শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪
Online Edition

আবারও ‘একতরফা খেলা’র মাধ্যমে নির্বাচনী বৈতরণী পার হওয়ার ষড়যন্ত্র করছে আ’লীগ

গতকাল মঙ্গলবার বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে সাংবাদিক সম্মেলনে বক্তব্য রাখেন- সংগ্রাম

স্টাফ রিপোর্টার : ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ আবারও ‘একতরফা খেলা’র মাধ্যমে নির্বাচনী বৈতরণী পার হওয়ার ‘ষড়যন্ত্র’ করছে বলে অভিযোগ করেছে বিএনপি। গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে দলের নয়াপল্টনের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত এক সাংবাদিক সম্মেলনে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এই অভিযোগ করেন। তিনি বলেন, ওয়ান ইলেভেনের সময়ের আওয়ামী লীগের সব মামলা তুলে নেয়া হয়েছে, বিএনপির প্রত্যেকটি মামলা আবার নতুন করে চালু করা হচ্ছে। এই সরকার রাজননৈতিকভাবে দেউলিয়া হয়ে গেছে বলেই এই মামলা-মোকাদ্দমা করে বিএনপিকে মোকাবিলা করতে চায়। আমরা সরকারকে বার বার বলেছি, আসুন-খোলা ময়দানে, সমান্তরাল ময়দানে একসাথে খেলি। সেটার মধ্যে তারা নেই। তারা আমাদের সবাইকে জেলের মধ্যে ঢুকিয়ে রেখে দিয়ে একতরফা খেলতে চায়। আমরা স্পষ্ট করে বলতে চাই, এই খেলা কখনই এদেশের মানুষ গ্রহণ করবে না। প্রেস ব্রিফিংয়ে ভারত থেকে আসা নদীর ঢল ও অতিবৃষ্টিতে নেত্রকোণা, কিশোরগঞ্জ, সুনামগঞ্জ, হবিগঞ্জের হাওর অঞ্চলের বিস্তৃর্ণ এলাকা প্লাবিত হয়ে ফসলহানির বিষয়টি তুলে ধরা হয়। গত ১৫ এপ্রিল বিএনপি মহাসচিব ওইসব এলাকা পরিদর্শন করে দুর্গত মানুষের মধ্যে ত্রাণ বিতরণ করেন।

সাংবাদিক সম্মেলনে বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা সৈয়দ মো. আলমগীর, সাংগঠনিক সম্পাদক রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু, সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স, সাখাওয়াৎ হোসেন জীবন, বিলকিস শিরিন, আইন বিষয়ক সম্পাদক কায়সার কামাল, কেন্দ্রীয় নেতা আবদুল বারী ড্যানি, রাবেয়া আলী, রফিকুল ইসলাম হেলালী, চৌধুরী আবদুল্লাহ আল ফারুক প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন

মির্জা ফখরুল বলেন, আমরা এখন পর্যন্ত যে তথ্য পেয়েছি সুনামগঞ্জ, নেত্রকোনা, কিশোরগঞ্জ, মৌলভীবাজার, হবিগঞ্জের হাওর এলাকার প্রায় তিন লাখ হেক্টর জমির ফসল সম্পূর্ণভাবে বিনষ্ট হয়ে গেছে এবং প্রায় ১০ লাখ টন চাল উৎপাদন হতো তা সম্পূর্ণ নষ্ট হয়ে গেছে। এসব এলাকায় লাখ লাখ লোকজন ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে চরম মানবিক বিপর্যয়ের মধ্যে আছেন। সরকারি ত্রাণ তৎপরতা লোক দেখানো ও অপ্রতুল। দুর্গত মানুষরা কিভাবে খেয়েপরে বাঁচবে, কিভাবে ঋণ পরিশোধ করবে- তা ভেবে মানবেতর দিন যাপন করছেন। হাওর অঞ্চলকে দুর্গত এলাকা ঘোষণা, প্রশাসনের উদ্যোগে দলমত নির্বিশেষে কমিটি গঠন করে ক্ষতিগ্রস্তদের প্রকৃত তালিকা প্রণয়ন করে পরবর্তী ফসল না হওয়া পর্যন্ত তাদের ত্রাণ প্রদান, পুরাতন কৃষি ঋণ মওকুফ, আগামী ফসল উৎপাদনের জন্য সুদবিহীন কৃষি ঋণ প্রদান, কৃষকদের মধ্যে বিনামূল্যে সার, বীজ, কীটনাশক, তেলসহ কৃষি উপকরণ সরবারহ, দুর্গত এলাকায় ক্ষতিগ্রস্ত বাঁধ দ্রুত পুণঃনির্মাণ এবং সেখানে স্থায়ী বাঁধ নির্মাণ, নদীসমূহের ড্রেজিং ইত্যাদি দাবি জানান মির্জা ফখরুল।

বিএনপি মহাসচিব বলেন, ভারত থেকে আগত ৫৪টি নদীর পানি প্রবাহের ন্যায্য চুক্তি করতে হবে। উজানে ভারত ওইসব নদীর পানি নিয়ন্ত্রণ করছে। বর্ষা মওসুমে পানি ছেড়ে দেয় অন্যদিকে শুস্ক মওসুমে পানি আটকে দিচ্ছে। এ বছর ক্ষমতাসীনদের দুর্নীতির কারণে ওইসব এলাকার নদীর বাঁধসমূহ ‘যথাযথ সংস্কার’ হয়নি বলে অভিযোগ করেন তিনি।

