বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪
Online Edition

হকারদের উচ্ছেদ করা হলে মেয়রকে উচ্ছেদ করা হবে

গতকাল শনিবার জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে বাংলাদেশ হকার্স ইউনিয়নের উদ্যোগে দশ দফা দাবিতে সমাবেশ ও বিক্ষোভ মিছিল কর্মসূচি পালন করা হয় -সংগ্রাম

স্টাফ রিপোর্টার : হকাররা শুধু সন্ধ্যার পর ফুটপাতে পণ্য নিয়ে বসবে- ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র সাঈদ খোকনের এই সিদ্ধান্ত মানা হবে না বলে ঘোষণা দিয়েছে হকারদের একটি সংগঠন। হকারদেরকে পুনর্বাসন ছাড়া উচ্ছেদের চেষ্টা করা হলে তা প্রতিহত করার ঘোষণাও দিয়েছেন তারা।
গতকাল শনিবার সকালে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে বাংলাদেশ হকার্স ইউনিয়নের ব্যানারে এই বিক্ষোভে দাবি করা হয়, হকারদের কারণে যানজট হয় না। এরপরও মেয়র হকারদের উচ্ছেদের চেষ্টা করলে তার পদই অনিশ্চয়তায় পড়বে।
প্রসঙ্গত, গত ১১ জানুয়ারি হকারদের একটি সংগঠন হকার্স ফেডারেশনের সঙ্গে ঢাকা দক্ষিণের মেয়র সাঈদ খোকনের মত বিনিময় সভায় সিদ্ধান্ত হয়, কর্মদিবসে হকাররা ফুটপাতে বসবেন না। মেয়র খোকন জানান, দিনের বেলায় মানুষের চলাচল যেন নির্বিঘ্নে থাকে, সে ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে অফিস ছুটির দেড় ঘণ্টা পর থেকে হকাররা পণ্য নিয়ে বসতে পারবে। এ সিদ্ধান্ত আজ রোববার থেকে কার্যকর হওয়ার কথা।
হকারদের উচ্ছেদে নানা চেষ্টা ব্যর্থ হওয়ার পর সিটি করপোরেশনের নতুন এই পরিকল্পনাও ভেস্তে যাবে কি না-সে নিয়ে প্রশ্ন তৈরি হয়েছে হকারদের একাংশের বিরোধিতার কারণে। হকার্স ফেডারেশনের সঙ্গে ওই মতবিনিময়ে আসা সিদ্ধান্ত মানছেন না হকারদের আরেক সংগঠন হকার্স ইউনিয়ন। এই সংগঠনের নেতাদের দাবি, ফেডারেশন হকারদের মূল সংগঠন নয়। সংগঠনটিকে মেয়রের দালাল হিসেবেও আখ্যা দেয়া হয় বিক্ষোভে।
সমাবেশে হকার্স ইউনিয়নের উপদেষ্টা সেকেন্দার হায়াত বলেন, রোববার সকালেই হকাররা ফুটপাতে বসবে। যদি তাদেরকে উচ্ছেদের চেষ্টা করা হয়, তাহলে আমরা অনির্দিষ্টকালের জন্য নগর ভবনের সামনে অবস্থান নেবো। সেকেন্দার হায়াত সন্ধ্যার পর পণ্য নিয়ে বসতে মেয়রের পরিকল্পনা প্রতিহত করার ঘোষণা দিয়ে বলেন, এই সময় বেচাকেনা কতটুকু হবে? এই আয় দিয়ে তাদের সংসার চালানো সম্ভব নয়। হকার নেতা সেকেন্দার হায়াত বলেন, আমাদের যতক্ষণ পর্যন্ত পুনর্বাসন না করা হবে, ততক্ষণ পর্যন্ত উচ্ছেদ করা যাবে না। তিনি বলেন, যেখানেই উচ্ছেদ, সেখানেই প্রতিরোধ করা হবে।
সমাবেশে হকার্স ইউনিয়নের আহ্বায়ক আব্দুল হাশেম কবীর বলেন, আমরা হকারদের উচ্ছেদের চেষ্টা কোনোভাবেই মেনে নেবো না। এরপরও যদি আমাদেরকে উচ্ছেদের চেষ্টা করা হয়, তাহলে নগরভবনে মেয়র থাকবেন কি না-এটাই প্রশ্ন।
 উল্লেখ্য, মেয়র খোকন হকার সংগঠনের সঙ্গে মতবিনিময়ে সুনির্দিষ্ট সময়ে হকার বসা ছাড়াও দুই হাজার ৫০৪ জন হকারকে পুনর্বাসনের পরিকল্পনা জানিয়েছিলেন। বলেছিলেন তাদেরকে দেশ বা বিদেশে চাকরির ব্যবস্থা করা হবে। তবে মেয়রের এই ঘোষণার তিন দিনের মাথায় বিক্ষোভে হকার্স ইউনিয়নের নেতারা দাবি করেন, এই ২৫০৪ চার জনের তালিকা একটি আইওয়াশ। তাদের দাবি, রাজধানীতে হকারদের সংখ্যা ১০ লাখ। পুনর্বাসন করলে করতে হবে সবাইকেই।
 এদিকে সমাবেশ যোগ দিয়ে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি-সিপিবির সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম হকার উচ্ছেদের পরিকল্পনা থেকে সরে আসার আহ্বান জানান। তিনি বলেন, ফুটপাতে ব্যবসা করতে না দিলে সারা ঢাকায় রাজপথ বন্ধ করে হকাররা ব্যবসা করবে। সেলিম বলেন, মেয়র ঘোষণা দিয়েছেন সাড়ে ছয়টার পর থেকে ফুটপাতে বসা যাবে। তার এই সিদ্ধান্ত যদি বাস্তবায়ন হয়, তাহলে হকাররা এক বেলা খাবারও যোগাড় হবে না। তাহলে তাদেরকে কি মেয়র খাওয়াবেন? না কি গণভবনে গিয়ে তারা খেয়ে আসবে?।
সিপিবি নেতা বলেন, হকারদের রুটি রুজির ব্যবস্থা করে দেবেন না আপনারা, তারা করে খাবে, সেটাও হতে দেবেন না-সেটা হবে না। গরিবের ওপর জুলুর কোনোভাবেই বরদাশত করা হবে না। হকারদের পুনর্বাসনের জন্য হকার্স মার্কেট করে দেয়ার দাবি জানিয়ে সেলিম বলেন, এটা শহর থেকে ১৫ কিলোমিটার দূরে করে দিলে হবে না। যেখানে কাস্টমার আছে, সেখানেই এই মার্কেট করতে হবে।
সড়ক মন্ত্রীর ঘোষণার পরদিনই রাস্তা আটকে সমাবেশ : রাজধানীতে সড়ক আটকে কোনো সভা-সমাবেশ বা কোনো কর্মসূচি পালন করা যাবে না-প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বরাত দিয়ে সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের এমন ঘোষণার পরদিনই রাজধানীতে সড়ক আটকে এই সমাবেশ করে হকার্স ইউনিয়ন। সমাবেশের আশেপাশে বিপুল সংখ্যক পুলিশ থাকলেও তারা কোনো বাধা দেয়নি। এই সমাবেশের কারণে প্রেসক্লাবের সামনের সড়কের এক পাশ দিয়ে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। এতে সাপ্তাহিক ছুটির দিনও যানজট তৈরি হয়।

অনলাইন আপডেট

আর্কাইভ