শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪
Online Edition

যেখানে পল্লী বিদ্যুতের সংযোগ সেখানেই প্রতারক

ঝালকাঠি সংবাদদাতাদ: ঝালকাঠি সদর উপজেলার পোনাবালিয়া ও ভৈরবপাশাসহ বিভিন্ন ইউনিয়নে পল্লী বিদ্যুতের সংযোগের নাম করে গ্রাহকদের কাছ থেকে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে একটি সংঘবদ্ধ প্রতারক চক্র। সদর উপজেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে এসব টাকা হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগ করেছেন সংযোগ প্রত্যাশীরা।
দীর্ঘদিনেও প্রতারণার শিকার সাধারণ মানুষ বিদ্যুৎ সংযোগ না পাওয়ায় তাদের মাঝে ক্ষোভ দানা বেঁধে উঠেছে। এ ঘটনায় ঝালকাঠি পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির পক্ষ থেকে তদন্ত কমিটি করা হলেও শেষ পর্যন্ত প্রতারকদের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে না বলে অভিযোগ গ্রাহকদের । অপরদিকে ঝালকাঠি পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি সভাপতি জালাল আহম্মেদ রাজুর বিরুদ্ধে ভৈরবপাশা ইউনিয়নে সংযোগ দেয়ার নামে অর্থ আদায়ের অভিযোগ উঠেছে। অবশ্য তিনি এ অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, আমার আগে সমিতির কর্মকর্তারা বিদ্যুৎ সংযোগের নামে টাকা উঠিয়ে আত্মসাৎ করেছে। আমি সভাপতির দায়িত্ব পাবার পর তারা এসব অপকর্ম করতে না পারায় আমার নামে উল্টো এই অভিযোগ তুলেছে।  
পোনাবালিয়ায় ইউনিয়নের জনৈক ইয়াকুব আলী মাস্টারের বিরুদ্ধে তিনটি গ্রামের (ছিলারিছ, খুলনা ও চাঁদপুরা) ২২৮ জনের কাছ থেকে প্রতারণা করে প্রায় ৭ লাখ টাকা হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগ রয়েছে। বিগত এক বছরে বিদ্যুতের খুঁটি, পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির সদস্য করা ও সংযোগ দেয়ার নামে প্রত্যেকের কাছ থেকে দেড় হাজার থেকে ১০ হাজার টাকা পর্যন্ত হাতিয়ে নিয়েছেন তিনি। প্রতারিত হওয়া তিন গ্রামের অধিকাংশ মানুষ জানায়, তাদের গৃহপালিত পশু ও গাছ বিক্রি এবং সুদে টাকা ঋণ নিয়ে বিদ্যুতের আশায় এই টাকা প্রতারকদের হাতে দিয়েছে। ইউনিয়ন ঘুরে দেখা যায়, শুধু টেকেরহাট বাজারে বিদ্যুৎ সংযোগ দেয়া হয়েছে। পাশাপাশি খুলনা গ্রামে সামান্য কয়েকটি খুঁটি বসানো হয়েছে। প্রতারণার শিকার ছিলারিছ গ্রামের আঃ হক বলেন, বিদ্যুৎ দেয়ার কথা বলে ইয়াকুব আলী মাস্টার ও জাহাঙ্গীর খান এক বছর আগে ১০ হাজার নিয়েছে। তারা পল্লী বিদ্যুতের লোক না হওয়া সত্ত্বেও তাদের কেন টাকা দিলেন জানতে চাইলে আঃ হক বলেন, যখন এই এলাকায় পল্লী বিদ্যুতের প্রকৌশলী বৈদ্যুতিক খুঁটি বসাতে পরিমাপের জন্য আসে তখন তাদের সাথেই ইয়াকুব আলী মাস্টার সবকিছু দেখাশুনা করেছে। সেই কারণে তার কাছে টাকা দিয়েছি।
