বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪
Online Edition

উত্তরাঞ্চলে চিকিৎসা শিক্ষা ও স্বাস্থ্যসেবায় সাড়া জাগিয়েছে ইসলামী ব্যাংক মেডিকেল কলেজ

রাজশাহী অফিস : এই কিছুকাল আগেও যে স্থানের পরিচয় ছিল প্রায় পরিত্যক্ত এক জলাভূমি। আজ সেখানে মানুষের নিত্য পদচারণা। সবুজের পাশাপাশি আলো ঝলমল এক শিক্ষাঙ্গন। শুধু শিক্ষা নগরীর জন্য একটি নতুন পালক যুক্ত হওয়াই নয়, চিকিৎসা শিক্ষা ও স্বাস্থ্যসেবার এক গৌরবময় প্রতিষ্ঠানের পরিচয়ে সমৃদ্ধ হয়েছে উত্তরাঞ্চলের প্রাণকেন্দ্র ঐতিহ্যে সমৃদ্ধ রাজশাহীর এই জনপদ। বলতে গেলে, উত্তরাঞ্চলে চিকিৎসা শিক্ষা ও স্বাস্থ্যসেবায় সাড়া জাগিয়েছে রাজশাহীর ইসলামী ব্যাংক মেডিকেল কলেজ।
হযরত শাহ্ মখ্দুম রূপোশ (রহ.)-এর পুণ্যস্মৃতিবিজড়িত বরেন্দ্র ভূমি, সিল্ক সিটি ও শিক্ষা নগরী রাজশাহীতে অবস্থিত ইসলামী ব্যাংক মেডিকেল কলেজ, রাজশাহী। নগরীর নওদাপাড়া আমচত্বর থেকে শত গজ উত্তরে বিমানবন্দর রোডে প্রায় ৩৫ বিঘা জমির ওপর প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ও সবুজে ঘেরা প্রতিষ্ঠানের নিজস্ব ক্যাম্পাস। সবুজ ক্যাম্পাসের মধ্যে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে সুউচ্চ একাডেমিক ভবন, হাসপাতাল ভবন, হোস্টেল ও কেন্দ্রীয় মসজিদ। ২০০৩ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়ে এই মেডিকেল কলেজ ১২ বছরে পদার্পণ করতে যাচ্ছে। প্রতিষ্ঠার পর থেকে শুধুমাত্র মানসম্মত চিকিৎসক তৈরি নয়, রাজশাহীসহ সারা উত্তরবঙ্গে দারিদ্র্যপীড়িত অসহায় মানুষসহ সর্বস্তরের মানুষের কাছে স্বল্পমূল্যে উন্নত চিকিৎসাসেবা পৌঁছে দিতে সক্ষম হয়েছে এই প্রতিষ্ঠান। চিকিৎসা শিক্ষা ও স্বাস্থ্যসেবার ক্ষেত্রে ইসলামী ব্যাংক মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল আজ দেশের একটি মডেল প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছে। কলেজটি স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় থেকে অনুমোদন প্রাপ্তির পর এক এক করে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, বাংলাদেশ মেডিকেল ও ডেন্টাল কাউন্সিল, বাংলাদেশ কলেজ অব ফিজিশিয়ানস এন্ড সার্জনস (BCPS)  এবং International Accreditation Organization (IAO) থেকে স্বীকৃতি লাভ করে।
