শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪
Online Edition

আলীকদম মৈত্রী জুনিয়র হাইস্কুল চলছে কমিটিবিহীন

মমতাজ উদ্দিন আহমদ, আলীকদম (বান্দরবান) : পাহাড়ি জেলা বান্দরবানের আলীকদম উপজেলায় ২০০৮ সালে ‘আলীকদম মৈত্রী জুনিয়র হাইস্কুল’ প্রতিষ্ঠার ফলে শিক্ষাক্ষেত্রে নবদিগন্তের সূচনা হলেও তা ব্যর্থ হতে চলেছে। প্রতিষ্ঠার পর থেকে প্রতিবছর তিন শতাধিক শিক্ষার্থী পেয়ে আসছে আলোর ঠিকানা। প্রতিষ্ঠার ৭ বছর পার হতে চললেও এখনো শিক্ষা বোর্ড থেকে বিদ্যালয়টি পাঠদান অনুমতি পায়নি। অপরদিকে, প্রতিষ্ঠানকালীন ত্যাগী সদস্যদের মতামতকে উপেক্ষা করে প্রধান শিক্ষকের স্বেচ্ছাচারী ভূমিকায় দূরে সরে রয়েছেন কমিটির সদস্যরা। অপাংতেয় হয়ে পড়েছেন বিদ্যালয় বাস্তবায়ন কমিটির ত্যাগী সদস্যরা।
জানা গেছে, স্কুলটি প্রতিষ্ঠার সময় জাতি, ধর্ম-বর্ণ, রাজনৈতিক ভেদজ্ঞান ও মতাদর্শ ভুলে গিয়ে এলাকার গুটিকয়েক অপাংক্তেয় ব্যক্তি ছাড়া সেদিন একই কাতারে মিলিত হয়েছিল এলাকাবাসী। অফুরন্ত প্রাণের উচ্ছ্বাসে সাড়া দিয়েছিল যুবসমাজ। স্কুল প্রতিষ্ঠায় সে সময়কার সম্মিলিত প্রচেষ্টা শিক্ষাক্ষেত্রে পশ্চাৎপদ আলীকদমে এক বিরল দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছিল। স্থানীয় প্রেস ক্লাবকে ঘিরে বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠাকালীন কার্যক্রম চালানো হয়।
 প্রতিষ্ঠার প্রেক্ষাপট : গত ২০০৭  সালে আলীকদম উপজেলায় প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষায় ১৮০ জন শিক্ষার্থী পাস করে। এ বিপুল সংখ্যক শিক্ষার্থীর ভর্তির জন্য উপজেলায় মাধ্যমিক শিক্ষাক্ষেত্রে ৩টি মাত্র বিদ্যালয় রয়েছে। ওই সময় সব ক’টি বিদ্যালয় ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থীর আসন সংখ্যা ছিল ৫০টি। এ অল্প সংখ্যক আসনে ভর্তি হতে আসলে শিক্ষার্থীদের মাঝে চরম অনিশ্চয়তা দেখা দেয়। আসন সংখ্যা সীমিত হওয়ায় ভর্তি পরীক্ষায়  উচ্চ নম্বর পেয়েও বহু শিক্ষার্থী শিক্ষার সুযোগ থেকে বঞ্চিত হওয়ার উপক্রম হয়ে পড়ে। অভিভাবক মহলে দেখা দেয় চরম হতাশা। এমনি প্রেক্ষাপটে স্থানীয় সাংবাদিকরা গুরুত্বসহকারে এ বিষয়ে বিভিন্ন পত্রিকায় সংবাদ পরিবেশন করে। পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশিত হওয়ার পর পাশাপাশি স্থানীয় সরকারি প্রশাসনের কর্মকর্তাদেরও ভাবিয়ে তোলে। তারাও এগিয়ে আসে এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় সহায়তার জন্য।
এদিকে, আলীকদম জোনের তৎকালীন জোন কমান্ডার লে. কর্নেল আবুল কালাম আজাদ পিএসসি, এলএসসি ২০০৮ সালের ১৭ জানুয়ারি রাতে জোন সদরের অফিসার্স মেসের এক মতবিনিময় সভায় ঝরেপড়া শিক্ষার্থীদের শিক্ষার সুযোগ নিশ্চিত করার লক্ষ্যে স্কুল প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নেন। এক সপ্তাহের মধ্যে স্কুল প্রতিষ্ঠার প্রাতিষ্ঠানিক কার্যক্রম হাতে নেয়ার দায়িত্ব দেয়া হয় আলীকদম প্রেস ক্লাবের সাংবাদিকদের ওপর। ফলশ্রুতিতে ওই বছরের ২৪ জানুয়ারির মধ্যে উপজেলা সদরে মৈত্রী জুনিয়র স্কুলটি চালু করার যুগান্তকারী পদক্ষেপ নেয়া হয়। স্কুল প্রতিষ্ঠায় সেনা সহায়তার অবদানস্বরূপ স্কুলটির নামকরণ করা হয় ‘আলীকদম মৈত্রী জুনিয়র হাইস্কুল (প্রস্তাবিত-স্কুল এন্ড কলেজ)’। স্কুলটি প্রাথমিকভাবে শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনার সিদ্ধান্ত নেয়া হয় উপজেলা সদরের পরিত্যক্ত জীপ কাউন্টারে।
