শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪
Online Edition

কুড়িগ্রামসহ নদী ভাঙন কবলিত চার জেলায় সতর্কতা

স্টাফ রিপোর্টার : দেশের নদ-নদীর ৩৫ টি পয়েন্টের পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। আর কমেছে ৩৫ টিতে। তবে এখনও ২৭টি পয়েন্টে পানি বিপদসীমার উপরে প্রবাহিত হচ্ছে। এদিকে, কুড়িগ্রামসহ নদী ভাঙন কবলিত চার জেলায় সতর্কতা জারি করা হয়েছে। অন্যদিকে, বন্যাত্তোর করণীয় সম্পর্কে কৃষকদের জন্য আটটি পরামর্শ দিয়েছে সরকার। 

গতকাল সোমবার পানি উন্নয়ন বোর্ডের বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীরণ কেন্দ্র তাদের নিয়মিত বুলেটিনে জানায়, এদিন সকাল ৯ টা পর্যন্ত পূর্ববর্তী চব্বিশ ঘণ্টায় ৯০টি সমতল স্টেশনের মধ্যে দেশের বিভিন্ন নদীর ৫৩টি পয়েন্টের পানি কমেছে, ৩৫টিতে বৃদ্ধি পেয়েছে। এছাড়া ২৭টি পয়েন্টের পানি বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। দুটি অপরিবর্তিত রয়েছে।

ব্রহ্মপুত্র-যমুনা, পদ্মা, সুরমা ও কুশিয়ারা নদীর পানি সমতলে হ্রাস পাচ্ছে, অপরদিকে গঙ্গা নদীর পানি সমতলে সামান্য বৃদ্ধি পাচ্ছে। ব্রহ্মপুত্র-যমুনা নদীর পানি সমতলে হ্রাস আগামী ৭২ ঘণ্টায় অব্যাহত থাকতে পারে। গঙ্গা নদীর পানি সমতলে বৃদ্ধি আগামী ২৪ ঘণ্টা অব্যাহত থাকতে পারে যা পরবর্তীতে স্থিতিশীল হয়ে যেতে পারে।

নদীর বিভিন্ন পয়েন্টে গতকাল সকাল ৯ টা পর্যন্ত কাজিপুর যমুনা নদীর ৭২ সেন্টিমিটার, সিরাজগঞ্জ যমুনা নদীর পানি ৭৯ সেন্টিমিটার, বাঘাবাড়ি আত্রাই নদীর পানি ৯৬ সেন্টিমিটার, এলাসিন ধলেশ্বর নদীর পানি ৮৮ সেন্টিমিটার এবং গোয়ালন্দে পদ্মা নদীর পানি ৮৭ সেন্টিমিটার বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে বলে বন্যা সতর্ককরণ কেন্দ্র জানায়। 

বাড়ছে নদী ভাঙনের ঝুঁকি, চার জেলায় সতর্কতা : চলতি বছর নদী ভাঙনের মারাত্মক ঝুঁকিতে রয়েছে কুড়িগ্রাম, বগুড়া, রাজবাড়ী ও শরীয়তপুরের বিস্তীর্ণ এলাকা। দেশের পদ্মা,যমুনা ও গঙ্গা অববাহিকা এলাকার ২৯টি স্থানে নদী ভাঙ্গনের কবলে পড়ে প্রায় দুই হাজার পরিবার ক্ষতিগ্রস্ত হবে। স্যাটেলাইটে প্রাপ্ত তথ্যের ওপর গবেষণা করে পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের ট্রাস্টি প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর এনভায়রনমেন্টাল অ্যান্ড জিওগ্রাফিক ইনফরমেশন সার্ভিসেস (সিইজিআইএস) স্থানগুলো চিহ্নিত করেছে।

ভাঙনের তীব্রতা ও সম্ভাব্য ক্ষয়ক্ষতির ঝুঁকির ওপর ভিত্তি করে বেসরকারি সংস্থা ব্র্যাক কুড়িগ্রামের রৌমারী, বগুড়ার সারিয়াকান্দি, রাজবাড়ীর পাংশা ও কালুখালী, শরীয়তপুরের জাজিরা ও নড়িয়া উপজেলার মানুষকে সতর্ক করার কাজ করছে। গতকাল রাজধানীর ব্র্যাক সেন্টারে ‘স্থানীয় পর্যায়ে নদী ভাঙনের ঝুঁকি, পূর্বাভাস, সতর্কীকরণ, প্রচার ও করণীয় বিষয়ক পরামর্শ সভায় এ তথ্য জানানো হয়। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদফতর, সিইজিআইএস ও বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা ব্র্যাক যৌথভাবে এ সভার আয়োজন করে।

