বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪
Online Edition

খাতুনগঞ্জ পাইকারি বাজার রক্ষা ও চট্টগ্রাম বন্দরের উন্নয়নে বিশেষ বরাদ্দের দাবি

চট্টগ্রাম অফিস : আসন্ন ২০১৭-১৮ অর্থ বছরের জাতীয় বাজেটের প্রাক্কালে অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগের সিনিয়র সচিব ও জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের চেয়ারম্যান মোঃ নজিবুর রহমান গতকাল রোববার চট্টগ্রামে বিভিন্ন চেম্বার নেতৃবৃন্দ ও ট্রেড এসোসিয়েশনের সাথে বৈঠক করেন।
এ বৈঠকগুলোয় ব্যবসায়ী নেতৃবৃন্দ তাদের বিভিন্ন প্রস্তাব তুলে ধরেন। অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগের সিনিয়র সচিব ও জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের চেয়ারম্যান মোঃ নজিবুর রহমান দি চিটাগাং চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রি’র সদস্য ও অত্র অঞ্চলের ব্যবসায়ী নেতৃবৃন্দের সাথে গতকাল ২৩ এপ্রিল সকালে ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টারস্থ বঙ্গবন্ধু কনফারেন্স হলে এক মতবিনিময় সভায় মিলিত হন।
বক্তব্যে চেয়ারম্যান বলেন, চিটাগাং চেম্বার কর্তৃক নির্মিত বিশ্ব বাণিজ্য কেন্দ্র বাংলাদেশের ব্যবসা-বাণিজ্যের ক্ষেত্রে ইতিবাচক অবদান রাখছে। চট্টগ্রামের ব্যবসায়ীদের বাজেট প্রস্তাব অত্যন্ত উন্নতমানের উল্লেখ করে চেম্বারের সাথে মতবিনিময়ের মাধ্যমে এ অঞ্চলের ব্যবসা-বাণিজ্যে গতিশীলতা অক্ষুন্ন রাখার ধারণা স্পষ্ট হয়েছে বলে মোঃ নজিবুর রহমান মন্তব্য করেন। তিনি বলেন, দেশীয় শিল্পকে সংরক্ষণের ব্যবস্থা করা, রফতানিতে প্রণোদনা অব্যাহত রাখা, জনগণের কর্মসংস্থান সৃষ্টির পদক্ষেপ গ্রহণ, বিনিয়োগ ও উৎপাদনমূখী বাজেট প্রণয়ন করা হবে এবং সাধারণ মানুষের জীবন স্পর্শকারী পণ্য কর অব্যাহতি পাবে। আগামী ১লা জুলাই থেকে ভ্যাট ও এসডি আইন বাস্তবায়ন অনলাইন ভিত্তিতে কার্যকর হবে উল্লেখ করে তা ব্যবসা ও বিনিয়োগবান্ধব হবে বলে প্রত্যাশা করেন এনবিআর চেয়ারম্যান। সভায় সূচনা বক্তব্যে চিটাগাং চেম্বার সভাপতি মাহবুবুল আলম ব্যক্তিগত বর্তমান করমুক্ত আয়ের সীমা ২ লক্ষ ৫০ হাজার থেকে ৪ লক্ষ, মহিলা এবং ৬৫ বছরের উর্ধ্বে ৩ লক্ষ থেকে ৫ লক্ষ এবং প্রতিবন্ধীদের ক্ষেত্রে ৩ লক্ষ ৭৫ হাজার টাকার পরিবর্তে ৪ লক্ষ ৫০ হাজার টাকা, পাবলিকলি ট্রেডেট কোম্পানীর কর হার ২৫% এর পরিবর্তে ২০% এবং প্রাইভেট লিঃ কোম্পানীর কর হার ৩৫% এর পরিবর্তে ৩০% নির্ধারণের প্রস্তাব করেন। তিনি রেফ্রিজারেটর এস্যাম্বলিং ইন্ডাস্ট্রি আমদানিকৃত উপকরণের শুল্ক যৌক্তিকভাবে হ্রাস করা, উৎপাদনমূখী শিল্পে উন্নীত হওয়ার লক্ষ্যে বিনিয়োগবান্ধব এস.আর.ও প্রণয়ন, চট্টগ্রামে গ্লোবাল ডিস্ট্রিবিউশন সেন্টার স্থাপনের আহবান জানান।
