শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪
Online Edition

চার আসামীর মৃত্যুদণ্ডের পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশ

স্টাফ রিপোর্টার : সিলেটের চাঞ্চল্যকর শিশু সামিউল আলম রাজন হত্যা মামলায় নিম্ন আদালতের দেয়া চার আসামীর মৃত্যুদন্ড বহালের হাইকোর্টের পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশ হয়েছে। রায়ে ডিভিশন বেঞ্চের বিচারপতিদের স্বাক্ষরের পর গতকাল মঙ্গলবার সুপ্রিম কোর্টের ওয়েবসাইটে এটি প্রকাশ করা হয়েছে।
এর আগে গত ১১ এপ্রিল বিচারপতি জাহাঙ্গীর হোসেন সেলিম ও বিচারপতি মো. জাহাঙ্গীর হোসেন সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ সামিউল আলম রাজন হত্যা মামলায় নিম্ন আদালতের দেয়া চার আসামীর মৃতুদন্ড বহাল রাখেন।
মৃত্যুদন্ড দন্ড পাওয়া চারজন হলেন-মামলার প্রধান আসামী সিলেটের জালালাবাদ থানার শেখপাড়া গ্রামের কামরুল ইসলাম, পীরপুর গ্রামের সাদিক আহমদ ময়না ওরফে ময়না চৌকিদার, শেখপাড়া গ্রামের তাজ উদ্দিন বাদল ও সুনামগঞ্জের দিরাই উপজেলার ঘাগটিয়া গ্রামের জাকির হোসেন ওরফে পাভেল। এর মধ্যে জাকির হোসেন ওরফে পাভেল বর্তমানে পলাতক।
আদালত জালালাবাদ থানার পূর্ব জাঙ্গাইল গ্রামের নূর মিয়া ওরফে নূর আহমদকে যাবজ্জীবন ও শেখপাড়া গ্রামের দুলাল আহমদকে ১০ বছরের কারাদন্ড দেন। লাশ গুমের চেষ্টার দায়ে আসামী কামরুলের ভাই শেখপাড়া গ্রামের মুহিদুল ইসলাম মুহিত, আলী হায়দার ও শামীম আহমদকে সাত বছর করে এবং সুনামগঞ্জের দোয়ারাবাজার উপজেলার জাহাঙ্গীরগাঁও গ্রামের আয়াজ আলীকে এক বছরের কারাদন্ড দেয়া হয়। তাঁদের মধ্যে আসামী শামীম আহমদ পলাতক।
এ ছাড়া মামলা থকে বেকসুর খালাস পান জালালাবাদ থানার হায়দরপুর গ্রামের রুহুল আমীন, কুমারগাঁও গ্রামের আজমত উল্লাহ ও সুনামগঞ্জের ছাতক উপজেলার দক্ষিণ কুর্শি ইসলামপুর গ্রামের ফিরোজ আলী।
২০১৫ সালের ৮ নবেম্বর রাজন হত্যা মামলায় আসামী কামরুলসহ চারজনকে মৃত্যুদন্ড দেন আদালত। ওই সময় একজনকে যাবজ্জীবন ও পাঁচজনকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদন্ড দেয়া হয়। বেকসুর খালাস দেয়া হয় তিনজনকে।
গত বছরের ১০ নবেম্বর রাজন হত্যা মামলার ডেথ রেফারেন্স হাইকোর্টে এসে পৌঁছায়। পরে প্রধান বিচারপতির নির্দেশে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে পেপারবুক প্রস্তুত করা হয়। গত ৩০ জানুয়ারি এই শুনানি শুরু হয়েছিল। পরে ১২ মার্চ মৃত্যুদন্ডাপ্রাপ্ত আসামীদের করা আপিল ও ডেথ রেফারেন্সের শুনানি শেষ হয়।
২০১৫ সালের ৮ জুলাই চুরির অপবাদে সিলেট-সুনামগঞ্জ সড়কের কুমারগাঁও বাসস্ট্যান্ডসংলগ্ন শেখপাড়ায় নির্যাতন করে হত্যা করা হয় সিলেটের জালালাবাদ থানা এলাকার বাদেয়ালি গ্রামের সবজি বিক্রেতা শিশু রাজনকে। ফেসবুকে প্রচারের উদ্দেশ্যে নির্যাতনের ভিডিওচিত্র ধারণ করে নির্যাতনকারীরা। পরে লাশ গুম করার সময় ধরা পড়ে একজন। এ ঘটনায় পুলিশ বাদী হয়ে জালালাবাদ থানায় মামলা করে।
সিলেটে রড ছাড়া কলেজ ভবন নির্মাণ
১৩ জনের বিরুদ্ধে মামলা
সিলেট ব্যুরো : সিলেটের ওসমানীনগর উপজেলার গোয়ালাবাজার আদর্শ মহিলা ডিগ্রি কলেজের নির্মাণাধীন ভবনের পিলারে রড না দেয়ার অভিযোগে প্রকৌশলী, ঠিকাদারসহ ১৩ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেছেন কলেজ অধ্যক্ষ। ওসমানীনগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ সহিদ উল্লাহ বলেন, কলেজটির অধ্যক্ষ আবদুল মুকিত আজাদ দুর্নীতি প্রতিরোধ আইনে গত সোমবার মামলাটি করেন। এতে নাম উল্লেখ ছাড়াও অজ্ঞাতনামা ৮ জনকে আসামী করা হয়েছে এ মামলায়।
