পাক-ভারত ক্রিকেট লড়াইয়ের অপেক্ষায় বিশ্ব
-মোহাম্মদ জাফর ইকবাল
নিয়ন্ত্রক সংস্থা আইসিসি’র (ইন্টারন্যাশনাল ক্রিকেট কাউন্সিল) আর্থিক দ্বন্দ্বের কারণে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি বয়কটের হুমকি দিয়েছিল ইন্ডিয়ান বোর্ড (বিসিসিআই)। অনেক নাটকীয়তার পর দেশটির সুপ্রীমকোর্ট গঠিত কমিটির (সিওএ) হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি আপাতত স্বাভাবিক। তবে বিলম্বে দেয়া চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির ভারত দলে তেমন কোন নাটকীয়তা বা চমক নেই। নেতৃত্বে যথারীতি বিরাট কোহলি। ভারতের এমন সিদ্ধান্তের পরই ভক্তরা উন্মুখ হয়ে অপেক্ষা করছে চির দুই প্রতিদ্বন্দ্বী ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যকার ক্রিকেট লড়াই দেখার জন্য। দু’দেশের মধ্যে রাজনৈতিক ও কূটনৈতিক যে শীতলতা, যে কোন পর্যায়ে সেটার মধ্যে বিন্দুমাত্র শিথিলতা নেই। ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে বৈরী সম্পর্কের কারণে এমনকি ক্রিকেটীয় লড়াইটাও বিরল। শুধু আন্তর্জাতিক ক্রিকেট কাউন্সিলের (আইসিসি) টুর্নামেন্টগুলোতেই ময়দানী সাক্ষাৎ হয় দু’দলের। দ্বিপাক্ষিক সিরিজ বন্ধ একেবারেই। দীর্ঘদিন পর আরেকটি পাক-ভারত ক্রিকেট লড়াইয়ের অপেক্ষায় আছে পুরো বিশ্ব। আর উত্তেজনায় টগবগ করে ফুটছেন সাবেক পাক অলরাউন্ডার বুমবুম খ্যাত শহীদ আফ্রিদি। চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে হবে ভারত-পাকিস্তান ক্রিকেট ম্যাচ। সেটা দেখতে তর সইছে না আফ্রিদির। তিনি দাবি করেছেন, ভারতীয় ক্রিকেটারদের সঙ্গে পাকিস্তানের সব ক্রিকেটারের সম্পর্কটা বন্ধুত্বপূর্ণ। তবে ব্যতিক্রম শুধু গৌতম গাম্ভীর। এ বাঁহাতি ওপেনার মোটেও বন্ধুবৎসল নয় বলে অভিযোগ করেছেন আফ্রিদি।
গত চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির আসরে শিরোপা জিতেছিল ভারত। এবার তাদের শিরোপা ধরে রাখার মিশন। সূচী অনুসারে ভারতের লড়াই শুরু হবে ৪ জুন চিরপ্রতিদ্বন্ধী পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ম্যাচ দিয়ে। এর আগে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে দুইবার মুখোমুখি হয়েছে ভারত-পাকিস্তান। ২০০৪ সালে এজবাস্টনে এবং ২০০৯ সালে সেঞ্চুরিয়নের লড়াইয়ে জিতেছে পাকিস্তানীরা। আবার সেই এজবাস্টনে ১৩ বছর পর মুখোমুখি হবে দু’দল। এ লড়াই দেখতে মুখিয়ে আছেন আফ্রিদি। ফুটছেন উত্তেজনায় টগবগ করে। এ বিষয়ে তিনি বলেন, এজবাস্টনে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে ভারত-পাকিস্তানের লোভনীয় ম্যাচ- বছরের অন্যতম বড় ক্রিকেট ম্যাচ থেকে আমরা আর ঠিক এক মাস দূরে। বিশ্বের লাখ লাখ ভক্তদের মতো আমিও ম্যাচটি নিয়ে উত্তেজিত। দুই চিরপ্রতিদ্বন্দ্বীর ম্যাচ দেখতে আমি মুখিয়ে আছি। এটিই আইসিসির একমাত্র ইভেন্ট যেখানে ভারতের বিপক্ষে পাকিস্তানের সফলতা আছে। ২০০৪ সালে এজবাস্টনে আমরা জিতেছিলাম এবং পরে ২০০৯ সালে সেঞ্চুরিয়নে। আমি আশাকরি সবুজ জার্সিধারীরা এজবাস্টনে আবার জ্বলে উঠবে এবং ভারতের বিপক্ষে উন্নত রেকর্ড অক্ষুণœ রাখবে।’ কিন্তু সাম্প্রতিক বছরগুলোতে পারফর্মেন্সের দিক থেকে ভারত অনেক বেশি এগিয়ে গেছে। পিছিয়ে পড়েছে পাকিস্তান। এ বিষয়ে আফ্রিদি বলেন, ‘আমি মনেপ্রাণে আশা করছি এজবাস্টনে আমরা ভারত-পাকিস্তানের একটি ক্লাসিক ম্যাচ দেখতে পারব। ভারত শক্তিশালী এবং আমাদের বিপক্ষে সাম্প্রতিক পারফর্মেন্সের বিচারে মানসিকভাবে এগিয়ে। এছাড়া তাদের ব্যাটিংয়ে প্রতিভার ছড়াছড়ি, তাদের সমর্থন দেয়ার জন্য আছে আগ্রাসী ও আক্রমণাত্মক একটি বোলিং লাইনআপ।’ ময়দানী লড়াই কিংবা রাজনীতির মাঠে দু’দেশের মধ্যে রেষারেষি থাকলেও খেলোয়াড়দের মধ্যে সেটা নেই।
