খুলনার প্রায় সাড়ে তিন হাজার গাড়িতে হাইড্রোলিক হর্ন অসহনীয় শব্দদূষণ
খুলনা অফিস : হাইড্রোলিক হর্নের অতিমাত্রায় শব্দে শব্দ দূষণে পথচারী শিশু, বয়স্ক, রোগী, গর্ভবতীরা হচ্ছেন অসুস্থ। এতে শব্দ দূষণজনিত স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে পড়ছেন নগরবাসী। আর শব্দ দূষণের অন্যতম উৎস যানাবাহনে হাইড্রোলিক হরে ব্যবহার।
খুলনা পরিবেশ অধিদপ্তরের সূত্র মতে, ২০১৭ সালের জানুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত গত ৬ মাসে মোট ১০১টি গাড়ি পরীক্ষা করা হয়। যার মধ্যে ৬১টি হাইড্রোলিক হর্ণের গাড়ি জব্দ করা হয়। এর মধ্যে জানুয়ারিতে ২৮টির মধ্যে ১৬ হাইড্রোলিক। ফেব্রুয়ারিতে ৩৬টির মধ্যে ২৮ টি হাইড্রোলিক মার্চে ১২টির মধ্যে ৪টি হাইড্রোলিক। এপ্রিল ১২টির মধ্যে ৯টি হাইড্রোলিক। জুনে ১৩ টির মধ্যে ৮টি হাইড্রোলিক হর্ণ পাওয়া গেছে। বাকিগুলোয় কিছু কালোধোয়া আর কিছু গাড়িতে কোন প্রকার অভিযোগ পাওয়া যায়নি। আর এসকল হাইড্রোলিক হর্ণের অধিকাংশই ট্রাক, বাস, মিনিবাস।
বিআরটিএ এর তথ্য মতে, খুলনা ট্রাক, বাস, মিনিবাস মিলে মোট ৫ হাজার ১৬৫টি গাড়ি আছে। এর মধ্যে ট্রাক ৩হাজার ৮৫৮টি আর বাস ও মিনিবাস ১৩শ’ ৭টি। পরিবেশ ও বিআরটিএ-এর পরিসংখ্যান হিসাব করে দেখা যায়, খুলনায় প্রায় সাড়ে তিন হাজার গাড়িতে হাইড্রোলিক হর্ণ ব্যবহার হচ্ছে।
এদিকে শব্দদূষণ রোধে শব্দদূষণ (নিয়ন্ত্রণ) বিধিমালা ২০০৬ অনুসারে নীরব এলাকায় দিনে ৪৫ ডেসিবল এবং রাতে ৩৫ ডেসিবলের মধ্যে শব্দের মাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। আবাসিক এলাকায় এই মাত্রা দিনে ৫০ ও রাতে ৪০ ডেসিবল। এ ছাড়া বাডুজ্যিক এলাকায় দিনে ৭০ ও রাতে ৬০ ডেসিবল, শিল্প এলাকায় দিনে ৭৫ ডেসিবল ও রাতে ৭০ ডেসিবল এবং মিশ্র এলাকায় দিনে ৬০ ও রাতে ৫০ ডেসিবল শব্দের মাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিইএইচও) এর মতে মিশ্র এলকাতে শব্দের স্বাভাবিক মাত্রা ৬০ ডেসিবল (ফই) হলে মানুষের সাময়িক বধিরতা ও শব্দের মাত্রা ১০০ ডেসিবল হলে তা স্থায়ী বধিরতা সৃষ্টি করতে পারে। অথচ নগরীর বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণস্থানে এই স্বাভাবিক মাত্রা ছাড়িয়ে গেছে গত পাঁচ বছর আগে।
আর এ বিধিমালা লঙ্ঘনের দায়ে কেউ দোষী সাব্যস্ত হলে প্রথমবার এক মাস কারাদন্ড বা পাঁচ হাজার টাকা জরিমানা অথবা উভয় দন্ডের বিধান আছে। পরবর্তী সময়ে একই অপরাধে ছয় মাস কারাদন্ড বা ১০ হাজার টাকা জরিমানা অথবা উভয় দন্ডে দন্ডিত করার বিধান যুক্ত হয়েছে। হাইড্রোলিক হর্ণ ব্যবহার বন্ধে পরিবেশ অধিদপ্তরের অভিযানও ধীরগতি।
খুলনা সদর হাসপাতালের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক মো. জহিরুল ইসলাম সাগর বলেন, উচ্চমাত্রার শব্দ মানবদেহে রক্তচাপ ও হৃৎকম্পন বাড়িয়ে মৃত্যুঝুঁকি পর্যন্ত তৈরি করতে পারে। এছাড়া শ্রবণশক্তি কমে যাওয়া এবং বধির হওয়ার মতো অবস্থারও সৃষ্টি হতে পারে। বিশেষ করে শিশুদের মানসিক বিকাশ বাধাগ্রস্ত হয়। তারা অমনোযোগী হয়ে পড়ে লেখাপড়ায়। এ ছাড়া মাত্রাতিরিক্ত শব্দ স্নায়ু দুর্বল করে, মাথা যন্ত্রণা, অস্থিরতা ও কর্মদক্ষতা কমিয়ে দিতে পারে।
এদিকে বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট অথরিটি (বিআরটিএ) উপ-পরিচালক জিয়াউর রহমান বলেন, আমরা নিয়মিত জরিমানা করছি এবং সচেতনতা বাড়াতে প্রচার চালাচ্ছি। এবং হাইড্রোলিক হর্ণ খুলে তা জব্দ করছি। এ সকল হাইড্রোলিক হর্র্ন আমদানি রপ্তানি সম্পূর্ণ নিষেধ। কিন্তু কিছু অসাধু ব্যবসায়ী কমদামে অবৈধভাবে প্রকাশে বিক্রি করছে এ সকল হাইড্রোলিক হর্ন। এ জন্য আবার হাইড্রোলিক হর্ন লাগাতে তাদের বেগ পেতে হচ্ছে না। তবে শব্দদূষণ বন্ধে পরিবেশ অধিদপ্তর, বিআরটিএ, পুলিশ প্রশাসন ও জেলা প্রশাসন সমন্বিতভাবে কাজ করলে সুফল মিলবে। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ট্রাক, বাসে ও মিনিবাসে সব থেকে বেশি হাইড্রোলিক হর্ন লাগানো হয়।