এলাকার বেশ কিছু শিক্ষানুরাগী যুবসমাজ মিলে আলীকদম প্রেস ক্লাবের সভাকক্ষে ২০০৮ সালের ১৮ জানুয়ারি সন্ধ্যায় এ স্কুল বাস্তবায়নের জন্য এক মতবিনিময় সভায় ২৬ সদস্যের উপদেষ্টা কমিটি ও ৩১ সদস্যের একটি স্কুল বাস্তবায়ন কমিটি গঠন করা হয়।
সভার সম্মিলিত সিদ্ধান্তে আলীকদম সেনা জোনের অধিনায়ক লে. কর্নেল আবুল কালাম আজাদ, পিএসসি, এলএসসি প্রধান অতিথি হিসেবে ২০০৮ সালের ২৪ জানুয়ারি ‘আলীকদম মৈত্রী জুনিয়র হাই স্কুল (প্রস্তাবিত- স্কুল এন্ড কলেজ)-এর শুভ উদ্বোধন করেন। ওইদিন সেনা বাহিনীর অর্থায়নে শিক্ষার্থীদের মাঝে বিনামূল্যে পাঠ্যবই বিতরণ করা হয়।  উদ্বোধনী দিনে এলাকার শিক্ষানুরাগী ও দানশীল ব্যক্তিরা শিক্ষা  উপকরণ, আসবাবপত্র ও নগদ অর্থ অনুদান দিয়ে সহায়তা দান করেন।
সেনা ও সিভিল প্রশাসন, এলাকার শিক্ষানুরাগী, সাংবাদিক, দানশীল ব্যক্তি ও সচেতন যুব সমাজের ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় শেষ পর্যন্ত আলীকদম মৈত্রী জুনিয়র হাই স্কুলটির আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু হয়। একইসাথে রচিত হলো আলীকদমের মাধ্যমিক শিক্ষা ক্ষেত্রে এক নবদিগন্তের সূচনা। রচিত হলো সেনা, সিভিল প্রশাসন ও স্থানীয় শিক্ষানুরাগীদের যৌথ প্রচেষ্টার এক গৌরবগাঁথা।
সেনা বাহিনীর দি স্টাইকিং টুয়েলভ্ এর সৌজন্যে প্রস্তাবিত স্কুল এন্ড কলেজের একাডেমিক ভবন নিমার্ণ কাজটি স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের থোক বরাদ্দ থেকে প্রাথমিক পর্যায়ে শুরু হয়। নির্মাণ কাজের জন্য স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ থেকে প্রাথমিকভাবে ৩ লাখ ৪০ হাজার টাকার বরাদ্দ দেয়া হয়। ২০০৮ সালের ৫ ফেব্রুয়ারি ভবনের ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন করেন আলীকদম জোনের অধিনায়ক লে. কর্নেল আবুল কালাম আজাদ।
বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠানকালীন কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক সাতুন বড়–য়া অভিযোগ করেন, এ বিদ্যালয় থেকে গত কয়েক বছরে লাখ লাখ টাকা বেহাত হওয়ার অভিযোগ উঠেছে। কমিটির সদস্যরা এর প্রতিবাদ করায় প্রধান শিক্ষকের কাছে তারা কোণঠাঁসা হয়ে পড়েছেন। গত বছর কমিটির প্রতিষ্ঠানাকালীন সদস্যরা মিলে নতুন সভাপতি মনোনীত করলেও তা মেনে নেননি প্রধান শিক্ষক। এ কারণে বিদ্যালয়টি বর্তমানে নানা সংকটে রয়েছে। অপর সদস্য অংশেথোয়াই মার্মা বলেন, যাদেরকে আমরা নিয়োগ দিয়ে শিক্ষকপদে সম্মানিত করেছিলাম তারা এখন আমাদের মাথার ওপর ছড়ি ঘুরাচ্ছেন। বিদ্যালয়টি সুষ্ঠু পরিচালনার স্বার্থে কমিটি পুনর্গঠন করলে কয়েকজন শিক্ষক মিলে কমিটির সদস্যদের নামে থানায় মামলা ঠুকতে যান।
তিনি বলেন, বৈধ পরিচালনা কমিটি না থাকায় শিক্ষকদের দাবি সত্ত্বেও বেতন-ভাতা বৃদ্ধিসহ নানা বিষয়ে পদক্ষেপ নেয়া যাচ্ছে না। আমরা প্রতিষ্ঠাতা সদস্যগণ মিলে নতুন সভাপতি মনোনীত করলেও রহস্যজনক কারণে প্রধান শিক্ষক তা মেনে না নিয়ে একগুয়েমী করেছেন। বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক আলী হায়দার বলেন, বর্তমান দুর্মূল্যের বাজারে শিক্ষকরা স্বল্প বেতনে চাকরি করছেন। বাস্তবতার নিরীখে বেতন বৃদ্ধি করা প্রয়োজন।

অনলাইন আপডেট

আর্কাইভ