আজ বাইশে শ্রাবণ
স্টাফ রিপোর্টার : আজ রোববার বাইশে শ্রাবণ। প্রথম এশীয় হিসেবে নোবেলজয়ী কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ৭৬তম মৃত্যুবার্ষিকী। দীর্ঘ রোগভোগের পর, শল্য চিকিৎসার জটিলতার কারণে, ১৯৪১ সালের ৭ আগস্ট (২২ শ্রাবণ, ১৩৪৮ বঙ্গাব্দ) বেলা ১২টা ১০ মিনিটে কলকাতার জোড়াসাঁকোয় অবস্থিত পৈতৃক বাসভবনে পশ্চিমাকাশে অস্তরাগ ছড়িয়ে তিনি পরলোক গমন করেন। জোড়াসাঁকোর এই বাড়িতেই কবির জন্ম ও বেড়ে ওঠা। তবে তার পূর্বপুুরুষেরা খুলনা জেলার রূপসা উপজেলার পিঠাভোগে বাস করতেন।
বাংলাসাহিত্যের অন্যতম শ্রেষ্ঠ সাহিত্যিক রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ১৮৬১ সালের ৭ মে (পঁচিশে বৈশাখ, ১২৬৮ বঙ্গাব্দ) ভারতের পশ্চিমবঙ্গের কলকাতার জোড়াসাঁকো ঠাকুর পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতার নাম দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর। মাতা সারদা সুন্দরী দেবী। জাতীয় সঙ্গীতের রচয়িতার লোকান্তরের দিনটি উপলক্ষে তার অগণিত ভক্ত ছাড়াও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও সংগঠন নানা কর্মসূচি নিয়েছে।
রবীন্দ্র কাব্যে মৃত্যু এসেছে বিভিন্নভাবে। জীবদ্দশায় মৃত্যুকে তিনি জয় করেছেন বারবার। মৃত্যু বন্দনা করেছেন তিনি -‘মরণ রে, তুঁহু মম শ্যাম সমান। মেঘবরণ তুঝ, মেঘ জটাজুট! রক্ত কমলকর, রক্ত-অধরপুট, তাপ বিমোচন করুণ কোর তব মৃত্যু-অমৃত করে দান’। তার জীবনী থেকে জানা যায়, মৃত্যুর মাত্র সাত দিন আগে পর্যন্তও কবি সৃষ্টিশীল ছিলেন। জোড়াসাঁকো রোগশয্যায় শুয়ে শুয়ে তিনি বলতেন, রাণী চন্দ তা কবিতার ছন্দে লিখে নিতেন। কবি বলে গেছেন, ক্রমশ ক্লান্ত হয়ে পড়েছিলেন কবিতাটি বলতে বলতে। দিনটা ছিল কবির শেষ বিদায়ের কয়েক দিন আগে ১৪ শ্রাবণ। রাণী চন্দ সে দিন সূত্রধরের মতো লিখেও নেন রবীন্দ্রনাথ উবাচ কবিতাটি, ‘তোমার সৃষ্টির পথ রেখেছ আকীর্ণ করি’।
বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের বহু শাখা তার ছোঁয়ায় ঐশ্বর্যমন্ডত হয়েছে। আধুনিক ছোটো গল্পের পথিকৃৎ রবি ঠাকুর উপন্যাস, কবিতা, প্রবন্ধ, গানের বিচিত্র বাণী ও সুরে এবং দার্শনিক চিন্তাসমৃদ্ধ প্রবন্ধ ও ভাষণে বিশ্বমানবের সৃজনশীল অমিত শক্তিকে জাগিয়ে তোলার চেষ্টা করেছেন সারাজীবন। রবীন্দ্রনাথ আলোকিত মানুষ দিয়ে আলোকিত পৃথিবী গড়ার সাধনায় ব্রতীদের সাফল্য কামনা করেছেন। তাদের জন্য প্রার্থনা করেছেন, ‘প্রভু মোচন কর ভয়/ সব দৈন্য করহ লয়/ নিত্যচকিত চঞ্চলচিত কর নিঃসংশয়/ তিমির রাত্রি অন্ধ যাত্রী/ সমুখে তব দীপ্ত দীপ তুলিয়া ধর হে’। বাংলা সাহিত্যকে বিশ্ব দরবারে বিশেষ মর্যাদায় অধিষ্ঠিত করার কৃতিত্বের জন্য স্মরণীয় হয়ে আছেন প্রথম এশীয় হিসেবে ১৯১৩ সালে সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার জয়ী রবি ঠাকুর।
