শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪
Online Edition

বেনাপোলে অযতেœ অবহেলায় নষ্ট হচ্ছে আমদানিকৃত গাড়ি

 

খুলনা অফিস ঃ বাংলাদেশ-ভারতের মধ্যে সহজ ভাবে আমদানি রফতানি বাণিজ্যের প্রধান সড়ক পথ বেনাপোল স্থলবন্দর। এ বন্দর থেকে সরকার প্রতিবছর পরোক্ষ ও প্রত্যক্ষ ভাবে ১০ হাজার কোটি রাজস্ব পেয়ে থাকে। আমদানি রফতানিকারকরা সীমান্ত দিয়ে প্রতিবছর প্রায় ২০ থেকে ২৫ হাজার কোটি টাকার পণ্য আমদানি রফতানি করে থাকে। ভারতের সাথে সহজ যোগাযোগের জন্য প্রায় ১৩ থেকে ১৪ লাখ পাসপোর্ট যাত্রী যাতায়াত করে থাকে।

বেনাপোল স্থল বন্দর দেশের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখলেও বন্দরের অবকাঠামোগত উন্নয়ন না হওয়ায় ব্যবসায়িরা ক্ষোভ প্রকাশ করেছে। এ কারণে ব্যবসায়িক কার্যক্রমের জন্য বোনাপোল স্থলবন্দর আসলে এক অনুপযোগী বন্দরে পরিণত হতে চলেছে। এই বন্দরের ধারণক্ষমতা কম। এখানে পণ্যজট অসহনীয়। বন্দরে ট্রাকজটও পীড়াদায়ক। আর পণ্য লোডিং-আনলোডিং-এর জন্য পর্যাপ্ত যন্ত্রপাতি ও সরঞ্জাম (ইক্যুইপমেন্ট) নেই এখানে। তাই ব্যবসা বাণিজ্যে অনেকটা মন্দাভাব বিরাজ করছে এমন অভিযোগ ভুক্তভোগী  ব্যবসায়ীদের। টার্মিনালের অভাবে আমদানি রফতানি পণ্য ট্রেন লাইনের খাদে পড়ে রয়েছে। বন্দর ব্যবহারকারী ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, আমদানিকৃত গাড়ি ট্রেন ও লিংরোডের খাদে থাকায় চুরির ভয় রয়েছে। গাড়ি থেকে অনেক সময় ব্যাটারি সহ ছোট ছোট পার্টস দুর্বৃত্তরা নিয়ে যায়। ব্যবসায়ীরা বলছেন, বন্দরের পণ্য লোডিং-আন লোডিং-এর জন্য পর্যাপ্ত ক্রেন নেই এখানে। যে পরিমাণে পণ্য আসছে সেগুলো রাখার জন্য পর্যাপ্ত জায়গাও নেই বন্দরটিতে। এছাড়াও অসহনীয় যানজটের কারণে সঠিক সময় আমদানিকারকরা সঠিক সময়ে পণ্য বুঝে পাচ্ছেন না।

বেনাপোল সিএ্যান্ডএফ এসোসিয়েশনের সভাপতি মো. মফিজুর রহমান সজন বলেন, বেনাপোল স্থলবন্দর এ দেশের একটি গুরুত্বপূর্ণ বন্দর। স্থলবন্দরটি খুবই অচলবস্থার মধ্যে দিয়ে খুঁড়িয়ে চলছে। ধীরে ধীরে বন্দরটি ব্যবসায়িক কার্যক্রমের অনুপযোগী হয়ে পড়ছে। এই বন্দরকে আরও গতিশীল করে তোলার জন্য প্রথমেই দুর করতে হবে জায়গা সংকট। জায়গা সংকটের কারণে অনেক পণ্য রাখা যাচ্ছে না। অনেক পণ্যের প্রবেশে বিলম্ব হচ্ছে। এ কারণে ভারতের পেট্রাপোল বন্দরে অনেক গাড়িকে বেনাপোলে প্রবেশের জন্য দীর্ঘ অপোয় থাকতে হয়।

