বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪
Online Edition

হোটেল রেইনট্রি যেন রংমহল ॥ চলছিল অবৈধভাবে

তোফাজ্জল হোসেন কামাল : দুই বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রী ধর্ষণের ঘটনাস্থল হিসেবে আলোচিত ঢাকার বনানীর রেইনট্রি হোটেলটি অবৈধভাবে চলছে বলে জানিয়েছে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক)।

বনানীতে আবাসিক এলাকায় কে ব্লকের ২৭ নম্বর সড়কের ৪৯ নম্বর বাড়িতে নিয়ম ভেঙে হোটেলটি চালানোর সঙ্গে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের এক সংসদ সদস্যের সংশ্লিষ্টতা রয়েছে।

রাজউক কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ওই প্লটটি ঝালকাঠি-১ (রাজাপুর-কাঁঠালিয়া) আসনের সংসদ সদস্য বজলুল হক হারুনের (বি এইচ হারুন)। ধর্ম মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি হারুন ঝালকাঠি জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য এবং রাজাপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি।

চার তারা রেইনট্রি হোটেলটি তার ছোট ছেলে মাহির হারুন চালান। গত ২৮ মার্চ ধর্ষণের আগে হোটেলটিতে আপন জুয়েলার্সের মালিকের ছেলে সাফাত আহমেদের জন্মদিনের অনুষ্ঠানে মাহির কেক পাঠিয়েছিলেন বলে অভিযোগ উঠেছে। মাহিরের বন্ধু পরিচয় দিয়েই সাফাত সেদিন হোটেলে উঠেছিলেন বলে হোটেলকর্মীরা পুলিশকে জানিয়েছেন। ধর্ষণের প্রধান আসামী সাফাত গ্রেফতার হয়ে এখন পুলিশ হেফাজতে জিজ্ঞাসাবাদের মুখোমুখি।

দি রেইনট্রি হোটেল ঢাকা গত ৯ এপ্রিল আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন হয়েছে বলে তাদের ফেইসবুক পাতায় তথ্য দেয়া হলেও তার কয়েক মাস আগে থেকে তার কার্যক্রম চলছিল। রাজউকের মানচিত্রে বনানীর কামাল আতাতুর্ক এভিনিউ এবং ১১ নম্বর সড়ক দুটি বাণিজ্যিক এলাকা। ওই দুটি সড়কে বাণিজ্যিক কার্যক্রম পরিচালনা করতে হলেও রাজউকের সম্পত্তি বিভাগে নির্ধারিত রূপান্তর ফি জমা দিতে হয়। এই দুটি সড়ক ছাড়া বনানীর বাকি সব সড়কগুলো আবাসিক শ্রেণির। এসব এলাকায় বাণিজ্যিক কার্যক্রম পরিচালনা অবৈধ। রেইনট্রি হোটেল পড়েছে ওই এলাকায়।

অবৈধভাবে বাণিজ্যিক কার্যক্রম পরিচালনা করায় গত ১৫ এপ্রিল রেইনট্রি হোটেল সিলগালা করে দিয়েছিল রাজউকের ভ্রাম্যমাণ আদালত। সেদিন প্রতিষ্ঠানটির গ্যাস, পানি ও বিদ্যুৎ সংযোগও বিচ্ছিন্ন করে দেয়া হয়েছিল। সেদিনের অভিযান পরিচালনাকারী রাজউকের পরিচালক ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট খন্দকার অলিউর রহমান গতকাল সোমবার বলেন, হোটেলটি রাজউকের অনুমোদন ছাড়া ব্যবসা চালাচ্ছিল। “রেসিডেন্সিয়াল এরিয়ায় যদি কেউ বাণিজ্যিক কার্যক্রম করে, সেটা অবৈধ। তারা সেখানে বাণিজ্যিক কার্যক্রম করার অনুমোদন নেয় নাই, অনুমতিও নেয় নাই। সেজন্য আমরা সব সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দিয়ে এসেছিলাম।”

ভ্রাম্যমাণ আদালত সিলগালা করে আসার পর রেইনট্রি হোটেল কর্তৃপক্ষ নিজেরাই তা খুলে আবার কার্যক্রম শুরু করে বলে জানান রাজউকের অঞ্চল-৪ এর অথরাইজড অফিসার আদিলুজ্জামান। তিনি বলেন, “ওই হোটেলটা অবৈধ, তারা আমাদের অনুমোদন ছাড়া হোটেলের কাজ করছিল। আমরা সিলগালা করে দিয়ে এসেছিলাম, তারা নিজেরা খুলে ফেলেছে।”

