাই সময় এখন এগিয়ে যাওয়ার।

অনলাইন আপডেট

আর্কাইভ