বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪
Online Edition

চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির শেষ আসর হতে পারে যেসব ক্রিকেটারের

মোহাম্মদ জাফর ইকবাল : ওয়ানডে ক্রিকেটে বিশ্বকাপের পর আইসিসি’র চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিই সবচেয়ে বড় টুর্নামেন্ট। ক্রিকেটের জন্মস্থান ইংল্যান্ডে চলছে এটির জমজমাট অষ্টম আসর। ১৮ জুন অনুষ্ঠিত হবে এর ফাইনাল ম্যাচ। আজকের শেষ সেমির পরই ঠিক হবে ফাইনালে মুখোমুখী হচ্ছে  কোন দুটি দেশ। তাই ক্রিকেট বিশ্বের চোখ এখন কেনিংটন ওভাল, কার্ডিফ আর এজবাস্টনের দিকে।
ব্যাট-বলের দ্যুতিতে মাতিয়ে চলেছে র‌্যাঙ্কিংয়ের শীর্ষ আট দলের সেরা সব তারকা। তবে বয়সের কারণে অনেক তারকার এবারই হতে পারে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির শেষ আসর। কারণ এটি অনুষ্ঠিত হয় চার বছর পর পর। তাদের মধ্যে বাংলাদেশের মাশরাফি বিন মূর্তজা, ভারতের মহেন্দ্র সিং  ধোনি, যুবরাজ সিং, শ্রীলঙ্কার লাসিথ মালিঙ্গা, পাকিস্তানের  শোয়েব মালিক ও দক্ষিণ আফ্রিকার এবি ডি ভিলিয়ার্সের নাম বিশেষভাবে উল্লেখ্য।
মাশরাফি বিন মূর্তজা (বাংলাদেশ) : ২০১৪ সালের শেষের দিকে পুনরায় বাংলাদেশ ওয়ানডে দলের অধিনায়কত্ব পান মাশরাফি বিন মুর্তজা। তার নেতৃত্বে প্রথম সিরিজেই দেশের মাটিতে জিম্বাবুয়েকে ৫ ম্যাচের সিরিজ হোয়াইটওয়াশ করে বাংলাদেশ। এরপর বিশ্বকাপের মঞ্চে কোয়ার্টারফাইনাল খেলে টাইগাররা।
বিশ্বকাপে এটি ছিল বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় অর্জন। ওই অর্জনে রোমাঞ্চিত হয়ে মাশরাফির নেতৃত্বে দেশের মাটিতে টানা পাঁচ ওয়ানডে সিরিজ জেতে বাংলাদেশ। পাকিস্তান-ভারত-দক্ষিণ আফ্রিকা-জিম্বাবুয়ে-আফগানিস্তানকে হারায় টাইগাররা।
এতে নবম থেকে র‌্যাঙ্কিংয়ে সপ্তমস্থানে উঠে সরাসরি চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি খেলার যোগ্যতা অর্জন করে বাংলাদেশ। সেই মাশরাফির নেতৃত্বেই ১ জুন চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে মিশন শুরু করেছে বাংলাদেশ।
ইনজুরির কারণে টেস্ট ক্রিকেট থেকে অনেক আগেই বহুদূরে সরে গেছেন মাশরাফি। সম্প্রতি টি-২০ ক্রিকেটকেও বিদায় বলেছেন তিনি। বাকি কেবল ওয়ানডে। বয়স প্রায় ৩৪। এটিকেও বিদায় বলে দেবেন কোন একদিন। সেই একদিন নিশ্চিতভাবেই ২০১৯ বিশ্বকাপের পর অথবা তার আগে। তবে এবারের আসরই হতে পারে মাশরাফির শেষ আইসিসি চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি। তাই বিশ্বকাপের পরই দ্বিতীয় মর্যাদার আসর চ্যাম্পিয়ন্স প্রফিতে তার বিদায়টা স্মরণীয় হোক, তা মনেপ্রাণে চাইবে ১৬ কোটি বাঙালী এবং ম্যাশ নিজেও।
