শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪
Online Edition

হুদা কমিশনের পথেই হাটঁছে বর্তমান ইসি

স্টাফ রিপোর্টার: এটিএম শামসুল হুদা স্বচ্ছ ব্যালট বাক্স প্রবর্তন করে ২০০৮ সালের ২৯শে ডিসেম্বর নবম জাতীয় সংসদের নির্বাচনের আয়োজন করেছিল। আর নির্বাচনে নিরঙ্কুশ বিজয় নিয়ে ক্ষমতায় আসে শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী মহাজোট। ওই এটিএম শামসুল হুদা কমিশনের পথেই হাটঁছে বর্তমান কে এম নূরুল হুদা নির্বাচন কমিশন। ওই কমিশনের মতোই নানা কর্মসূচী নিয়ে আগামী একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জন্য রোডম্যাপ তৈরী করছে নির্বাচন কমিশন। আগামী রোববার ইসির বৈঠকে এ ধরনের একটি রোডম্যাপ চূড়ান্ত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

সূত্রমতে, নবম জাতীয় সংসদে আগে এটিএম শামসুল হুদা কমিশন একটি নির্বাচনী রোডম্যাপ তৈরী করেছিল। ওই রোডম্যাপে অন্যতম কাজ ছিল ছবিসহ ভোটার তালিকা তৈরী। এ ছাড়াও নির্বাচনী আইন সংশোধনের জন্য রাজনৈতিক দলগুলোর সাথে ধারাবাহিক সংলাপের আয়োজন করেছিল। রাজনৈতিক দলগুলোকে নিবন্ধন দিয়েছিল। এছাড়াও সংসদীয় আসনের সীমানা নির্ধারণ করেছিল। বর্তমান নির্বাচন কমিশন হুবহু ওই হুদা কমিশনকে অনুসরণ করে নির্বাচনী রোডম্যাপে প্রায়সবগুলো কর্মসূচীই রাখছে বর্তমান ইসি। শুধু পার্থক্য হচ্ছে বর্তমান ইসি ছবিসহ ভোটার তালিকা হালনাগাদ করছে আর ইভিএম ভোটিং ব্যবস্থা চালু করতে যাচ্ছে ইসি। এছাড়া নতুন রাজনৈতিক দলের নিবন্ধনসহ সব ধরনের কর্মসূচীই থাকছে এই রোডম্যাপে। তাতে অন্তত ২৩টি এজেন্ডা থাকবে বলে জানা গেছে।

ইসির কর্মকর্তারা জানান, বর্তমান সংবিধান অনুযায়ী, ২০১৯ সালের ২৮ জানুয়ারির মধ্যে একাদশ সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। সে লক্ষ্যে আগামী বছর নভেম্বরে তফসিল ঘোষণার সম্ভাব্য সময় ধরে খসড়া কর্মপরিকল্পনা তৈরি করা হয়েছে। রোডম্যাপে তফসিল ঘোষণার অন্তত তিন মাস আগে সব ধরনের কাজ শেষ করার রূপরেখা থাকছে।

আইনবিধি সংশোধন ও সংলাপ : আগামী জুলাইয়ে জাতীয় সংসদ নির্বাচন সম্পর্কিত আইনবিধির সংশোধনী আনয়নের পরিকল্পনা, আগস্টে প্রস্তাবিত আইনবিধির খসড়া প্রণয়ন, আগস্টে নির্বাচনী আইন সংস্কার নিয়ে রাজনৈতিক দল, সাংবাদিক, সুশীল সমাজের আলোচনার সময়সূচী নির্ধারণ, সেপ্টেম্বরে নিবন্ধিত রাজনৈতিক দল, সুশীল সমাজ ও সাংবাদিকদের সঙ্গে আলোচনা অনুষ্ঠান, নভেম্বরে আইনবিধি সংশোধন সম্পন্ন করে আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো, ডিসেম্বরে আইনবিধি চূড়ান্তকরণ।

সংসদীয় আসনের সীমানা নির্ধারণ : আগামী আগস্টে নির্বাচনী এলাকার সীমানা নিয়ে সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে আলোচনা, সেপ্টেম্বরে ৩০০ সংসদীয় আসনের খসড়া তালিকা প্রণয়ন, অক্টোবরে নির্বাচন কমিশনে ৩০০ নির্বাচনী আসনের প্রাথমিক তালিকা অনুমোদন ও খসড়া তালিকা প্রকাশ, দাবি-আপত্তি-সুপারিশ আহ্বান, নভেম্বরে দাবি-আপত্তি ও সুপারিশের ওপর শুনানি গ্রহণ করে নিষ্পত্তি এবং ডিসেম্বরে সংসদীয় আসনের চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশ করা হবে।

