শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪
Online Edition

পিলখানা হত্যাকান্ডের জন্য দায়ী প্রধানমন্ত্রী

 

স্টাফ রিপোর্টার : পিলখানা হত্যাকা-ের জন্য প্রধানমন্ত্রীই দায়ী বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেন, বাংলাদেশের জাতীয় নিরাপত্তা ব্যবস্থাকে ভেঙে দেয়ার জন্য সুপরিকল্পিত ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে পিলখানা হত্যাকা- সংগঠিত হয়েছে। এ দেশের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্বের উপর বারবার আঘাত এসেছে। আমাদের গর্বিত সেনাবাহিনী তা প্রতিহত করেছে। কিন্তু দুর্ভাগ্য প্রথম তাদের উপরই আঘাত এসেছে। সেদিন তাদের পক্ষে কোনো ব্যবস্থা নেয়া সম্ভব হয়নি। আমরা মনে করি এর জন্য সম্পূর্ণ দায়ী বর্তমান প্রধানমন্ত্রী। গতকাল বুধবার দুপুরে জাতীয় প্রেস ক্লাব মিলনায়তনে ২০০৯ সালের ২৫ ও ২৬ ফেব্রুয়ারির ঘটনায় পিলখানায় শহীদ সেনা কর্মকর্তাদের স্মরণে বিএনপি আয়োজিত আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য লে. জেনারেল (অব:) মাহবুবুর রহমানের সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, ভাইস চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব:) রুহুল আলম চৌধুরী, সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, প্রচার সম্পাদক শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানী, নির্বাহী কমিটির সদস্য মেজর (অব:) মিজানুর রহমান মিজান। সভা সঞ্চালনা করেন বিএনপির সহ প্রচার সম্পাদক আলিমুল ইসলাম খান আলিম।

ফখরুল বলেন, ভবিষ্যতে পিলখানা হত্যাকা-ের প্রকৃত অপরাধী যারা, তাদেরকে বিচারের আওতায় আনা হবে। পিলখানায় নিহতদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করে মির্জা ফখরুল বলেন, পিলখানার ঘটনার দিনটি জাতির জন্য কলঙ্কময় দিন। এদিনে অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনকভাবে একটি সুপরিকল্পিত চক্রান্তের মাধ্যমে আমাদের জাতীয় নিরাপত্তা ব্যবস্থাকে ধবংস করে দেয়া এবং আমাদের সেনাবাহিনীর মনোবলকে ভেঙে দেয়ার জন্য এসব অকুতভয় সেনা কর্মকর্তাদের হত্যা করা হয়েছে। এটা বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। একটি মহল যারা কখনও বাংলাদেশকে স্বাধীন, সার্বভৌম ও সমৃদ্ধশালী দেখতে চায় না, তারাই সুচতুরভাবে এই ঘটনা ঘটিয়েছে।

এ সময় সরকারের একজন প্রভাবশালী মন্ত্রী ও প্রতিমন্ত্রীর প্রত্যক্ষ মদদে সারাদেশে পরিবহন ধর্মঘট হয়েছে বলে দাবি করেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল। তিনি বলেন, পরিবহন ধর্মঘটের পেছনে যিনি মদদ যোগাচ্ছেন তিনি সরকারের একজন প্রভাবশালী মন্ত্রী। সম্পূর্ণ ব্যক্তি ও দলীয় স্বার্থে পরিবহন ধর্মঘটের মাধ্যমে গোটা দেশে একটি অরাজক পরিবেশ সৃষ্টি করা হয়েছে। কিন্তু সরকার এই সমস্যা সমাধানে ব্যর্থ হয়েছে। দেশে কোনো সরকার আছে বলে মনে হয় না। আর যেটা আছে সেটা জনগণের প্রতিনিধিত্বশীল সরকার নয়, আছে দখলদার বাহিনীর মতো ।

চলমান পরিবহন শ্রমিক ধর্মঘট প্রসঙ্গে ফখরুল বলেন, উত্তরা থেকে আসার সময় দেখলাম রাস্তায় কোন পাবলিক পরিবহন নেই। অসম্ভব কষ্ট মানুষের। মহিলারাও এর থেকে রেহাই পাচ্ছে না। তিনি বলেন, গতরাতে (মঙ্গলবার) গাবতলিতে শ্রমিকদের সাথে পুলিশের গোলাগুলী হয়েছে। সংঘর্ষ হচ্ছে। আজকে (গতকাল) কিছুক্ষণ আগে খবর পেয়েছি পুলিশের গুলীতে একজন শ্রমিক মারা গেছেন। সমস্থ দেশের মানুষ আজকে চরম অস্থিতিশীল ও অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়েছে। এই সরকার শুধু ব্যক্তিগত ও দলীয় স্বার্থে গোটা দেশকে ধ্বংস করছে।

গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধির প্রতিবাদ জানিয়ে তিনি বলেন, এটা সম্পূর্ণ অনৈতিক ও অযৌক্তিক। উদ্দেশ্য একটিই, শুধু এলএনজির আমদানি করে তাদের লোকেরা বিক্রি করবে। ফখরুল অভিযোগ করে বলেন, আজকে বিচার বিভাগ, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও মিডিয়া সব নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা চলছে। উদ্দেশ্য একটাই একদলীয় শাসন কায়েম করবে। মিথ্যা মামলা দিয়ে গোটা দেশকে কারাগারে পরিণত করা হয়েছে। বেগম খালেদা জিয়াকে প্রতি সপ্তাহে কখনো একবার, কখনো দুইবার আদালতে যেতে হচ্ছে। তারা খালেদা জিয়াসহ বিএনপিকে রাজনীতি থেকে দূরে সরিয়ে রাখতে চায়।

তিনি বলেন, দেশের মানুষ গণতন্ত্রের জন্য সারাজীবন সংগ্রাম করেছে। মানুষ আগামীতেও গণতন্ত্রের জন্য সংগ্রাম করবে। জাতীয় নির্বাচন নিয়ে দলীয় অবস্থান পুনর্ব্যক্ত করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, নির্বাচন সম্পর্কে বিএনপির বক্তব্য স্পষ্ট। আমরা নির্বাচন চাই। কারণ বিএনপি একটি গণতান্ত্রিক দল। কিন্তু সেই নির্বাচন অবশ্যই নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে হতে হবে।

আলোচনায় গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, পরিবহন ধর্মঘটের নেপথ্যের নায়ক নৌ পরিবহন মন্ত্রী শাহজাহান খান। একজন বাসচালককে সাজা দিয়েছে আদালত। কিন্তু জনগণকে ব্লাকমেইল করে এখন সারাদেশে পরিবহন ধর্মঘট পালন করানো হচ্ছে। এর পেছনের মূল নায়ক কে তা এখন সবাই জেনে গেছে। পিলখানায় বিডিআর হত্যাকা-ের রহস্য চাপা থাকবে না দাবি করে গয়েশ্বর বলেন, যখন নির্বাচিত সরকার আসবে, সেই সরকার অবশ্যই বিডিআর হত্যার রহস্য উদঘাটন করতে পারবে। প্রমাণ হবে এর সঙ্গে কে বা কারা জড়িত ছিলো।

গয়েশ্বর বলেন, এই হত্যাকা-ের বিচার খোলা মাঠে হবে। যেসকল সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে তখনকার সময় সব সংবাদ সত্য না হলেও মিথ্যা নয়। বিদ্রোহের ঘটনা প্রকাশ হয়েছে। কিন্তু কিলিং স্কোয়াডে যারা জড়িত তাদের ব্যাপারে কিছু প্রকাশ করা হয়নি, তাদের বিচারও হয়নি। অনেকে বলেন, সরকারের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ সহযোগিতায় এদের কর্মসংস্থানও হয়েছে। বিডিআর বিদ্রোহের জন্য সাবেক সেনাপ্রধান মঈন ইউ আহমেদকে দায়ী করে তিনি বলেন, মঈন হলো এই হত্যাকা-ের মূল নায়ক। সরকারের নির্দেশে সেদিন সেনাবাহিনী বিডিআরদের রক্ষার জন্য যায়নি। বর্তমানে প্রশাসন জনগণ নয়, পুরোপুরি নিজেদের স্বার্থে সরকার ব্যবহার করছে।

