শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪
Online Edition

বগুড়ার শেরপুরে ঝড়ে ক্ষতিগ্রস্তদের গম বিতরণে অনিয়ম ও আত্মসাতের অভিযোগ

শেরপুর (বগুড়া) সংবাদদাতা : বগুড়ার শেরপুরে ঘূর্ণিঝড়ে ক্ষতিগ্রস্ত ৫টি ইউনিয়নের সোয়া ৯‘শ পরিবারের মাঝে দেয়া সরকারি বরাদ্দের গম প্রকৃত ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা থেকে নাম বাদ দেয়া, ভুক্তভোগিদের ওজনে কম দিয়ে সেগুলো আত্মসাত করায় গত মঙ্গলবার বিকালে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবর লিখিত অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, গত ১৫ মে রাতে শেরপুর উপজেলার উত্তর সীমান্তের ১নং কুসুম্বি, ২নং গাড়িদহ, ৩নং খামারকান্দি, ৪নং খানপুর ও শেরপুর পৌরসভার আংশিক এলাকার উপর দিয়ে রাতের আঁধারে প্রচন্ড বেগে ঘূর্ণিঝড় বয়ে যায়। ঝড়ের কারণে হাজার হাজার কাঁচা-পাকা ঘরবাড়ি, গাছপালা, ফসলের জমি, পাকা বোরো ধানসহ বিদ্যুৎ লাইনের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়। ঝড়ের পরদিন স্ব-স্ব ইউনিয়ন পরিষদের পক্ষ থেকে মেয়র, চেয়ারম্যান ও সদস্যগণ ক্ষতিগ্রস্তদের নামের তালিকা প্র¯ুÍত করেন। এরপর শেরপুর উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার মাধ্যমে দুর্যোগ ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে সরকারি বরাদ্দের ৯১৪টি পরিবারের মাঝে ২২ মেট্রিক টন গম বরাদ্দ দেয়া হয়। সেই বরাদ্দকৃত গম হতে গত সোমবার গাড়িদহ মডেল ইউনিয়নে ২’শ ৫০টি পরিবারের মাঝে সরকারি হিসেবে প্রতিটি পরিবারের জন্য ৩২ কেজি ১’শ ৯২ গ্রাম করে গম বিনামূল্যে বিতরণ করার কথা থাকলেও ভুক্তভোগিদের দেয়া হয়েছে মাত্র ২৪ সের করে। গত মাসের শেষদিকে পবিত্র ঈদুল ফিতরের আগে সরকারি অফিস থেকে এই আদেশ দেয়া হলেও অজ্ঞাত কারণে যথাসময়ে ওই সকল গম সরকারি গুদাম থেকে উত্তোলন করা হয়নি। গত মাসের শেষ দিন ৩০ জুন ফাইনালে ওই সকল খাদ্য তুলে ব্যক্তিগত গুদামে রাখা হয়। এদিকে গম উত্তোলনের এক সপ্তাহ পর বরাদ্দকৃত খাদ্যের অর্ধেক পরিমাণ খাদ্য কালোবাজারে বিক্রিসহ প্রকৃত ক্ষতিগ্রস্তদের মাঝে বিতরণ না করার অভিযোগ উঠেছে। অভিযোগকারীরা জানায়, ঝড়ের কারণে ঢেউটিনের ছাউনি দেয়া ঘরবাড়ি উড়ে গেছে। বাড়িঘরের ওপরে গাছপালা ভেঙ্গে পড়ে হাজার হাজার টাকার ক্ষয়ক্ষতি হলেও তাদের নামে সরকারি বরাদ্দের গম দেয়া হয়নি। অপেক্ষাকৃত স্বচ্ছল পরিবারের মাঝে নাম মাত্র গম বিতরণ দেখিয়ে অর্ধেকের বেশি পরিমাণ খাদ্য লুটপাট করা হয়েছে। 

ছোট ফুলবাড়ি গ্রামের জাহাঙ্গীর হোসেন, বাকিল উদ্দিন, আলাল উদ্দিন, গোলজার হোসেন জানায়, প্রকৃত ক্ষতিগ্রস্তরা সরকারি গম পায়নি। যাদেরকে এই খাদ্য দেয়া হয়েছে তারা ক্ষতিগ্রস্তের তালিকায় নেই। এরপর জনপ্রতি ৩২ কেজি ১’শ ৯২গ্রাম মাষ্টার রোল করা হলেও ওজনে দেয়া হয়েছে মাত্র ২৫ সের। ফুলবাড়ি গ্রামের মুন্নাফ হোসেন, বাচ্চু মিয়া, খয়বর আলী, আঃ বাছেদ ও জাহাঙ্গীর আলম জানায়, তাদের ঘরবাড়ি আকাশে উড়ে গেলেও চেয়ারম্যানের তালিকায় তাদের নাম নাই। গাড়িদহ ইউপির চেয়ারম্যান দবির উদ্দিন জানায়, ঝড়ে ক্ষতিগ্রস্তদের ৫‘শ জনের তালিকা সরকারি প্রকল্প বাস্তবায়ন অফিসে জমা দেয়া হলেও খাদ্য দেয়া হয়েছে ৮ দশমিক ৮০০ মেঃ টন অর্ধেক পরিবারের জন্য। ওজনে কম দেয়া হয়নি বলে তিনি দাবী করেন। ৮নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য মো. নুরুল ইসলাম নুরু জানায়, তার দেয়া ক্ষতিগ্রস্তদের নামের তালিকা সরকারি ঘরে জমা  দেয়া হয়নি। ফলে গত ৩ জুলাই যে সকল পরিবারের মাঝে খাদ্য দেয়া হয়েছে সে বিষয়ে তিনি কিছুই জানেন না। শেরপুর উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মোছা. শিউলি বেগম জানান, গত ৩০ জুন সরকারি গুদাম থেকে ২২ মেট্রিক টন খাদ্য উত্তোলন করা হয়েছে। 

উপজেলা নির্বাহী অফিসার সিরাজুল ইসলাম জানান, তদন্ত করে প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

অনলাইন আপডেট

আর্কাইভ