রাজনৈতিক দলের নিবন্ধন : আগামী অক্টোবরে নতুন রাজনৈতিক দলের নিবন্ধনের আবেদন আহ্বান করা হবে। আগামী বছরের ফেব্রুয়ারিতে নতুন রাজনৈতিক দলের আবেদন নিষ্পত্তি করে নিবন্ধন তালিকা প্রকাশ করা হবে।

 ভোটার তালিকা হালনাগাদ : রোডম্যাপে চলতি বছরের সেপ্টেম্বরে ভোটার তালিকা হালনাগাদ কর্মসূচি গ্রহণের পরিকল্পনা রয়েছে। আগামী বছরের জানুয়ারিতে ভোটার তালিকা হালনাগাদ ও খসড়া প্রকাশ; আপত্তি-নিষ্পত্তি করে চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশ; ফেব্রুয়ারিতে ৩০০ নির্বাচনী এলাকার ছবিসহ ভোটার তালিকা, ছবি ছাড়া সিডি প্রস্তুত; জুনে মাঠপর্যায়ে যাচাইয়ের পর ভোটার তালিকা মুদ্রণ; আগস্টে প্রার্থীদের জন্য নির্বাচনী এলাকাভিত্তিক ভোটার তালিকা, সিডি প্রস্তুত এবং মাঠপর্যায়ে প্রেরণ।

বাজেট প্রস্তুত ও বাজেট বরাদ্দ

২০১৮ সালের মে মাসের আগে বাজেটের বরাদ্দকৃত অর্থের খাতভিত্তিক হার নির্ধারণ ও দফাওয়ারি বিভাজন তালিকা প্রস্তুত করে সময়সূচি ঘোষণার ১০ দিন আগে নির্বাচনী ব্যয় নির্বাহে প্রাথমিক পর্যায়ে প্রয়াজনীয় অর্থের বরাদ্দপত্র জারি করার কথা বলা হয়েছে রাজস্ব বাজেটে। সময়সূচি ঘোষণার ৩৬৫ দিন আগেই উন্নয়ন অংশীদার বা অন্য কোনোভাবে প্রকল্পের মাধ্যমে নির্বাচনী কার্যক্রমের অর্থের সংস্থান হবে প্রকল্প বাজেট অংশে।

নির্বাচনী মালামাল মুদ্রণ : ২০১৮ সালের জানুয়ারির মধ্যে নির্বাচনের বিভিন্ন ফরম প্যাকেট মুদ্রণের জন্য মুদ্রণ অধিদপ্তরের সঙ্গে সভা করে বিভিন্ন প্রকার ফরম, প্যাকেট, লিফলেট ইত্যাদি পর্যায়ক্রমে মুদ্রণের জন্য মুদ্রণালয়ের নিয়ন্ত্রককে অনুরোধ করা। জুলাইয়ে মুদ্রণ সম্পন্ন ও অক্টোবরের মধ্যে মনোনয়নপত্র দাখিল সংশ্লিষ্ট এবং প্রাথমিক পর্যায়ের বিভিন্ন ফরম, প্যাকেট ও অন্য দ্রব্য মাঠপর্যায়ে পাঠানো। এ ছাড়া এর মধ্যে নির্বাচনী সামগ্রী সংযুক্ত এবং ২০১৮ সালের জানুয়ারির মধ্যে দরপত্রের মাধ্যমে ব্যালট বাক্স ক্রয়সংক্রান্ত প্রক্রিয়া চূড়ান্ত করে ভোটগ্রহণের কমপক্ষে ৩০ দিন আগে সব ব্যালট বাক্স ব্যবহার উপযোগী করা।

 ভোটকেন্দ্র প্রস্তুতকরণ : ২০১৮ সালের জুন মাসের মধ্যে ভোটকেন্দ্র হিসেবে সম্ভাব্য স্থাপনা/প্রতিষ্ঠানের মেরামত ও সংস্কারের লক্ষ্যে মাঠপর্যায়ে নির্দেশনা দেওয়া এবং সময়সূচি ঘোষণার ২৫ দিন আগে ভোটকেন্দ্রের গেজেট প্রকাশ করে সংশ্লিষ্ট সবার কাছে পাঠানো হবে।

ম্যানুয়েল ও নির্দেশিকা প্রণয়ন : ২০১৮ সালের জুলাই মাসের মধ্যে নির্বাচন পরিচালনা ও প্রশিক্ষণের জন্য বিভিন্ন ধরনের ম্যানুয়েল এবং নির্দেশিকা প্রণয়ন ও কমিশনের প্রাথমিক অনুমোদন নেওয়া এবং বাকি কাজ করে সময়সূচি ঘোষণার ২০ দিন আগে ম্যানুয়েল ও নির্দেশিকার মুদ্রণ সম্পন্ন করা হবে।