মহেন্দ্র সিং ধোনি (ভারত) : গত এক দশক ধরে ভারতীয় ক্রিকেটের অন্যতম ভরসার নাম মহেন্দ্র সিং ধোনি। ভারতীয় দলে প্রধান তিনটি দায়িত্ব দক্ষতার সাথে পালন করেছেন তিনি। ব্যাটিং-উইকেটরক্ষকের দায়িত্ব ছাড়াও অধিনায়কত্ব করে বুদ্ধিমত্তার সঙ্গে। তার নেতৃত্বে আইসিসি টেস্ট র‌্যাঙ্কিংয়ের শীর্ষে, ২৮ বছর পর ওয়ানডে বিশ্বকাপ জয় এবং টি-২০ বিশ্বকাপের শিরোপা জয় করে ভারত। বাকি ছিল আইসিসি চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি জয়। সেটিও গত আসরে পূর্ণ করেছেন ধোনি। গত আসরের ফাইনালে স্বাগতিক ইংল্যান্ডকে হারিয়ে দ্বিতীয়বারের মতো চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি জয় করে টিম ইন্ডিয়া।
ফলে আইসিসি’র সকল ইভেন্টই ধোনির নেতৃত্বে জয় করে ভারত। তাই ভারতের সবচেয়ে সফল অধিনায়ক এখন ধোনিই। আসন্ন চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে বিরাট কোহলির নেতৃত্বে খেলবেন ধোনি। তাই ব্যাটিং ও উইকেটরক্ষকের দায়িত্বটাই এখন মুখ্য বিষয় ধোনির কাছে। তারপরও কোহলিকে অধিনায়কত্বের সকল টিপস ঠিকই দেবেন ধোনি। যা আগেও দেখা গিয়েছিল, নিউজিল্যান্ড ও ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজে। ৩৫ বছর বয়সী ধোনি, ব্যাটসম্যান হিসেবে সব সময়ই ভয়ঙ্কর।
খাদের কিনারা থেকে ভারতকে অনেক ম্যাজে জয় এনে দিয়েছেন তিনি। তবে এবারই তার ক্যারিয়ারের শেষ চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি। তাই শেষ টুর্নামেন্টকে স্মরণীয় করে রাখতে ব্যাট হাতে ধোনির বিধ্বংসী ধারাবাহিকতা প্রত্যাশা ভারতবাসীর।
যুবরাজ সিং (ভারত) : ক্রিকেট বিশ্বের অন্যতম এক সেরা যোদ্ধা ভারতের যুবরাজ সিং। শুধুমাত্র ২২ গজেই নয়, জীবন যুদ্ধেও জয়ী তিনি। মরণব্যাধি ক্যান্সারের বিপক্ষে লড়াই করে জয় নিয়ে মাঠে ফিরেছেন এবং নিজেকে বড় ম্যাচে হিরো হিসেবে প্রমাণ করেছেন মৃত্যুঞ্জয়ী খেলোয়াড় যুবরাজ। ২০০০ সালে প্রথমবার চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে খেলতে নামেন যুবরাজ। এর পরের তিন আসরেও খেলেন তিনি। তবে ইনজুরি এবং অন্যান্য কারণে ২০০৯ ও ২০১৩ সালের আসরে খেলা হয়নি তার। যুবরাজ সবসময়ই প্রমাণ করেছে বড় আসরের বড় ধরনের পারফর্মার এবং দলের জন্য নিজেকে বিলিয়ে দিতে পারেন। তবে ধারণা করা হচ্ছে, ২০২১ সালে পরের চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে আর নাও দেখা যেতে পারে যুবরাজকে। কারণ তার বয়স এখন ৩৫।
২০১৯ বিশ্বকাপের পরই ক্রিকেট বিদায় জানানোর পরিকল্পনা হয়ত করে রেখেছেন এই বাঁ-হাতি ব্যাটসম্যান।
এবি ডি. ভিলিয়ার্স (দক্ষিণ আফ্রিকা) : চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে দক্ষিণ আফ্রিকাকে নেতৃত্ব দিয়েছেন বিশ্বের অন্যতম মারকুটে ব্যাটসম্যান এবি ডি ভিলিয়ার্স। তার নেতৃত্বে ১৯ বছর পর আবারও চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির শিরোপা জয়ের স্বপ্ন দেখেছিল প্রোটিয়ারা। চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির প্রথম আসর, অর্থাৎ আইসিসি নক-আউট টুর্নামেন্টে হ্যান্সি ক্রনিয়ের নেতৃত্বে বাজিমাত করেছিল দক্ষিণ আফ্রিকা। এরপর কখনও আইসিসির কোন ইভেন্টেই সেরা সাফল্য পায়নি দক্ষিণ আফ্রিকা। তাই ‘চোকার্স’ শব্দটি প্রোটিয়াদের গায়ের সাথে এঁটে গেছে শক্তপোক্তভাবে। তবে ‘চোকার্স’ শব্দটি এবারাই মুছে ফেলতে ব্যাকুল ছিলেন ডি ভিলিয়ার্স। কারণ এবারের আসরটিই ছিল তাার শেষ চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি। তাই এটিকে স্মরণীয় করে রাখতে চেয়িছিলেন। কিন্তু কোয়ার্টার ফাইনালে ভারতের সাথে দুর্দান্ত শুরু করে শেষ পর্যন্ত দুইশয়ের নীচেই থেমে যেতে হয়েছে তাদের।