প্রতারণার শিকার সাহিদা বেগম জানায়, সৌর বিদ্যুৎ পর্যাপ্ত চাহিদা পূরণ করতে না পারায় বিদ্যুতের আশায় আমিও ১০ হাজার টাকা ইয়াকুব আলী মাস্টারকে দেই। এরপর থেকে আজ পর্যন্ত বিদ্যুৎ তো ভালো, খুঁটির দেখা নাই। চাঁদপুরা গ্রামের মহসীন হাওলদার, শাহজাহান মিয়া, চাঁন মিয়া ব্যাপারী, মনুজা বেগম, সাবানা আক্তার, নুরুন্নাহার বেগম, লাইজু বেগমসহ আরো অনেকে অভিযোগ করে বলেন, বিদ্যুৎ পেতে আমরা গাছ ও হাঁস মুরগী বিক্রি করে ২ থেকে ৬ হাজার টাকা করে ইয়াকুব আলী মাস্টারকে দিয়েছি। এ বিষয়ে চাঁদপুরা গ্রামের মোর্শেদ আলী খান সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. সিদ্দিকুর রহমান জানান, আমার বিদ্যালয়ে বিদ্যুৎ সংযোগ দেয়ার নামে ইয়াকুব মাস্টার পরিচালনা কমিটির কাছ থেকে ১ লাখ টাকা নিয়েছেন। এদিকে ঝালকাঠি পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির সূত্রে জানা যায়, এসব ঘটনায় ঝালকাঠি পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির ডিজিএম গণেষ চন্দ্র দাসকে প্রধান করে গঠিত তদন্ত কমিটির সদস্যরা গত ৪ জুন অভিযোগের সত্যতা যাচাইয়ে এলাকায় যান। এছাড়াও সদর উপজেলার গোয়ালকান্দা গ্রামের বাসিন্দা হাসান মাহমুদ রিপন জানান, আমাদের গ্রামে বৈদ্যুতিক সংযোগের নামে পল্লী বিদ্যুতের কয়েকজনের সহায়তায় হাজার হাজার টাকা হাতিয়ে নিয়েছে প্রতারক চক্র। এ ব্যাপারে তদন্ত কমিটি গঠন হয়েছে এবং তদন্তও হয়েছে তারপর আর কি হয়েছে জানি না। এনিয়ে কয়েকবার যোগাযোগ করলেও কোন সুফল না পাবার অভিযোগ করেন তিনি।
এ ব্যাপারে ইয়াকুব আলী হাওলাদার বলেন, আমার বিরুদ্ধে টাকা আত্মসাতের অভিযোগ করা হলেও তারা অনেকেই বিদ্যুৎ পেয়েছে। যারা পায়নি তারাও পাবে। সংযোগ দেয়ার পূর্বে পল্লী বিদ্যুতের লোক না হয়েও এ টাকা উঠানোর বৈধতা আপনার আছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, এলাকাবাসীর স্বার্থে অফিসকে ম্যানেজ করতেই এ টাকা উঠনো হয়েছিল। ঝালকাঠি পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির জেনারেল ম্যানেজার (জিএম) প্রকৌশলী মো. এমদাদুল হক জানান, পল্লী বিদ্যুৎ সংযোগের সময় আমরা এলাকায় মাইকিং ও লিফলেট বিতরণ করে প্রচার-প্রচারণা করি। তারপরেও গ্রাহকরা অতিলোভে সচেতন না হওয়ায় প্রতারণার স্বীকার হচ্ছে।
পোনাবালিয়া এলাকার বিষয়ে অভিযোগ পেয়েই আমি ঝালকাঠি পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির একজন ডিজিএমকে প্রধান করে তিন সদস্যের একটি কমিটি গঠন করেছি। তদন্ত চলছে। ঘটনার সাথে সমিতির কেহ জড়িত থাকলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

অনলাইন আপডেট

আর্কাইভ