শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪
Online Edition

উৎসে কর ০.৫ শতাংশ রেখে বাজেট সংশোধনী প্রস্তাব বিকেএমইএ’র

স্টাফ রিপোর্টার : ২০১৭-২০১৮ অর্থ বছরের জন্য প্রস্তাবিত বাজেটে নীট শিল্পে গ্রিন ইন্ডাস্ট্রির জন্য কর্পোরেট কর হার সিঙ্গেল ডিজিট এবং উৎসে কর আগামী ২ বছরের জন্য ০ দশমিক ৫ শতাংশে রাখার প্রস্তাব করেছেন নীট গার্মেন্টস ব্যবসায়ীদের র্শীষ সংগঠন বিকেএমইএ। সেই সাথে প্রস্তাবিত বাজেটকে জনবান্ধব এবং বেশ কিছু ইতিবাচক পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে বলেও মনে করেন বিকেএমইএ। যা ভিশন ২০২১ এর কাঙ্খিত লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করে দেশকে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে মধ্য আয়ের দেশে রূপান্তরিত করতে সহায়তা করবে বলে মনে কর এই বাজেটে বাংলাদেশে আর্থ-সামাজিক প্রেক্ষাপটে স্পষ্ট মূল্যায়ন এবং সে অনুযায়ী স¤পদের সুষ্ঠু ব্যবহারের দৃষ্টিভঙ্গি এবং বিশেষ করে শিক্ষা, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি সমস্যার সমাধান এবং শিল্পের ধারাবাহিক উন্নয়নের জন্য উন্নয়ন বাজেটে বরাদ্দ রাখা এবং নীতি গ্রহণের সিদ্ধান্তটি বিকেএমইএ সম্পূর্ণভাবে সমর্থন জানিয়েছেন। সেই সাথে বাজেটে মূলধনী যন্ত্রপাতি আমদানিতে রেয়াতি হারে শুল্কায়ন সুবিধা বহাল রাখা এবং দক্ষ মানব সম্পদ গঠনে বাজেটে উল্লেখযোগ্য বরাদ্দ রাখায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিত এবং বাজেট প্রণয়ন প্রক্রিয়ার সাথে সম্পৃক্ত সকলের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করা হয়েছে।
গতকাল রোববার ৪ জুন বিকেএমইএ এর পক্ষ থেকে এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে বাজেট নিয়ে বিকেএমইএ পর্যলোচনা সহ প্রস্তাবনা এবং প্রধানমন্ত্রী ও অর্থমন্ত্রীর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করা হয়। এর আগে শনিবার ঢাকায় এফবিসিসিআই এর কার্যালয়ে যৌথ সাংবাদিক সম্মেলন এবং আলোচনা সভায় বিষয়গুলো উত্থাপন করা হয়েছিল।
এতে বলা হয়, এবারের বাজেটে নীট শিল্পকে উৎসাহিত করতে হ্রাসকৃত কর্পোরেট ট্যাক্স হার ২০ শতাংশ থেকে কমিয়ে ১৫ শতাংশ এবং আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত সনদপ্রাপ্ত গ্রিন ইন্ডাস্ট্রিকে প্রণোদনা হিসেবে আরো ১ শতাংশ কমিয়ে ১৪ শতাংশ কর্পোরেট ট্যাক্স করার প্রস্তাবকে আমরা সাধুবাদ জানাই। বাজেটে রেয়াতি শুল্ক হারে আরো অগ্নি নির্বাপণ যন্ত্রাংশ আমদানিতে সুবিধা বহাল রাখার সিদ্ধান্ত নীট শিল্পের নিরাপত্তা নিশ্চিতে ভূমিকা রাখবে।
