ভেঙ্গে ফেলতেই হচ্ছে বিজিএমইএ ভবন
স্টাফ রিপোর্টার : রাজধানীর হাতিরঝিলে বাংলাদেশ তৈরি পোশাক প্রস্তুত ও রপ্তানিকারক সমিতির (বিজিএমইএ) বহুতল ভবন ভাঙার আপিলের রায় পুনর্বিবেচনার (রিভিউ) আবেদন খারিজ করে দিয়েছেন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ। এর ফলে ভবনটি ভাঙা ছাড়া আর কোনো পথ থাকল না। তবে ভবনটি কত দিনের মধ্যে ভেঙে ফেলতে হবে তা জানা যাবে আগামী ৯ মার্চ। ওইদিনের মধ্যে বিজিএমইএ কর্তপক্ষকে আবেদন করতে হবে এবং আদালত আদেশ দিবেন।
গতকাল রোববার সকালে প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার (এস কে) সিনহার নেতৃত্বে আপিল বিভাগের তিন বিচারপতির বেঞ্চ রিভিউ আবেদন খারিজ করেন। বেঞ্চের অপর সদস্যরা হলেন বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী ও বিচারপতি মির্জা হোসেইন হায়দার।
আদালতে সরকার পক্ষে শুনানি করেন এটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম। বিজিএমইএর পক্ষে ছিলেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী কামরুল হক সিদ্দিকী। রিটের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী মনজিল মোরসেদ।
আদেশের পর সরকারের এটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম সাংবাদিকদের বলেন, এই ভবনটি দেশের রফতানি বাণিজ্যের সঙ্গে সম্পৃক্ত একটি গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা। ফলে বিজিএমইএর পক্ষ থেকে ভবনটি ভাঙার ব্যাপারে মৌখিকভাবে তিন বছরের সময় আবেদন করা হয়েছিল। আমরাও এক বছর সময় চেয়েছিলাম। আদালত বিজিএমইএকে বলেছে বৃহস্পতিবারের (৯ মার্চ) মধ্যে লিখিতভাবে আবেদন করতে। ওইদিনই আদালত বিজিএমইএকে ভবনটি ভাঙতে কতদিন সময় দেবে, সে বিষয়ে আদেশ দেবেন।
তিনি বলেন, ভবনটি হওয়ার সময়ই পরিবেশবাদীদের উচিত ছিল আদালতের দ্বারস্থ হওয়া। এখন ভবনটি হয়ে যাওয়ার পর এটি ঠিক না। এটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম আরও বলেন, চূড়ান্ত আইনি লড়াইয়ে হেরে যাওয়ায় বিজিএমইএ ভবনটি ভেঙে ফেলা ছাড়া আর কোনো পথ থাকল না।
এ সময় সাংবাদিকরা তার কাছে জানতে চান, বিজিএমইএ ভবনের ভিত্তিপ্রস্ত’র স্থাপন করেছিলেন একজন প্রধানমন্ত্রী আর উদ্বোধন করেছিলেন অপর এক প্রধানমন্ত্রী এ বিষয়ে আপনার মন্তব্য কী। জবাবে এটর্নি জেনারেল বলেন, এ বিষয়ে আমি কোনো মন্তব্য করতে চাই না। তবে, মনে হয় ওনাদের অবহিত করা হয়নি। যারা বিষয়টি জানতো তাদেরকে বাধা দেয়া উচিত ছিল।
এটর্নি জেনারেল বলেন, ওনারাতো রাষ্ট্রপ্রধান, তারা তো জানতো না, যারা এটার অনুমতি দিয়েছেন তারা তো বলেননি এটা জলাভূমি।
উল্লেখ্য, ১৯৯৮ সালের ২৮ নবেম্বর তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিজিএমইএ ভবনের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। ভবন নির্মাণ শেষ হলে ২০০৬ সালের ৮ অক্টোবর বিজিএমইএ ভবন উদ্বোধন করেন সে সময়কার প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া।
গত বছর ৮ নবেম্বর আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ রায়ে বলা হয়, বিজিএমইএ ভবন অবৈধ, অবিলম্বে এটি ভাঙ্গতে হবে। ভবন ভাঙ্গার যাবতীয় খরচ বিজিএমইএকেই বহন করতে হবে। বিজিএমইএ না ভাঙ্গলে রায়ের অনুলিপি পাওয়ার ৯০ দিনের মধ্যে রাজউককে ভবনটি ভেঙ্গে ফেলার নির্দেশ দেয় আপিল বিভাগ। এ জন্য যে অর্থ প্রয়োজন তা বিজিএমইএর কাছ থেকে নিতে বলা হয়েছে। বিজিএমইএর ‘লিভ টু আপিল খারিজের’পূর্ণাঙ্গ রায়ে এ নির্দেশ দেয় আপিল বিভাগ। পরবর্তীতে একমাস পর ৮ ডিসেম্বর রিভিউ আবেদন দায়ের করে বিজিএমইএ। রিভিউ আবেদনে আপিল বিভাগের রায় স্থগিত করে বহুতল ভবনটি ভেঙ্গে ফেলার জন্য তিন বছরের সময় চাওয়া হয়।
হাইকোর্ট ২০১১ সালের ৩ এপ্রিল ভূমির মালিকানা স্বত্ব না থাকা এবং ইমারত নির্মাণ বিধিমালা ও জলাধার আইন ভঙ্গ করায় বিজিএমইএর ভবন নির্মাণ অবৈধ ঘোষণা করে। রায়ে বলা হয়, বিজিএমইএ ভবনটি সৌন্দর্যমন্ডিত হাতিরঝিল প্রকল্পে ক্যান্সারের মতো। ২০১৩ সালের ১৯ মার্চ ৬৯ পৃষ্ঠার রায়ের পূর্ণাঙ্গ অনুলিপি প্রকাশের পর তার বিরুদ্ধে আপিল করে বিজিএমইএ। এরপর গত বছর ২ জুন আপিল বিভাগ সংক্ষিপ্ত রায় দিয়েছিল।
হাতিরঝিলের এ ভবনটি বাংলাদেশ তৈরি পোশাক প্রস্তুকারক ও রফতানিকারক সমিতির প্রধান কার্যালয় হিসেবে ব্যবহার হচ্ছে। ২০ বছর আগে বহুতলবিশিষ্ট বিজিএমইএ ভবন নির্মাণ করা হয়।
রাজউকের অনুমোদন ছাড়া বিজিএমইএ ভবন নির্মাণ বিষয়ে ২০১০ সালের ২ অক্টোবর একটি ইংরেজি দৈনিকে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। প্রতিবেদনটি আদালতের দৃষ্টিতে আনেন আইনজীবী ডি এইচ এম মুনিরউদ্দিন। বিষয়টি আমলে নিয়ে ওই বছরের ৩ অক্টোবর হাইকোর্টের একটি বেঞ্চ স্বঃপ্রণোদিত হয়ে বিজিএমইএ ভবন ভাঙার নির্দেশ কেন দেয়া হবে না এ প্রশ্নে সংশ্লিষ্টদের প্রতি রুল জারি করে। ওই রুলের উপর চূড়ান্ত শুনানি শেষে ২০১১ সালের ৩ এপ্রিল হাইকোর্ট বিজিএমইএ ভবন অবৈধ ঘোষণা করে রায় দেন।