তিনি বলেন, ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের পর এখন আবার নতুন করে সুর তুলেছে এই সরকারের অধীনেই নির্বাচনে যেতে হবে। কিন্তু আমরা পরিষ্কার করে বলতে চাই আমরা ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনে যাইনি। ভবিষ্যতেও নির্দলীয় ও নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশন ছাড়া কোনো নির্বাচনে যাবে না বিএনপি। বেগম খালেদা জিয়াকে ছাড়া সরকার নির্বাচন করতে চায় এমন অভিযোগ করে তিনি বলেন, তিনি এমন কী অপরাধ করেছেন যে তার সাজা হবে। তিনি নির্বাচন করতে পারবেন না। আমরা বলতে চাই বেগম খালেদা জিয়াকে ছাড়া নির্বাচনের চিন্তা অবাস্তব।

নিন্দা ও প্রতিবাদ : কুষ্টিয়া জেলাধীন দৌলতপুর উপজেলা জাতীয়তাবাদী যুবদল এর সাধারণ সম্পাদক মনিরুজ্জামান মুনতাজ, খলিসাকুন্ড ইউনিয়ন বিএনপি’র সাধারণ সম্পাদক আরোজউল্লাহ মাস্টারকে গ্রেফতার এবং আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের কর্তৃক বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীদের বাড়িতে বাড়িতে তল্লাশি’র ঘটনায় তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। গতকাল এক বিবৃতিতে বিএনপি মহাসচিব বলেন, সারাদেশে বিএনপিসহ বিরোধী দলীয় নেতাকর্মীদের পর্যদুস্ত করতে সরকার রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে বানোয়াট ও মিথ্যা মামলা দায়ের, গ্রেফতার এবং প্রতিনিয়ত আইন শৃঙ্খলা বাহিনী দিয়ে বিরোধী নেতাকর্মীদের বাসায় তল্লাশির নামে এক ভীতিকর অবস্থার সৃষ্টি করেছে। কুষ্টিয়া জেলাধীন দৌলতপুর উপজেলা জাতীয়তাবাদী যুবদল এর সাধারণ সম্পাদক মনিরুজ্জামান মুনতাজ, খলিসাকুন্ড ইউনিয়ন বিএনপি’র সাধারণ সম্পাদক আরোজউল্লাহ মাস্টারকে গ্রেফতার এবং আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের কর্তৃক বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীদের বাড়িতে বাড়িতে তল্লাশী’র ঘটনা তারই ধারাবাহিকতা। আমি বিএনপি নেতাকর্মীদের গ্রেফতার এবং বাড়িতে বাড়িতে তল্লাশির ঘটনায় তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই।

এদিবে ফেনী সদর উপজেলা বিএনপি’র সহ-প্রচার সম্পাদক মো: শাহজাহান সিরাজী রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত মামলায় আদালতে হাজিরা দিতে গেলে তার জামিন বাতিল করে কারাগারে প্রেরণ এবং সোনাগাজী উপজেলা যুবদলের সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক মো: আবুল কাশেম বানোয়াট মামলায় দীর্ঘদিন কারাভোগের পর জামিন পেলেও কারাফটক থেকে পুন: গ্রেফতারের ঘটনায় তীব্র প্রতিবাদ জানিয়ে বিবৃতি দিয়েছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। বিএনপি মহাসচিব বলেন, দেশটা এখন মগের মুল্লুকে পরিণত হয়েছে। আইন শৃঙ্খলা বাহিনীকে দিয়ে বন্দুকের জোরে দেশব্যাপী প্রতিদিনই বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের ওপর অবর্ণনীয় নির্যাতন-নিপীড়ণ চালানো হচ্ছে। বিরোধী নেতাকর্মীদের দমনে কুটকৌশলের আশ্রয় নিয়ে তাদেরকে জিম্মি করে সরকারি দলের নেতাকর্মীদের দ্বারা সংঘটিত অপরাধ অন্যের ঘাড়ে চাপানোর কুসংস্কৃতিতে বর্তমান শাসকগোষ্ঠী এখন চ্যাম্পিয়ন। তিনি মো: শাহজাহান সিরাজীকে কারাগারে প্রেরণ এবং মো: আবুল কাশেমকে কারাফটক থেকে পুণ:গ্রেফতারের ঘটনায় তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ এবং অবিলম্বে তাদের বিরুদ্ধে দায়েরকৃত বানোয়াট ও রাজনৈতিক প্রতিহিংসা হাসিলের মামলা প্রত্যাহার এবং তাদের নি:শর্ত মুক্তির জোর দাবি জানান।

অনলাইন আপডেট

আর্কাইভ