এই মেডিকেল কলেজের শিক্ষা কার্যক্রম শুরু হয় ২০০৪ সালে। ইতোমধ্যে ৬টি ব্যাচের ছাত্র-ছাত্রীরা সর্বোচ্চ ডিগ্রি নিয়ে পাশ করে বের হয়েছেন। এর মধ্য থেকে ৪৭ জন ৩১তম বিসিএসের মাধ্যমে সরকারি চাকরিতে যোগদান করেছেন। এই প্রতিষ্ঠান থেকে পাশ করা প্রায় অর্ধশত চিকিৎসক FCPS সহ বিভিন্ন পোস্ট গ্র্যাজুয়েশন এ সুযোগ পেয়েছেন। এছাড়া অধিকাংশ পাশ করা চিকিৎসকগণ বিভিন্ন মেডিকেল কলেজ, হাসপাতাল, ক্লিনিকসহ স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠানে তাদের যোগ্যতার স্বাক্ষর রেখে চলেছেন। আগামী ২০১৪-১৫ শিক্ষাবর্ষে ১২তম ব্যাচে এমবিবিএস ও দ্বিতীয় ব্যাচে বিডিএস কোর্সে ছাত্র-ছাত্রী ভর্তি হবে। কলেজে নেপাল ও মালদ্বীপের ২৩জন ছাত্র-ছাত্রী অধ্যায়ন করে। এই মেডিকেল কলেজে উচ্চ দক্ষতা ও যোগ্যতাসম্পন্ন ১৯ জন অধ্যাপক, ১৪ জন সহযোগী অধ্যাপক ও ২২ জন সহকারী অধ্যাপকসহ একদল শিক্ষক রয়েছেন, যারা মানসম্মত চিকিৎসক তৈরির ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখে চরেছেন। তাদের নিরলস প্রচেষ্টা ও আন্তরিক পাঠদানের ফলে বিভিন্ন বৃত্তিমূলক পরীক্ষায় রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় অধিভুক্ত ১৯টি সরকারি ও বেসরকারি মেডিকেল কলেজের পরীক্ষার্থীদের সম্মিলিত ফলে এই মেডিকেল কলেজের ছাত্র-ছাত্রীরা প্রথম ১০ জনের মধ্যে নিয়মিত নিজেদের অবস্থান করে নিচ্ছে। আর দুর্বল ও অমনোযোগী ছাত্র-ছাত্রীরাও নিজেদের যোগ্য হিসেবে গড়ে তুলতে পারছে। মেডিকেল কলেজের লাইব্রেরিটি সর্বশেষ সংস্করণসহ পর্যাপ্ত প্রয়োজনীয় বইয়ে সমৃদ্ধ। লাইব্রেরি হলটি শীততাপ নিয়ন্ত্রিত। প্রায় ১৫০ জন শিক্ষক ও ছাত্র-ছাত্রী একসাথে লেখাপড়া করতে পারেন। এছাড়া লাইব্রেরিতে ওয়াইফাই ইন্টারনেট সংযোগসহ শিক্ষক, ছাত্র ও ছাত্রীদের আলাদা আলাদা একাধিক কম্পিউটার রয়েছে। ক্যাম্পাসেই অবস্থিত ৬৫০ বেডের টিচিং হাসপাতাল। হাসপাতালের জরুরি বিভাগ, ইনডোর ও আউটডোরে প্রতিদিন শত শত রোগী চিকিৎসা গ্রহণ করছেন। ওয়ার্ডসমূহ বিভাগভিত্তিক সাজানো। প্রত্যেক ওয়ার্ডে পর্যাপ্ত রোগী থাকে। ছাত্র-ছাত্রী ও ইন্টার্ন চিকিৎসকদের বাস্তব প্রশিক্ষণের জন্য হাসপাতালের সকল ওয়ার্ডের বেড ভাড়া ফ্রি। ফলে অধিকাংশ সময় ওয়ার্ডে কোনো বেড ফাঁকা থাকে না। হাসপাতালের রেডিওলজি ও ইমেজিং এবং ল্যাবরেটরি আধুনিক যন্ত্রপাতি দিয়ে সজ্জিত। হাসপাতালে কর্মরত অধিকাংশ চিকিৎসকগণ FCPS, FRCS, MRCPmn পোস্ট গ্র্যাজুয়েশন ডিগ্রিধারী। কলেজের শ্রেণীকক্ষগুলো শীততাপ নিয়ন্ত্রিত। প্রত্যেকটি শ্রেণী কক্ষ কম্পিউটার, মাল্টিমিডিয়া প্রজেক্টর, ওভারহেড প্রজেক্টর, সাউন্ড সিস্টেমসহ শিক্ষা উপকরণ দ্বারা সজ্জিত। বিভিন্ন বিভাগের ল্যাবরেটরিসমূহ আধুনিক যন্ত্রপাতি সন্নিবেশিত। ল্যাবরেটরিসমূহে ছাত্র-ছাত্রীদের পাঠদানের জন্য আছে মাল্টিমিডিয়া প্রজেক্টরসহ ট্রাইনোকুলার মাইক্রোস্কোপ, মাল্টিহেড মাইক্রোস্কোপ, ডিজিটাল স্পাইরোমিটার, কাইমোগ্রাফ, ইসিজি মেশিনসহ আধিুনিক যন্ত্রপাতি ব্যবহৃত হয়। এছাড়া প্রশিক্ষণের জন্য আছে ১০টি ডেডবডি, পর্যাপ্ত ভিসেরা, মডেল, টরসো ও চার্টসহ প্রয়োজনীয় শিক্ষাসামগ্রী।
শুধু শিক্ষা কার্যক্রম নয়, এই মেডিকেল কলেজ খেলাধুলা ও সাংস্কৃতিক কর্মকান্ডেও আছে সবার চেয়ে একধাপ এগিয়ে। কলেজ ক্যাম্পাসেই আছে বিশাল খেলার মাঠ। ছাত্র-ছাত্রীদের শারীরিক ও মানসিক বিকাশের জন্য প্রতি বছর ছাত্রসপ্তাহ উদযাপিত হয়। এ সময় সপ্তাহব্যাপী ইনডোর গেমস, আউটডোর গেমস ও সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়। মহান স্বাধীনতা ও বিজয় দিবসসহ বিভিন্ন জাতীয় দিবসের আলোচনা সভা ও খেলাধুলায় ছাত্র-ছাত্রীরা অংশগ্রহণ করেন। পারস্পারিক সৌহার্দ ও সম্প্রীতি বৃদ্ধির জন্য কলেজের শিক্ষক, চিকিৎসক, ছাত্র-ছাত্রী ও কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নিয়ে প্রতি বছর বার্ষিক বনভোজন হয়ে থাকে। এছাড়া নিয়মিত সেমিনার, সিম্পোজিয়াম, রচনা প্রতিযোগিতাসহ বিভিন্ন সহপাঠ কার্যক্রমে ছাত্র-ছাত্রীরা অংশগ্রহণে করে। কলেজের হোস্টেলে সকল ছাত্রীর আবাসিক সুবিধা আছে। ছাত্রদের জন্য হোস্টেল নির্মাণ কাজ শুরু হচ্ছে। ক্যাম্পাসের ভিতরে আছে নিজস্ব ক্যান্টিন। যেখানে মানসম্মত ও রুচিশীল খাবার পরিবেশন করা হয়। ক্যান্টিনের সাথেই One Stop Shop থেকে স্টেশনারি ও কনফেকশনারি সামগ্রী কেনার সুযোগ আছে। একাডেমিক ভবন, হাসপাতাল ও হোস্টেলসহ গোটা ক্যাম্পাসে ২৪ ঘণ্টা নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহের জন্য আছে সাবস্টেশনসহ নিজস্ব বিদ্যুৎ ব্যবস্থা। এসব মিলিয়ে একটি সর্বাধুনিক সুযোগ-সুবিধাসংবলিত প্রতিষ্ঠান হিসেবে ইসলামী ব্যাংক মেডিকেল কলেজ, রাজশাহী চিকিৎসা শিক্ষা ও স্বাস্থ্যসেবার ক্ষেত্রে দেশের জন্য মাইলফলক হয়ে দাঁড়িয়েছে।

অনলাইন আপডেট

আর্কাইভ