সিলগালা করার বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে গিয়ে রাজউকের পদক্ষেপে স্থগিতাদেশ পাওয়ার কথা রেইনট্রি কর্মকর্তারা জানান। বিষয়টি নিয়ে জানতে যোগাযোগ করা হলে রেইনট্রি হোটেলের জনসংযোগ কর্মকর্তা ইকবাল হোসেন বলেন, “আমি আপনার মেসেজটা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে পৌঁছে দেব।” মালিক পক্ষের টেলিফোন নম্বর চাইলে ‘নিষেধ আছে’ জানিয়ে তা দিতে অস্বীকৃতি জানান তিনি।

প্রথমবার কথা বলার পর রেইনট্রি হোটেলের পক্ষ থেকে আর যোগাযোগ করা হয়নি। ইকবালের মোবাইলে ফোনে কল করলেও তা বন্ধ পাওয়া যায়। একাধিকবার সংসদ সদস্য বি এইচ হারুনের মোবাইলে একাধিকবার কল করলেও তিনি ফোন ধরেননি।

রাজউকের আইন শাখার পরিচালক রোকন উদ দৌলা বলেন, উচ্চ আদালত সিলগালা খোলার নির্দেশ দিলেও তা বাস্তবায়ন করবে রাজউক, ভবন কর্তৃপক্ষ নয়।

এই বিষয়ে রাজউকের চেয়ারম্যান এম বজলুল করিম চৌধুরী বলেন, “এর বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে। “এটা আমরা এর আগেও এটা বন্ধ করে দিয়েছিলাম। আমি অথরাইজড অফিসারের সঙ্গে কথা বলে দেখি। এরপর পরবর্তী আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।”

ধর্ষণের আলোচিত ঘটনার পর রেইনট্রি হোটেলে শুল্ক গোয়েন্দারা অভিযান চালিয়ে অবৈধ মদ উদ্ধারসহ নানা অনিয়ম পাওয়ার কথা জানায়। ভ্যাট ফাঁকি, শুল্ক ফাঁকি ও মুদ্রা পাচার- এই তিন অভিযোগে তাদের বিরুদ্ধে মামলার প্রস্তুতিও নেয়া হচ্ছে।

হোটেল রেইনট্রি যেন রংমহল

আপন জুয়েলার্সের মালিক দিলদার হোসেনের ছেলে সাফাত ছিল রেইনট্রি হোটেলের চেয়ারম্যান ঝালকাঠি-১ আসনের সংসদ সদস্য বজলুল হক হারুনের ছেলে মিহিরের ঘনিষ্ঠ বন্ধু। তারা একসঙ্গে পড়াশোনাও করেছে ঢাকা ইন্টারন্যাশনাল স্কুলে। মিহির হোটেলের মহাব্যবস্থাপক হওয়ার সুবাদে প্রায়ই মিহিরের মাধ্যমে সাফাত বিভিন্ন অপকর্মের আস্তানা বানিয়েছিল রেইনট্রি হোটেলকে।

গত ৯ এপ্রিল আনুষ্ঠানিকভাবে হোটেলটি উদ্বোধন করা হয়। কিন্তু তার আগেই ২৮ মার্চ রুম দুটি বুকিং দেয়া হয়। অভিযোগ রয়েছে, উদ্বোধনের আগে থেকেই সেখানে চলত মদ, বিয়ার ও জুয়ার আসর। আনাগোনা ছিল সুন্দরী তরুণীদেরও। এ যেন রাজধানীর বুকে এক অভিজাত রংমহল।

