শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪
Online Edition

রোহিঙ্গাদের শুধুই সাহায্য নয় তাদের নিরাপত্তা ও পুনর্বাসন নিশ্চিত করতে হবে -মিয়া গোলাম পরওয়ার

বাংলাদেশ শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় সভাপতি সাবেক এমপি অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেছেন, রোহিঙ্গাদের শুধুই সাহায্য নয়, তাদের নিরাপত্তা ও পুনর্বাসন নিশ্চিত করতে হবে। তাদের প্রতি সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেয়া আমাদের দায়িত্ব।
গতকাল বৃহস্পতিবার ফেডারেশনের নির্বাহী সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এই সব কথা বলেন। ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় সেক্রেটারি অধ্যাপক হারুন অর রশিদ খানের পরিচালনায় উপস্থিত ছিলেন কেন্দ্রীয় সহসাধারণ সম্পাদক ও ঢাকা মহানগরী উত্তরের সভাপতি  লস্কর মোহাম্মদ তাসলিম,সহসাধারণ সম্পাদক মোঃ কবীর আহমেদ, মোহাম্মদ উল্লা, কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক আলমগীর হাসান রাজু, অর্থ সম্পাদক মোঃ মনসুর আহমেদ, অফিস সেক্রেটারি আবুল হাসেম, কেন্দ্রীয় নির্বাহী সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের সভাপতি মোঃ আব্দুস সালাম। যারা দেশ ও বিদেশ হতে রোহিঙ্গাদের সহযোগিতা করেছেন অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার তাদের ধন্যবাদ জানান। বিশেষ করে তুরস্কের ফাস্ট লেডি আমিন এরদোকানসহ তুরস্ক সরকারের প্রেরিত ডেলিগেটদের ধন্যবাদ জানান।
অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার  বলেন, প্রায় চার মাস ধরে রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় মিয়ানমারের রাখাইনে রোহিঙ্গা মুসলমানদের উপর যে নিপীড়ন, নির্যাতন, গণহত্যা, ধর্ষণ ও জ্বালাও-পোড়াও চলছে এ ধরনের বর্বরতা পৃথিবীর ইতিহাসে খুব  কম। নিরীহ ও নিরস্ত্র মানুষকে পাখির মতো গুলী করে হত্যার এমন উন্মাদনার নজির আর একটিও নেই। তিনি ক্ষোভের সাথে বলেন, রোহিঙ্গাদের উপর এমন কাঠামোগত হত্যাযজ্ঞ ও উৎসাদন প্রক্রিয়া দেখেও তা থামানোর কোনো উদ্যোগ বিশ্বের মোড়ল রাষ্ট্রগুলোর পক্ষ থেকে নেয়া হয়নি। তারা দুয়েকটি বক্তৃতা-বিবৃতি দিয়েই ক্ষান্ত হয়েছে। এমনকি মুসলিম রাষ্ট্রগুলোর প্রতিনিধিত্বকারী সংস্থা ওআইসিসহ আরব লীগের কোনো ধরনের প্রতিক্রিয়া দেখা যায়নি। একমাত্র তুরস্ক, মালয়েশিয়া ও ইন্দোনেশিয়া এ ব্যাপারে কঠোর প্রতিবাদ করে আসছে। মালয়েশিয়া রাখাইন থেকে বিতাড়িত প্রায় ৫৬ হাজার রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দিয়েছে। চীন ও থাইল্যান্ডও এর সাথে শামিল হয়েছে। বাংলাদেশ তার সীমিত সামর্থ্যের মধ্যে থেকেও মানবিক হয়ে