শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪
Online Edition

দীর্ঘ টানাপোড়েনের পর মামলা করেছে দুদক \ হাসান-হোসেন বাদ

স্টাফ রিপোর্টার : পনের মাসের অনুসন্ধান শেষে দীর্ঘ টানাপোড়েনের পর পদ্মা সেতু প্রকল্পে পরামর্শকের কাজ পাইয়ে দিতে ঘুষ লেনদেনের ষড়যন্ত্রের অভিযোগে সাত জনের বিরুদ্ধে মামলা করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক), যাতে সাবেক যোগাযোগমন্ত্রী আবুল হোসেন বা সাবেক পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আবুল হাসান চৌধুরীকে আসামী করা হয়নি। গতকাল সোমবার দুপুরে দুদকের উপ-পরিচালক আব্দুল্লাহ আল জাহিদ রাজধানীর বনানী থানায় যে মামলা দায়ের করেছেন, তাতে প্রধান আসামী করা হয়েছে সেতু বিভাগের সাবেক সচিব মোঃ মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়াকে, বিশ্ব ব্যাংকের শর্ত অনুসারে যাকে আগেই ছুটিতে পাঠানো হয়েছে। বাকি ছয় আসামী হলেন- সেতু কর্তৃপক্ষের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী (নদী শাসন) কাজী মোঃ ফেরদৌস, সড়ক ও জনপথ বিভাগের (সওজ) নির্বাহী প্রকৌশলী রিয়াজ আহমেদ জাবের, ইঞ্জিনিয়ারিং এন্ড প্লানিং কনসালটেন্ট লিমিটেডের উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও বাংলাদেশে কানাডীয় পরামর্শক প্রতিষ্ঠান এসএনসি লাভালিনের স্থানীয় প্রতিনিধি মোহাম্মদ মোস্তফা, এসএনসি-লাভালিনের সাবেক পরিচালক মোহাম্মদ ইসমাইল, এই সংস্থার আন্তর্জাতিক প্রকল্প বিভাগের সাবেক ভাইস প্রেসিডেন্ট রমেশ শাহ ও সাবেক ভাইস প্রেসিডেন্ট কেভিন ওয়ালেস।

বনানী থানার ওসি ভূঁইয়া মাহবুব হাসান গতকাল বিকেলে বলেন, এজাহারে বলা হয়, এই আসামীরা আর্থিকভাবে লাভবান হওয়ার জন্য পারস্পরিক যোগসাজশে বিধি ভেঙে ঘুষ লেনদেনের ষড়যন্ত্র করার মাধ্যমে পদ্মা সেতু প্রকল্পের তদারকি পরামর্শকের কাজ অন্যতম দরদাতা এসএনসি লাভালিন ইন্টারন্যাশনালকে পাইয়ে দেয়ার ব্যবস্থা করে। এর মধ্যদিয়ে তারা দন্ডবিধির ১৬১ এবং ১৯৪৭ সালের দুর্নীতি প্রতিরোধ আইনে অপরাধ করেছেন, যা দন্ডবিধির ১২০ (বি) ধারা অনুযায়ী শাস্তিযোগ্য অপরাধ। এসএনসি লাভালিন ওই কার্যাদেশ পেলে ঘুষ লেনদেন সম্পন্ন হতো বলেও এজাহারে উল্লেখ করা হয়েছে।

সাবেক যোগাযোগমন্ত্রী আবুল হোসেন ও সাবেক পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আবুল হাসান চৌধুরী প্রসঙ্গে এজাহারে বলা হয়েছে, ঘুষ লেনদেনের ষড়যন্ত্রে তাদের ভূমিকার বিষয়ে অনুসন্ধানে যথেষ্ট সাক্ষ্য প্রমাণ সংগ্রহ করতে পারেনি দুদক। মামলার তদন্তের সময় তাদের বিষয়ে অভিযোগ খতিয়ে দেখা হবে। মামলা নং-১৯। পদ্মাসেতু প্রকল্পে দুর্নীতির অভিযোগ উঠলে ২০১১ সালের ১৮ সেপ্টেম্বর দুদকের উপ-পরিচালক মির্জা জাহিদুল আলমকে এ বিষয়ে তদন্তের জন্য নিয়োগ দেয়া হয়। ১৮ অক্টোবর নিয়োগ করা হয় মীর জয়নুল আবেদিন শিবলীকে। তিনি তদন্ত শেষে চলতি বছরের ২ ফেব্রুয়ারি আবুল হোসেনকে নির্দোষ উল্লেখ করে প্রতিবেদন দাখিল করেন। এতে বিশ্বব্যাংক অসন্তোষ প্রকাশ করলে দুদকের ৪ জন উপ-পরিচালককে তদন্ত দলে অন্তর্ভুক্ত করে একটি শক্তিশালী দল গঠন করা হয়। এ পর্যায়ে ১৪ অক্টোবর ও ১ ডিসেম্বর দু'দফায় বিশ্বব্যাংকের বিশেষজ্ঞ প্যানেল ঢাকা সফরে এসে কিছু গাইডলাইন দিয়ে যায়। গত ৮ ডিসেম্বর বিশ্বব্যাংকের পক্ষ থেকে সাফ জানিয়ে দেয়া হয়, দুদক নিরপেক্ষ তদন্ত না করলে পদ্মা সেতু প্রকল্পে অর্থায়ন করবে না দাতা সংস্থাটি। পদ্মা সেতু প্রকল্পে দুর্নীতির অভিযোগে বিশ্বব্যাংক কর্তৃপক্ষ ১শ' ২০ কোটি মার্কিন ডলারের ঋণচুক্তি বাতিল করে গত ২৯ জুন। পরে সরকার অভিযোগ অনুসন্ধানে বিশ্বব্যাংক কর্তৃপক্ষের সঙ্গে সমঝোতা চুক্তি সই করার পর ‘শর্তসাপেক্ষে' বিশ্বব্যাংক আবার অর্থায়নে ফিরে আসার ঘোষণা দেয় গত ২০ সেপ্টেম্বর।

অনলাইন আপডেট

আর্কাইভ