বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪
Online Edition

অধিকাংশ শেয়ারের দাম কমলেও লাগামহীনভাবে বাড়ছে সূচক

স্টাফ রিপোর্টার : দীর্ঘ ছয় বছর পর দেশের প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) দৈনিক লেনদেন ২ হাজার ১০০ কোটি টাকা ছাড়িয়েছে। এ দিন প্রধান সূচক বেড়েছে ৬৬ পয়েন্ট বা ১ দশমিক ১৯ শতাংশ। কিন্তু অধিকাংশ কোম্পানির শেয়ার ও ইউনিট দর কমেছে। বিশ্লেষকরা মনে করেন লাগামহীনভাবে বাড়ছে সূচক। এতে করে বিনিয়োগকারিদের মধ্যে রয়েছে এক ধরনের অজানা আতঙ্ক।
গতকাল মঙ্গলবারের লেনদেনে দেশের প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) অধিকাংশ কোম্পানির শেয়ার ও ইউনিট দর কমেছে। একইসঙ্গে আর্থিক লেনদেন কমেছে। তবে বেড়েছে মূল্যসূচক। ডিএসইর ওয়েবসাইট সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
এদিন ডিএসইতে ৩২৮টি কোম্পানির শেয়ার ও ইউনিটের লেনদেন হয়েছে। এর মধ্যে ১৯৯টি বা ৬১ শতাংশ কোম্পানির শেয়ার ও ইউনিটের দর কমেছে। আর ১১৪টি বা ৩৫ শতাংশ কোম্পানির দর বেড়েছে এবং ১৫টি বা ৪ শতাংশ কোম্পানির দর অপরিবর্তিত রয়েছে।
গতকাল মঙ্গলবারও ডিএসইর প্রধান সূচক ডিএসইএক্স যাত্রার ৪ বছরের সর্বোচ্চ অবস্থানে রয়েছে। এদিন ডিএসইর মূল্যসূচক ডিএসইএক্স ৩৮ দশমিক ৪৫ পয়েন্ট বেড়ে ৫৭০৮ দশমিক ২৫ পয়েন্টে দাড়িয়েছে। আগের দিন এ সূচক বেড়েছিল ৬৬ দশমিক ৯৫ পয়েন্ট।
ডিএসইতে ২ হাজার ১৩ কোটি ৪৫ লাখ টাকার শেয়ার ও ইউনিট লেনদেন হয়েছে। আগের দিন এ লেনদেনের পরিমাণ ছিল ২ হাজার ১৮০ কোটি ৭৯ লাখ টাকা। এ হিসাবে লেনদেন কমেছে ১৬৭ কোটি ৩৪ লাখ টাকার বা ৭ দশমিক ৬৭ শতাংশ।
টাকার অঙ্কে ডিএসইতে সবচেয়ে বেশি লেনদেন হয়েছে ইসলামি ব্যাংকের শেয়ার। এদিন কোম্পানির ৭৩ কোটি ১০ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে। লেনদেনে দ্বিতীয় স্থানে থাকা বেক্সিমকো’র ৬৩ কোটি ৫০ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে। ৬১ কোটি ৫ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেনে তৃতীয় স্থানে রয়েছে সামিট পাওয়ার। লেনদেনে এরপর রয়েছে- সিটি ব্যাংক, ন্যাশনাল ব্যাংক, লংকাবাংলা ফাইন্যান্স, বারাকা পাওয়ার, এক্সিম ব্যাংক, এবি ব্যাংক ও আরএকে সিরামিকস।
এদিন অপর শেয়ারবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) সিএসসিএক্স সূচক ৯৫ দশমিক ৪৮ পয়েন্ট বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১০৭৪১ দশমিক ৮৯ পয়েন্টে। এদিন সিএসইতে ১১৯ কোটি ৮২ লাখ টাকার শেয়ার ও ইউনিট লেনদেন হয়েছে। এদিন সিএসইতে লেনদেন হওয়া ২৭২টি ইস্যুর মধ্যে দর বেড়েছে ৯৫টি’র, কমেছে ১৬৫টি’র এবং অপরিবর্তিত রয়েছে ১২ টি’র।
