শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪
Online Edition

রাবি ক্যাম্পাসের অবৈধ দোকান এক সপ্তাহের মধ্যে উঠিয়ে নেয়ার নির্দেশ

রাবি রিপোর্টার : শিক্ষার সুষ্ঠ পরিবেশ বজায় রাখতে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন স্থানে বিচ্ছিন্নভাবে গড়ে ওঠা সকল অবৈধ দোকান ব্যবসায়ীদের এক সপ্তাহের মধ্যে উঠিয়ে নেয়ার নির্দেশ দিয়েছেন বিশ^বিদ্যালয় প্রশাসন। ফলে ভোগান্তিতে পড়েছে এসব গরিব ক্ষুদ্র দোকান ব্যবসায়ীরা। গত বৃহস্পতিবার সকল দোকানিকে নোটিশের মাধ্যমে এ নির্দেশনা দেয়া হয়।
নোটিশে বলা হয়, রাবি ক্যাম্পাসের বিভিন্ন স্থানে বিচ্ছিন্ন অবস্থায় দোকান বসিয়ে ব্যবসা করায় শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ নষ্ট হচ্ছে। তাই শিক্ষার উপযুক্ত পরিবেশ রক্ষার্থে আগামী সাত দিনের মধ্যে এসব অবৈধ দোকান সরিয়ে নেয়ার জন্য বলা হয়।
অনুসন্ধানে জানা যায়, বিশ্ববিদ্যায়ের শহীদুল্লাহ কলা ভবন, মমতাজ উদ্দীন কলা ভবন, রবীন্দ্র ভবন, ২য় বিজ্ঞান ভবন, ৩য় বিজ্ঞান ভবন ও চতুর্থ বিজ্ঞান ভবনের পাশে প্রায় ২৫-৩০টি অবৈধ দোকান রয়েছে। এসব দোকানের  প্রতিটিতেই ৮-১০ জন কর্মচারী কাজ করে তাদের সংসার চালিয়ে থাকেন। দোকান মালিক ও কর্মচারীরা খুবই দরিদ্র। তাদের পরিবার পরিজনের একমাত্র ভরসা দোকানের আয়। দোকানগুলো সরিয়ে নেয়া হলে তাদের পক্ষে পরিবার পরিচালনা করা খুবই দুর্বিষহ হয়ে পড়বে। এমনটাই বলছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের টুকিটাকি চত্বরের দোকান মালিক বাবুল হোসেন। তিনি বলেন, “আমি এখানে গত ২৫ বছর থেকে দোকান নিয়ে আছি। দোকানই আমার একমাত্র সম্বল। দোকান থেকে যে আয় হয় তা দিয়েই আমি আমার পরিবার ও সন্তানদের পড়াশোনার খরচ চালিয়ে থাকি। এখন দোকান উঠিয়ে দিলে পথে নামা ছাড়া আমার আর কোনো উপায় থাকবে না”। তার দোকানের এক কর্মচারী বলেন, “ভাই আমি দোকানে সারাদিন কাজ করে যে টাকা পাই তা দিয়ে কোনো রকমে আমার সংসার চলে। আর যদি দোকান উঠিয়ে দেয়া হয় তাহলে আমাকে না খেয়ে মরতে হবে।” ক্যাম্পাসের আরেক দোকানদার সবুজের সাথে কথা বলতে গেলে তিনি কান্নায় ভেঙে পড়েন। তিনি বলেন, “এই দোকানই আমাদের জীবনে বেঁচে থাকার এক মাত্র অবলম্বন। দোকান না থাকলে আমরা কীভাবে স্ত্রী সন্তানদের বাঁচাবো তা জানি না।”
দোকানগুলো একাডেমিক ভবনের কাছাকাছি হওয়ায় ছাত্ররা ক্লাসের ফাঁকে অল্প সময়েই হালকা নাস্তা করে পুনরায় ক্লাসে যেতে পারেন। ফলে তাদের ক্লাসও মিস করতে হয় না আবার সাময়িক ক্ষুধাও নিবারণ হয়। একদিকে যেমন দোকানগুলো থেকে দোকানি, কর্মচারী ও ছাত্ররা উপকৃত হয় তেমনি এগুলো দ্বারা সৃষ্ট ক্ষতির পরিমাণ কম নয়। এসব দোকানে সারাদিন গোলমাল চেঁচামেচি লেগেই থাকে। আর যেহেতু দোকানগেুলো একাডেমিক ভবনগুলোর কাছেই তাই দোকানের গোলমাল শিক্ষকদের ক্লাস নিতে যেমন সমস্যার সৃষ্টি করে তেমনি ছাত্রদের ক্লাসে মনোযোগ দেয়াটাও খুব কষ্টকর হয়ে পড়ে। অনেক সময় উচ্চ শব্দের কারণে শিক্ষকরা কম সময়ে ক্লাস শেষ করে চলে যান।
রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের ৩য় বর্ষের শিক্ষার্থী রাসেল মাহমুদ বলেন, আমাদের ক্লাস বেশির ভাগ সময়েই শহীদুল্লাহ কলা ভবনের নিচ তলায় হয়। আর এ ভবনের পিছনেই রয়েছে কয়েকটি অস্থায়ী দোকান। দোকানগুলো থেকে সৃষ্ট হওয়া হই চইয়ের কারণে আমাদের ক্লাস করতে খুবই সমস্যা হয়।
এছাড়াও এসব দোকানে বিভিন্ন রাজনৈতিক ছাত্রসংগঠনের নেতা-কর্মীরা আড্ডা দেয় এবং ছিনতাইকারীরা সহজেই ওঁত পেতে থাকতে পারে। ফলে দেখা যায় দোকানগুলো থেকে প্রায়ই সাধারণ ছাত্ররা ও অতিথি বা ভর্তিচ্ছুরা ছিনতাইয়ের শিকার হন। অন্যদিকে বিভিন্ন ছাত্রসংগঠনের নেতা কর্মীরা আড্ডা দেয়ার সময় কথা কাটাকাটি করতে গিয়ে বা ব্যক্তিগত শত্রুতার জের ধরে মারামারির ঘটনা ঘটিয়ে থাকে। যা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাভাবিক পরিবেশ নষ্ট করে থাকে। আর এসব কারণে সাধারণ শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসে নিশ্চিন্তে চলাফেরা করতে পারে না।
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের এস্টেট দপ্তরের সেকশন অফিসার (দপ্তর প্রধান) মো. জাহিদ আলী বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় একটি গবেষণামূলক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। আর বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের যেখানে সেখানে অবৈধ দোকানগুলো শিক্ষার স্বাভাবিক পরিবেশ নষ্ট করছে। তাই বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ বজায় রাখতে এসব দোকান সরানোর নির্দেশ দিয়েছে। আর এ নির্দেশ না মানলে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিধি অনুযায়ী তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে তিনি জানান।
বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র উপদেষ্টা প্রফেসর ড. ছাদেকুল আরেফিন বলেন, ক্যাম্পাসে এসব অবৈধ দোকানের কারণে শিক্ষার পরিবেশ নষ্ট হচ্ছে। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন এগুলো উচ্ছেদ করে ভবিষ্যতে তাদের জন্য উপযুক্ত পরিবেশে কিছু দোকান করে দেয়া হবে বলে জানান তিনি।

অনলাইন আপডেট

আর্কাইভ