সভায় বক্তারা অভিমত প্রকাশ করেন, জলবায়ু ও বড় নদীগুলোর চ্যানেল পরিবর্তন এবং বর্ষা মৌসুমে পানি বাড়ার কারণে দেশে নদী ভাঙনের তীব্রতা বাড়ছে। ফলে প্রতি বছর নদীর তীরবর্তী অসংখ্য মানুষ বসতভিটাসহ আবাদি জমি হারিয়ে নিঃস্ব হচ্ছেন। এ অবস্থায় নদী ভাঙনের আগাম তথ্য মানুষের কাছে পৌঁছে দেয়া খুবই জরুরি। ভাঙনকবলিত এলাকাগুলো রক্ষা করতে বক্তারা নদীর তীর সংরক্ষণ, নতুন বাঁধ নির্মাণ ও ক্ষতিগ্রস্ত বাঁধ মেরামতে দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানান।

অনুষ্ঠানে ‘২০১৭ সালের জন্য নদী ভাঙনের পূর্বাভাস’ শীর্ষক উপস্থাপনাপত্র তুলে ধরেন সিইজিআইএস’র রিভার, ডেল্টা অ্যান্ড কোস্টাল মরফোলজি ডিভিশনের জুনিয়র স্পেশালিস্ট সুদীপ্ত কুমার হোড়। সভায় ‘নদী ভাঙনের পূর্বাভাস জ্ঞাপন : পূর্ববর্তী বছরসমূহের অভিজ্ঞতা’ শীর্ষক উপস্থাপনাপত্র তুলে ধরেন ব্র্যাকের দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও জলবায়ু পরিবর্তন কর্মসূচির (ডিএমসিসি) সিনিয়র সেক্টর স্পেশালিস্ট মো. জাফর ইকবাল।

সভা সঞ্চালনা করেন ব্র্যাকের দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও জলবায়ু পরিবর্তন (ডিএমসিসি) কর্মসূচির পরিচালক গওহার নঈম ওয়ারা ও সিইজিআইএস’র উপনির্বাহী পরিচালক ড. মমিনুল হক সরকার। আরও বক্তব্য দেন ব্র্যাকের অ্যাডভোকেসি ফর সোশ্যাল চেঞ্জ কর্মসূচির পরিচালক কে এ এম মোর্শেদ, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদফতরের উপ-পরিচালক (কাবিখা-১) সৈয়দা মেহেরুন নেছা কবীরসহ পানি উন্নয়ন বোর্ড, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও বেসরকারি সংস্থার প্রতিনিধিরা।

গওহার নঈম ওয়ারা বলেন, নদী ভাঙনের পূর্বাভাস প্রদানে প্রযুক্তিগত যে দক্ষতা আমরা অর্জন করেছি, তা তখনই সার্থক হবে, যদি তা আমরা সময়মতো সাধারণ মানুষের কাছে পৌঁছে দিতে পারি। সেই সঙ্গে নদী শাসনের কর্মকান্ডে এ তথ্যসমূহ ব্যবহার করতে পারি।

ড. মমিনুল হক সরকার নদী ব্যবস্থাপনার গুরুত্ব তুলে ধরে বলেন, আমাদের মনে রাখতে হবে বন্যা, সাইক্লোনের কারণে ব্যক্তির ক্ষতি হলেও সে তার জায়গা হারায় না। কিন্তু নদী ভাঙনে মানুষ তার জমি বা ভিটে-বাড়িও হারায়। তাই এ সমস্যা নিরসনে আমাদের নদী ব্যবস্থাপনার দিকে বেশি দৃষ্টি দিতে হবে।

অনুষ্ঠানে জানানো হয়, ব্র্যাকের ডিএমসিসি ২০১৬ সাল থেকে সিইজিআইএস’র কারিগরি সহযোগিতায় ‘নদীভাঙনের ঝুঁকি, পূর্বাভাস ও পরামর্শ’ নামক প্রকল্প বিভিন্ন জেলায় বাস্তবায়ন করে আসছে। এ কার্যক্রমের ধারাবাহিকতায় চলতি বছর আটটি জেলার মোট ১৬টি উপজেলার ১৩টি ঝুঁকিপূর্ণ স্থানে সতর্কীকরণ-বার্তা আরও কিভাবে কার্যকরভাবে পৌঁছে দেয়া যায় সেই লক্ষ্যে এ সভার আয়োজন করা হয়।

সভায় রৌমারি উপজেলার রাজিবপুর গ্রামের আবদুল মতিন সরকার তার ২৭বিঘা জমিসহ পৈতৃক ভিটা হারানোর কথা জানিয়ে বলেন, লাল ও হলুদ পতাকা দিয়ে এলাকা চিহ্নিত করা হয়। এতে হাজার হাজার মানুষ ভিটা-বাড়ি রক্ষা করতে না পারলেও জীবন নিয়ে বাাঁচতে পারেন। 