ডিজিটাল মনিটর স্থাপন : একাদশ সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার ৩০ দিন আগে বেসরকারি ফল প্রদর্শনের জন্য ডিজিটাল মনিটর ক্রয়/ভাড়ার ব্যবস্থা করে তফসিলের ১০ দিন আগে তা স্থাপন করে ট্রায়ালের ব্যবস্থা করা হবে। সময়সূচি ঘোষণার ১৫ দিন আগে শাহবাগ, গুলিস্তান ও মতিঝিলে ফল প্রদর্শনের ব্যবস্থা গ্রহণ, নির্বাচন ভবনের বহির্দেয়ালে ফল প্রদর্শনের জন্য স্ক্রল স্থাপন করা হবে।

আন্তঃমন্ত্রণালয় সংক্রান্ত কার্যক্রম : তফসিল ঘোষণার ৩০ দিন আগে ঋণখেলাপি সংক্রান্ত তথ্য প্রাপ্তি ও এ সংক্রান্ত বিধিবিধান/নীতিমালা প্রস্তুুতের জন্য অর্থ মন্ত্রণালয় ও বাংলাদেশ ব্যাংকের সঙ্গে সভা। এ ছাড়া ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয়, ডাক বিভাগ ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, পরিবহন ও সেতু বিভাগ এবং নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়, স্থানীয় সরকার বিভাগের সঙ্গে সভা করার কথা বলা হয়েছে সময়সূচির ৩০ দিন আগে।

নির্বাচনী কর্মকর্তা নিয়োগ : নির্বাচনের প্রস্তুুতি ও পরিচালনার জন্য সময়সূচি ঘোষণার ৩০ দিন আগে জনবলের সংখ্যা নির্ধারণ, সময়সূচি ঘোষণার ১৫ দিন আগে তালিকা সংগ্রহের পরিকল্পনা, ১০ দিন পূর্বে ভোটগ্রহণ কর্মকর্তার তালিকা চূড়ান্ত করে নিয়োগদান সম্পন্ন করা হবে।

নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সভা : সময়সূচি ঘোষণার ২৫ দিন আগে এই অংশে ভোটগ্রহণের সম্ভাব্য তারিখ নির্ধারণ ও নির্বাচনের বিষয়ে সার্বিক ধারণা নেওয়ার জন্য প্রধাান প্রধান রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সভা করার কথা বলা হয়েছে। এ ছাড়া এই অংশে সময়সূচি ঘোষণার ৩৫ দিন পূর্বে বিভিন্ন বেসরকারি সংস্থা, সাংবাদিক ও সুশীল সমাজের প্রতিনিধিদের সঙ্গেও সভা করার কথা বলা হয়েছে।

সংসদ নির্বাচনে ইভিএম : ২০১৮ সালের জানুয়ারি মাসে একাদশ সংসদ নির্বাচনে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন ব্যবহারের বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হবে। ফেব্রুয়ারিতে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন ব্যবহারে উপযোগী করা, সময়সূচি ঘোষণার ৩০ দিন পূর্বে ইভিএম ব্যবহারের উপযোগিতা সংক্রান্ত প্রচার চালানো, সময়সূচি ঘোষণার ১০ দিন পূর্বে মকভোটিংয়ের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করা হবে। 

এ ছাড়া রয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নিয়োগ ও বৈঠক, প্রশিক্ষণ/ব্রিফিং, নির্বাচনী প্রচারণামূলক কার্যক্রম, রাজনৈতিক দলের নির্বাচনী প্রচারণা, নির্বাচন কমিশন ও বেসরকারি পর্যায়ের দেশি-বিদেশি পর্যবেক্ষক নিয়োগ, টেলিযোগাযোগব্যবস্থা সুসংহতকরণ, বেসরকারি প্রাথমিক ফল প্রচারসংক্রান্ত কার্যাবলি, ইলেকট্রনিক পদ্ধতিতে নির্বাচনী এলাকার পরিস্থিতি প্রতিবেদন সংগ্রহ, নির্বাচনী ব্যয় মনিটরিং কমিটি গঠন এবং আইসিটি সহায়তাসংক্রান্ত সভা করার বিষয়টি এসেছে রোডম্যাপে।

২০১৪ সালের ২৯ জানুয়ারি দশম সংসদের অধিবেশন শুরু হয়েছে। মেয়াদ শেষের আগের ৯০ দিনের মধ্যে ভোট করার সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতা রয়েছে। সেক্ষেত্রে একাদশ সংসদ নির্বাচন হবে ২০১৮ সালের ৩০ অক্টোবর থেকে ২০১৯ সালের ২৮ জানুয়ারির মধ্যে।

অনলাইন আপডেট

আর্কাইভ