শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪
Online Edition

শেষ রক্তবিন্দু দিয়ে হলেও বাপ-দাদার ভিটেমাটি ফসলি জমি রক্ষার অঙ্গীকার

শরীয়তপুর সংবাদদাতা : “রসুন, পিঁয়াজ, ধান, পাটের জন্য মূল্যবান ফসলি জমি ও বসতবাড়ী উচ্ছেদ করে আমরা অলিম্পিক ভিলেজ চাই না, বসতভিটা ও ফসলি জমি হারিয়ে আমরা বেকার হয়ে দেশের বোঝা হতে চাই না। আমরা আমাদের জীবন দিয়ে হলেও বাপ-দাদার ভিটেমাটি ও ফসলি জমি রক্ষা করতে চাই।” এ শ্লোগানকে সামনে রেখে অলিম্পিক ভিলেজের জন্য জায়গা না দেয়ার দাবিতে অব্যাহতভাবে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করছে নড়িয়ার রাজনগরে কয়েকটি গ্রামের স্থানীয় হাজার হাজার নারী-পুরুষ। গতকাল শনিবার সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৩টা পর্যন্ত শরীয়তপুর-ঢাকা মহাসড়কের দুই পার্শ্বে রাজনগর কাজীকান্দি এলাকায় প্রায় ১ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে ৭ ঘণ্টাব্যাপী এ মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করা হয়। এর আগে গত শুক্রবার একই দাবিতে জাজিরা পৌরসভার রসের মোড় এলাকায় হাজার হাজার নারী-পুরুষ মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করে।
নড়িয়ার রাজনগর ইউনিয়নের কাজীকান্দি গ্রামের বাসিন্দা মিজানুর রহমান মিন্টু আকন, মজিবুর রহমান ঢালী, কামাল হোসেন জানান, শরীয়তপুর জেলার নড়িয়া উপজেলার রাজনগর ইউনিয়নের কাজীকান্দি ও ঠাকুরকান্দিসহ চারটি গ্রামের বসতবাড়ি ও ফসলি জমিতে অলিম্পিক ভিলেজ তৈরীর জন্য সরকার বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর মাধ্যমে গত ৭ নভেম্বর জায়গা নির্বাচনের প্রাথমিক জরিপ কাজ করছে। এর অংশ হিসাবে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর একটি টিম রাজনগর এলাকার ফসলি জমির মধ্যে লাল কাপড়ের নিশানা টাঙ্গিয়ে দেয়। এ জমিতে প্রতি বছর তিনটি ফসল উৎপাদিত হয়। এলাকার ৯৫ ভাগ লোক কৃষক এ সকল ফসলি জমির উপর নির্ভরশীল। রবি মৌসুমে, রসুন, পিঁয়াজ, ধনিয়া, কালোজিরা, সরিষাসহ নানা রকমের ফসল ফলে। এরপর পাট ও আউশ-আমন ধান চাষ করা হয়। জমিতে উৎপাদিত ফসল তারা খেয়ে জীবিকা নির্বাহ ও  ফসল বিক্রি করে সংসার পরিচালনা এবং ছেলে-মেয়েদের লেখাপড়াসহ যাবতীয় কাজকর্ম করে থাকেন। তাই এলাকার লোকজন অলিম্পিক ভিলেজ তৈরীর জন্য তাদের বাপ-দাদার ভিটেমাটি ও ফসলি দিতে রাজি নন। গতকাল শনিবার অলিম্পিক ভিলেজের জন্য জায়গা প্রাথমিক পরিদর্শনে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর প্রধান আসবেন এমন সংবাদ পেয়ে নড়িয়ার রাজনগরের স্থানীয় হাজার হাজার নারী-পুরুষ সকাল থেকে ঢাকা-শরীয়তপুর মহাসড়কে জড়ো হতে থাকে। সকাল ১১টায় সেনাবাহিনীর একটি হেলিকপ্টার এসে উপর দিয়ে কয়েকটি চক্কর দিয়ে চলে যায়। তার পরেও ব্যানার ও ফেস্টুনে তাদের দাবি দেয়া নিয়ে বিকাল ৩টা পর্যন্ত হাজার হাজার নারী-পুরুষ ছোট ছোট শিশুদের কোলে নিয়ে দাঁড়িয়ে মানববন্ধন পালন করে। আরো জানা গেছে, শরীয়তপুরের জাজিরা রসের মোড় তালুকদার কান্দি এলাকাসহ আরো কয়েকটি স্থান অলিম্পিক ভিলেজ নির্মাণের জন্য প্রাথমিকভাবে জায়গা নির্বাচনের কাজ চলছে। তারই অংশ হিসেবে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর প্রধান আবু বেলাল মোঃ শফিউল হক গতকাল দুপুরে জাজিরার রশের মোড় তালুকদার কান্দি এলাকা পরিদর্শন করে চলে যায়।
নড়িয়ার রাজনগর ইউনিয়নের কাজী কান্দি গ্রামের বাসিন্দা মজিবুর রহমান ঢালী, আব্দুস সালাম আকন, মাস্টার আনোয়ার হোসেন, কুলছুম বেগম, সাদিয়া রহমান, আইরিন আক্তার, হেলেনা আক্তারসহ আরো অনেক ব্যক্তি বলেন, সরকারের সাথে আমরাও এলাকার উন্নয়ন চাই। আমরা আমাদের বাপ-দাদার ভিটেমাটি ওফসলি জমি দিয়ে নয়। সরকার আমাদের পুনর্বাসনের জন্য জায়গা দিবে ঠিকই কিšুÍ আমরা আর কোন দিনই আমাদের পৈতৃক জায়গা ফিরে পাব না। এ ছাড়াও এখানের মানুষ একমাত্র কৃষির উপর নির্ভরশীল। আমাদের এ এলাকায় বাংলাদেশের মধ্যে পিঁয়াজ, রসুন ও পাট আবাদের জন্য অন্যতম স্থান। তাই আমাদের শেষ রক্তবিন্দু দিয়ে হলেও আমরা আমাদের বাপ-দাদার ভিটে মাটি ও ফসলি জমি রক্ষা করবো। কোন অবস্থাতেই আমরা আমাদের জমি অলিম্পিক ভিলেজ নির্মাণের জন্য দিব না। সরকারের কাছে আমাদের প্রাণের দাবী আমাদের বাপ-দাদার ভিটেমাটিতে থাকার সুযোগ থেকে যেন বঞ্চিত না করেন।

অনলাইন আপডেট

আর্কাইভ