বন্যা পরবর্তী করণীয় সম্পর্কে কৃষকদের জন্য সরকারের পরামর্শ : দেশে সাম্প্রতিক বন্যায় ফসলের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে কৃষকদের করণীয় বিষয়ে আটটি পরামর্শ দান করেছে সরকার। গতকাল এক তথ্য বিবরণীতে জানানো হয়, বন্যার পানিতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়নি বা আংশিক হয়েছে এমন জমির ক্ষেত্রে বন্যার পানিতে ভেসে আসা কচুরিপানা, পলি, বালি এবং আবর্জনা যত দ্রুত সম্ভব পরিষ্কার করতে হবে। 

বন্যার পানি সরে যাওয়ার পর ৫-৭ দিন কাদাযুক্ত ধান গাছ পরিষ্কার পানি দিয়ে প্রয়োজনে স্প্রে মেশিন দিয়ে ধৌত করে দিতে হবে। বন্যার পানি নেমে যাওয়ার পরপরই সার প্রয়োগ করা ঠিক নয়, এতে ধান গাছ পচে যেতে পারে। বন্যার পানি নেমে যাওয়ার ১০ দিন পর ধানের চারায় নতুন পাতা গজানো শুরু হলে বিঘা প্রতি ৮ কেজি ইউরিয়া ও ৮ কেজি পটাশ সার উপরি প্রয়োগ করতে হবে।

সরকারের দেয়া পরামর্শের মধ্যে রয়েছে, উঁচু জমিতে যেখানে বন্যার পানি উঠেনি সেখানে রোপণকৃত বাড়ন্ত আমন ধানের গাছ (রোপণের ৩০-৪০ দিন পর) থেকে দু’-তিনটি কুশি রেখে বাকি কুশি সযতেœ শিকড়সহ তুলে নিয়ে সঙ্গে সঙ্গে অন্য ক্ষেতে রোপণ করতে হবে। যেসব এলাকায় বন্যায় উঁচু জমি তলিয়ে যাওয়ার কারণে বীজতলা করা সম্ভব নয় সেক্ষেত্রে ভাসমান অথবা দাপোগ বীজতলা তৈরি করে চারা উৎপাদন করা করতে হবে। 

বন্যার পানি নেমে যাওয়ার পর ব্রি উদ্ভাবিত আলোক সংবেদনশীল উফশী জাত যেমন- বিআর৫, বিআর২২, বিআর২৩, ব্রি ধান৩৪, ব্রি ধান ৪৬, ব্রি ধান ৫৪ এবং নাজিারশাইলসহ স্থানীয় জাতসমূহ রোপণ করতে হবে। এছাড়া, বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট (ব্রি) উদ্ভাবিত স্বল্প জীবনকাল সম্পন্ন জাত ব্রি ধান৫৭ ও ব্রি ধান৬২ও রোপণ করা যেতে পারে। এক্ষেত্রে ৩০ আগস্ট পর্যন্ত বীজতলা করা যাবে। তবে উল্লিখিত জাতসমূহ নাবীতে রোপণের ক্ষেত্রে প্রতি গোছায় চারার সংখ্যা ৪-৫ টি এবং রোপণ দূরত্ব ১৫-২০ সেন্টিমিটার।

বিলম্বে রোপণের ফলে দ্রুত কুশি উৎপাদনের জন্য সুপারিশকৃত টিএসপি, জিপসাম ও জিংকসহ ২/৩ (দুই- তৃতীয়াংশ) ইউরিয়া জমি তৈরির সময় প্রয়োগ করতে হবে। অবশিষ্ট ইউরিয়া রোপণের ২৫-৩০ দিনের মধ্যে প্রয়োগ করতে হবে।

 যেসব এলাকা পুনরায় বন্যার পানিতে তলিয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা কম (উঁচু ও মধ্যম উঁচু) সেসব জমিতে অঙ্কুরিত বীজ সরাসরি জমিতে ছিটিয়ে বপন করতে হবে। সেক্ষেত্রে রোপণ পদ্ধতির চেয়ে ৫-৭ দিন আগাম হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। বন্যার ক্ষতি থেকে রক্ষা পাওয়া ধান গাছের যাবতীয় পরিচর্যা যেমন আগাছা দমন, পোকামাকড় ও রোগাক্রমণ থেকে ফসল রক্ষা, সুষম পরিমাণে সার প্রয়োগ এবং প্রয়োজন অনুযায়ী সম্পূরক সেচের ব্যবস্থা করতে হবে।

বন্যা পরবর্তীতে চারাগাছ সম্পূর্ণভাবে মাটিতে লেগে যাওয়ার সাথে সাথে ব্যাকটেরিয়াজনিত পাতাপোড়া রোগের প্রাদুর্ভাব দেখা দিতে পারে সেক্ষেত্রে ৬০ গ্রাম থিওভিট ও ৬০ গ্রাম পটাশ সার ১০ লিটার পানিতে মিশিয়ে ৫ শতাংশ জমিতে স্প্রে করতে হবে। গাছে মাজরা, বাদামি ও সাদা-পিঠ গাছ ফড়িং, পাতা মোড়ানো এবং পামরি পোকার আক্রমণের হাত থেকে রক্ষার জন্য পোকা বিশেষে হাত জাল, পার্চিং এবং প্রয়োজন হলে অনুমোদিত কীটনাশক ব্যবহার করতে হবে।