তদন্ত সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন, এসব কারণে আন্তর্জাতিকমানের ওই হোটেলটি হয়ে ওঠে অপরাধের আখড়া। এদিকে রেইনট্রি হোটেলে দুই বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রীকে ধর্ষণের ঘটনার পরই সমালোচনার ঝড় ওঠে দেশব্যাপী। তদন্ত সংশ্লিষ্টরা বলছে, হোটেলটিতে সিসি ক্যামেরার ফুটেজ ছিল। ঘটনার পর তারা সব সরিয়ে ফেলেছে। তথ্যপ্রযুক্তির মাধ্যমে ফুটেজগুলো উদ্ধারের চেষ্টা চলছে। অপরদিকে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের পক্ষ থেকে গত শনিবার ওই হোটেলটিতে অভিযান চালানোর পর সেখানে মদ বা কোনো ধরনের মাদকদ্রব্য নেই বলে জানায় অভিযানে থাকা কর্মকর্তারা। রোববার আকস্মিক অভিযান চালিয়ে হোটেল থেকে বিভিন্ন ব্র্যান্ডের মদ, বিয়ার ও মানি লন্ডারিং এবং কালোবাজারির অস্তিত্ব পায় শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদফতরের কর্মকর্তারা।

সাফাতের গাড়িচালক ও দেহরক্ষী গ্রেফতার

বনানীর ধর্ষণ মামলার আসামী আপন জুয়েলার্সের মালিকের ছেলে সাফাত আহমেদের গাড়িচালক ও দেহরক্ষীও গ্রেফতার হয়েছেন।সোমবার সন্ধ্যায় আধা ঘণ্টার ব্যবধানে গাড়িচালক বিল্লাল এবং দেহরক্ষী রহমত আলীকে গ্রেফতারের কথা জানায় র‌্যাব ও পুলিশ।

বিল্লালকে নবাবপুর রোডের একটি হোটেল থেকে গ্রেফতারের কথা জানান র‌্যাব-১০ এর প্রধান জাহাঙ্গীর আলম মাতুব্বর। অন্যদিকে রহমতকে গুলশান থেকে অস্ত্রসহ গ্রেফতারের কথা জানান ডিএমপির যুগ্ম কমিশনার কৃষ্ণপদ রায়।সাফাতের সঙ্গে এই দুজনও ধর্ষণের ওই মামলার আসামী।

মামলার চার দিন পর গত ১১ মে সাফাতকে সিলেট থেকে গ্রেফতার করা হয়। তার সঙ্গে গ্রেফতার হন আরেক আসামী সাদমান শাকিফ। সাদমান পিকাসো রেস্তোরাঁর অন্যতম মালিক ও রেগনাম গ্রুপের কর্ণধার মোহাম্মদ হোসেন জনির ছেলে। পাঁচ আসামীর মধ্যে নাঈম আশরাফ বা হাসান মোহাম্মদ হালিম এখনও পলাতক।

এজাহারের বর্ণনা অনুযায়ী, গত ২৮ মার্চ বনানীর রেইনট্রি হোটেলে সাফাত ও নাঈম দুই বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রীকে ধর্ষণ করেছিলেন। অন্য তিনজন ছিলেন সহায়তাকারী।

আপন জুয়েলার্স, রেইনট্রি হোটেলের মালিকদের তলব

‘ব্যাখ্যাহীনভাবে’ সোনা ও হীরার গয়না মজুদের অভিযোগে আপন জুয়েলার্স এবং অবৈধভাবে মদ রাখার অভিযোগে বনানীর রেইনট্রি হোটেলের মালিকদের তলব করেছে শুল্ক গোয়েন্দা বিভাগ।

শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মইনুল খান জানান, আগামী ১৭ মে বেলা ১১টায় তাদের কাকরাইলে শুল্ক গোয়েন্দা বিভাগের সদরদপ্তরে কাগজপত্রসহ হাজির হতে বলা হয়েছে। ঢাকার বনানীতে বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই ছাত্রীকে ধর্ষণের মামলার প্রধান আসামী সাফাত আহমেদের বাবা দিলদার আহমেদ আপন জুয়েলার্সের অন্যতম মালিক। এই পরিবারের বিরুদ্ধে সোনা চোরাচালানের অভিযোগ থাকায় জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের নির্দেশে একটি অনুসন্ধান কমিটি করে তদন্ত চালাচ্ছে শুল্ক গোয়েন্দা অধিদপ্তর।এর অংশ হিসেবে রোববার ঢাকায় আপন জুয়েলার্সের পাঁচ বিক্রয় কেন্দ্রে অভিযান চালিয়ে ২৮৬ কেজি স্বর্ণালঙ্কার এবং ৬১ গ্রাম হীরা ‘আটক’ করেছেন শুল্ক গোয়েন্দারা।

