ই-বর্জ্যরে জন্য সুনির্দিষ্ট নীতিমালা প্রনয়ণের তাগিদ বিশেষজ্ঞ ও পরিবেশকর্মীদের
স্টাফ রিপোর্টার : ঢাকায় এক অনুষ্ঠানে ই-বর্জ্য রিসাইকেল ও ডাম্পিংয়ের জন্য সুনির্দিষ্ট নীতিমালা ও আইন প্রনয়ণের তাগিদ দিয়ে বিশেষজ্ঞ ও পরিবেশকর্মীরা বলেছেন, প্রযুক্তির সঙ্গে এগিয়ে যাওয়ার পাশাপাশি বাড়ছে প্রযুক্তিগত পণ্যের ব্যবহার। তথ্য প্রযুক্তির এই যুগে সর্বত্রই প্রতিনিয়ত ইলেক্ট্রিক্যাল এবং ইলেক্ট্রনিক পণ্যের প্রতি বাড়ছে মানুষের নির্ভরতা। ডেস্কটপ পিসির জায়গা দখল করে নিয়েছে ল্যাপটপ বদলে ট্যাব, ফিচার ফোনের বদলে স্মার্টফোন, সিআরটি মনিটরের জায়গা দখল করেছে এলসিডি, এলইডি মনিটর। এভাবেই নতুন নতুন সংস্করণের ডিভাইস বিদায় জানাচ্ছে পুরোনো ডিভাইসকে। দিনদিন বাড়ছেই-বর্জ্যরে স্তূপ। কিন্তু আজও দেশে গড়ে ওঠেনি পরিবেশ ও মানবস্বাস্থ্যের জন্যে ক্ষতিকর এসব বর্জ্য সঠিক সংগ্রহ ও ব্যবস্থাপনা পদ্ধতি। এসব বর্জ্য উপযুক্ত ব্যবস্থাপনা, ডাম্পিং ও রূপান্তর না করলে পরিবেশ দূষণ ভয়াবহ আকার ধারণ করবে।
গতকাল বুধবার সকালে রাজধানীর কলাবাগানে নিজস্ব মিলনায়তনে বেসরকারি সংগঠন পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলন (পবা) আয়োজিত “ইলেক্ট্রনিক্স বর্জ্যরে ব্যাপকতা ও অব্যবস্থাপনা, হুমকির মুখে পরিবেশ ও জনস্বাস্থ্য” শীর্ষক এক গোলটেবিল বৈঠকে তারা এ তাগিদ দেন। পবার চেয়ারম্যান আবু নাসের খানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন পবা’র সদস্য ও পরিবেশ কর্মী রাজীব কুমার দত্ত। এতে অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন এনভায়রনমেন্ট এন্ড সোশ্যাল ডেভেলপমেন্ট অর্গানাইজেশন (এসডো) এর চেয়ারম্যান ড, শাহারিয়ার হোসেন, নাগরিক অধিকার সংরক্ষণ ফোরাম (নাসফ)-এর সভাপতি হাফিজুর রহমান ময়না, পবা’র সহ-সম্পাদক স্থপতি শাহীন আজিজ, নগরবাসী সংগঠনের সভাপতি শেখ আনসার আলী প্রমুখ।
পবা’র চেয়ারম্যান আবু নাসের খান বলেন যুগের বাস্তবতার কারণেই শহর-গ্রাম সর্বত্রই প্রতিনিয়ত ইলেক্ট্রিকাল এবং ইলেক্ট্রনিক পণ্যের প্রতি বাড়ছে মানুষের নির্ভরতা। ই-বর্জ্যরে সবচেয়ে বড় বিপদ হচ্ছে বিষাক্ত কয়েক ধরনের রাসায়নিক পদার্থ এবং বিপুল পরিমাণ প্লাস্টিক সামগ্রী। বিশ্বের বেশিরভাগ দেশেরই এই বিপুল পরিমাণ ই-বর্জ্য রিসাইকেল করার মতো সামর্থ্য নেই। ফলে এরা নিজেরা পরিবেশ দূষণ ও মান বিপর্যয় থেকে রক্ষা পেতে তৃতীয় বিশ্বের উন্নয়নশীল দেশগুলোতে সেই সব ই-বর্জ্য রফতানি করে দিচ্ছে। সুনির্দিষ্ট নীতিমালা বা আইন না থাকায় ডিজিটাল বর্জ্য ভাগাড় হতে চলেছে বাংলাদেশ। অতি শীঘ্রই আইন ও নীতিমালা প্রণয়ন করে সঠিক ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে ই-বর্জ্যরে ক্ষতিকর প্রভাব কমানো সম্ভব।
ড. শাহারিয়ার হোসেন বলেন, বাংলাদেশে প্রচুর শিশু ও নারী শ্রমিক ইলেক্ট্রনিক বর্জ্য সংগ্রহ ও রি-সাইকেলের সাথে সম্পৃক্ত এবং তারা যথেষ্ট স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে আছে। ইলেক্ট্রনিক পণ্যের বিক্রেতাদের বিক্রিত পণ্যের উপাদান সমূহ ও ডিস্পোজাল এর ব্যাপারে ক্রেতাদের গাইড লাইনের মাধ্যমে অবগত করা। সেই সাথে তিনি বলেন, ইলেক্ট্রনিক্স পণ্যের উৎপাদকারক বা রফতানীকারকদের পণ্যের লাইভ-সাইকেল ও গুণগতমান নিশ্চিত করতে হবে। জাহাজ ভাঙা শিল্পের মাধ্যমে যে বিশাল পরিমাণে ইলেক্ট্রনিক বর্জ্য প্রতিনিয়ত সমুদ্রে ফেলা হচ্ছে তার ক্ষতিসমূহ বিবেচনা করে সঠিক নীতিমালা প্রণয়ন করা।
রাজীব কুমার দত্ত তার প্রবন্ধে উল্লেখ করেন, ঢাকা সিটি কর্পোরেশনের নির্দিষ্ট ভাবে ই-বর্জ্য ব্যবস্থাপনা বা কোনো ডাম্পিং স্টেশন না থাকার করণে এর প্রভাব আরো বিপদজনক অবস্থায়। অন্যদিকে দেশের বিভিন্ন বড় বড় সরকারি-বেসরকারি অফিসগুলোতে নষ্ট হয়ে যাওয়া ইলেকট্রনিক পণ্যগুলো নিয়ে কোনো মাথাব্যথা নেই। বাংলাদেশ ইলেকট্রনিক বর্জ্যরে ব্যবস্থাপনা বিষয়ক আন্তর্জাতিক ভেসেল কনভেনশনে স্বাক্ষর করছে। কনভেনশনের শর্তানুযায়ী ইলেকট্রনিক বর্জ্যবিষয়ক একটি নীতিমালা বাংলাদেশের তৈরি করার কথা। যে নীতিমালা অনুযায়ী যে কোন হ্যাজারডাস পন্য আমদানি রফতানি নিষিদ্ধ। বাংলাদেশ এখনও তা পুরোপুরি ভাবে তৈরি করেনি।