উল্লেখ্য যে, ২০১৫-১৬ অর্থবছরে নীট রফতানির পরিমাণ ছিল ১৩ দশমিক ৩৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলার এবং প্রবৃদ্ধি ছিল ৭ দশমিক ৪৭ শতাংশ। উপরন্তু বাংলাদেশের প্রধান রফতানি বাজার আমেরিকা ও ইউরোপ অঞ্চলে তৈরি পোশাকের মূল্য ৪ শতাংশ থেকে ৬ শতাংশ হ্রাস পেয়েছে। একইসাথে সম্প্রতি ডলারের বিপরীতে টাকা শক্তিশালী হয়েছে। সামগ্রিকভাবে উপরোক্ত বিষয়গুলোসহ আন্তর্জাতিক অন্যান্য কারণে নীট শিল্পখাত নাজুক অবস্থার সম্মুখিন হয়েছে। এই প্রেক্ষাপট বিবেচনায় নিয়ে ২০১৭-১৮ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটের উপর বিকেএমইএ’র পর্যালোচনাগুলোয়  বলা হয়েছে :
১. বর্তমান সময়ে শিল্প ক্ষেত্রে গ্যাস বিদ্যুতের মূল্য বৃদ্ধি উৎপাদন প্রক্রিয়াকে ব্যহত করার পাশাপাশি উৎপাদন মূল্যের উপর বড় ধরনের প্রভাব রাখবে। এরই মধ্যে গত ১ মার্চ ২০১৭ এবং ১ জুন ২০১৭ এর মধ্যে দুই দফায় গ্যাসের মূল্য ক্যাপটিপ পাওয়ার উৎপাদকদের জন্য ১৫ শতাংশ এবং শিল্প কারখানাগুলোর জন্য ১৫ দশমিক ১৩ শতাংশ বৃদ্ধি করা হয়েছে, যা নীট শিল্পোদ্যোক্তাদের উদ্বিগ্ন করেছে। তাই মূল্য বৃদ্ধির এই হারকে পুনর্বিবেচনার জন্য অনুরোধ জানাচ্ছি।
২. মূল্য সংযোজন কর (ভ্যাট) এর একক হার ১৫ শতাংশ করার প্রস্তাব তৈরি নীট শিল্পোদ্যোক্তাদের গভীরভাবে আশাহত করেছে। বাংলাদেশের নীটশিল্পের উৎপাদন প্রক্রিয়া শুরু হয় আমদানিকৃত তুলা থেকে সুতা উৎপাদনের মাধ্যমে এবং সামগ্রিকভাবে দেশীয় মূল্য সংযোজনের হার ৮০-৮৫ শতাংশ। মূল্য সংযোজন করের এই উচ্চ হার নীট শিল্পের উৎপাদন ব্যয় বাড়িয়ে দেবে। আমরা মনে করি নীট শিল্পের সম্প্রসারণ ও আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় সক্ষমতা অর্জনের ক্ষেত্রে এই প্রস্তাব বিরূপ প্রভাব ফেলবে। এমতাবস্থায় ভ্যাট এর একক হার ১০ শতাংশে স্থির করতে বিকেএমইএ’র পক্ষ থেকে সবিনয় অনুরোধ জানাচ্ছি। উল্লেখ্য যে, রফতানিমুখী নীটশিল্পের উপর (প্রতিষ্ঠান এবং অন্য যেকোনো প্রতিষ্ঠান গৃহীত সেবার উপর) শূন্য হারে ভ্যাট আরোপিত রয়েছে। অন্যদিকে প্রাইভেট লিমিটেড কোম্পানির ক্রয়কৃত বিভিন্ন উপকরণের উপর বিভিন্ন হারে ভ্যাট আরোপিত আছে। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে প্রতিষ্ঠানের ভ্যাট নির্ধারণের সময় অনেক রফতানিমূখী নীট শিল্প প্রতিষ্ঠান প্রাইভেট লিমিটেড কোম্পানি হওয়ায়, তাদের গ্রহণকৃত সেবার উপর ভ্যাট ধার্য করা হচ্ছে, যা অনাকাঙ্খিত, অনভিপ্রেত ও অযৌক্তিক। একই সাথে মূসক-১৯ এর মাধ্যমে প্রতি মাসে ভ্যাট রিটার্ন দাখিল বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। এটিও রফতানিমুখী নীট শিল্পের প্রাপ্য ভ্যাটমুক্ত সরকারি সুবিধার সিদ্ধান্তের বিপরীত। তাই শুধুমাত্র রফতানিমূখী নীট শিল্পের জন্য ‘ভ্যাট সম্পূর্ণরূপ অব্যাহতি’ শীর্ষক একটি সুস্পষ্ট সার্কুলার জারি করার অনুরোধ জানাচ্ছি, যেখানে মূসক-১৯ দাখিল থেকেও অব্যাহতি প্রদান করা হবে।