সারাদেশে নেতা-কর্মীদের নতুন করে হয়রানি করার অভিযোগ করে সম্প্রতি কারাগারে যাওয়া দলের ভাইস চেয়ারম্যান ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু, নির্বাহী কমিটির সদস্য সাইদুর রহমান বাচ্চু, নাটোর জেলা নেতা বাবলু চেয়ারম্যান, আজিজুর রহমান মেম্বার, নওশাদ আলী মাস্টারের মুক্তির দাবিও জানান মির্জা ফখরুল।

আগামী নির্বাচন প্রসঙ্গে মির্জা ফখরুল বলেন, আমরা নির্বাচনে যেতে চাই, তবে সেজন্য ক্ষেত্র প্রস্তুত করতে হবে। সকল দল যাতে নির্বাচনে অংশ নিতে পারে তার জন্য পরিবেশ তৈরি করতে হবে। আমাদের হাজার হাজার নেতাকর্মীকে জেলে রেখে দেবেন, নেতাদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দেবেন- আর বলবেন যে তোমরা নির্বাচনে যাও। তাহলে আমরা নির্বাচনে কিভাবে যাব? আমরা বার বার বলছি, দেশে গণতন্ত্র নেই, গণতান্ত্রিক কোনো স্পেস বা জায়গা নেই। তাই আমরা স্পষ্টভাবে বলতে চাই, নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে, নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশনের পরিচালনায় সুষ্ঠু নির্বাচনে হলে, আমাদের নেতাকর্মীদের মুক্তি দিলে আমরা নির্বাচনের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেব। সকল দলের সমান সুযোগ ছাড়া নির্বাচনে যাওয়ার প্রশ্নই উঠে না। বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া থেকে শুরু দলের সবার মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার করে নিরপেক্ষ সরকার ও নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশনের অধীনে নির্বাচনের ব্যবস্থা করতে হবে।

এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রীর ভুটান সফর নিয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, ভুটানের সঙ্গে আমাদের একটা জরুরি বিষয় আছে সেটা হচ্ছে জলবিদ্যুৎ। আমাদের আগে প্রস্তাব ছিল, নেপাল, ভুটান, ভারত ও চীন- এসবের সঙ্গে চুক্তি করা দরকার ছিল। ভারত কখনো দ্বিপাক্ষিক ছাড়া অন্য কোনো দেশকে আনতে চায়নি, যার ফলে টোটাল বিষয়টা করা সম্ভব হয়নি। যদি দেখি ভারতের মতো উনি খালি হাতে ফিরে আসলেন, দিয়ে আসলেন সব কিছু- তখন সেটা আমাদের কাছে গ্রহণযোগ্য হবে না।

আরেক প্রশ্নের জবাবে আওয়ামী লীগ হেফাজতের সঙ্গে ভাব জমানোর চেষ্টা চালাচ্ছে মন্তব্য করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, হেফাজতে ইসলামকে বশ করে তাদের সঙ্গে বিভিন্নভাবে নতুন করে ভাব জমানোর চেষ্টা করছে। তিনি বলেন, আমাদের অবস্থান খুব পরিষ্কার, আমরা ডাবল স্ট্যাডার্ড করি না তো। কথা এক, কাজে আরেক এটা আমরা করি না। পটিয়ে পুটিয়ে আবার বলেছেন, আসো তোমাদের সঙ্গে বন্ধুত্ব করি, ভালোবাসা করি। কাজটা উনারা (সরকার) এখন করলেন বিরাট ঢাকঢোল পিটিয়ে। হেলিকপ্টারে দিয়ে উনারা উড়িয়ে নিয়ে আসলেন, নিয়ে এসে গণভবনে মাওলানা শফীকে এবং অন্যদেরকে পাশে বসিয়ে সুন্দর করে খাবার-দাবার তুলে দিয়ে করলেন। ভালো কথা। হসপিটালিটি- আমাদের বাঙালির একটা ঐতিহ্য, সুন্দর কথা। কিন্তু কী করলেন? যেটা অতীতে হয়ে গেছে। তিনি বলেন, আমরা এর মধ্যে নেই। আমাদের স্ট্যান্ড পরিষ্কার, হেফাজতে ইসলাম যখন দাবিটা করেছিল তখনই আমরা বলেছি তাদের সব দাবি নয়, কিছু দাবির সঙ্গে আমরা এক মত। এখন আপনারা (সরকার) ঢাকঢোল পিটিয়ে যা করলেন তা অতীতে হয়ে গেছে। এটা (দাওরা হাদিসকে মাস্টার্স সম্মান দেয়া) সনদ আমাদের সরকারের সময় গেজেট হয়েছিল। এটা আবার নতুন করে তাদের (হেফাজতে ইসলাম) বশ করে তারা বিভিন্নভাবে (আওয়ামী লীগ) চেষ্টা করছে তাদের সঙ্গে ভাবের সম্পর্ক গড়ে তোলার। আমরা সব সময় ন্যায়ের পক্ষে আছি, পৃথিবীর উপযোগী করে যাতে আমরা তাদের কাজে লাগাতে পারি সেইভাবে পাঠ্য কারিকুলাম করা উচিত বলে আমরা মনে করি’ যোগ করেন মির্জা ফখরুল।

অনলাইন আপডেট

আর্কাইভ