শাহজাদপুরে যমুনা চরে ভাড়ায় চালিত বাইক যোগাযোগে এনেছে নতুন মাত্রা
এমএ জাফর লিটন, শাহজাদপুর (সিরাজগঞ্জ) থেকে : প্রমত্তা যমুনা নদীর নাব্যতা সঙ্কটের কারণে বুক জুড়ে এখন ধূ ধূ বালুচর। তাই চরবাসীর চলাচলের একমাত্র বাহন নৌকা আর চলে না। নদীর বিভিন্ন বাঁকে বাঁকে জেগেছে অসংখ্য দ্বীপ চর। নদীর প্রবাহ এখন অনেক দূরে,মাইলের পর মাইল হেঁটে যাওয়া ছাড়া বিকল্প কোন পথ নাই চরবাসীর জন্য।
যমুনা চরে বসবাসকারী মানুষের যেন দুর্ভোগের কমতি নেই। নিত্য প্রয়োজনীয় সামগ্রী নিয়ে বালুকাময় দীর্ঘ পথ পাড়ি দিতে কত যে বেগ পেতে হয় তা শুধু চরবাসীরাই বোঝে। নদী গতি প্রকৃতি আর প্রবাহের বৈচিত্র্যতার কারণে কোথাও অথৈ পানি আর কোথাও শুকনো দ্বীপচর চরবাসীর যোগাযোগ ক্ষেত্রে বড় অন্তরায়। তবে যান্ত্রিকতার যুগে থেমে নেই চরবাসীর যোগাযোগেরও আধুনিকতা। শাহজাদপুর উপজেলার কৈজুরী ইউনিয়নের ঠুটিয়ার চর,ভাটদিগুলিয়ার চর, পাচিলের চর, সোনাতুনী ইউনিয়নের বানতিয়ার চর, চৌহালী উপজেলার ঘোরজান যাতায়াতের জন্য এখন ভাড়ায় চালিত বাইক যোগাযোগে নতুন মাত্রা যোগ করেছে। যমুনা নদীর পশ্চিমপাড়ের কৈজুরীর গুদারা ঘাট থেকে ট্রলার যোগে ঠুটিয়ার চরে নামলেই চোখে পড়ে ভাড়ায় চালিত বাইক নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকা বেশ কয়েকজনকে। একদম নদীঘাটে বাইক নিয়ে এসে ট্রলার থেকে নারী-পুরুষ নামার পর পরই জনপ্রতি ৫০ থেকে ১০০, ১০০-২০০টাকা ভাড়ায় পৌঁছে দেয় কাক্সিক্ষত গ্রামে। আঁকা বাঁকা বালুর পথ,কখনও সমতল,কখনও নদীর মোহনা দিয়ে নিরন্তর ছুটে চলে মটরবাইক। যতদূর চোখ যায় শুধু ধু ধু বালুর চর। আর মাঝে মাঝে দুএকটা বসতবাড়ী এই নিয়ে চরবাসীদের জীবন। ভাড়ায় চালিত বাইক দ্রুত গতিতে ছুটে চলে লক্ষস্থলের দিকে কারণ আবারও ফিরে আসতে হবে ধরতে হবে খেয়া নৌকা।
যমুনা চরে সচারচর নৌকার দেখা মেলেনা । তাই দিনে কয়েকবার যাতায়াত করে পশ্চিমপাড় থেকে যমুনা চরে খেয়া নৌকা। তাই নৌকার সাথে সাথে চলে মটর বাইকের ব্যবসাও। সঙ্গে থাকা হাল্কা মালামাল আর সর্বোচ্চ ৩ থেকে ৪জন নিয়ে চলে মটর বাইক। বাইক চালকরা প্রশিক্ষিত না হলেও পেশাদারিত্বে তারা বেশ পারদর্শী। কাঁচা,বালুর পথ মাড়িয়ে দ্রুতগতিতে ঝুঁকি নিয়ে ছুটে চলা কম পরিশ্রমের কাজ নয়। তবুও যেন কোন দুঃখ নেই বাইক চালকদের দিনে ২ লিটার পেট্রোল খরচ বাদে ৪ থেকে ৫শ টাকা আয় হচ্ছে তাদের। সড়ক মহাসড়কের চেয়ে এখানে বাইক চালানো নিরাপদ। কারণ দুর্ঘটনার কোন সম্ভবনা নেই। কারণ একেক পথে একেক বাইক তার পরেও বালু আর পানি। তবে বাইকগুলির যান্ত্রিক ত্রুটি দেখা দিলে যমুনার পশ্চিমপাড় কৈজুরী কিম্বা শাহজাদপুর শহর ছাড়া সার্ভিসিং করা যায়না। এ ক্ষেত্রে বেশ বেগ পেতে হয় বাইক চালকদের। তবে টাকা ৫০/১০০ ভাড়া হলেও চরের মানুষের পায়ে হাঁটা আর সময় বাঁচানোর ক্ষেত্রে ভাড়ায় চালিত বাইককেই বেছে নিচ্ছেন সবাই। চরবাসীর দীর্ঘদিনের যাতায়াত সমস্যার কিঞ্চিত হলেও লাঘব হয়েছে বলে জানান চরের যাত্রীরা।