শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪
Online Edition

বিআইবিএম’র গবেষণা ॥ ফান্ড ট্রান্সফারে নীতিমালা মানছে না ৫৮ শতাংশ ব্যাংক

স্টাফ রিপোর্টার : ব্যাংকের ফান্ড ট্রান্সফার করার ক্ষেত্রে নীতিমালা মানছে না  ৫৮ শতাংশ ব্যাংক।  ব্যাংকের এক শাখা থেকে আরেক শাখায় ফান্ড ট্রান্সফারের ক্ষেত্রে কোনো নীতিমালা ছাড়াই কার্যক্রম পরিচালনা করছে। আবার ৯৬ শতাংশ ব্যাংক সেকেলে পদ্ধতিতে ফান্ড ট্রান্সফার প্রাইসিংয়ের হিসাব করছে। তবে ৪ শতাংশ ব্যাংক অনলাইন ক্যালকুলেটারের মাধ্যমে ফান্ড ট্রান্সফার কার্ভ ব্যবহার করে কার্যক্রম পরিচালনা করছে।
বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ব্যাংক ম্যানেজমেন্টের (বিআইবিএম) গবেষণা প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে। গতকাল রোববার রাজধানীর মিরপুরে বিআইবিএম অডিটোরিয়ামে আয়োজিত সেমিনারে ‘ফান্ড ট্রান্সফার প্রাইসিং অব কমার্শিয়াল ব্যাংকস : স্টাটাস অ্যান্ড মেজারস ফর ইমপ্লিমেন্টিং ইন ব্যাংকস অব বাংলাদেশ’ এবং ‘সাসটেইনিবিলিটি রিপোর্টিং প্র্যাক্টিসেস ইন ব্যাংকস অব বাংলাদেশ’ শীর্ষক দুটি গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়।
প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন বিআইবিএমের পরিচালক (গবেষণা উন্নয়ন ও কনসালটেন্সি) ড. প্রশান্ত কুমার ব্যানার্জি। সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর আবু হেনা মোহা. রাজী হাসান। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বিআইবিএমের মহাপরিচালক ড. তৌফিক আহমদ চৌধুরী।
‘ফান্ড ট্রান্সফার প্রাইসিং অব কমার্শিয়াল ব্যাংকস : স্টাটাস অ্যান্ড মেজারস ফর ইমপ্লিমেন্টিং ইন ব্যাংকস অব বাংলাদেশ’ প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ৬২ শতাংশ ব্যাংকের ফান্ড ট্রান্সফার প্রাইসিং হয় ম্যানুয়ালি। আবার ৮৫ শতাংশ ব্যাংকের একটি নির্দিষ্ট কমিটির মাধ্যমে ফান্ড ট্রান্সফার প্রাইসিং হয়।
এদিকে ‘সাসটেইনিবিলিটি রিপোর্টিং প্র্যাক্টিসেস ইন ব্যাংকস অব বাংলাদেশ’ শীর্ষক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গ্লোবাল রিপোটিং ইনিসিয়েটিভস (জিআরআই) গাইড লাইন অনুসরণ করে রিপোটিং করে মাত্র সাতটি ব্যাংক। ৩৪ ব্যাংক জিআরআই গাইড লাইন অনুসরণ করছে না। অবশিষ্ট ব্যাংকগুলো আংশিক জিআরআই গাইড লাইন অনুসরণ করছে। যদিও ২০১৫ সালের জুনের মধ্যে স্বাধীনভাবে সাসটেইনিবিলিটি রিপোর্ট (আইএসআর) প্রকাশের নির্দেশ দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক।
 ডেপুটি গভর্নর বলেন, ২০১৬ সালে জিডিপি প্রবৃদ্ধি অর্জন করেছে ৭.১ শতাংশ। যা এশিয়ার সর্বোচ্চ প্রবৃদ্ধি অর্জনকারি দেশগুলোর মধ্যে তৃতীয়। তবে বাংলাদেশের ক্ষেত্রে উন্নয়ন এবং টেকসই পরিবেশ দুটোই একই সঙ্গে ধরে রাখা চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এ কারণে ব্যাংকগুলোর সাসটেইনিবিলিটি রিপোটিংও গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে সাসটেইনিবিলিটি রিপোটিংয়ের জন্য সময়সীমাও বেঁধে দেয়া হয়েছে। তবে বিভিন্ন কারণে অধিকাংশ ব্যাংক তা করতে ব্যর্থ হয়েছে।
বিআইবিএমের মহাপরিচালক ড. তৌফিক আহমেদ চৌধুরী বলেন, সরকারের লক্ষ্য ২০৩০ সালের মধ্যে এসডিজি বাস্তবায়ন করা। এ লক্ষ্য পূরণে টেকসই অর্থায়নের কোনো বিকল্প নেই। তবে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনা অনুযায়ী হাতে গোনা কয়েকটি ব্যাংক সাসটেইনিবিলিটি রিপোর্টিং করছে। তিনি বলেন, ফান্ড ট্রান্সফার প্রাইসিংয়ের ক্ষেত্রে একটি নির্দিষ্ট রেট নির্ধারণ করতে হবে।
প্রাইম ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আহমেদ কামাল খান চৌধুরী বলেন, যেসব ব্যাংক জিআরআই গাইড লাইন অনুসরণ করবে তাদেরকে বিশেষ সুবিধা দেয়া যেতে পারে। এতে জিআরআই গাইড লাইন অনুসরণে ব্যাংকগুলোর আগ্রহ বাড়বে। তিনি বলেন, বাংলাদেশে প্রয়োজনের তুলনায় ব্যাংকের সংখ্যা বেশি হওয়ায় অসুস্থ প্রতিযোগিতা শুরু হয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক নির্বাহী পরিচালক এবং বিআইবিএমের সুপারনিউমারারি অধ্যাপক ইয়াছিন আলি বলেন, মোট ঋণের দশমিক ৫ শতাংশ টেকসই অর্থায়ন হচ্ছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের ৫০টি আইটেমে টেকসই অর্থায়ন করার কথা থাকলেও ১২টিতে অর্থায়ন করেছে ব্যাংক। এ চিত্র খুবই হতাশাজনক। আসলে ব্যাংকগুলো টেকসই অর্থায়ন করছে না বলে প্রতিবেদনও করতে ব্যর্থ হচ্ছে।
বিআইবিএমের সুপারনিউমারারি অধ্যাপক এবং পূবালী ব্যাংকের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক হেলাল আহমদ চৌধুরী বলেন, ব্যাংক কর্মকর্তাদের সক্ষমতা বাড়াতে না পারলে সময়মতো রিপোর্টিং করা সম্ভব নয়। ভবিষ্যতে জিআরআই গাইড লাইন অনুসরণ করে এজিএমে প্রতিবেদন উপস্থাপন বাধ্যতামূলক হতে পারে। এ কারণে ব্যাংকগুলোর সক্ষমতা বাড়ানো যেতে পারে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক মো. শফিকুল ইসলাম বলেন, ব্যাংকিং খাতের নিয়ন্ত্রক সংস্থা হিসেবে বাংলাদেশ ব্যাংক সাসটেইনেবল রিপোর্টিং এবং ফান্ড ট্রান্সফার প্রাইসিং নীতিমালার করার বিষয়ে কিভাবে ব্যাংকগুলোকে সহযোগিতা করা যায় তা ভেবে দেখা হচ্ছে।
সেমিনারে আরও বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) কমিশনার ড. স্বপন কুমার বালা।

অনলাইন আপডেট

আর্কাইভ