শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪
Online Edition

মাদকের মারণছোবল

মাদকনিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের সূত্রমতে প্রতিদিন মাদকাসক্তের সংখ্যা বাড়ছে। দেশে মারণনেশায় মত্ত এখন প্রায় কোটি মানুষ। প্রতিদিন নেশার পেছনে ব্যয় হয় ৬০ হাজার কোটি টাকা। শুধু ঢাকা মহানগরীতে হাজারের বেশি সেন্টারে প্রায় প্রকাশ্যে বিভিন্ন মাদক বেচাকেনা হয়। শুধু ইয়াবাই বিক্রি হয় ৩ লাখ পিস বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। মাদকনিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ, পুলিশ, র‌্যাব মিলেও মাদকব্যবসায়ী ও সেবনকারীদের ঠেকাতে পারছে না। দিনদিন এরা আরও দাপুটে হয়ে উঠছে। স্কুল-কলেজ, পাবলিক ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীসহ অনেক বেকার যুবক-যুবতী নেশাগ্রস্ত হয়ে পড়েছে। বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের একশ্রেণির নেতাকর্মীও মাদকাসক্ত। এদের অনেকে এর ব্যবসায়ের সঙ্গেও জড়িত বলে মাদকনিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে। নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট, জেলা প্রশাসন ও পুলিশের স্টিকার লাগানো গাড়িতেও মাদকদ্রব্য পরিবহন করা হয় বলে রিপোর্টে প্রকাশ। তার মানে মাদক ব্যবহারের ব্যাপকতা আরও বেশি। যা ধরা পড়ে তা ছিটেফোঁটা মাত্র।
মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের গবেষণা রিপোর্ট অনুসারে থাই ভাষায় ইয়াবা হচ্ছে ক্রেজি মেডিসিন বা পাগলা দাওয়াই। এটি হেরোইনের চাইতেও মারাত্মক। প্রথমে কৌতূহলবশত দুয়েকবার ইয়াবা সেবন করতে গিয়ে ধরা পড়ে যায় মানে আসক্ত হয়ে পড়ে। আর ছাড়তে পারে না। স্কুল-কলেজ-ভার্সিটির ছাত্রদের সঙ্গে ছাত্রীদেরও অনেকে ইয়াবাসহ নানা মাদকে অভ্যস্ত হয়ে পড়ছে। ইয়াবার সঙ্গে ফেনসিডিল, মারিজুয়েনা এবং গাঁজাও কম যায় না। ক্রমান্বয়ে অপ্রতিরোধ্য হয়ে উঠছে মাদকদ্রব্যের অবৈধ বাণিজ্য। ৪৭ টি অভ্যন্তরীণ রুট ও রেলপথ দিয়ে মাদক ঢুকছে দেশে। বড় বড় সিন্ডিকেট এ ব্যবসায়ে জড়িত। ক্ষমতাসীন ও এর বাইরে থাকা দলসমূহের অনেকেই মাদকবাণিজ্যের সঙ্গে জড়িত বলে গবেষণা রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়।
মাদকতাসক্ত শিক্ষার্থীরা পড়াশোনায় পিছিয়ে পড়ছে। অনেকেই একাডেমিক ইয়ার লস করছে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ হলেও এরা বাড়ি যায় না। নানা অজুহাতে হলে পড়ে থাকে। ধীরেধীরে পরিবার-পরিজন থেকেও মাদকাসক্তরা বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ছে। ফলে অভিভাবকরাও দুশ্চিন্তায় পড়ছেন কলেজ-ভার্সিটিতে অধ্যয়নরত সন্তানদের নিয়ে। মাদক শুধু দেশের অর্থনীতিকেই পঙ্গু করছে না। দেশের তারুণ্য ধ্বংস করে ফেলছে। মেধাহীন বানাচ্ছে দেশ ও এর ভবিষ্যত বংশধরদের। তাই যেকরেই হোক দেশ ও জাতিকে সমূহধ্বংস থেকে বাঁচাতে চাইলে মাদকের মারণছোবল রুখে দিতে হবেই। এর কোনও বিকল্প নেই।

অনলাইন আপডেট

আর্কাইভ