 দেশের উত্তরাঞ্চলে আগাম শীত আসার কারণে ১৫ সেপ্টেম্বর এবং মধ্য ও দক্ষিণ অঞ্চলে ২০ সেপ্টেম্বরের পর আমন ধান রোপণ করা উচিত নয়। এক্ষেত্রে আগাম রবি ফসলের আবাদ করতে হবে। বিস্তারিত তথ্যের জন্য নিকটস্থ উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা বা উপজেলা কৃষি অফিসে যোগাযোগ করতে কৃষি মন্ত্রণালয়ের এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়।

নাটোর সংবাদদাতা : নাটোরে নদ-নদীর পানি বৃদ্ধির প্রেক্ষাপটে নতুন এলাকা প্লাবিত হয়ে ক্ষয়ক্ষতির পরিধি বাড়ছে। ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের সাহায্যার্থে চলছে ত্রাণ তৎপরতা। গতকাল সোমবার নলডাঙ্গা উপজেলার পাটুল, কালিগঞ্জ ও ভুষণগাছা এলাকাতে বন্যার্ত মানুষের মাঝে চাল ও নগদ টাকা বিতরণ করেছেন জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মোঃ শফিকুল ইসলাম শিমুল। ত্রাণ বিতরণকালে সংসদ সদস্য শিমুল বলেন, বন্যাসহ যে কোন দুর্যোগ মোকাবিলায় বর্তমান সরকার বদ্ধপরিকর। ক্ষতিগ্রস্ত মানুষ বিপদমুক্ত না হওয়া পর্যন্ত আমরা তাদের পাশে থাকবো। নাটোরের জেলা প্রশাসক শাহিনা খাতুন, নলডাঙ্গা উপজেলা নির্বাহী অফিসার রেজা হাসান, জেলা আওয়ামী লীগের সহ সভাপতি পিপি এডভোকেট সিরাজুল ইসলাম ও যুগ্ম সম্পাদক সৈয়দ মর্তুজা আলী বাবলু এ সময় উপস্থিত ছিলেন। পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী শুধাংশু কুমার সরকার জানান, সিংড়ায় আত্রাই নদীর পানি প্রবাহ বৃদ্ধির পরিমাণ বিগত ৭০ বছরের রেকর্ড ভঙ্গ করেছে। সিংড়া পয়েন্টে নদীর প্রবাহ বিপদসীমার ৯৪ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের উপ-পরিচালক মোঃ রফিকুল ইসলাম বলেন, সিংড়া, নলডাঙ্গা, নাটোর সদর এবং গুরুদাসপুর উপজেলায় ১০ হাজার ৯২২ হেক্টর আবাদী জমির আউশ, আমন এবং আমনের বীজতলা সম্পূর্ণ নিমজ্জিত হয়েছে। সিংড়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোহাম্মদ নাজমুল আহসান জানান, উপজেলার ৮৩টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। ১৩টি আশ্রয় কেন্দ্রে আশ্রয় গ্রহণকারী ৪২৩টি পরিবারের প্রায় দুই হাজার ব্যক্তিকে খাদ্য সরবরাহ করা হচ্ছে। জেলা ত্রাণ কর্মকর্তা মোঃ আলাউদ্দিন বলেন, এ পর্যন্ত মন্ত্রণালয় থেকে বরাদ্দকৃত ছয় লক্ষ নগদ টাকা ও ২২৫ টন চাল বন্যার্তদের মাঝে বিতরণ করা হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের সংখ্যা বৃদ্ধির প্রেক্ষাপটে আরো ত্রাণের চাহিদাপত্র মন্ত্রণালয়ে প্রেরণ করা হয়েছে। এছাড়াও নিজ উদ্যোগে নাটোর সদর উপজেলার বেশ কয়েকটি গ্রামের দুই শতাধিক ক্ষতিগ্রস্তদের মাঝে ত্রাণ বিতরণ করেছেন উপজেলা চেয়ারম্যান মোঃ শরিফুল ইসলাম রমজান। এদিকে তথ্য ও যোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক এমপি রোববার নাটোরের সিংড়া উপজেলার শেরকোল ইউনিয়নে বন্যা দুর্গত এলাকা পরিদর্শন করে ত্রাণ বিতরণ করেন। প্রতিমন্ত্রী ওই এলাকার বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত শতাধিক পরিবার প্রতি ২০ কেজি করে চাল, আধা কেজি ডাল, নগদ দুইশত টাকা, আধা কেজি জিরা, দুইশ’ গ্রাম বুট, মোমবাতি, দিয়াশলাই, পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেট ও খাবার স্যালাইন তুলে দেন। এসময় তার সাথে ছিলেন সিংড়া উপজেলার চেয়ারম্যান শফিকুল ইসলাম এবং উপজেলা নির্বাহী অফিসার নাজমুল হাসান।