মইনুল খান জানান, স্বর্ণ ও রতœ সংগ্রহের তথ্যে অস্বচ্ছতা এবং মালিকের ‘অবৈধ সম্পদের’ অনুসন্ধানের অংশ হিসেবেই শুল্ক আইনের বিধান অনুসারে ওই অলঙ্কার তারা আটক করেছেন। রোববার তিনি বলেন, এসব পণ্যের কাগজপত্র যাচাই করে অনিয়মের প্রমাণ পাওয়া গেলে প্রতিষ্ঠান মালিকের বিরুদ্ধে চোরাচালান ও মানি লন্ডারিং আইনে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

রোববার ওই একই সময়ে শুল্ক গোয়েন্দারা বনানীর রেইনট্রি হোটেলেও অভিযান চালান, যেখানে গত ২৮ মার্চ সাফাত ও তার বন্ধুরা দুই বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রীকে ধর্ষণ করে বলে মামলার অভিযোগ। ওই অভিযানে হোটেলের বিভিন্ন কক্ষ তল্লাশি করে ১০ বোতল বিদেশি মদ ও নথিপত্র জব্দ করেন শুল্ক গোয়েন্দারা। তারা বলছেন, হোটেল কর্তৃপক্ষ বারের লাইসেন্স দেখাতে না পারলেও সেখানে মদ রাখা হয়েছিল।

গুলশানে আপন জুয়েলার্সে ফের অভিযান

ঢাকার গুলশান ২ নম্বর সার্কেলের সুবাস্তু টাওয়ারে সিলগালা করে দেয়া আপন জুয়েলার্সের বিক্রয় কেন্দ্রে ফের অভিযান চালায় শুল্ক গোয়েন্দারা। শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তরের যুগ্ম কমিশনার শাফিউর রহমান জানান, রোববার গুলশান এলাকায় সাপ্তাহিক ছুটি থাকায় তাদের সদস্যরা সুবাস্তু টাওয়ারের ওই দোকান সিলগালা করে গিয়েছিলেন। গতকাল সোমবার সেটি খুলে অভিযান চালানো হয়।

বনানীতে দুই ছাত্রীকে ধর্ষণের মামলার প্রধান আসামী সাফাত আহমেদের বাবা দিলদার আহমেদ আপন জুয়েলার্সের অন্যতম মালিক। এই পরিবারের বিরুদ্ধে সোনা চোরাচালানের অভিযোগ থাকায় জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের নির্দেশে একটি অনুসন্ধান কমিটি করে তদন্ত চালাচ্ছে শুল্ক গোয়েন্দা অধিদপ্তর।

আপন জুয়েলার্সের তিনশ কেজি স্বর্ণালঙ্কার ‘আটক’

আপন জুয়েলার্সে অভিযান চালিয়ে প্রায় তিনশ কেজি সোনা ও হীরার গহনা আটক করেছেন শুল্ক গোয়েন্দারা। স্বর্ণ ও রতœ সংগ্রহের তথ্যে অস্বচ্ছতা এবং মালিকের ‘অবৈধ সম্পদের’ অনুসন্ধানের অংশ হিসেবেই রোববার এই অভিযান চালানো হয় বলে শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মইনুল খান জানান। বেলা ১১টার দিকে দেশের শীর্ষস্থানীয় এই অলঙ্কার ব্র্যান্ড আপন জুয়েলার্সের মৌচাক, উত্তরা, জিগাতলার সীমান্ত স্কয়ার এবং গুলশানের দুটি বিক্রয় কেন্দ্রে একযোগে অভিযান শুরু হয়।ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ শাখার ভ্যাট কর্মকর্তারা ছাড়াও র‌্যাব সদস্যরা যোগ দেন এই অভিযানে।

অভিযান শেষে গতকাল সোমবার শুল্ক গোয়েন্দা অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক দীপা রানী হালদার স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, পাঁচটি শাখার চারটি থেকে মোট ২৮৬ কেজি স্বর্ণালঙ্কার এবং ৬১ গ্রাম হীরা ‘আটক’ করা হয়েছে। এর সর্বমোট মূল্য ৮৫ কোটি ৩৮ লাখ টাকা।

আটক স্বর্ণালঙ্কার শুল্ক আইনের বিধান অনুসারে প্রতিষ্ঠানগুলোর জিম্মায় রাখা হয়েছে বলে সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়।