জীবনের শেষ দশ বছরে রবীন্দ্রনাথ পনেরোটি বই লিখেছিলেন। পুনশ্চ (১৯৩২), শেষ সপ্তক (১৯৩৫) ও পত্রপুট (১৯৩৬) নামে গদ্যকবিতা-সংকলনগুলো এই সময়েই প্রকাশিত হয়। জীবনের এই পর্বে রবীন্দ্রনাথ গদ্যগীতিকা ও নৃত্যনাট্য নিয়ে নতুন পরীক্ষানিরীক্ষা করেন। জীবনের শেষ পর্বে কবি বিজ্ঞান বিষয়ে আগ্রহী হয়ে ওঠেন। ১৯৩৭ সালে প্রকাশিত হয় তার বিজ্ঞান বিষয়ক প্রবন্ধ সংকলন ‘বিশ্বপরিচয়’।
লেখালেখির পাশাপাশি তিনি ১৯০১ সালে পশ্চিমবঙ্গের শান্তিনিকেতনে ব্রক্ষèচর্যাশ্রম প্রতিষ্ঠা করেন। এরপর থেকে তিনি সেখানেই বসবাস শুরু করেন। ১৯০৫ সালে বঙ্গভঙ্গ বিরোধী আন্দোলনে জড়িয়ে পড়েন। ১৯২১ সালে গ্রামোন্নয়নের জন্য ‘শ্রীনিকেতন’ নামে একটি সংস্থা প্রতিষ্ঠা করেন। ১৯২৩ সালে আনুষ্ঠানিকভাবে ‘বিশ্বভারতী’ প্রতিষ্ঠিত হয়। ১৮৯১ সাল থেকে পিতার আদেশে এদেশে কুষ্টিয়ার শিলাইদহে, পাবনা, নাটোরে এবং উড়িষ্যায় জমিদারীগুলো তদারকি শুরু করেন কবি। শিলাইদহে তিনি দীর্ঘদিন অতিবাহিত করেন। এখানে জমিদার বাড়িতে তিনি অসংখ্য কবিতা ও গান রচনা করেন। ১৯০১ সালে শিলাইদহ থেকে সপরিবারে কবি বোলপুরে শান্তিনিকেতনে চলে যান। তিনি জীবনে বারো বার বিশ্বভ্রমন করেন। ১৮৭৮ থেকে ১৯৩২ সাল পর্যন্ত পাঁচটি মহাদেশের ত্রিশটিরও বেশি দেশ ভ্রমন করেন।
কর্মসূচি : রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে বাংলা একাডেমি আজ বিকেল চারটায় আবদুল করিম সাহিত্যবিশারদ মিলনায়তনে বিশেষজ্ঞ বক্তৃতা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে। এতে ‘পরিবেশ, নির্মাণসংস্কৃতি ও রবীন্দ্রনাথ’ শীর্ষক বক্তৃতা প্রদান করবেন ভারতের পশ্চিমবঙ্গের বিশিষ্ট স্থপতি, রবীন্দ্র গবেষক ও পরিবেশবিদ অরুণেন্দু বন্দ্যোপাধ্যায় ও সুদেষ্ণা বন্দ্যোপাধ্যায়। প্রধান অতিথি থাকবেন সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. ইবরাহীম হোসেন খান। সভাপতিত্ব করবেন বাংলা একাডেমীর সভাপতি ইমেরিটাস অধ্যাপক আনিসুজ্জমান। পরে রবীন্দ্র সঙ্গীত পরিবেশন করবেন শিল্পী কাদেরী কিবরিয়া। এ ছাড়াও শিল্পকলা একাডেমী, বাংলাদেশ রবীন্দ্র সঙ্গীত শিল্পী সংস্থা, শিশু একাডেমী বিভিন্ন অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে। বাংলাদেশ টেলিভিশন ও বেতারসহ বিভিন্ন স্যাটেলাইট টেলিভিশনও বিশেষ নাটক এবং অনুষ্ঠানমালা সম্প্রচার করবে।