গোমস্তাপুরে নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত

গোমস্তাপুর (চাঁপাইনবাবগঞ্জ) সংবাদদাতা : চাঁপাইনবাবগঞ্জের গোমস্তাপুর উপজেলার মধ্য দিয়ে প্রবাহিত পুনর্ভবা ও মহানন্দা নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। তবে কয়েক দিনের তুলনায় পুনর্ভবা নদীর পানি বৃদ্ধির হার কিছুটা কমেছে। সোমবার সকাল ৬টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত ১২ ঘন্টায় পুনর্ভবা নদীর পানি ৪ সেঃমিঃ বৃদ্ধি পেয়ে এখনও বিপদ সীমার ৭৮ সেঃমিঃ উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এছাড়া পুনর্ভবা ও মহানন্দা নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় প্রতিদিনই নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হচ্ছে। সোমবার সকালে বর্তমান সংসদ সদস্য গোলাম মোস্তফা বিশ্বাস গোমস্তাপুর ও চৌডালা ইউনিয়নের বর্ন্যাতদের মাঝে ত্রাণ সামগ্রী বিতরণ করেন। বন্যার্তদের মাঝে সরকারী ত্রাণ বিতরণ প্রসঙ্গে উপজেলা নির্বাহী অফিসার শিহাব রায়হান জানান, উপজেলার বন্যা কবলিত ৭টি ইউনিয়নের মধ্যে ৫টি ইউনিয়নের ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের তালিকা পাওয়া গেছে। উপজেলায় এখন পর্যন্ত প্রায় ৮শ৫০টি পরিবার চলতি বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এদের মধ্যে জেলা প্রশাসনের বরাদ্দকৃত ১০ মেঃটঃ চাল মঙ্গলবার থেকে বিতরণ করা হবে। এদিকে উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা শরিফুল ইসলাম জানান, চলতি বন্যায় এখন পর্যন্ত প্রায় ২ হাজার ৫শ হেক্টর জমির ফসল ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

কুড়িগ্রামে ত্রাণের জন্য হাহাকার দুর্গম চর ও নীচু এলাকায়

মোস্তাফিজুর রহমান কুড়িগ্রাম থেকে : কুড়িগ্রামের উপর দিয়ে বয়ে যাওয়া চলতি বন্যায় জেলায় কৃষকের এবং যোগাযোগের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। ভেঙ্গে পড়েছে ব্রিজ ও রাস্তাঘাট। জেলার ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলো এখনো বাধের রাস্তা বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও উঁচু স্থানে আশ্রয় নিয়ে অতি কষ্টে মানবেতর জীবন যাপন করছে। যোগাযোগ ব্যবস্থার বেহাল দশা। ফলে শুকনো খাবারসহ সবধরনের খাবারের সংকট চলছে। এরই মধ্যে জেলায় ৫ শতাধিক পরিবার নদী ভাঙ্গনের শিকার হয়ে সহায় সম্বল হারিয়ে বিভিন্ন স্থানে আশ্রয় নিয়ে অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে অর্ধাহারে অনাহারে দিন কাটাচ্ছে। প্রশাসনের পক্ষ থেকে এসব অসহায়দের মাঝে খিচুরী ও ত্রাণদেয়া হচ্ছে। তবে তা প্রয়োজনের তুলনায় সামান্য বলে জানিয়েছে দুর্গত পরিবারের অনেকে। এ রিপোর্ট লেখা পয্যন্ত জেলায় এখনো হাজার হাজার পরিবারের ঘরবাড়ী প্রায় আড়াই ফিট পানির নীচে তলিয়ে রয়েছে দুর্গম চর ও নীচু এলাকায়।

বন্যার্তদের মাঝে জ্বালানি, খাদ্য ও বিশুদ্ধ পানির তীব্র সংক। মানব খাদ্যের পাশাপাশি গো-খাদ্যের চরম সংকট চলছে। বেড়ে গেছে গো-খাদ্যসহ নিত্যপণ্যের দাম। ফলে বন্যাদুর্গতরাসহ সর্বস্তরের ক্রেতাগণ দারুন বেকায়দায় পড়েছে। বিশুদ্ধ পানি আর খাদ্য সংকটের উপর আশ্রয় সংকট। দেখা দিয়েছে হাতে পায়ে ঘাঁসহ পানিবাহিত বিভিন্ন রোগ। রাস্তা ঘাটের বেহাল দশা।

