বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪
Online Edition

জেলে বসেই এবার ডেরা চালাবেন রাম রহিম

৬ সেপ্টেম্বর, ইন্ডিয়ান টুডে : দীর্ঘ দিন ধরে তিনিই ডেরা সাচ্চা সৌদার প্রধান। চণ্ডীপাঠ থেকে জুতো সেলাই- তার অঙ্গুলিহেলন ছাডা এতদিন কোনোকিছুই সম্ভব ছিল না। কিন্তু, পরিস্থিতি হঠাৎ করেই মোড নেয়। ধর্ষণ-কাণ্ডে দোষী ডেরা প্রধান আপাতত জেলে। আদালতের নিন্দেশে আগামী ২০ বছর তাঁকে সেখানেই থাকতে হবে। হরিয়ানার সিরসায় ৮০০ একর জমির ওপর রাম রহিমের বিশাল ডেরা। তাতে রয়েছে শপিং মল, রেস্তোরাঁ, রিসোর্ট, হাসপাতাল, মাল্টিপ্লেক্স, স্কুল-কলেজ, কারখানা। প্রভূত সম্পত্তির মালিকানাও রয়েছে ডেরা প্রধানের। তা হলে এ হেন রাম রহিমের বিশাল সাম্রাজ্য সামলাবেন কে? ডেরা ম্যানেজমেন্ট কমিটির চেয়ারপারসন বিপাসনা জানিয়েছেন, জেল থেকেই বাবা রাম রহিমই তা সামলাবেন। উত্তরাধিকারী প্রসঙ্গে কোনোনিন্দেশই তিনি দেননি। তিনি বলেন, ডেরা কে চালাবেন তা নিয়ে কোনোঘোষণাই হয়নি। গুরুজি নিজেই তা চালাবেন। আর ডেরার দৈনন্দিন কাজকর্মের দেখাশোনা করবে ম্যানেজমেন্ট কমিটি। জোড়া ধর্ষণ মামলায় গুরমিত রাম রহিম সিংহের সাজা ঘোষণার পর থেকেই নানা নাম নিয়ে জল্পনা চলছে। বিপাসনা ইনসান থেকে রাম রহিমের ছেলে জসমিতের নাম এসেছে একাধিক বার। এই তালিকায় সবচেয়ে এগিয়ে ছিলেন রাম রহিমের পালিত কন্যা হানিপ্রীত ইনসান। বাবা জেলে যাওয়ার পর থেকে যদিও তিনি উধাও। তাঁর নামে লুক আউট নোটিশ জারি করা হয়েছে। কিন্তু, ডেরায় যে হানিপ্রীতের কোনো অধিকার নেই সে কথা এ বার স্পষ্ট ভাবে জানিয়ে দিলেন বিপাসনা।
মঙ্গলবার এক সাক্ষাৎকারে এমনটাই জানিয়েছেন তিনি হানিপ্রীতের সঙ্গেই দেখা করতে চান বাবা রাম রহিম ৬ সেপ্টেম্বর, স্ত্রী নন, জেলে বসেও পালিতা কন্যা হানিপ্রীত ইনসানের সঙ্গেই দেখা করতে চান ডেরা সচ্চা সৌদার প্রধান গুরমিত রাম রহিম সিং। এর আগে জেলের ভেতরই হানিপ্রীতকে পাশে চেয়েছিলেন বাবা। কিন্তু তার অনুমতি মেলেনি।
এ বার জেলে তাঁর দর্শনে আসবেন যারা, সেই তালিকায় রাম রহিম নিজের পরিবারের অন্য সদস্যদের টপকে এক নম্বরে জায়গা দিয়েছেন এতদিনের ছায়াসঙ্গী হানিপ্রীতকেই। ফেরার হানিপ্রীতের সন্ধান পেতে পুলিশ যদিও চষে বেডাচ্ছে সর্বত্র। বন্দি থাকাকালীন কার কার সঙ্গে দেখা করতে চান, তেমন ১০ জনের একটি তালিকা সুনারিয়া জেল কর্তৃপক্ষের হাতে তুলে দিয়েছেন ডেরা প্রধান। তালিকা পেয়ে তাজ্জব জেল কর্তৃপক্ষ। কারণ সেখানে নাম পর্যন্ত নেই রাম রহিমের স্ত্রী হরজিৎ কৌরের। উল্টে প্রথম নামটিই বিতর্কিত কন্যা হানিপ্রীত ইনসানের। রয়েছেন মা নসীব কৌর, ছেলে জসমিত ইনসান, বউমা হুসানপ্রীত ইনসান, দুই মেয়ে অমরপ্রীত ও চরণপ্রীত-সহ পরিবারের আরও কয়েকজন সদস্য। ডেরার চেয়ারপারসন বিপাসনাও তালিকায় জায়গা পেয়েছেন। দুই শিষ্যাকে ধর্ষণের দায়ে গত ২৮ আগস্ট রাম রহিমকে ২০ বছরের সশ্রম কারাদ- দেন আদালত। পরে হানিপ্রীতের নামে দেশদ্রোহের অভিযোগ আনে হরিয়ানা পুলিশ। সাজা ঘোষণার দিনই বাবাকে নিয়ে পালানোর ফন্দি এঁটেছিলেন হানিপ্রীত। জেলেও বাবার সঙ্গে রাত্রিবাসের আবেদন জানিয়েছিলেন তিনি। খারিজ হয়ে যায় সেই আরজি। পালানোর ছক এবং সঙ্গে থাকার আবেদন দুটোই বাতিল হওয়ায় বেপাত্তা হয়ে যান হানিপ্রীত। সিরসার পুলিশ সুপার অশ্বিন শেনভি জানিয়েছেন, রাম রহিমের পরিবারের সদস্যদের খোঁজ মিলছে না। গুরমিত তালিকায় যাঁদের নাম দিয়েছেন, বিপাসনা ছাডা তাঁদের বেশির ভাগই পলাতক।
রাম রহিম জেলে যাওয়ার পরই ডেরা ছেড়ে পালিয়েছেন তাঁর পরিবারের অধিকাংশ সদস্য। এরই মধ্যে হানিপ্রীতের বিরুদ্ধে জারি হয়েছে লুক আউট নোটিশ। তাঁর খোঁজে শুরু হয়েছে চিরুনি তল্লাশি। হরিয়ানা পুলিশের একটি সূত্র বলছে, গোপনে দেশ ছেডে পালানোর চেষ্টা করেছেন হানিপ্রীত। বাবার পালিতা কন্যা ভারত-নেপাল সীমান্ত পেরিয়ে পালিয়েছে বলেই অনুমান পুলিশের। হানিপ্রীতের খোঁজে ভারত-নেপাল সীমান্ত গৌরীফান্টায় পৌঁছায় হরিয়ানা পুলিশের একটি দল। সেখানকার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ঘনশ্যাম চৌরাশিয়া জানান, চিরুনি তল্লাশিতেও হানিপ্রীতের খোঁজ মেলেনি।

অনলাইন আপডেট

আর্কাইভ