শুল্ক গোয়েন্দারা জানান, এই সোনার গহনা এখন তাদের কাছে থাকবে, তবে তারা বিক্রি করতে পারবেন না।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, “এসব পণ্যের কাগজপত্র গভীরভাবে যাচাই করা হবে, অনুসন্ধানে কোনো অনিয়ম প্রমাণিত হলে প্রতিষ্ঠান ও প্রতিষ্ঠান মালিকের বিরুদ্ধে চোরাচালান ও মানি লন্ডারিং আইনে ব্যবস্থা নেয়া হবে।”অভিযানকারী দলের প্রাথমিক অনুসন্ধানে আপন জুয়েলার্সের সব শাখা কর্তৃক উপস্থাপিত দলিলাদির সঙ্গে পাওয়া সোনার গরমিল পাওয়া গেছে বলে শুল্ক গোয়েন্দারা জানান।

অভিযানের বিষয়ে দিলদার আহমেদ বলেন, “আমরা ৪০ বছরের পুরানো প্রতিষ্ঠান। এখানে প্রায় পাঁচ লাখ লোক কাজ করে। শুল্ক গোয়েন্দা বিভাগ আমাদের কাছে যে যে কাগজপত্র চেয়েছে, তা আমরা আগেই দিয়েছি।”

আপনের পাশে জুয়েলার্স সমিতি

ধর্ষণের মামলায় ছেলে আসামী হওয়ার পর আপন জুয়েলার্সের মালিকের ‘অবৈধ অর্থের’ সন্ধানে শুল্ক গোয়েন্দাদের অভিযানে পাঁচটি বিক্রয় কেন্দ্র বন্ধ করে দেয়ার প্রতিবাদ জানিয়েছে বাংলাদেশ জুয়েলার্স সমিতি। শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তরের অভিযানের পরদিন গতকাল সোমবার এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে সমিতির প্রতিবাদের কথা জানান জুয়েলার্স সমিতির সভাপতি গঙ্গা চরন মালাকার ও সাধারণ সম্পাদক দিলীপ কুমার আগরওয়ালা।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, “গত রোববার কোন নোটিস ছাড়াই শুল্ক গোয়েন্দা বিভাগ আপন জুয়েলার্সের ৫টি শো-রুম বন্ধ করে দিয়েছে। এতে প্রত্যক্ষ পরোক্ষভাবে পাঁচ হাজার মানুষের ভরণ পোষণের দায়ভার কে নেবে?

রোববার সমিতির জরুরি সভা থেকে অবিলম্বে আপন জুয়েলার্সের শো-রুম গুলো খুলে দেয়ার পাশাপাশি এই ‘হয়রানিমূলক’ অভিযান বন্ধের দাবি জানানো হয় বলে বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে।

আপন জুয়েলার্সের মালিক দিলদার আহমেদের পক্ষে দাঁড়িয়ে জুয়েলার্স সমিতি বলেছে, “সমিতির জানামতে আপন জুয়েলার্স বাংলাদেশ সরকারের সকল নিয়ম কানুন মেনে বৈধভাবে ব্যবসা পরিচালনা করে আসছে।”

এদিকে শুল্ক ও গোয়েন্দা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মইনুল খান বলেছেন, তারা আপন জুয়েলার্সের কোনো বিক্রয় কেন্দ্র বন্ধ করেননি। “পূর্ণাঙ্গ কাগজপত্র দেখাতে না পারায় স্বর্ণালঙ্কার এবং হীরা আটক করার পর স্থানীয় দোকান মালিক সমিতি, জুয়েলার্স সমিতির প্রতিনিধির অনুরোধে এবং স্বাক্ষরে আপন জুয়েলার্স কর্তৃপক্ষের জিম্মায় দেয়া হয়েছে।”

দিলদারের বড় ছেলে সাফাত আহমেদের জন্মদিনের পার্টিতে ডেকে নিয়ে গত ২৮ মার্চ ঢাকার বনানীর রেইনট্রি হোটেলে দুই বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রীকে ধর্ষণ করা হয় বলে গত ৬ মে মামলা হয়।