সরেজমিনে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে কুড়িগ্রামের সাথে রেল যোগাযোগ বন্ধরয়েছে। জেলার উপর দিয়ে বয়ে যাওয়া ১৬টি নদ-নদীর পানি হ্রাস পেলেও বন্যাদুর্গতদের দুর্দশা কমেনি। কমেনি চাল, ডাল, লবণ, তেল ও গো-খাদ্যসহ নিত্যপণ্যের দাম। 

এখনও হাজার হাজার পরিাবার বাধের রাস্তার দু’ধারে বড় রাস্তার পাশে উঁচু স্থানে ও আশ্রয় কেন্দ্রে রয়েছে। আশ্রিত মানুষ আর গবাদি পশু এক সঙ্গে বাস করায় এবং যত্রতত্র মলত্যাগের কারনে বিষাক্ত হয়ে পড়েছে এলাকার পরিবেশ। অনেক বানভাসী পরিবার খেয়ে না খেয়ে নিদারুন কষ্টে দিন কাটাচ্ছে। 

এদিকে জেলার নাগেশ্বরী উপজেলায় সেনাবাহীনির উপস্থিতিতে ত্রাণবিতরণ করায় সুষ্ঠু বিতরণের খবর পাওয়া গেলেও জেলার রৌমারী, রাজিবপুর এবং উলিপুর উপজেলার হাতিয়া, বজরা ও সাহেবের আলগায় বন্যার্তদের মাঝে ত্রাণবিতরণে অনিয়মের অভিযোগ ওঠছে। সেখানে সেনাবাহিনী না থাকায় এমনটি হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন স্থানীয় সচেতন মহল।

জয়পুরহাট সংবাদদাতা : জয়পুরহাটের ক্ষেতলাল উপজেলার বন্যা দুর্গতদের আবারো ঘুড়ে দাঁড়াতে ক্ষতিগ্রস্ত প্রায় পাঁচ হাজার কৃষকের মাঝে উচ্চ ফলনশীল জাতের ধানের বীজ বিতরণ করা হয়েছে। গতকাল সোমবার ক্ষেতলাল উপজেলা আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে এ ধান বীজ বিতরণ করা হয়।

উপজেলা আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে প্রত্যেক কৃষককে দুই কেজি করে উচ্চ ফলনশীল জাতের ধান বীজ বিতরণ করেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আব্দুল মজিদ মোল্লা। এ সময় অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন ক্ষেতলাল পৌরসভার মেয়র সিরাজুল ইসলাম বুলু, ক্ষেতলাল থানার অফিসার ইনচার্জ আবুল কালাম আজাদ, পৌর আওয়ামী লীগ সভাপতি দুলাল হোসেন, উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান মোস্তাকিম মোল্লাসহ আওয়ামী লীগ ও অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীরা।

জয়পুরহাট জেলা কারাগারের জেল সুপার-মোসাঃ কাওয়ালিন নাহারের ব্যক্তিগত আর্থিক সহায়তায় এবং সদর উপজেলা কৃষি বিভাগের উদ্যোগে, বন্যায় জয়পুরহাট সদর উপজেলার বম্বু, আমদই, চকবরকত ও দোগাছি ইউনিয়নের ক্ষতিগ্রস্ত ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক ৫০ জন কৃষকদের মাঝে পুনর্বাসনের লক্ষ্যে বিনামূল্যে ব্রি ধান-৩৪ জাতের রোপা আমন ধানের বীজ বিতরণ করেছে। এ উপলক্ষে উপজেলা কৃষি অফিসার- মোঃ সেরাজুল ইসলাম সাজু-এর সভাপতিত্বে বিতরণী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে কৃষকদের মাঝে বীজ বিতরণ করেন কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর, বগুড়া অঞ্চলের অতিরিক্ত পরিচালক-কৃষিবিদ মোঃ মতিয়ার রহমান। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন- ঈশ্বরদী কৃষি প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটের অধ্যক্ষ-কৃষিবিদ এস. এম. হাসেন আলী, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর, জয়পুরহাট-এর উপ-পরিচালক-কৃষিবিদ সুধেন্দ্র নাথ রায়, অতিরিক্ত পরিচালকের কার্যালয়ের উপ-পরিচালক মোঃ জাহিদ হোসেন, জেলা প্রশিক্ষণ অফিসার মোঃ তাহেরুল ইসলাম, জয়পুরহাট জেলা কারাগারের প্রতিনিধিগণ, সহঃ কৃষি সম্প্রসারণ অফিসার-আঃ গণি, এসএপিপিও-অমল চন্দ্র মন্ডলসহ সংশ্লিষ্ট ব্লকের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তাগণ এবং সংশ্লিষ্ট ইউনিয়নের কৃষকগণ।

