বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪
Online Edition

দাম বাড়ার আগে পানির প্রাপ্যতা নিশ্চিত করা ও গণশুনানির দাবি

চট্টগ্রাম অফিস : ঢাকা ও চট্টগ্রাম ওয়াসার পানির মূল্য আগামী ১ জানুয়ারি থেকে আবাসিকে প্রতি ইউনিটে ১ টাকা ৫১ পয়সা এবং শিল্প ও বাণিজ্যের ক্ষেত্রে ৩ টাকা ৭২ পয়সা বাড়ানোর প্রস্তাব অনুমোদন করার খবরে উদ্বেগ প্রকাশ করে অবিলম্বে এ সিদ্ধান্ত প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছেন দেশের ক্রেতা-ভোক্তাদের স্বার্থ সংরক্ষণকারী জাতীয় সংগঠন কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) নেতৃবৃন্দ।
প্রতিবছর ৫ শতাংশ হারে ওয়াসার দাম বাড়ানোর বিধান থাকলেও এবার আবাসিক ও শিল্প-বাণিজ্যিক খাতে যথাক্রমে ১৭ ও ১৩ শতাংশ বাড়ানো হয়েছে।  বছরে একবার দাম বাড়ানোর বিধান থাকলেও দুই দফায় বাড়ানোর কারণে আবাসিকে ২২ শতাংশ এবং শিল্প বাণিজ্যে ১৮ শতাংশ বাড়ানো হয়েছে। অন্যদিকে দাম বাড়ানোর আগে গ্যাস ও বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর পূর্বে গ্রাহকসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা ও বিশেষজ্ঞদের মতামত নেবার জন্য গণশুনানির আয়োজন করা হলেও ওয়াসা গ্রাহকদের কোন প্রকার মতামত না নিয়ে একতরফাভাবে দাম বাড়ানোর প্রক্রিয়া অন্যায্য ও ভোক্তা স্বার্থ বিরোধী এবং অগ্রহণযোগ্য। ওয়াসার পানির দাম বাড়ানোর খবরে উদ্বেগ প্রকাশ করে ক্যাব নেতৃবৃন্দ বলেন, ওয়াসার সরবরহকৃত পানির ৮৮% গ্রাহক হচ্ছেন আবাসিক গ্রাহক। আর ওয়াসা দিনে চাহিদার মাত্র ৪২ শতাংশ পানি সরবরাহ করতে পারে। যার কারণে নগরীর অধিকাংশ এলাকায় পানির জন্য হাহাকার। আর চট্টগ্রাম ওয়াসা পানির প্রাপ্যতা নিশ্চিত না করে নতুন নতুন প্রকল্পের কথা বলে নগরবাসীকে বারবার বিভ্রান্ত করছে এবং দাম বাড়ানোর কথা বলে প্রকারান্তরে ওয়াসার অভ্যন্তরে পানি চুরি, অপচয় ও মিটার রিডারদের অনিয়মকে পোয়া বারো করে দিচ্ছে। কিন্তু নগরীর অধিকাংশ এলাকায় পানির জন্য হাহাকার। চট্টগ্রাম ওয়াসা নগরবাসীর পানির সমস্যা সমাধান না করে নতুন করে পানির দাম বাড়ানোর প্রস্তাব কোন ভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়।
 নেতৃবৃন্দ আরো বলেন ক্যাব থেকে প্রতিনিয়তই দাবি করে আসছিল যে, পানি অপচয় রোধ, সরবরাহ লাইনে ত্রুটি, লিকেজ, পানি চুরি বন্ধ, বিলিং ব্যবস্থার ত্রুটি দূর না করে, সিস্টেম লস বন্ধ না করে উৎপাদন খরচ বেড়েছে বলে অজুহাতে ভোক্তাদের উপর পানির দাম বাড়ানোর প্রস্তাব কোনভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। ওয়াসার অধিকাংশ গ্রাহকই সাধারণ মধ্যবিত্ত ও নিম্ন আয়ের মানুষ। আর এ শ্রেণীর মানুষ বিদ্যুৎ, গ্যাস, নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য ও সেবা সার্ভিসের মূল্য বৃদ্ধির যন্ত্রণায় কাতর, সেখানে নতুন করে পানির দাম বাড়ায় সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রার ব্যয় বৃদ্ধির মাত্রাকে আরো বাড়িয়ে দিবে। বিষয়টি কোনভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়।
 নেতৃবৃন্দ আরো বলেন, ক্যাব পানির অপচয় রোধ, সেবা সার্ভিসের অব্যবস্থাপনা রোধে গ্রাহকদের মাঝে সচেতনতা সৃষ্টি, গ্রাহক সেবার মান ও অনিয়ম রোধে গণশুনানির আয়োজন করা, গ্রাহক হয়রানি রোধে তাৎক্ষণিক প্রতিকারের জন্য ডিজিটাল হেলপ ডেস্ক  ও হেলপ ডেস্ক আধুনিকায়ন, দাম বাড়ানোসহ সেবার মান উন্নয়নে নীতিমালায় ভোক্তাদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করার দাবি করে আসলেও ওয়াসা কর্তৃপক্ষ এ পর্যন্ত কোন উদ্যোগ গ্রহণ করেনি। যা বর্তমান আধুনিক বিশ্বে সুশাসন ও ন্যায্য ব্যবসার পরিপন্থি এবং একটি আদর্শ সেবা সংস্থার মডেলের বিপরীত।
নেতৃবৃন্দ অভিযোগ করে বলেন, চট্টগ্রাম ওয়াসার পরিচালনা পর্ষদ সম্প্রতি পুনঃগঠন হয়েছে। নতুন পরিচালনা পর্ষদ দায়িত্ব নিয়ে গ্রাহকদের সাথে কোন প্রকার সৌজন্যমূলকভাবেও মতবিনিময় করার প্রয়োজন অনুভব করেনি। যা সত্যিই দুঃখজনক ও অনাকাংখিত। আর ওয়াসার পরিচালনা পর্ষদে ভোক্তাদের সত্যিকারের প্রতিনিধিত্ব না হওয়ায় পরিচালনা পর্ষদ ভোক্তাদের যন্ত্রণা, মর্ম ব্যথা বেদনা ও আর্তনাদের ভাষা বুঝতে অক্ষম। তাই অনতিবিলম্বে ওয়াসাসহ সকল সরকারি সেবা প্রদানকারী সংস্থায় জাতীয় ও আর্ন্তজাতিকভাবে স্বীকৃত ভোক্তা সংগঠনের প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করার দাবি জানান।
বিবৃতিতে যারা স্বাক্ষর করেন তারা হলেন ক্যাব কেন্দ্রীয় কমিটির ভাইস প্রেসিডেন্ট এস এম নাজের হোসাইন, ক্যাব চট্টগ্রাম বিভাগীয় সাধারণ সম্পাদক কাজী ইকবাল বাহার ছাবেরী, ক্যাব মহানগরের সভাপতি জেসমিন সুলতানা পারু, সাধারণ সম্পাদক অজয় মিত্র শংকু, ক্যাব চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা সভাপতি আবদুল মান্নান প্রমুখ।

অনলাইন আপডেট

আর্কাইভ