শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪
Online Edition

২৯টি গ্রেনেডসহ বোমা তৈরির বিপুল পরিমাণ সরঞ্জাম উদ্ধার

মিরসরাই (চট্টগ্রাম) সংবাদদাতা : মিরসরাই পৌর সদরে জঙ্গিদের আস্তানা থেকে গ্রেনেডসহ বিপুল পরিমাণ বিস্ফোরক উদ্ধার করেছে কাউন্টার টেররিজম ইউনিট (সিসিটিসি ইউনিট) ও মিরসরাই থানা পুলিশ। মিরসরাই পৌরসভার ৬নং ওয়ার্ডের রিদওয়ান মঞ্জিলের একটি বাসা থেকে এসব বিস্ফোরক উদ্ধার করা হয়। তবে এ সময় বাসায় কাউকে পাওয়া যায়নি। বাসা থেকে ২৯টি অবিস্ফোরিত গ্রেনেড, ৪০টি পাওয়ার জেল, ২৮০টি প্যাকেট কার্বন স্টীলবল, ছোট-বড় ৯টি চাপাতি, ১১ কেজি বিস্ফোরক সদৃশ পাউডার, ৭টি কালো পাঞ্জাবি, কালো ব্যাগ ও একটি ব্যানারসহ বোমা তৈরির বিপুল পরিমাণ সরঞ্জাম উদ্ধার করা হয়।
আটককৃত জঙ্গিরা হলো, জহিরুল ইসলাম জসিম টাঙ্গাইল জেলার কালীহাতি উপজেলা সদরের এলেঙ্গা বাইপাস তিন রাস্তার মোড় এলাকার আব্দুল মজিদের ছেলে। অপরজন মাহমুদ হাসান বান্দরবন জেলার নাইক্ষাংছড়ি উপজেলার বাইসারি গ্রামের মৃত মোহাম্মদ হোসাইনের ছেলে।
পাঞ্জাবি ও ব্যানার আইএস ব্যবহারীত ব্যানার-পাঞ্জাবীর সাথে মিল রয়েছে। তবে চট্টগ্রাম পুলিশ সুপার নুরে আলম মিনা দাবি করেন গ্রেনেড আর কালো পাঞ্জাবী, পতাকা আইএসের নয়। স্থানীয় জঙ্গিরা আর্ন্তজাতিক জঙ্গিগোষ্ঠীদের নজর কাড়ার জন্য এসব ব্যবহার করে থাকে। আটকৃত জঙ্গিরা কোন সংগঠনের সাথে সম্পৃক্ত তা অনুসন্ধান করা হচ্ছে।
জানা গেছে, মঙ্গলবার ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে চলাচলরত অধিক গতিসম্পন্ন গাড়ি চিহ্নিতকরণে চান্দিনা উপজেলার কুটুম্বপুর এলাকায় হাইওয়ে পুলিশের অভিযান চলছিল। অভিযানের এক পর্যায়ে ইলিয়টগঞ্জ ফাঁড়ির সার্জেন্ট কামাল হোসেনের নেতৃত্বে অভিযান চলাকালীন সকাল সোয়া ১১টায় বান্দরবান থেকে ছেড়ে আসা ঢাকাগামী শ্যামলী পরিবহনের একটি বাসের অধিক গতি চিহ্নিত করে। পুলিশ গাড়িটি ধাওয়া করে থামানোর পর বাস থাকা যাত্রীদের তল্লাশী করে। এক পর্যায়ে যাত্রীবেশী দুই যুবক পুলিশকে লক্ষ্য করে তল্লাশী করার সময় মাহমুদ হাসান নামে একজন আল্লাহু আকবর বলে পুলিশকে লক্ষ্য করে গ্রেন্ডে ছুড়ে মারে। গ্রেনেড বিস্ফোরিত না হওয়ায় পুলিশ তাদের পেছনে ধাওয়া করলে, তারা গ্রেনেড ছোড়া অবস্থায় দৌঁড়ে একটি গ্রামের ভেতরে প্রবেশ করে। ওই সময় আত্মরক্ষার্থে পুলিশও পাল্টা গুলীবর্ষণ করে। একপর্যায়ে