মামলার পর আপন জুয়েলার্সের মালিকের অবৈধ সম্পদ নিয়ে আলোচনা ওঠার পর ‘পাবলিক ডিমান্ড’ হিসেবে অভিযান চালানো হচ্ছে বলে শুল্ক গোয়েন্দা অধিদপ্তর জানায়।

রোববার ঢাকায় আপন জুয়েলার্সের পাঁচটি বিক্রয় কেন্দ্রে অভিযান চালিয়ে প্রায় তিনশ কেজি সোনা ও হীরার গহনা আটকের কথা জানায় শুল্ক গোয়েন্দা বিভাগ।

মইনুল খান বলেন, আপন জুয়েলার্সে ‘ব্যাপক অনিয়ম, চোরাচালান এবং অবৈধ অর্থ সরবরাহের’ প্রমাণ তার পেয়েছেন। অভিযানের সময় স্বর্ণালঙ্কার এবং হীরার বিপরীতে তারা যথেষ্ট কাগজপত্র তারা দেখাতে পারেনি।

গহনা আটক সাময়িক জানিয়ে তিনি বলেন, “এসব স্বর্ণালঙ্কার এবং হীরার প্রয়োজনীয় কাগজপত্র ১৭ মে নিয়ে আসতে বলা হয়েছে। কাগজপত্র দেখাতে পারলে কোনো সমস্যা নেই। আর না পারলে শো রুম থেকে নিয়ে এসে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।”

চাপ নয়, নিয়ম মেনে তদন্ত করে মামলা নিয়েছি : ওসি ফরমান

‘দ্য রেইনট্রি’ হোটেলে দুই তরুণীকে ধর্ষণের ঘটনায় মামলা গ্রহণ নিয়ে ‘তালবাহানা’র অভিযোগ ওঠে বনানী থানার ওসি বি এম ফরমান আলীর বিরুদ্ধে। এরই মধ্যে পাঁচ দিনের ‘পারিবারিক’ ছুটিতে যান তিনি। রোববার কাজে যোগ দেন। সামগ্রিক বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, মামলা নিয়ে এত আলোচনা-সমালোচনা হবে কে জানত? শুধু কী তাই! আমার ছুটি নিয়েও নানা কথা শুনছি। এসব কার ভালো লাগবে বলেন? কে জানত আমার ছুটিতে যাওয়া নিয়ে সমালোচনা শুনতে হবে। এমনটি হলে ছুটিতেই যেতাম না। আসলে চাপ বা অন্য কোনো কারণ ছিল না। পারিবারিক কারণেই আমার ছুটিতে যাওয়া।

বনানীর দুই শিক্ষার্থীর ধর্ষণের ঘটনায় দেশজুড়ে তোলপাড় চলছে। অভিযোগ উঠেছে, ভিকটিম দুই তরুণী থানায় মামলা করতে এসে আরেক দফা হয়রানির শিকার হয়েছেন। আপনার ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। এ বিষয়ে ফরমান আলী বলেন, ওই দুই ছাত্রী আমার বিরুদ্ধে কিংবা থানা পুলিশের ভূমিকার বিরুদ্ধে কোনো বাজে কথা বলেননি। আমি তো শুনিনি। ফেসবুকে লাইভ ভিডিও কি দেখেছেন? সেখানে মামলার বাদী পুলিশের ভূমিকার প্রশংসাই করেছেন। সমালোচকরা মনগড়া কথা বলছেন। যারা পুলিশের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন তাদের ইনটেনশন ভালো না, এটা বুঝতে হবে।

মামলা নিতে দেরি করেছেন, এটা তো সত্য? ডিএমপিও মামলা নিতে দেরি এবং হয়রানির বিষয়টি তদন্তে কমিটি গঠন করেছে। কারণ কি ছিল? এর জবাবে তিনি বলেন,  এক মাস পাঁচ দিন পর ওই দুই ছাত্রী মামলা করতে আসেন। স্বাভাবিকভাবে এতদিন পর মামলা করতে আসলে তো ভাবতে হবে। আগে দেখতে হবে কেন এত দেরিতে, কাদের বিরুদ্ধে মামলা হচ্ছে। তদন্তের প্রয়োজন ছিল। তদন্ত করে যখন মনে হয়েছে মামলার যৌক্তিকতা রয়েছে তখন আমরা নিয়ম মেনেই মামলা নথিভুক্ত করেছি।

অনলাইন আপডেট

আর্কাইভ