বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪
Online Edition

কলাম্বিয়ায় পলিমাটিতে চাপা পড়ে ২৫৪ জনের মৃত্যু

২ এপ্রিল, বিবিসি/গার্ডিয়ান : কলাম্বিয়ার মোকোয়া এলাকার বাসিন্দা ২৯ বছর বয়সী এদুয়ান্দো ভারগাস। গত শুক্রবার দিনগত রাতে স্ত্রী ও সাত মাস বয়সী সন্তানসহ ঘুমোচ্ছিলেন। হঠাৎ দরোজায় কড়া নাড়ার শব্দে জেগে ওঠেন তিনি। শুনতে পান লোকজন আতঙ্কে আর্তনাদ করছে। পরিস্থিতির ভয়াবহতা বুঝতে পেরে পরিবারের সদস্যদের আঁকড়ে ধরে ছোট একটি পাহাড়ের দিকে ছুটে গেলেন ভারগাস। তাদেরই মতো এমন আরও প্রায় ২৪টি পরিবার ওই পাহাড়ে আশ্রয় নেয়। রাতে ওইভাবে বসে থাকার পর শনিবার সকালে সেনা সদস্যরা এসে উদ্ধার করেন তাদের। এলাকায় ফিরে ভারগাস দেখেন তাদের ফেলে যাওয়া ঘর-বাড়ি কিছুই নেই। সবই চাপা পড়ে আছে মাটির নিচে। এদুয়ান্দো ভারগাসের মতো ওই পাহাড়ে আশ্রয় নেওয়া পরিবারগুলো প্রাণে বেঁচে গেলেও ভূমিধস আর বন্যার পানির সঙ্গে আসা পলিমাটিতে চাপা পড়েন এলাকার শত শত বাসিন্দা।
রাতভর ভারি বৃষ্টিপাতে কলম্বিয়ার পুতুমাযাে প্রদেশের নদীর পানি উপচে মোকোযা শহর প্লাবিত হয। শনিবার ভোরের দিকে বহু ঘরবাডি মাটির নিচে চাপা পড়ে। কলম্বিয়ার ২০০ বছরের ইতিহাসে এ ঘটনাকে সবচেয়ে ভয়াবহ বিপর্যয় বলে মনে করা হচ্ছে। এখন পর্যন্ত ওই ঘটনায় ২৫৪ জনের মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করেছে দেশটির সেনাবাহিনী। তাছাড়া দুই শতাধিক মানুষ এখনও নিখোঁজ রয়েছে। নিখোঁজদের জীবিত অবস্থায় উদ্ধারকে প্রাধান্য দিয়ে এখন তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছেন উদ্ধারকারীরা।একদিন আগেও যা ছিল প্রাণচঞ্চল, ঘরবাড়িতে ভরা, সেই মোকোয়া শহর এখন কেবলই পলিমাটিতে ঢাকা। তিনটি নদী থেকে ছুটে আসা বন্যার পানিতে থাকা পলিমাটি, পাথর আর কাঠের তক্তায় ঢেকে গেছে পুরো এলাকা। আর তার নিচে চাপা পড়েছেন শত শত মানুষ। উদ্ধার হচ্ছে একের পর এক মরদেহ। বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন থাকায় শনিবার রাতে আলোক স্বল্পতা দেখা দেয়। আর তাতে উদ্ধার তৎপরতা স্থগিত করতে বাধ্য হন উদ্ধারকারীরা। গতকাল রোববার দিনের আলো ফোটার সঙ্গে সঙ্গে আবারও শুরু হয় অভিযান। বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়, প্রায় ১,১০০ সেনা ও পুলিশ ওই উদ্ধার তৎপরতায় অংশ নিয়েছে। উদ্ধার হওয়া লাশগুলোকে একটি অস্থায়ী মর্গে স্থানান্তর করা হচ্ছে। মার্কিন বার্তা সংস্থা এপি জানিয়েছে, লাশগুলো শনাক্ত করতে তিনটি মেডিক্যাল টিম কাজ করছে। মেডিক্যাল টিমকে নেতৃত্ব প্রদানকারী সংস্থা ন্যাশনাল ইন্সটিটিউট অব লিগ্যাল মেডিসিন এন্ড ফরেনসিক সায়েন্স-এর পরিচালক কার্লোস ভালদেস বলেছেন, ‘তারা দিনে ২৪ ঘণ্টা কাজ করতে যাচ্ছেন।’ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম গার্ডিয়ান জানায়, মোকোয়া শহরটিতে ৩ লাখ ৪৫ হাজার মানুষের বসবাস। ইতোমধ্যেই দুর্গত এলাকা পরিদর্শন করেছেন দেশটির প্রেসিডেন্ট হুযান ম্যানুযলে সান্তোস। তিনি ওই এলাকায জরুরি অবস্থাও ঘোষণা করেছেন। শহরটির গভর্নর সরেল আরোকা কলম্বিযার সংবাদমাধ্যমকে জানিযেেছন, আশেপাশের সব এলাকা মাটিতে চাপা পডে গেছে। শহরটি ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে। উদ্ধারকর্মীরা জানিয়েছেন, খারাপ আবহাওযার কারণে এবং রাস্তাঘাট ভেঙে পডায় উদ্ধার তৎপরতা ব্যাহত হচ্ছে। এক পুলিশ কর্মকর্তা জানিয়েছেন, মোকোয়া শহরের প্রায় ৮০ শতাংশ রাস্তা ভেঙে পড়েছে। এ ঘটনায় শোক প্রকাশ করেছেন বিভিন্ন দেশের নেতারা। মেক্সিকো, আর্জেন্টিনা এবং ফ্রান্স উদ্ধার কাজে ও ত্রাণ তৎপরতায় সাহায্যের কথা জানিয়েছে। দেশটির আবহাওয়া কার্যালয় জানিয়েছে, ২০১১ সালের পর চলতি মার্চ মাসেই সবচেয়ে বৃষ্টিপাত হয়েছে কলম্বিয়াতে। পুতুমায়ো ইকুয়েডর ও পেরু সীমান্তে অবস্থিত। চলতি বছরের শুরুতে ভারী বৃষ্টিপাতের কারণে পেরুতে বন্যা ও ভূমিধসে ৯০ জনেরও বেশি মানুষ প্রাণ হারিয়েছেন।

অনলাইন আপডেট

আর্কাইভ