এলাকাবাসীর সহযোগিতায় গুলীবিদ্ধ অবস্থায় জসিমকে এবং আহত অবস্থায় মাহমুদ হাসানকে আটক করে পুলিশ। এসময় তাদের কাছ থেকে ৪টি বোমা ও ১টি ধারালো ছুরি উদ্ধার করা হয়। পরে তাদের স্বীকারোক্তিতে চট্টগ্রামের কয়েকটি জায়গায় তাদের আস্তানা আছে বলে তারা স্বীকার করে। সর্বশেষ ঢাকার কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিট, কুমিল্লা জেলা পুলিশ, চট্টগ্রাম জেলা পুলিশ ও সিএমপি’র বোম বিস্ফোরক ডিসপোজাল ইউনিট যৌথ ভাবে মঙ্গলবার গভীর রাত থেকে মিরসরাই পৌরসভার রিদওয়ান মঞ্জিলের নীচতলার পশ্চিম পার্শ্বের ফ্লাটে বুধবার সকাল দশটা পর্যন্ত অভিযান পরিচালনা করেন। রিদোয়ান মঞ্জিলের মালিক রেদওয়ান পৌর বিএনপির যুগ্ম আহ্বয়ায়কের দায়িত্বে রয়েছেন বলে জানা গেছে।
পরে বুধবার দুপুর আড়াইটার দিকে সিএমপি’র বোম বিস্ফোরক ডিসপোজাল ইউনিটের নেতৃত্বে অবিস্ফোরিত গ্রেনেডগুলো রিদওয়ান মঞ্জিলের পাশ্ববর্তী খোলা মাঠে ধ্বংস করা হয়।
রেদোয়ান মঞ্জিলের মালিক রেদোয়ানুল হক বলেন, চলতি বছরের ৩ ফেব্রুয়ারি কামাল ও জসিম নামের দুই ব্যক্তি বাসা ভাড়া নেয়। এ সময় তারা নিজেদের কাপড় ব্যবসায়ী বলে দাবি করেন। তারা বারইয়ারহাট পৌরসভা, জোরারগঞ্জ বাজার ও মিরসরাই পৌরসদরে কাপড় বিক্রী করেন বলে জানায়। বাসা ভাড়া নেওয়ার সময় কামাল তার একটি জাতীয় পরিচয়পত্র (আইডি কার্ড) দেন। আইডি কার্ড অনুযায়ী পুলিশ খোঁজ নিলে দেখা যায় সংশ্লিষ্ট এলাকায় এ নামে কেউ নেই। পরবর্তীতে পুলিশ অনুসন্ধানে বের করেন কামালের মূল নাম মাহমুদ হাসান। মাহমুদ হাসান তার বোন, এক বছর বয়সী সন্তান ও বোনের স্বামী সহ বাসায় উঠেন। সর্বশেষ গত ২৮ ফেব্রুয়ারি ওই মহিলা বাসা থেকে চলে যান। মাহমুদ ও জসিম মঙ্গলবার সকালে বাসা থেকে বের হয়ে যান।
তিনি আরো জানান, ভাড়া দেয়ার পর থেকে তাদের মাঝে জঙ্গি বা উগ্রপন্থী তৎপরতার কোন আলামাত দেখা যায়নি। তারা অন্যান্য ভাড়াটিয়ার মতো স্বাভাবিক চলাফেরা করতো।
মিরসরাই পৌরসভার মেয়র গিয়াস উদ্দিন বলেন, মিরসরাই একটি সম্ভাবনাময় এলাকা। এখানে অস্থিতিশীল করার জন্য ষড়যন্ত্রকারীরা এসব করছে। যে বাড়িটিতে গ্রেনেড ও বিস্ফোরক দ্রব্য পাওয়া গেছে ওই ভবনের মালিক বিএনপি নেতা। তাছাড়া গ্রামটি বিএনপি-জামায়াত অধ্যুশিত এলাকা। এখানে ৫ জানুয়ারি নির্বাচনের আগে মহাসড়কে বিএনপি জামায়াত নাশকতা তৈরি করেছিলো।