এর ফলে দেশটির নামের সাথে ‘চোকার্স’ শব্দটি ভালোভাবেই যেন গেখে গেল। সেই সাথে শেষ হয়ে গেল ডি ভিলিয়ার্সের ইতিহাস গড়ার স্বপ্নও। অনেকটা হতাশ হয়েই বিদায় নিতে হলো তার দলকে। ২০১৯ বিশ্বকাপের পরই ক্রিকেটকে বিদায় জানাতে চান ডি ভিলিয়ার্স। ২০১৫ সালে জোহানেসবার্গে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে মাত্র ৩১ বলে দ্রুত সেঞ্চুরির রেকর্ড গড়েছিলেন ডি ভিলিয়ার্স।
লাসিথ মালিঙ্গা (শ্রীলঙ্কা) : ডেথ বোলার হিসেবে শ্রীলঙ্কার পেসার লাসিথ মালিঙ্গার সুখ্যাতি ক্রিকেট বিশ্বে আকাশ ছোঁয়া। গেল কয়েক বছর ধরে লংকান জার্সি গায়ে সেটিই দেখিয়ে আসছেন তিনি। ২০০৪ সালে প্রথমবারের মতো চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে খেলতে নামেন মালিঙ্গা। চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির ইতিহাসে সর্বোচ্চ উইকেট শিকারির তালিকায় বর্তমানে তৃতীয় স্থানে রয়েছেন তিনি। ১৩ ম্যাচে ২৪ উইকেট শিকার করেছেন মালিঙ্গা।
বর্তমান শ্রীলঙ্কার অনভিজ্ঞ স্কোয়াডের মধ্যে সবচেয়ে বেশি অভিজ্ঞতাসম্পন্ন খেলোয়াড় মালিঙ্গা। তবে আগামী চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে তাকে আর দেখা যাবে না বলে ধারণা করা হচ্ছে। কারণ তরুণদের নিয়েই দল গড়তে বেশি স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করছে শ্রীলঙ্কা। তাই চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি থেকে মালিঙ্গার বিদায়টা রঙ্গিন করতে কমতি ছিলনা বর্তমানের তারুণ্যনির্ভর দলটির। ভালোই ক্যামবেক করেছিল তারা।
সেমিতে উঠার লড়াইটা ভালোই জমিয়েছিল দেশটি। কিন্তু ক্যাচ মিসের খেসারত দিতে হলো তাদের। জয় থেকে একশত রান দূরে থেকেও সাত উইকেট হারানো পাকিস্তানকে একাই খাদের কিনারা থেকে তুলে আনেন দলপতি সরফরাজ। এতে করে শ্রীলঙ্কার সাথে সাথে মালিঙ্গার স্বপ্নটাও শেষ হয়ে যায়।
শোয়েব মালিক (পাকিস্তান) : এক সময় পাকিস্তাানের মিডল-অর্ডারে ভরসার নাম ছিলেন সাবেক অধিনায়ক শোয়েব মালিক। মিসবাহ-উল-হক ও ইউনুস খানের পরই তাকে বিবেচনা করা হতো। কিন্তু নিজেকে সেভাবে প্রমাণ করতে পারেননি।
তবে সম্প্রতি সময়ে ব্যাট হাতে দারুণ সাফল্য পাওয়ায় চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির দলে আছেন তিনি। তবে আগামী আসরে তাকে নাও দেখা যেতে পারে। কারণ ২০১৯ বিশ্বকাপের পরই আন্তর্জাতিক ক্রিকেট ছাড়ার ইঙ্গিত দিয়ে রেখেছেন ৩৫ বছর বয়সী মালিক। এবারের আসরে তিনি এখনো তেমন জ্বলে উঠতে পারেননি।

অনলাইন আপডেট

আর্কাইভ