রোহিঙ্গাদের পাশে দাঁড়িয়েছে এবং প্রতিবাদ করেছে । অথচ ওআইসি কোনো টুঁ শব্দ করেনি। আগুনে পুড়ে যখন সবকিছু ছাই হওয়ার পথে তখন সংস্থাটি মুখ খুলেছে। তাও আবার বক্তব্য-বিবৃতি এবং অনুরোধের মধ্যে সীমাবদ্ধ থেকেছে। এটা পশ্চিমা বিশ্বের দেশগুলোর মতো লিপ সার্ভিস ছাড়া কিছুই নয়। তিনি বলেন,  মুসলমানদের রক্ষায় তাৎক্ষণিক পদক্ষেপ এবং কঠোর হুঁশিয়ারি ও পদক্ষেপ গ্রহণের যে প্রয়োজনীয়তা দেখা দিয়েছিল, সে সময়টিতে সংস্থাটি কোনো উদ্যোগ নেয়নি। তিনি দাবি জানিয়ে বলেন, গণহত্যার অপরাধে হত্যাকারীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে হবে। আমরা আশা করব, ওআইসি, জাতিসংঘকে নিয়ে মিয়ানমারে রোহিঙ্গাদের উপর চলমান গণহত্যা বন্ধ এবং তাদের নাগরিক অধিকার প্রতিষ্ঠায় বাস্তবানুগ পদক্ষেপ গ্রহণ করবে।
গত বুধবার নরসিংদীর রায়পুরায় একটি ফিলিং স্টেশনে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে ছয় শ্রমিকের মৃত্যুর ঘটনায় তিনি গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, বর্তমানে বাংলাদেশের  শ্রমিক ‘মৃত্যু’র ঘটনা নিত্যনৈমিত্তিক হিসেবে দেখা দিয়েছে। এসব মৃত্যু অস্বাভাবিক, আর আশঙ্কার জায়গাটি সেখানেই। বাংলাদেশের শিল্পে অগ্নিকা- ও ভবন ধসে, বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে  শ্রমিক মৃত্যুর ঘটনা বেশি বাংলাদেশের অধিকাংশ শিল্পকারখানা শ্রমিকদের জন্য নিরাপদ নয়।
মিয়া গোলাম পরওয়ার মনে কনে করেন, বাংলাদেশের শিল্পে শ্রমিক হতাহতের ঘটনা এটা নির্দেশ করে যে, আজও শ্রমিকদের জন্য যথাযথ কর্মপরিবেশ গড়ে ওঠেনি। মালিকশ্রেণির উদাসীনতা, অধিক মুনাফা অর্জনের চিন্তা, রাষ্ট্রযন্ত্রে দুর্নীতি প্রভৃতি বিষয় এই শিল্পে যথাযথ কর্মপরিবেশ গড়ে ওঠার প্রধান অন্তরায়। সরকারের যুগোপযোগী পদক্ষেপ, মালিকশ্রেণির সদিচ্ছা, শ্রমিকশ্রেণির সচেতনতা, মালিকশ্রেণির অধিক মুনাফা লাভের চিন্তা বর্জন ও শ্রমিকদের যথাযথ কর্মপরিবেশ নিশ্চিত করা, সর্বোপরি মালিক-শ্রমিক সম্পর্কোন্নয়নের মাধ্যমে শিল্পে শ্রমিক মৃত্যু বন্ধ করা সম্ভব। আর যদি এসব দুর্ঘটনা রোধ করা না যায়, তবে বাংলাদেশের সমাজ ও অর্থনীতিতে চরম নেতিবাচক প্রভাব পড়বে তা অনায়াসেই বলা যায়।
অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার শ্রমিকদের নিরাপত্তার বিষয়টি নিশ্চিত করার  জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে  আরো সচেতন হওয়ার আহবান জানিয়ে বলেন, নিহত শ্রমিক পরিবারের জন্য যথাযথ ক্ষতিপূরণেরর ব্যবস্থা গ্রহণ করার জোর দাবি জানান। একই সঙ্গে  মহান আল্লাহর কাছে নিহতদের রূহের মাগফিরাত কামনা করেন এবং তাদের শোকসন্তপ্ত পরিবার-পরিজনদের প্রতি গভীর সমবেদনা জানান। প্রেস বিজ্ঞপ্তি।

অনলাইন আপডেট

আর্কাইভ