বুধবার দুপুর ঘটনাস্থলে সাংবাদিক সম্মেলনে চট্টগ্রাম পুলিশ সুপার নুরে আলম মিনা জানান, কুমিল্লার চান্দিনায় বোমাসহ আটক দুই জঙ্গি মাহমুদ হাসান (৩০) ও জসিমের (৩২) স্বীকারোক্তি অনুযায়ী কাউন্টার টেররিজম টিম রাতভর অভিযান পরিচালনা করে। আন্তর্জাতিক কোন জঙ্গি সংগঠনকে তারা অনুসরণ করছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। তবে কোন সংগঠন তা তিনি বলতে পারেননি। এ পর্যন্ত এ চক্রের নারীসহ তিনজনকে আটক করা হয়েছে। তিনি আটককৃত মহিলার নাম তাৎক্ষণিক জানাতে পারেননি। তাদের স্বীকারোক্তির আলোকে জানা যায় চক্রের সঙ্গে আরো ৮/৯ জন জড়িত রয়েছে। তারা গত মঙ্গলবার সকালে মিরসরাই পৌর সদরের বাস স্ট্যান্ড থেকে ঢাকাগামী শ্যামলী পরিবহনে উঠে। তিনি আরো জানান, মিরসরাই পৌরসভার রিদওয়ান ভবনে কোন আস্তানা বা প্রশিক্ষণ কেন্দ্র নয়। তারা বিভিন্ন জায়গায় ভাড়া নেয়। এটা তাদের কৌশল। এখানে আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। জঙ্গিরা যেখানে আশ্রয় নেবে বা আস্তানা করবে সেখান থেকে তাদের আটক করা হবে। আইএস গেঞ্জি, ব্যানার তারা ওয়ার্ডওয়াইডের ভ্যালু থাকায় হয়তো ব্যবহার করা হয়েছে। এক্ষেত্রে তদন্ত করে বলা যেতে পারে। এরা সবাই জঙ্গি। এরা কোন গ্রুপের সাথে জড়িত তা তদন্ত স্বাপেক্ষে জানা যাবে।
কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিট (সিসিটিসি ইউনিট) অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আব্দুল মান্নান বলেন, গুলশানের হলি আর্টিজানে হামলায় জঙ্গিরা যে ধরনের গ্রেনেড ব্যবহার করেছিল, মিরসরাইয়ের আস্তানায় পাওয়া গ্রেনেডের সাথে মিল রয়েছে। আস্তানায় কাউকে পাওয়া যায়নি। ভাড়া করা বাসাটি থেকে বিপুল পরিমাণ অবিস্ফোরিত গ্রেনেড ও বোমার সরঞ্জামাদি উদ্ধার করা হয়েছে।
সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন, চট্টগ্রাম অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (উত্তর) মশিউ দৌলা রেজা, র‌্যাব-০৭ ফেনী ক্যাম্পের স্কোয়াডডন লিডার সাফায়াত জামিল ফাহিম, মিরসরাই উপজেলার (ভারপ্রাপ্ত) চেয়ারম্যান ইয়াসমিন আক্তার কাকলী, মিরসরাই উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) জিয়া আহমদ সুমন, সহকারী পুলিশ সুপার (মিরসরাই) মাহবুবুর রহমান, মিরসরাই পৌরসভার মেয়র গিয়াস উদ্দিন, মিরসরাই থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সাইরুল ইসলাম।

অনলাইন আপডেট

আর্কাইভ