জানা গেছে, দীর্ঘ ছয় বছর পর দেশের প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) দৈনিক লেনদেন ২ হাজার ১০০ কোটি টাকা ছাড়িয়েছে। সোমবার দিন শেষে ডিএসইতে মোট লেনদেন হয়েছে ২ হাজার ১৮০ কোটি টাকা। এর পাশাপাশি দিনের ব্যবধানে প্রধান সূচক বেড়েছে ৬৬ পয়েন্ট বা ১ দশমিক ১৯ শতাংশ।
এদিকে সূচক ও লেনদেনের এই উলম্ফনে বিনিয়োগকারীরা ফুরফুরে মেজাজে থাকলেও তাদের মধ্যে বাজারের ধারাবাহিকতা নিয়ে দ্বিধা-দ্বন্দ্ব দেখা গেছে। তাদের আশঙ্কা পুঁজিবাজারে আবারও ১৯৯৬ কিংবা ২০১০ সালের পরিস্থিতি ফিরে আসবে না তো? তবে বাজার-সংশ্লিষ্টরা বলছেন, পুঁজিবাজারের সার্বিক পরিস্থিতি এখনও বিনিয়োগকারীদের অনুকূলে। ফলে তাদের ভয়ের কিছু নেই।
প্রাপ্ত তথ্যমতে, গতকাল ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) ছয় বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ আর্থিক লেনদেন হয়েছে। একই সঙ্গে ডিএসইর প্রধান মূল্যসূচক ডিএসইএক্সও ইতিহাসের সর্বোচ্চ অবস্থানে উঠে গেছে। ডিএসইর ওয়েবসাইট সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
এদিন ডিএসইতে ২ হাজার ১৮০ কোটি ৭৯ লাখ টাকার শেয়ার ও ইউনিট লেনদেন হয়েছে, যা ২০১০ সালের ৭ ডিসেম্বরের মধ্যে সর্বোচ্চ। এ হিসাবে গতকালের লেনদেন বিগত ছয় বছর দেড় মাসের মধ্যে সবচেয়ে বেশি হয়েছে। এর আগে ২০১০ সালের ৬ ডিসেম্বর ২ হাজার ৭১০ কোটি ৬২ লাখ টাকার লেনদেন হয়েছিল। একই বছরের ৫ ডিসেম্বর শেয়ারবাজারের ইতিহাসে সর্বোচ্চ ৩ হাজার ২৪৯ কোটি ৫৮ লাখ টাকার লেনদেন হয়।
 বেশ কিছুদিন ধরে দেশের পুঁজিবাজারে ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা লক্ষ্য করা যাচ্ছে। সূচকের পাশাপাশি বাড়ছে অধিকাংশ কোম্পানির শেয়ারদর। ফলে আবারও পুঁজিবাজারমুখী হচ্ছেন সাধারণ বিনিয়োগকারীরা। এর সঙ্গে বাড়ছে বিও একাউন্ট সংখ্যা।
বাজার-সংশ্লিষ্টদের মতে, সব মিলে পুঁজিবাজারে এখন ইতিবাচক প্রবণতা অব্যাহত রয়েছে। তবে পুঁজিবাজারে ধারাবাহিক উত্থানে এর মধ্যে কিছুটা হলেও শঙ্কায় রয়েছেন বিনিয়োগকারীরা। তারা এই বাজারে বিনিয়োগ করবেন কি করবেন না, তা নিয়ে দ্বিধা-দ্বন্দ্বে রয়েছেন। কারণ ২০১০ সালে এমন বাজারে বিনিয়োগ করে তাদের চরম মূল্য দিতে হয়েছিল।