তিনি বলেন, বেনাপোল স্থলবন্দরকে বাণিজ্যের উপযোগী করে তুলতে এর ধারণমতা বাড়াতে হবে। পাশাপাশি নির্মাণ করতে হবে প্রয়োজনীয় অবকাঠামো। বাড়াতে হবে বন্দরের ইক্যুইপমেন্ট। যোগ করতে হবে অত্যাধুনিক নতুন ইক্যুইপমেন্ট। এ বিষয়ে সরকার যদি দ্রুত পদপে গ্রহণ না করে, তাহলে বন্দরটির কর্মচাঞ্চল্য কমতে কমতে এটি খুব শিগগিরই অচল হয়ে পড়বে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গুরুত্বপূর্ণ এই বন্দরের ধারণক্ষমতা মাত্র ৩৬ হাজার মেট্রিক টন। রয়েছে ৪০টি শেড/গোডাউন। তবে এই বন্দরে বর্তমানে হ্যান্ডলিং করা হচ্ছে এক থেকে দেড় লক্ষ মেট্রিক টন পণ্য। জায়গা সংকটের জন্য অনেক পণ্য রাখা যাচ্ছে না। সেগুলো রোদবৃষ্টিতে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে।

ভারত থেকে আসা এক হাজার থেকে ১২’শ পণ্য বোঝাই গাড়ি বেনাপোল স্থলবন্দর দিয়ে প্রতিদিন বাংলাদেশে প্রবেশ করার কথা। কিন্তু প্রবেশ করতে পারছে মাত্র ৩-৪শ গাড়ি। বেনাপোল স্থলবন্দর এদিকে, প্রতিদিনই প্রায় ৫শ’ গাড়ি পেট্রাপোল থেকে বেনাপোলে প্রবেশের অপেক্ষায় থাকছে।

ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, বেনাপোলে প্রবেশের জন্য পণ্যবাহী গাড়ি পেট্রোপোলে দাঁড়িয়ে থাকে বলে সঠিক সময় ওই আমদানি পণ্য পাওয়া যাচ্ছে না।

এদিকে, প্রতিদিন তিন হাজার টাকা অতিরিক্ত গুণতে হয় গাড়ি ভাড়া। কোনো কোনো গাড়ি ১০ দিনও প্রেট্রোপোলে দাঁড়িয়ে থাকছে। অতিরিক্ত এই টাকা গুণতে হচ্ছে বলেই ব্যবসায় লোকসান হচ্ছে। এর সঙ্গে নষ্ট হচ্ছে আমদানি করা পণ্য এবং মূল্যবান সময়।

বেনাপোল স্থলবন্দরে আসা পণ্য লোডিং-আনলোডিং-এর জন্য মাত্র পাঁচটি ক্রেন ও পাঁচটি ফর্কলিফট রয়েছে। তবে এদের মধ্যে একটি সচল থাকলেও বাকি চারটি প্রায়ই অচল অবস্থায় থাকে বলে অভিযোগ ব্যবসায়ীদের।

ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, বেনাপোল কাস্টমসে ফাইল এন্টি করতে গেলেও বিভিন্ন ওযুহাত দিখিয়ে নিচ্ছে মোটা অংকের টাকা। টাকা না দিলে ফাইল নিচে থেকে উপরে পাঠিয়ে দেয়া হয়। আর উপরে ফাইল গেলে বিভিন্ন যাচাই বাছাই করতে আরো ১০ থেকে ২০ দিন সময় লেগে যায়।

বেনাপোল আমদানি-রফতানি সমিতির সিনিয়র সহ-সভাপতি আমিনুল হক বলেন, বেনাপোল বন্দরে পণ্য লোড-আনলোড করার জন্য একটি ক্রেন ব্যবহার করা হচ্ছে। বাকিগুলো ঠিকভাবে কাজ করছে না। এই বিষয়ে বন্দর কর্তৃপকে বারবার জানানো হলেও তারা কার্যকরী কোনো পদপে নিচ্ছেন না। এতে করে আমাদের মত অনেক ব্যবসায়ী এই বন্দর ছেড়ে অন্য বন্দরে চলে যাচ্ছে।

এ ব্যাপারে বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপরে (বেনাপোল) পরিচালক (ভারপ্রাপ্ত) মো. আমিনুল ইসলাম  বলেন, বন্দরের জায়গা সংকট ও ইক্যুইপমেন্ট স্বল্পতার বিষয়ে ব্যবসায়ীরা আমাদের জানিয়েছেন। এই সমস্যাগুলো সমাধানে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য আমরা চেষ্টা করছি।

অনলাইন আপডেট

আর্কাইভ