বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪
Online Edition

গাইবান্ধার উৎপাদিত সবজি উত্তরাঞ্চলসহ রাজধানীবাসীর চাহিদা মেটাচ্ছে

গাইবান্ধা: উত্তরাঞ্চলে বর্তমানে প্রচণ্ড শীত। হাট-বাজারে শীতকালীন সবজি আসা শুরু হয়েছে। সাদুল্লাপুরের বকশীগঞ্জে ক্ষেতে সবজি পরিচর্যার দৃশ্য -সংগ্রাম

গাইবান্ধা থেকে জোবায়ের আলী: জেলার প্রত্যন্ত অঞ্চলে এবার শীতকালীন সবজির ভালো ফলন হয়েছে। ইতোমধ্যে বাজারে আসতে শুরু করেছে বিভিন্ন ধরনের সবজি।
তবে এখানের ৭টি উপজেলায় এখনো আবাদ হয় বিভিন্ন ফসল। এমনকি গাইবান্ধা উত্তরাঞ্চলের শষ্যভাণ্ডার হিসেবে পরিচিত সুন্দরগঞ্জ গোবিন্দগঞ্জ সাদুল্যাপুর পলাশবাড়ী ও সদর উপজেলার  এখনো ফসল চাষের জন্য খ্যাতি রয়েছে। ধান পাটসহ বিভিন্ন সময়ে বছর জুড়ে চলে সবজির চাষ। তাতে চাহিদা মিটে উত্তরাঞ্চলের বিপুলসংখ্যক মানুষের।
জেলার বাজারগুলোতে এরই মধ্যে বিক্রি হতে শুরু করেছে শীতের বিভিন্ন ধরনের সবজি। দাম কিছুটা বেশি হলেও নতুন সবজি কেনায় ক্রেতাদের কোনো অভিযোগ  নেই। প্রতিদিন বিভিন্ন এলাকারা পাইকাররা এসে স্থানীয় বাজারগুলো থেকে শীতের তরতাজা সবজি ঢাকাসহ  দেশের বিভিন্ন এলাকায় কিনে নিয়ে যাচ্ছেন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, জেলার সবচেয়ে বড় কাঁচা মালের আড়ত পুরাতন বাজার পৌরসভা বাজার ও হকার্স মার্কেট ও খানকা শরীফ বাজার। এই দুই/তিন বাজারে প্র্রতিদিন মণে মণে সবজি বিক্রি হচ্ছে। বাজারে সবজি বিক্রির আশায় কৃষকরা জমিতে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন। ভোর থেকে ইজিবাইক, রিকশাভ্যানে করে উপজেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে এসব সবজি সরাসরি বাজারে আসছে। বিক্রি-বাট্টাও হচ্ছে বেশ ভালো।
ব্যাপক চাহিদা থাকায় দামও বেশ পাচ্ছেন চাষীরা। ধানসহ অন্যান্য ফসল আবাদ করে একের পর এক লোকসান গুনে এবার শীতের সবজিতে স্বাবলম্বী হওয়ার স্বপ্ন দেখছেন জেলার মওসুমী কৃষকরা।
সরেজমিনে জেলার ৭ টি উপজেলা ঘুরে দেখা গেছে, গ্রামের কৃষকরা দিনরাত পরিশ্রম করে সবজির পরিচর্যা করছেন। কাংক্ষিত ফলের আশায় পোকা-মাকড় দমনে কেউ স্প্রে করছেন, কেউবা নিড়ানির জন্য বদলি নিয়োগ করেছেন। দাম ভালো পেয়ে বিক্রির আশায় ছোট থেকে বড় সবাই চাষাবাদে হাত লাগিয়েছেন।
ক্ষেতগুলোতে যেন লাল-সবুজের সমারোহ ঘটেছে। এসব সবজির মধ্যে রয়েছে- বাঁধাকপি, ফুলকপি, মুলা, কড়লা, লালশাক, পালংশাক, শিম, টমেটো, বেগুন, লাউ, শসা, মিষ্টি কুমড়া, ওলকপি, শালগম, বরবটি, ডাঁটা, চিচিঙ্গা, পটল, ঢেঁড়শ, কাঁচা মরিচ ও কচু ইত্যাদি।
সদর উপজেলার বাদিয়াখালী গ্রামের চাষি মিজান ও কামাল হোসেন বলেন, টানা কয়েক বছর ধান চাষে কৃষকরা দাম না পাওয়ায় শীতের সবজি আবাদ করে দুটো পয়সা লাভের মুখ দেখছেন। বিশেষ করে এলাকায় আগাম শীতকালীন সবজিতে এখানকার কৃষকরা স্বাবলম্বী হওয়ার স্বপ্ন দেখছেন।
পুরাতন বাজারের নিয়মিত ক্রেতা মো. আব্দুল হালিম বলেন স্থানীয় পর্যায়ে উৎপাদিত সবজির কোয়ালিটি খুবই ভালো। সার বা কীটনাশকের প্রয়োগ ছাড়াই চাষীরা মৌসুমী ফসল চাষ করে থাকেন।
এখানকার উৎপাদিত সবজি ক্রেতারা সরাসরি কিনে খেতে পারে না। কারণ এই বাজারে চাষিদের জন্য সবজি বিক্রির আলাদা কোনো ব্যবস্থা নেই।
এতে তারা সরাসরি খুচরা ক্রেতাদের কাছে সবজি বিক্রি করতে পারছে না। ‘কৃষকরা সবজি প্রথমে আড়তে আনেন, তারপর আড়তদারই চাষির সবজি বিক্রি করে দেন, বিনিময় আড়তদারকে পণ্য অনুযায়ী কমিশন ৫০ থেকে সর্বোচ্চ ২শ’ টাকা গুণতে হয়।’
বাজার ঘুরে দেখা গেছে, শিম প্রতি কেজি ৬০ টাকা, বাঁধাকপি ৩০ টাকা, ফুল কপি ৪০ টাকা, কাঁচা মরিচ ৬০ টাকা কেজি, ধনেপাতা ৫০ টাকা কেজি, নাপাশাক ৪০ টাকা, সরিষা শাক ২০ টাকা, মূলা শাক ১৫ টাকা, মূলা ২৫ টাকা ও টমাটো ৪০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
এখানকার পাইকারী বাজার থেকে কিনে খুচরা দোকানীরা কেজিতে ৫ থেকে সর্বোচ্চ ২০ টাকা লাভ করছেন। এছাড়া এই বাজার থেকে পাইকাররা শীতের সবজি কিনে ট্রাকযোগে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে নিয়ে যাচ্ছেন।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক  কৃষিবিদ আ কা মো. রুহুল আমীন বলেন জেলার ৮২ টি ইউনিয়ন ও ৩টি পৌরসভা নিয়ে এই জেলা।
এবারে সবচেয়ে বেশী শীতকালীন সবজি চাষ করা হয়েছে। আবহাওয়া অনুকূলে না থাকায় ধান ও অন্যান্য ফসল আবাদ করে কৃষকরা তেমন একটা সুবিধা করতে পারেনি। ফলে চলতি মওসুমে ব্যাপক হারে সবজির আবাদ করা হয়েছে। এতে চাষীরা লাভবান হচ্ছেন এবং ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছেন।

অনলাইন আপডেট

আর্কাইভ