আধমরাদের ঘা মেরে তুই বাঁচা
শুধু মনুষ্য-সমাজে জন্মগ্রহণের কারণে মানুষ শ্রেষ্ঠ হতে পারে না। শ্রেষ্ঠত্বের জন্য প্রয়োজন অভ্রান্ত ধর্ম-দর্শনের চর্চা। কিন্তু পরিতাপের বিষয় হলো, বর্তমান ভোগবাদী সভ্যতায় বস্তুবাদের তুলনায় ধর্ম-দর্শনের চর্চা হয় কম। আসলে বস্তু এবং ধর্ম এ দু’টি বিষয়ই মানবজীবনে গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু বর্তমান সভ্যতার সংকট হলো, যথা- বিষয়কে যথাস্থানে রাখার ক্ষেত্রে ব্যর্থতা। ধর্ম-দর্শনের আলোকে বস্তুর ব্যবহার হলে তা মানবজীবনে এবং সভ্যতায় অধিকতর কল্যাণকর বলে বিবেচিত হতে পারে। কিন্তু এ ক্ষেত্রে ত্রুটি থাকায় বর্তমান সভ্যতায় বিজ্ঞান-প্রযুক্তি মানবজীবনে এবং সভ্যতায় কাক্সিক্ষত অবদান রাখতে সক্ষম হচ্ছে কিনা সেই প্রশ্ন বড় হয়ে দেখা দিয়েছে। তবে এমন বাস্তবতায়ও কোনো কোনো সময় এমন কিছু উদাহরণ লক্ষ্য করা যায়, যাতে মনে হয় এখনো ধর্ম-দর্শনের গুরুত্বকে মানুষ স্বীকার করে।
পাকিস্তান অধিকৃত কাশ্মীরের সুপ্রীম কোর্টের নতুন প্রধান বিচারপতি চৌধুরী ইবরাহীম জিয়া ঘোষণা করেছেন, পদোন্নতির ক্ষেত্রে নামাজ শর্ত। সুপ্রীম কোর্টের যে সব কর্মকর্তারা নামাজে মনোযোগী হবেন কেবল মাত্র তাদেরই পদোন্নতি হবে। এর একটি ব্যাখ্যাও তিনি দিয়েছেন। বিচারপতি মহোদয় মনে করেন, নামাজ আল্লাহর ফরজ বিধান। প্রতিটি মুসলমানের জন্য নামাজ আদায় করা ফরজ। যারা আল্লাহর ফরজ বিধান গুরুত্বের সঙ্গে পালন করবেন, তারা নিজেদের কর্মস্থলের দায়িত্বও গুরুত্বের সাথে আদায় করবেন বলে আশা করা যায়। সুপ্রীম কোর্টের কর্মকর্তাদের নামাজ পড়ার বিষয়টি গোপনভাবে লক্ষ্য রাখা হবে বলেও তিনি ঘোষণা করেন।
নামাজ পড়ার বিষয়টিকে বিচারপতি মহোদয় যেভাবে গুরুত্ব দিয়েছেন তা ভেবে দেখার মত। বর্তমান সময়ে স্রষ্টার বিধিবিধান পালনে শুধু অন্যরা নয়, মুসলমানরাও কতটা গাফেল রয়েছে তা উক্ত ঘোষণা থেকে উপলব্ধি করা যায়। নামাজের গুরুত্ব ও লক্ষ্য সম্পর্কেতো মুসলমানদের জানা থাকার কথা। তাদের তো এ বিষয়টিও জানা থাকার কথা যে, কোনো সমাজে প্রকৃত অর্থে নামাজ কায়েম থাকলে সেই সমাজে অন্যায়, অশ্লীলতা ও দায়িত্বহীনতা বিরাজ করতে পারে না। মাননীয় বিচারপতি হয়তো তাঁর ঘোষণার মাধ্যমে ধর্ম-দর্শনের ব্যাপারে মানুষকে সচেতন করতে চেয়েছেন। বিচারপতির এই ঘোষণায় কবিতার একটি চরণের কথা মনে পড়ে গেল ‘আধমরাদের ঘা মেরে তুই বাঁচা।’ মুসলমানদের ফরজ ইবাদত নামাজ পড়ার জন্য এখন প্রশাসনিক ব্যবস্থা নিতে হয়। এমন অবস্থায় তাদের আধমরাদের সাথে তুলনা করলে খুব ভুল হবে কী?