আফ্রিদি দাবি করেছেন উভয় দেশের ক্রিকেটাররা পরস্পরের প্রতি দারুণ বন্ধুবৎসল। এ বিষয়ে আফ্রিদি বলেন, ‘ভারত-পাকিস্তানের খেলোয়াড়রা পরস্পরের প্রতি দারুণ বন্ধু প্রতিম। কিন্তু সবাই মনে করে উভয় দেশের ক্রিকেটারদের মধ্যেও সম্পর্কটা তেমন ভাল নয়। এটা তখনই সত্য হতে পারে যদি গৌতম গাম্ভীরের সঙ্গে বিষয়টি মেলানো হয়। সে সবসসময় দূরে দূরে সরিয়ে রাখে নিজেকে। আমি নির্দ্বিধায় বলতে পারি যে সে আমার কিংবা অন্য কারও বন্ধু তালিকায় নেই।’ গাম্ভীর সবসময় গোমড়ামুখে থাকেন। মাঠে তো অবশ্যই মাঠের বাইরেও তার সঙ্গে কোন পাকিস্তানী ক্রিকেটারের ভাল সম্পর্ক নেই। এ বিষয়ে আফ্রিদি বলেন, ‘আমাদের কারও সঙ্গে এমনকি কফিশপেও তার দেখা হয়নি। উল্টো কয়েক বছর আগে তার সঙ্গে মাঠের মধ্যে আমার বাক-বিত-া হয়েছিল। সেটা সারাবিশ্বে খবরের শিরোনামও হয়ে যায়। যদিও আমি এসব ঘটনাকে খেলার অংশ হিসেবেই মনে করি, কিন্তু গৌতম গাম্ভীর তা কোনসময় কাটিয়ে উঠতে পারেননি। তারজন্য আমার শুভ কামনা। পরিষ্কারভাবেই সে ব্যতিক্রম।’ আফ্রিদি জানান, গত বছর ভারত-পাকিস্তানের টি২০ বিশ্বকাপ ম্যাচ শেষে বিরাট কোহলি ও তার দলের সবাই সাক্ষর করা ভারতীয় জার্সি উপহার দিয়েছিলেন তাকে। ওয়ানডে বিশ্বকাপ হোক, কিংবা টি-টুয়েন্টি। বিশ্ব ক্রিকেটের বৈশ্বিক এই টুর্নামেন্টে কখনো ভারতকে হারাতে পারেনি পাকিস্তান। যতবার মুখোমুখি হয়েছে, ততবারই হার। ড্র ভাগ্য আসন্ন চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতেও এই দুই বৈরি প্রতিবেশিকে ফেলেছে একই গ্রুপে। শুধু একই গ্রুপে পড়াই নয়, ১ জুন থেকে শুরু হতে যাওয়া চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে গ্রুপপর্বে নিজেদের প্রথম ম্যাচেই মুখোমুখি হচ্ছে ভারত-পাকিস্তান। স্বাভাবিকভাবেই ৪ জুনের এই ম্যাচটি নিয়ে এরই মধ্যে উত্তাপ ছড়াতে শুরু করেছে। উঠে আসছে বৈশ্বিক টুর্নামেন্টে ভারতের বিপক্ষে পাকিস্তানের জিততে না পারার প্রসঙ্গও। তবে অতীতে যাই হোক। পাকিস্তানের প্রধান নির্বাচক ইনজামাম-উল হক আশাবাদী, আসন্ন চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে ভারতের বিপক্ষে ম্যাচে ভালো করবে পাকিস্তান। জয়ের কথা সরাসরি না বলে একটু ঘুরিয়ে বলা আর কী! ইনজির প্রত্যাশা ভারতের বিপক্ষে জয় দিয়েই টুর্নামেন্ট শুরু করতে পারবে পাকিস্তান, ‘হ্যাঁ, বড় টুর্নামেন্টে ভারতের বিপক্ষে আমাদের রেকর্ড ভালো না। তবে প্রতিটা দিনই নতুন আরেকটা দিন। আমি নিশ্চিত, চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে নিজেদের প্রথম ম্যাচে পাকিস্তানি খেলোয়াড়েরা খুবই ভালো পারফর্ম করবে।’ ‘বিগ ম্যান’ হিসেবে বিশেষ পরিচিতি পাওয়া ইনজি যোগ করেছেন, ‘৪ জুনের ম্যাচটা আমাদের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। ভারতের বিপক্ষে ম্যাচ বলেই শুধু নয়, সেমিফাইনালে জায়গা করে নেওয়ার পথে এগিয়ে যেতে ওই ম্যাচের জয়টা দলকে খুবই সাহায্য করবে। আমাদের দলের ভারসাম্যটা খুবই ভালো। দলে তরুণ ও অভিজ্ঞদের সমন্বয়টাও দারুণ।’ বি গ্রুপে পাকিস্তানের অন্য দুই প্রতিপক্ষ দক্ষিণ আফ্রিকা ও শ্রীলঙ্কা।
গ্রুপপর্বে এই দুই দলের সঙ্গে পাকিস্তানের ম্যাচ দুটি যথাক্রমে ৭ ও ১২ জুন। পাকিস্তান দল বর্তমানে ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরে রয়েছে। সেখান থেকে ফিরেই সরফরাজ আহমেদের নেতৃত্বে পাকিস্তান শুরু করে দেবে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির প্রস্তুতি। টুর্নামেন্টের আগে ইংল্যান্ডে করবে প্রস্তুতি ক্যাম্প। পাকিস্তান খেলবে দু’টি প্রস্তুতি ম্যাচও। যার একটি বাংলাদেশের বিপক্ষে, ২৭ মে। ২৯ মে দ্বিতীয় প্রস্তুতি ম্যাচটি তারা খেলবে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে।