খুদের খালে পানি নেই ॥ ইরি চাষ অনিশ্চিত ॥ চাষিরা উদ্বিগ্ন
খুলনা অফিস : খুদের খাল এলাকায় পানির অভাবে দুই হাজার একর জমিতে ইরি চাষ অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। খাল শুকিয়ে যাচ্ছে। ফলে মাছ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। চাষিরা মাছ ধরে কম মূল্যে বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছেন। ফলে আর্থিক ক্ষতির কারণে ব্যাংক ঋণ পরিশোধ করা নিয়ে সংশয়ে পড়েছেন কৃষকরা। অন্যদিকে হতদরিদ্র কৃষকরা দুশ্চিন্তাগ্রস্ত হয়ে পড়েছেন।
কৃষক সংগ্রাম সমিতির নেতা আনছার উদ্দিন, ইউপি সদস্য দেবদাস ম-ল দেবু, স্থানীয় কৃষক হাফিজুর রহমান, নান্নু মিয়া বলেন, দ্রুত খাল খনন না করা হলে প্রায় ২০০০ একর জমিতে ইরি চাষ সম্ভব হবে না। পানির অভাবে ঘেরের মাছও ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
জানা যায়, ১৯৫১/৫২ সালে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান সরকার পুরাতন সাতক্ষীরা রোড সংলগ্ন এলাকায় ইরি ধান চাষের জন্য (১৬-৫১/৫২ নং কেসে) পানি উন্নয়ন বোর্ড রোডের গা- ঘেঁষে খাল খননের জন্য ভূমি হুকুম দখল করে। খননকৃত খালের সাথে খুদিয়া খালের দক্ষিণপ্রান্ত সংযোগ করার পরিকল্পনা নেয়। কিন্তু তা আজ পর্যন্ত বাস্তবায়ন হয়নি। তবে খুদিয়ার খালটি বটিয়াঘাটা থানার শৈলমারী এলাকার বৃহৎ নদীর সাথে সংযুক্ত। স্লুইস গেট নির্মাণ করে খুদিয়ার খালে পানি সরবরাহ করার কারণে এই এলাকার কৃষক পরিবার কৃষি পণ্য উৎপাদনসহ মাছ চাষের সুযোগ পায়। ফলে কৃষক পরিবারের আর্থিক স্বচ্ছলতা ফিরে আসে। আশির দশকে এই খুদিয়ার খালের উত্তর প্রান্ত অর্থাৎ আড়ংঘাটা, দেয়ানা, লতা, খামারবাটি, ধাইগ্রাম ডাকাতিয়া বিল এলাকা পলি পড়ে খাল ভরাট হয়ে যায়। পরবর্তীতে বিএনপি ক্ষমতায় থাকাকালে সরকার খাল খননের জন্য অর্থ বরাদ্দ করে। এ সময় স্থানীয় রাজনৈতিক নেতাদের সমন্বয়ে খনন কমিটি গঠন করা হয়। ওই খননে ব্যাপক অর্থ লুটপাট হয় বলে অভিযোগ রয়েছে। পরবর্তীতে এলাকাবাসীর মৌখিক অভিযোগের প্রেক্ষিতে সরকারের পক্ষ থেকে তদন্ত করে এদের বিরুদ্ধে দুর্নীতি মামলা দায়ের হয়। অজ্ঞাত কারণে তারা মামলা থেকে রেহাই পায়। এরপর ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর এই খাল খননের জন্য প্রায় ছাব্বিশ লাখ টাকা বরাদ্দ করা হয়। এ সময় খাল খনন না করে কাদামাটি তুলে খালের দুই পাশের বনজঙ্গল কাদামাটি দিয়ে ঢেকে দিয়ে এক সপ্তাহের মধ্যে কাজ শেষ করা হয়।
এলাকাবাসীর অভিযোগে জানা যায়, খাল খনন কমিটির সকল সদস্যকে ঘোল খাইয়ে এক নেতা এককভাবে সমস্ত অর্থ নিজ আয়ত্বে নিয়ে নেয় এবং সামান্য কতিপয় ওয়ার্ড পর্যায়ে নেতা-কর্মীদের মধ্যে ভাগ বাটোয়ারা করে দিয়ে সিংহ ভাগ নিজেই আত্মসাৎ করে। ফলে এলাকাবাসী ক্ষিপ্ত হয়।
২০০৮/০৯ সালে উপজেলা কর্তৃক চল্লিশ দিনের জন্য শতাধিক শ্রমিকের মাধ্যমে ইউনিয়ন উন্নয়ন কর্মকা-ের কার্যক্রম শুরু হয়। তখন প্রায় অর্ধকিলোমিটার এলাকা পাঁচ ফুট গভীর করে খনন কাজ বাস্তবায়ন করা হয়। এ কারণে সাত-আট বছর ভাল ছিল। গত দুই তিন বছর যাবৎ পলি মাটি পড়ে খালের উত্তর প্রান্ত ভরাট হয়ে গেছে। ফলে শৈলমারি স্লুইস গেট থেকে পানি সরবরাহ করলেও প্রয়োজন মোতাবেক পানি পাওয়া যাচ্ছে না। বেলায়েত হোসেন ও রেজা ফিরোজ বলেন, দ্রুত খালটি খনন করা আবশ্যক।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সাবেক এক বিএনপি নেতা বলেন, দুর্নীতি না হলে কৃষকদের এই সমস্যায় ভুগতে হতো না। তিনি বলেন, দুর্নীতি করে খাল খনন করে অর্থ হাতিয়ে নেওয়া হয়েছে। এরপর দুর্নীতিবাজরা রাজনীতি ছেড়ে ব্যবসায়ী সেজেছেন।
খর্ণিয়ায় জেলা পরিষদের পরাজিত
প্রার্থীর উপঢৌকন ও অর্থ ফেরত
খুলনা জেলা পরিষদ নির্বাচনের ৬ নম্বর ওয়ার্ড ডুমুরিয়ার খর্ণিয়ায় পরাজিত প্রার্থীদের কাছ থেকে নেওয়া অর্থ ও উপঢৌকন ফেরত দেয়ার ঘটনা ঘটেছে। জনপ্রতিনিধিদের এ ধরণের আচরণের খবর জানাজানি হলে এলাকায় চাঞ্চল্য দেখা দিয়েছে। উপজেলার রুদাঘরা, খর্ণিয়া, আটলিয়া, মাগুরাঘোনা ও শোভনা ইউনিয়ন নিয়ে জেলা পরিষদের ৬ নম্বর ওয়ার্ড গঠিত। এর আগে খুলনার আরো কয়েকটি স্থানে নির্বাচনে পরাজিত প্রার্থীদের অর্থ ফেরতের ঘটনা ঘটেছে।
জানা গেছে, নির্বাচনে সদস্য প্রার্থী হামিদুর রহমান চৌধুরী, মেহেদী হাসান বিপ্লব ও সংরক্ষিত আসনের সদস্য প্রার্থী রেহেনা আফরোজা জোছনা (শোভা)’র কাছ থেকে ভোট দেওয়ার কথা বলে ভোটাররা অর্থ ও উপঢৌকন গ্রহণ করেন। কিন্তু নির্বাচনে পরাজিত হলে এ সব প্রার্থীরা তাদের অর্থ ও উপঢৌকন ফেরত পাওয়ার দাবি করেন।
খর্ণিয়া ইউনিয়নের ৫ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য নেছার শেখ জানান, ‘হামিদুর আমাকে দশ হাজার টাকা দিয়েছিলেন, আমি সে টাকা ফেরত দিয়েছি।’
ভোটার পারুল বেগম জানান, ‘আমি হামিদুর’র লোক, সাইবালি’র কাছ থেকে দশ হাজার টাকা ফেরত দিয়েছি।’ ইউপি সদস্য শেখ মুজিবর রহমান বলেন, ‘আমি টাকা নিচ্ছিলাম না, জোর করে হামিদুর আমার বাড়ি টাকা রেখে এসেছিল।’
পরাজিত প্রার্থী হামিদুর রহমান চৌধুরী জানান, খর্ণিয়া ইউনিয়ন পরিষদের ভোটারা ভোট দেবে বলে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল। কিন্তু টাকা নিয়েও তারা ভোট দেয়নি। অর্থের কাছে নীতি, আদর্শ, ভালবাসা, মানবতার পরাজয় ঘটেছে। তিনি বলেন, আমি পরাজিত হওয়ার পর কয়েকবার খর্ণিয়া ইউনিয়ন পরিষদে গিয়েছি। কিন্তু আজ না কাল বলে তালবাহানা করেছে। তবে দু’এক দিনের ভেতর ওই টাকা তারা ফেরত দেবেন বলে জানিয়েছেন।