শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪
Online Edition

গ্রাম-বাংলার পলো বাইচের একাল-সেকাল

এইচ এম হাসিবুল হাসান, ঘিওর (মানিকগঞ্জ) : খাল বিল, চক ও নদী নালায় দলবদ্ধ হয়ে পলো দিয়ে মাছ ধরা গ্রাম-বাংলার ঐতিহ্য বহু প্রাচীন এক ধরনের নেশা বা হাওশ। বাঙালীর সেই ঐতিহ্যেও রেশ ধরে সম্প্রতি মানিকগঞ্জের ঘিওর উপজেলার বিভিন্ন জলাশয়ে পলো বাওয়ার ধুম লেগেছে। মুখেমুখে, হাট-বাজারে ঢাক-ঢোল পিটিয়ে ও মাইকে ঘোষণা দিয়ে শৌখিনদার মৎস্য শিকারীরা পলো নিয়ে ছুটে চলেছেন কালীগঙ্গা নদী ঘেঁষা চরাঞ্চল, বিভিন্ন বিলে ও চকের হাঁটু জলাশয়।
জানাযায়, চলতি শুস্ক মৌসুমে উপজেলার কালীগঙ্গা ও পুরাতন ধলেশ্বরী নদীর ভাটি এলাকার কম পানির কুম, বানিয়াজুরীর তরা, নালী, শোলধারা, দিয়াইল, ঘিওরের মাইলাঘী, বরটিয়া চকে রয়েছে হাঁটু থেকে কোমর অবধি পানি। আর এসব জলমহালে সাপ্তাহিক ছুটির দিনসহ প্রায় প্রতি দিনই চলছে পলো দিয়ে মাছ ধরার ধুম।
ঘিওর উপজেলার বানিয়াজুরীর রাথুরা চকের জলাশয়, প্রায় প্রতিদিনই দেখা যায়, দেশীয় প্রজাতির মাছের মধ্যে শোল, বোয়াল, কার্ফু, রুই কাতলা মাছ পলোতে বেশী আটকা পড়ছে। কেউ কেউ আবার ছোট আকৃতির মাছও পাচ্ছেন।
রাথুরা গ্রামের ইসলাম খান জানায়, শখের বশে পলো বাইতে আসছি, একটি বোয়াল মাছ পাইছি। আরেক মাছ শিকারী নূরুল ইসলাম পেয়েছেন বড় আকৃতির একটি বোয়াল ও দুটি কার্ফু মাছ। পলো বাইচে অংশ নেওয়া আকাশ আহমেদ রফিক, প্রবীণ আফসার আলী, চিত্ত দাস, মোঃ রবিনসহ আরো অনেকে জানান, পলো বাইচ দিয়ে মাছ শিকার করার মজাই আলাদা। কারো পলোর নিচে একটি মাছ পড়লে সবাই ঝাকর (চিৎকার) দিয়ে সেই মাছটি ধরতে সবাই সহযোগিতা করেন। পলো বাইচে আশপাশের কয়েক ইউনিয়ন ছাড়িয়ে অন্য জেলা থেকেও মানুষজন পূর্ব ঘোষিত দিনে অংশগ্রহণ করে। শত-শত মানুষ পলো নিয়ে মাছ ধরার আনন্দে মেতে উঠেন।
এদিকে বাইচে অংশ নিতে বিভিন্ন বয়সী মানুষ পলো কিনতে হুমড়ি খেয়ে পরছেন। অন্য সময় সাধারন একটি পলো ১৫০/২৫০ টাকা বিক্রি হয়ে থাকে। কিন্তু বাইচের সময় তিনগুন বেশি দাম দিয়েও পলো কিনতে কাড়াকাড়ি লেগে যায়।
ঘিওরের বানিয়াজুরী বাসষ্ট্যান্ডে পলো বিক্রেতা অনীল বাবু বলেন, বাইচের আগের দিন ১০০ পিচ পলো নিয়ে আসছি। এক ঘন্টার মধ্যেই সব শেষ। দামও পেয়েছি ভালোই।
পলোছাড়াও পাতি জাল, টান জাল, ধর্ম জাল ইত্যাদি নিয়ে জড়ো হন সাধারণ মানুষ। এক সাথে সবাই নেমে পড়েন মাছ শিকারে। তবে আগের মতো দেশীয় মাছ এখন পাওয়া যায় না এমন অভিযোগ করলেন বাইচে অংশ নেয়া অনেকে। বহু বছর ধরে চলে আসা এ ঐতিহ্য ধরে রাখতে চান স্থানীয় লোকজন। স্থানীয় বানয়িাজুরী ইউপি চেয়ারম্যান আবুল কাসেম চতু জানান, বহুদিন ধরে চলে আসা এ পলো বাইচকে ঘিরে আশপাশের গ্রামের লোকজনের মধ্যে প্রাণচাঞ্চল্য দেখা দেয়। এ ঐতিহ্য ধরে রাখতে সকলের সহযোগতিা কামনা করেন তিনি।

অনলাইন আপডেট

আর্কাইভ