৩. এবারের বাজেটে উৎসে কর হার পরিবর্তনের বিষয়ে কোনো নির্দেশনা নেই। বর্তমান উৎসে কর হার ০ দশমিক ৭ শতাংশ জুন ২০১৭ পর্যন্ত কার্যকর থাকবে। পুনরায় এস.আর.ও জারি করে এই বিষয়ে নির্দেশনা না আসলে অর্থ আইন ২০১৬ তে ঙৎফরহধহপব ঘড়. ঢঢঢঠও ড়ভ ১৯৮৪ এরঝবপঃরড়হ ৫৩ইই এর সংশোধনীতে জারিকৃত উৎসে কর হার ১ শতাংশ বলবৎ হয়ে যাবে, যা নীট শিল্পখাতের উন্নয়নকে বাধাগ্রস্ত করবে বলে আমরা মনে করি। উৎসে কর হার আগামী ২ বছরের জন্য ০দশমিক৫ শতাংশ ধার্য করে পুনরায় এই অর্থবছরের জন্য এস.আর.ও প্রকাশের অনুরোধ জানাচ্ছি।
৪. ২০১৭-১৮ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে কর্পোরেট করের হ্রাসকৃত হার ১৫ শতাংশ ধার্য করা হয়েছে। তবে এই হ্রাসকৃত করের হার এখনো পর্যন্ত আমাদের প্রস্তাবিত হারের চেয়ে অধিক এবং এই কারণে তা দেশের নীট খাতের সম্পূর্ণ ভ্যালু চেইনের উপর ঋণাত্বক প্রভাব ফেলবে বলে আমরা পূর্বের অভিজ্ঞতা থেকে ধারণা করছি। তাই নীট খাতের জন্য কর্পোরেট কর হার ১০ শতাংশের অধিক না করার জন্য প্রধানমন্ত্রী, অর্থমন্ত্রীসহ সংশ্লিষ্ট সকলের কাছে আবেদন রাখছি।
৫. গ্রিন ইন্ডাস্ট্রি তৈরি করতে একজন উদ্যোক্তাকে প্রচুর পরিমাণে বিনিয়োগ করতে হয়। নীট শিল্পের টেকসই উন্নয়ন নিশ্চিত করতে গ্রিন ইন্ডাস্ট্রির গুরুত্ব বিবেচনায় নিয়ে গ্রিন ইন্ডাস্ট্রি করার পরিকল্পনায় নিয়োজিত কারখানা বা যেসব প্রতিষ্ঠান সবুজ শিল্পে রূপান্তরিত হয়েছে তাদের উপর হ্রাসকৃত কর্পোরেট কর হার প্রস্তাবিত ১৪ শতাংশ থেকে কমিয়ে আগামী ৫ বছরের জন্য সিঙ্গেল ডিজিটে করার জন্য অনুরোধ করছি।
৬. অন্যদিকে, অগ্নি নিরাপত্তা সংক্রান্ত যন্ত্রাদি এবং প্রি-ফেব্রিকেটেড বিল্ডিং এর আনুষঙ্গিক সকল উপকরণের উপর ৫ শতাংশ আমদানি শুল্ক বহাল রাখাও রফতানিমূখী নীট শিল্পের জন্য সুখকর হবে না। তাই অগ্নি নিরাপত্তা সংক্রান্ত যন্ত্রাদি এবং প্রি-ফেব্রিকেটেড বিল্ডিং ম্যাটেরিয়ালসের উপর ৫ শতাংশ আমদানি শুল্ক পুরোপুরি তুলে দিয়ে শুল্কমুক্ত, এ.আই.টি মুক্ত ও ভ্যাটমুক্ত আমদানি সুবিধা দেয়ার জন্য প্রধানমন্ত্রী ও অর্থমন্ত্রী মহোদয়ের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।
নীট শিল্পের টেকসই উন্নয়ন নিশ্চিতকল্পে উপরোক্ত বিষয়গুলি বিবেচনায় এনে প্রয়োজনীয় সংশোধনী করে বাজেট ২০১৭-১৮ তে অন্তর্ভূক্ত করার জন্য অনুরোধ জানানো হয়েছে।

অনলাইন আপডেট

আর্কাইভ