মানিকগঞ্জ সংবাদদাতা : মানিকগঞ্জের ছয়টি উপজেলায় প্রায় ২ লাখ লোক পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। কাঁচা-পাকা ৭২ কিলোমিটার রাস্তা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বন্যাদুর্গতদের জন্য ২৮টি আশ্রয়ণ কেন্দ্র এবং ৪৪টি মেডিকেল টিম গঠন করা হয়েছে। ১০টি মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও ৫শ’ ৪৫টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ক্লাস ও পরীক্ষা স্থগিত রাখা হয়েছে। পানিবন্দী হাজার হাজার মানুষ মানবেতর জীবন যাপন করছে। 

মানিকগঞ্জ সদর শিবালয় দৌলতপুর ঘিওর সাটুরিয়া ও হরিরামপুর উপজেলার সবার-বাড়ি ঘরেই পানি উঠেছে। বন্যাকবলিত অনেক লোকজন ঘরে তালা দিয়ে গরুছাগল নিয়ে অশ্রয় কেন্দ্রে উঠেছে। আবার কেউ, কেউ পানির ওপর মাচা বানিয়ে শিশুসহ পরিবারের সকলকে নিয়ে বাড়িতেই থাকছে। পোকা-মাকড়ের ভয়ে সারারাত কুপিবাতি জ্বালিয়ে রাত কাটাচ্ছে। খাদ্য সংকটের পাশাপাশি খাবার পানির সংকট রয়েছে। ল্যাট্রিন ডুবে যাওয়ায় পয়ঃনিষ্কাশনেও ভিশন অসুবিধা হচ্ছে। এভাবে পানিবন্দী হাজার হাজার মানুষ মানবেতর জীবন যাপন করছে। 

চরশিবালয়ের আজমল হোসেন বলেন, বন্যার শুরু থেকেই আমরা পানিবন্দী অবস্থায় রয়েছি। এ পর্যন্ত কোন ত্রাণসামগ্রী পাইনি। পরিবার-পরিজন নিয়ে খুব কষ্টে আছি। 

 প্রয়োজনের তুলনায় ত্রাণসামগ্রী খুবই কম। অপ্রতুল ত্রাণ দিতে গিয়ে আমাদের নানা ধরনের সমস্যার সম্মুখীন হতে হচ্ছে। সরকারি ত্রাণের পাশাপাশি বেসরকারি বিভিন্ন সংস্থা ও ধনাঢ্য ব্যক্তিদেরকে ত্রাণ নিয়ে বন্যার্তদের পাশে দাঁড়ানোর আহ্বান জেলাবাসীর। 

 জেলা প্রশাসক নাজমুছ সাদাত সেলিম সাংবাদিকদের জানান, এ পর্যন্ত জেলার বন্যাকবলিত লোকজনের মাঝে ১০৭ মেট্রিকটন চাল এবং নগদ সাড়ে ৩ লাখ টাকা বিতরণ করা হয়েছে। আরো বরাদ্দ এসেছে, পর্যায়ক্রমে তা দেয়া হবে বলে জানান তিনি।

জামালপুর-ইসলামপুর ট্রেন চলাচল শুরু

জামালপুর সংবাদদাতা : জামালপুর জেলার ইসলামপুরে সাম্প্রতিক বন্যা পরিস্থিতি কিছুটা উন্নতি হওয়ায় ছয়দিন পর জামালপুর-ইসলামপুর ট্রেন চলাচল শুরু হয়েছে। মেলান্দহের দুরমুঠ স্টেশন সংলগ্ন রেল লাইনে বন্যার পানি ওঠায় ১৪ আগস্ট থেকে ট্রেন যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়।

গতকাল রোববার রাত ৮টায় ২৫৫ নম্বর লোকাল আপ ট্রেনটি স্টেশনে এসে পৌঁছে। দেওয়ানগঞ্জ জিল বাংলা সুগার মিলস লিমিটেড স্থানে রেল লাইনে বন্যার পানিতে গর্তের সৃষ্টি হয় ।

 সোমবার সকাল ১১টায় ২৫৬ নম্বর ডাউন সাধারণ যাত্রীবাহী ট্রেন ময়মনসিংহের উদ্দেশে ছেড়ে যায়। এব্যাপারে যোগাযোগ করা হলে স্টেশন মাস্টার আমিনুল ইসলাম জানান, কন্ট্রোল অর্ডার নং-৪৪০/ঢাকা, তাং-২০/৮/২০১৭ইং মোতাবেক মঙ্গলবার ৭০৭/৭০৮ নং তিস্তা এক্সপ্রেস ইসলামপুর বাজার রেল স্টেশন থেকে যথারীতি চলাচল করবে।

সাপাহারে ১৯টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ

সাপাহার (নওগাঁ) সংবাদদাতা : টানা বর্ষণ ও উজানের ঢলে সৃষ্ট বন্যায় নওগাঁর সাপাহারে ১৯ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। এর মধ্যে ১১টি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও ৮টি মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও কলেজ। এ সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের অধিকাংশই বন্যার্তদের জন্য আশ্রয় কেন্দ্র হিসেবে খুলে দেয়া হয়েছে। 

উপজেলা প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষা অফিস সূত্রে জানা গেছে, বন্ধ হওয়া বিদ্যালয়গুলো বন্যার্তদের আশ্রয় কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। আর তাই এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর পাঠদান কর্যক্রম বন্ধ রাখা হয়েছে।

সাপাহার উপজেলা চেয়ারম্যান¡ শামসুল আলম শাহ চৌধুরী জানান, উপজেলার পাতাড়ী ইউনিয়নের নদ-নদীর পানি স্বাভাবিকের দিকে আসছে। এসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বন্যার্তরা আশ্রয় কেন্দ্র হিসেবে থাকবে। বন্যার্তদের জন্য সরকারের পক্ষ থেকে সব ধরনের সহায়তা প্রদান করা হচ্ছে বলেও জানান তিনি।

চিরিরবন্দরে ভেঙ্গে গেছে অধিকাংশ কাঁচা-পাকা রাস্তা 

চিরিরবন্দর (দিনাজপুর) সংবাদদাতা : দিনাজপুরের চিরিরবন্দর উপজেলার ১২ ইউনিয়নের কাঁচা-পাকা অনেক রাস্তা বন্যায় ভেঙ্গে যাওয়ায় এলাকাবাসীর চলাচলসহ যাতায়াত ব্যবস্থা দুর্বিষহ হয়ে পড়েছে। গত কয়েকদিনের ভারী বর্ষণ ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ী ঢলে উপজেলার ১২ ইউনিয়ন বন্যায় প্লাবিত হয়ে লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়ে। সেইসাথে কাঁচা-পাকা ডুবে ও প্রখর ¯্রােতে পাকা রাস্তার বিটুমিন ও কাঁচা রাস্তা ভেঙ্গে চলাচলের অযোগ্য হয়ে পড়েছে। এরমধ্যে চিরিরবন্দর হতে বলাইবাজার দিয়ে কুতুবডাঙ্গা পর্যন্ত, শিমুলতলী হতে আমতলী পর্যন্ত, ঘুঘুরাতলী হতে রাণীরবন্দর পর্যন্ত, বেলতলী হতে বিন্যাকুড়ি পর্যন্ত পাকা রাস্তাগুলো তুলনামূলক বেশী ক্ষতি হয়েছে। বন্যার পানির তীব্র ¯্রােতের কারণে কার্পেটিং উঠে গিয়ে ছোট-বড় গর্তে পরিণত হয়েছে। এছাড়া কাঁচা রাস্তাগুলোর মাটি সরে গিয়ে খানাখন্দে পরিণত হয়েছে। ফলে রাস্তাগুলো চলাচলের অযোগ্য হয়ে জনদুর্ভোগে পরিণত হয়েছে। এসব রাস্তা দিয়ে ভারি কোন যানবাহন চলাচল করতে না পারায় পুরো উপজেলায় বিভিন্ন পণ্য সরবরাহ বিঘিœত হচ্ছে। এমনকি স্কুল কলেজের ছাত্র-ছাত্রীদের চলাচল যথেষ্ট কষ্টসাধ্য হয়ে পড়েছে। চিরিরবন্দর স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী মো: ফিরোজ আহমেদ জানান, বন্যায় উপজেলার পাকা রাস্তার ১২২ কিলোমিটারের মধ্যে ১০ কিলোমিটার ও কাঁচা রাস্তা ৬৬৯ কিলোমিটারের মধ্যে ৬০০ কিলোমিটার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তবে অনেক স্থানে বন্যার পানি নিষ্কাশনের জন্য স্থানীয় লোকজন রাস্তা কেটে দেয়ায় কোন কোন সড়কে যানবাহন চলাচল বন্ধ রয়েছে। এছাড়া বন্যার পানির তোড়ে ড্রেন কালভার্টের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। এতে সড়কে ২১ কোটি ৫২ লাখ ৫০ হাজার ও বাঁধের ৪ কোটি ৯৫ হাজার টাকার ক্ষতি হয়েছে। তবে ক্ষতিগ্রস্ত রাস্তার ব্যাপারে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবগত করানো হয়েছে ও গুরুত্বপূর্ণ রাস্তাগুলো উপজেলা তহবিল থেকে তৈরি করে দেয়া হচ্ছে। এ ব্যাপারে উপজেলা নিবার্হী অফিসার মো: গোলাম রব্বানী জানান, শুধু রাস্তা নয় সমস্ত ক্ষতির তালিকা তৈরির কাজ শুরু হয়েছে অতি শীঘ্রই মেরামতের ব্যবস্থা নেয়া হবে।

অনলাইন আপডেট

আর্কাইভ