চেম্বার সভাপতি নতুন ভ্যাট আইনে কর হার ৭-১০% নির্ধারণ, প্রয়োজনীয় অনলাইন ইনফ্রাস্ট্রাকচার নিশ্চিত করা, ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্পের অব্যাহতি ৫০ লক্ষ টাকা, টার্নওভার কর নিবন্ধন সীমা ৮০ লক্ষ টাকা থেকে বৃদ্ধি করে ১ কোটি ৫০ লক্ষ টাকা নির্ধারন করা, মূল্য সংযোজনের হার ২০% এর পরিবর্তে ১৫% ধরে এর করের হার ৩% এর পরিবর্তে ২% করার সুপারিশ করেন।
তিনি ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের জন্য প্যাকেজ ভ্যাট বিবেচনার অনুরোধ জানান।বন্দরের সক্ষমতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে দ্রুত গতিতে বে-টার্মিনাল বাস্তবায়ন, লালদিয়ার চরে খালি কন্টেইনার ইয়ার্ড তৈরী করা, গ্যান্ট্রি ক্র্যানের বিকল্প হিসেবে মোবাইল হার্বার ক্র্যান সংগ্রহ করা, বন্দরে স্ক্যানার সংখ্যা বৃদ্ধি করা, ট্রাফিক ব্যবস্থার উন্নয়ন এবং কনভেয়র বেল্ট স্থাপনের পরামর্শ দেন। এছাড়া বারিক বিল্ডিং হতে বিমান বন্দর পর্যন্ত ফ্লাইওভার অগ্রাধিকার ভিত্তিতে নির্মাণ, কর্ণফুলী ব্রিজ থেকে মেরিন ড্রাইভ বারিক বিল্ডিং পর্যন্ত সম্প্রসারণ, চাকতাই-খাতুনগঞ্জ পাইকারি বাজারকে জোয়ারের পানি থেকে রক্ষা করতে কর্ণফুলী নদীর সাথে সংযুক্ত খালসমূহ সংস্কার, কালভার্ট নির্মাণ, স্লুইচ গেইট নির্মাণে আগামী বাজেটে বিশেষ বরাদ্দের দাবি জানান।
সভায় আরো বক্তব্য রাখেন রাজস্ব বোর্ডের সদস্য ব্যারিস্টার জাহাঙ্গীর হোসেন, চেম্বার পরিচালক মাহফুজুল হক শাহ ও এম. এ. মোতালেব, প্রাক্তন সভাপতি ইঞ্জিনিয়ার আলী আহমেদ, রাউজান উপজেলা চেয়ারম্যান এহসানুল হায়দার চৌধুরী (বাবুল) প্রমুখ। এ সময় চেম্বার পরিচালকবৃন্দ ,ব্যবসায়ী নেতৃবৃন্দ,  উর্ধ্বতন কর্মকর্তাবৃন্দ, চট্টগ্রামস্থ কর ও শুল্ক কমিশনারবর্গ এবং বিভিন্ন খাতের ব্যবসায়ী নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
এদিকে ২৩ এপ্রিল   দুপুর ১২টায় চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন চেম্বার অব কমার্স এর মিলনায়তনে সিএমসিসিআই প্রেসিডেন্ট  খলিলুর রহমান’র সভাপতিত্বে এনবিআর চেয়ারম্যান   মো: নজিবুর রহমান এর সাথে ২০১৭-১৮প্রাক বাজেট আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় রাজস্ব বোর্ডের সদস্য ও পদস্থ কর্মকর্তাবৃন্দ, স্থানীয় কর এবং কাস্টম কমিশনারবৃন্দ, সিএমসিসিআই পরিচালক, সদস্যবৃন্দ এবং প্রিন্ট এবং ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ার বিপুল সংখ্যক সাংবাদিক উপস্থিত ছিলেন।
  নজিবুর রহমান তার বক্তব্যে নীতিগতভাবে, মেট্রোপলিটন চেম্বারের অন্যতম প্রস্তাব ৫ সদস্য বিশিষ্ট আরবিট্রেশন কমিটি গঠন অনুমোদন করেন। উল্লেখ্য যে, ফ্রেইট ফরওয়ার্ড কর্তৃক রফতানী পন্য ডেলিভারীর বিপরীতে বৈদেশিক মুদ্রা না আসার ফলে রফতানীকারক বিপাকে পড়ে। তিনি আগামীতে সংশ্লিষ্ট এনবিআর সদস্য/স্থানীয় কমিশনার বৃন্দের সাথে নিয়মিত মতবিনিময়ের উপর গুরুত্বারোপ করেন।
এ ছাড়া গতকাল বিকালে এনবিআর চেয়ারম্যান সিএন্ড এফ এজেন্টস এসোসিয়েশনের নেতৃবৃন্দেও সাথে বিভিন্ন বিষয়ে বৈঠক করেন।

অনলাইন আপডেট

আর্কাইভ