বিষয়টি নিয়ে আলাপ করলে এ বি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম বলেন, পুঁজিবাজার এখনই ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে গেছে, আমি সেটা মনে করছি না। নিয়ম অনুযায়ী, সূচক যদি প্রতিদিন ১ শতাংশের বেশি বৃদ্ধি পায়, তবে সেটাকে ঝুঁকিপূর্ণ বলা যায়। আমাদের বাজারে এখনও তা হচ্ছে না। তবে বর্তমানে ভালো শেয়ারের পাশাপাশি কিছু দুর্বল কোম্পানির শেয়ারদর বাড়ছে, এটা মোটেও স্বাভাবিক নয়। এসব কোম্পানিতে বিনিয়োগ খুবই ঝুঁকিপূর্ণ। আর ঊর্ধ্বমুখী বাজারে এসব কোম্পানি সুবিধা নেওয়ার চেষ্টা করে। তাই বিনিয়োগকারীদের এখনই সতর্ক থাকা দরকার। তিনি বলেন, বাজারে এখনও অনেক ভালো কোম্পানির শেয়ারে বিনিয়োগ করার সুযোগ রয়েছে। বিনিয়োগকারীদের উচিত সেসব কোম্পানিতে বিনিয়োগ করা।
একই বিষয়ে বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ আবু আহমেদ বলেন, পুঁজিবাজার টানা উত্থান বা পতন কোনোটাই ভালো নয়। তবে আমাদের পুঁজিবাজারের সার্বিক অবস্থা দীর্ঘদিন থেকে নাজুক। সেই বিবেচনায় বলতে গেলে বাজারে এখনও অস্বাভাবিক পরিস্থিতি আসেনি। তবে বাজার-সংশ্লিষ্ট যারা রয়েছে, তাদের উচিত হবে দুর্বল এবং জেড ক্যাটাগরির লাগাম এখনই টেনে ধরা। কারণ দুর্বলের পাশাপাশি কিছু মৌলভিত্তিসম্পন্ন কোম্পানির শেয়ার ইতোমধ্যে ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে গেছে। এসব কোম্পানির শেয়ারে মার্জিন সুবিধা বন্ধ করে দেওয়া দরকার।
অন্যদিকে বিষয়টি নিয়ে মন্তব্য চাইলে ডিএসইর সাবেক প্রেসিডেন্ট ও বর্তমান পরিচালক রকিবুর রহমান বলেন, আমি মনে করি, পুঁজিবাজার এখন স্বাভাবিক পর্যায়ে রয়েছে। লেনদেন ও সূচক রয়েছে স্বাভাবিক পর্যায়ে। তবে এর মধ্যে কেউ যাতে সুযোগ নিতে না পারে, সেজন্য সাধারণ বিনিয়োগকারীদের সতর্ক থাকার বিকল্প নেই।
তবে সংশ্লিষ্টরা আশার কথা বললেও বিষয়টি নিয়ে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে। কেউ কেউ এই বাজারকে স্বাভাবিক বললেও অধিকাংশ বিনিয়োগকারী এটাকে ‘অস্বাভাবিক’ বলে আখ্যায়িত করেছেন। তাদের মতে, বাজারে এখন যে পরিস্থিতি বিরাজ করছে, তাতে কাক্সিক্ষত কারেকশন জরুরি।
জানতে চাইলে শহিদুল ইসলাম নামে এক বিনিয়োগকারী বলেন, আমরা পুঁজিবাজারের বিনিয়োগ করি লাভের আশায়। সে কারণে বাজার ভালো থাকলে বা নিজের পোর্টফোলিওতে থাকা শেয়ারের দর বাড়লে ভালো লাগে। তবে টানা ঊর্ধ্বমুখী বাজার আমার কাছে ঝুঁকিপূর্ণ মনে হয়। অতীতে এমন বাজারে বিনিয়োগ করে অনেক বিনিয়োগকারী চরম মূল্য দিয়েছেন উল্লেখ করে তিনি বলেন, পুঁজিবাজারে মাঝে মধ্যে কাক্সিক্ষত কারেকশন দরকার।

অনলাইন আপডেট

আর্কাইভ