এজাহারভুক্ত আসামীদের মধ্যে রয়েছেন শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তর সিলেটের উপসহকারী প্রকৌশলী তাজুল ইসলাম, ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান পুষ্পা কনস্ট্রাকশনের স্বত্বাধিকারী রাখাল দে, শাহ আলম এন্টারপ্রাইজের স্বত্বাধিকারী কাজী শাহ আলম, তাঁর সহকারী আবদুল কাইয়ুম ও লোকমান হোসেন।
কলেজ সূত্রে জানা যায়, স্থানীয় সাংসদ ও কলেজ পরিচালনা কমিটির সভাপতি ইয়াহইয়া চৌধুরী এবং কলেজটির অধ্যক্ষ ভবন নির্মাণকাজে অনিয়মের অভিযোগ পেয়ে গত শনিবার কলেজ পরিদর্শন করেন। এ সময় সাংসদ ইয়াহইয়া দুটি পিলারের অংশবিশেষ ভেঙে রড ব্যবহার না করার বিষয়টি দেখতে পান। এ ঘটনায় তাৎক্ষণিকভাবে তিনি শাহ আলম, আবদুল কাইয়ুম ও লোকমানকে আটক করে পুলিশে সোপর্দ করেন।
কলেজটির অধ্যক্ষ আবদুল মুকিত আজাদ বলেন, শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরের বাস্তবায়নাধীন সাড়ে তিন কোটি টাকা ব্যয়ে চারতলা ভবনটির নির্মাণকাজ চলছে। কাজের অগ্রগতি পরিদর্শনে গিয়ে সাংসদ ইয়াহইয়া চৌধুরী পিলারে রড না দেয়ার বিষয়টি দেখেন। শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, ২০১৬ সালের ১৩ আগস্ট কলেজটিতে চারতলাবিশিষ্ট একাডেমিক ভবন নির্মাণের কাজ শুরু হয়। নির্মাণকাজের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ছিল পুষ্পা কনস্ট্রাকশন। গত জুন থেকে দ্বিতীয় ধাপে ভবনের তিন ও চারতলার কাজ শুরু হয়। এ কাজের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান শাহ আলম এন্টারপ্রাইজ।
সাংসদ ইয়াহইয়া চৌধুরী  বলেন, ‘দেশের বিভিন্ন স্থানে রডের বদলে বাঁশ দিয়ে ভবন নির্মাণের কাজ চলছে বলে গণমাধ্যমে খবর প্রকাশিত হচ্ছে। এ অবস্থায় আমার নির্বাচনী এলাকার এই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের কাজ কেমন চলছে তা দেখতে যাই। সেখানে গিয়ে এমনটি পাওয়া যায়।’ তিনি আরও বলেন, ‘ভবনটির তিনতলা পর্যন্ত নির্মাণ ইতিমধ্যে শেষের পথে। আমরা দুটি পিলারের অংশবিশেষ ভেঙে এ রকম পেয়েছি। অন্যগুলোতে না জানি কী আছে। বিষয়টি বের হতেই নির্মাণকাজের ঠিকাদারদের পুলিশে দিয়েছি। এর সঙ্গে নির্মাণ তদারককারী শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরের প্রকৌশলীরা জড়িত বলে আমার ধারণা।’
জানতে চাইলে শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তর সিলেটের উপসহকারী প্রকৌশলী তাজুল ইসলাম মামলা দায়েরের বিষয়টি জানেন না বলে জানান। তবে তিনি বলেন, ‘কলেজ ভবনের নির্মাণকাজে কিছু অনিয়ম হচ্ছিল। ভবনের আসল কাজে অনিয়ম হয়নি। আমাদের না জানিয়ে ঠিকাদার কিছু কাজ করেছিল। যেখানে অনিয়ম হয়েছে, সেটি ভেঙে নতুন করে আবার কাজ করে দেয়া হবে।’
উল্লেখ্য, গত শনিবার রড না দিয়ে কলেজ ভবন নির্মাণ হচ্ছে খবর পেয়ে সাংসদ ইয়াহইয়া ঘটনাস্থলে গিয়ে প্রমাণ পাওয়ায় সারা সিলেটের তোলপাড় শুরু হয়। টনক নড়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের মামলা দায়েরও হয়। এ পর্যন্ত এই মামলার তিনজনকে গ্রেফতার রয়েছেন।

অনলাইন আপডেট

আর্কাইভ