শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪
Online Edition

ত্রাণের নামে চাঁদাবাজি

মিয়ানমারের রাখাইনে মগসেনা ও বৌদ্ধদের নির্মম আক্রমণ এবং গণহত্যার হাত থেকে বাঁচতে আসা বাংলাদেশে আশ্রিত রোহিঙ্গাদের সাহায্যের জন্য অনেকেই আগ্রহী। এজন্য অনেকে বিভিন্ন স্থানে উদ্যোগ নিয়ে টাকা ও ত্রাণ তুলছেন। এমন মহৎ উদ্যোগ প্রশংসার যোগ্য বৈকি। লাখ লাখ নিরন্ন ও নিরাশ্রয় রোহিঙ্গার খাবার এবং পানীয়সহ চিকিৎসার ব্যবস্থা করা আমাদের মানবিক দায়িত্ব। ইতোমধ্যে বিদেশ থেকে কিছু কিছু ত্রাণ এসেছেও। কিন্তু তা প্রয়োজনের তুলনায় অনেক কম। তাছাড়া বাড়িঘর থেকে উচ্ছেদ হওয়া প্রতিদিন ২০/২৫ হাজার রোহিঙ্গা দুর্গম পাহাড়ি রাস্তা অতিক্রম করে সীমান্ত পাড়ি দিয়ে বাংলাদেশে ঢুকছেন। এদের প্রায়ই নারী, শিশু ও প্রবীণ। অনেককেই শিবিরে আশ্রয় দেয়া সম্ভব হচ্ছে না। তাই কেউ কেউ পাহাড়ের ঢালে, পথের ধারে খোলা আকাশের নিচে দিনযাপন করতে বাধ্য হচ্ছেন। এদের সহযোগিতা করা আমাদের নৈতিক ও একান্তই মানবিক দায়িত্ব। সুখের কথা যে, রোহিঙ্গাদের সাহায্যের জন্য অনেকেই হাত বাড়িয়েছেন। ক্ষমতাসীন ও ক্ষমতার বাইরে থাকা রাজনৈতিক জোটসহ অনেক স্বেচ্ছাসেবী এবং সাংস্কৃতিক সংগঠনও ত্রাণসংগ্রহে মাঠে নেমেছে। এমন উদ্যোগ নিশ্চয়ই প্রসংশনীয়। তবে রোহিঙ্গাদের জন্য ত্রাণসংগ্রহের নামে কেউ কেউ নিজেদের আখের গোছাতে ব্যস্ত বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ অভিযোগ যদি সত্যি হয়, তাহলে সেটা কেবল দুঃখজনকই নয়; জাতির জন্য খুবই অমর্যাদাকর।
গত ২৬ সেপ্টেম্বরের বিভিন্ন দৈনিকে প্রকাশ, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সরকার দলীয় ছাত্রসংগঠনটির পরিচয় বহনকারী কতিপয় তরুণ রোহিঙ্গাদের নামে কিছুদিন যাবৎ চাঁদা তুলে তা নিজেদের মধ্যে ভাগ করে নেয়। এনিয়ে তাদের মধ্যে একপর্যায়ে সংঘর্ষ বাঁধে এবং ১০ জন আহতও হয়। এমন ন্যক্কারজনক ঘটনা দু'একটা নয়। মহানগরী ঢাকাসহ সারাদেশে আরও অনেক ঘটছে। রাস্তাঘাটে, পথের মোড়ে মোড়ে, স্কুলকলেজে, বাসস্টপেজ ও রেলস্টেশনেও ব্যানার ঝুলিয়ে রোহিঙ্গাদের নামে প্রতিদিন চাঁদা তোলা হচ্ছে রসিদ ছাড়াই। এই চাঁদার কয় টাকা রোহিঙ্গাদের দেয়া হয় বা হবে তা কেউ নিশ্চিত করে বলতে পারেন না। কাজেই এমনই করে যত্রতত্র রোহিঙ্গাদের নামে চাঁদা তোলার বিষয়টি মনিটর করা যায় কিনা চিন্তা করা দরকার। অন্যদিকে সীমান্ত অতিক্রমের সময় এবং বিভিন্ন শিবিরে আশ্রিত রোহিঙ্গাদের কাছে থাকা সোনার অলঙ্কার ইত্যাদি নামমাত্র মূল্যে অথবা ছিনিয়ে নেবারও অভিযোগ উঠেছে। শুধু তাই নয়, অনেক রোহিঙ্গা নারীকে গোপন স্থানে নিয়ে তাদের সম্ভ্রম হানির ঘটনাও ঘটিয়েছে একশ্রেণির কুলাঙ্গার বলে প্রকাশ। আমরা এর তীব্র নিন্দা জানাই এবং অবিলম্বে সংশ্লিষ্টদের খুঁজে বের করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই। এতোদিন ত্রাণ নিয়েও এলোমেলো পরিস্থিতি বিরাজ করছিল। ত্রাণ মেরে দেবার ঘটনাও ঘটেছে। তবে ত্রাণকাজের দায়িত্ব সেনাবাহিনীকে দেবার পর শৃঙ্খলা ফিরেছে। এজন্য আমাদের গর্বিত সেনাবাহিনীকে ধন্যবাদ জানাই।
আসলে যেকোনও দুর্গতের পাশে দাঁড়ানো সামর্থ্যবানের মানবিক দায়িত্ব। আর এ দায়িত্ববোধ থাকা সকল মানুষেরই পবিত্র কর্তব্য। কিন্তু এ কর্তব্য পালনের ছদ্মবেশে মানুষ ঠকানো শুধু পাপ নয়। মহাপাপ। যারা রোহিঙ্গাদের নামে চাঁদা তুলে নিজেরাই মেরে দেয়, অন্যদের দেয়া ত্রাণের অর্থ বা সামগ্রী আত্মসাৎ করে তারা মানুষের মুখোশ পরা নরাধম। এদের আর মগ হায়েনাদের মধ্যে তেমন ফারাক নেই। যারা রোহিঙ্গাদের নামে চাঁদা তুলে নিজেরা মেরে দেয় তাদের এবং অন্যদের দেয়া ত্রাণসামগ্রী লুটপাটকারীদের চিহ্নিত করে উপযুক্ত শাস্তি না দিতে পারলে এদেশ ও জাতির বদনাম হবে। এ বদনামের ভাগ কে বহন করবে? আশা করি অভিযোগ দ্রুত আমলে নিয়ে কার্যকর ব্যবস্থা নেয়া হবে।

অনলাইন আপডেট

আর্কাইভ