শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪
Online Edition

ক্ষমতাসীন আ’লীগ যে বিচার বিভাগ নিয়ন্ত্রণ করতে চায় সেটি প্রধান বিচারপতির বিবৃতিতেই প্রমাণিত

 

স্টাফ রিপোর্টার : বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ যে বিচার বিভাগের উপর তাদের নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করছে প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার বিবৃতিতেই সেটি প্রমাণিত হয়েছে। তিনি বলেন, এতদিন আমরা যে বিষয়টি বলে আসছি আজ সেটিই প্রমাণ হয়েছে। গতকাল শনিবার দুপুরে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বিএনপি মহাসচিব একথা বলেন। নয়া পল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে নিজের চেম্বারে প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা’র অষ্ট্রেলিয়া গমন ও রোববার নির্বাচন কমিশনের সংলাপে অংশগ্রহণ নিয়ে সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেন মহাসচিব। 

মহাসচিব সাংবাদিকদের সাথে কথা বলার সময় দলের ভাইস চেয়ারম্যান নিতাই রায় চৌধুরী, কেন্দ্রীয় নেতা সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, খায়রুল কবির খোকন, মুনির হোসেন, কাজী আবুল বাশার, রফিকুল ইসলাম রাসেল, সাইফুল ইসলাম পটু উপস্থিত ছিলেন।

মির্জা ফখরুল বলেন, প্রধান বিচাপতি ইতিমধ্যে বলেই দিয়েছেন যে, এখন সর্বোচ্চ আদালতের ওপর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করার চেষ্টা করছে। এখানে আমাদের নতুন করে কিচ্ছুই বলার নেই। হিজ স্টেটমেন্ট ইজ দ্যা সেলভ এক্সপ্লেমেন্টারি দেট দ্য ফেইস দ্যা পিকচার অব জুডিশিয়ারি । যে কোনো বুদ্ধিমান লোক যারা এটা (প্রধান বিচারপতির বিবৃতি) পড়বেন তারা এটা বুঝে যাবেন হোয়াট সারকোমনটেন্সেস চিফ জাস্টিস হ্যাভ টু লিভ এন্ড  হোয়াট ইজ গোয়িং টু হেপেন্ড। দিজ স্টেটম্যান হ্যাজ স্টেটেট দ্যা ফ্যাক্টস। সত্য কথাগুলো বলে দিয়েছেন। সত্য কথাগুলো বলার পরে প্রমাণিত হয়ে গেছে যে, এই গভমেন্টের ইনটেনশনটা কী, গভমেন্ট কী করতে চাচ্ছে? 

বিচার বিভাগকে রক্ষায় সকলকে সোচ্চার হওয়ার আহ্বান রেখে বিএনপি মহাসচিব বলেন, যারা দেশকে ভালোবাসে, যারা দেশপ্রেমিক, যারা শাসনতন্ত্র নিয়ে কাজ করতে চায়, যারা মুক্ত রাজনীতি চর্চা করতে চায় তাদের এটা দায়িত্বÑ রাষ্ট্রকে রক্ষা করা, তাদের দায়িত্ব হচ্ছে জুডিশিয়ারিকে রক্ষা করা, তাদের দায়িত্ব হচ্ছে দেশের মানুষের অধিকারকে রক্ষা করা। তাই সকল সচেতন মানুষ, দেশপ্রেমিক শক্তি, সকল পেশাজীবীর প্রতি আহ্বান থাকবে, টু কাম ফরওয়ার্ড এন্ড সেইভ দ্যা সিচ্যুয়েশন। 

প্রধান বিচারপতি সরকারের বাধার কারণে দায়িত্ব পালন করতে পারছেন না, আপনারা কি দাবি করবেন যে উনি (প্রধান বিচারপতি) যাতে নিরপেক্ষভাবে দায়িত্ব পালন করতে পারেন, এরকম প্রশ্নের জবাবে সরকারের উদ্দেশে ফখরুল বলেন, অবশ্যই অবশ্যই। আমাদের দলের তরফ থেকে এই দাবি থাকবে। আমরা দাবি করছি যার যা কাজ থাকে সেটা করতে দিন, নিরপেক্ষভাবে করতে দিন, স্বাধীনভাবে করতে দিন।

 মির্জা ফখরুল বলেন, এখানে দুর্ভাগ্য কোথায় জানেন? এই সরকার খুব সফলভাবে গোটা জাতিকে বিভক্ত করে ফেলেছে। আপনার বার (আইনজীবী সমিতি) বিভক্ত করেছে, জুডিশিয়ারিকে এভাবে নিয়ে চলে গেলো। কোথায় করেনি? ওই গ্রামের চায়ের দোকানটাও ভাগ করে দিয়েছে। 

ষোড়শ সংশোধনী বাতিলের রায়ের কারণেই প্রধান বিচারপতি ছুটিতে গেছেন কিনা প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, অনেকে এটা আশঙ্কা করছে, আমরাও একই আশঙ্কা করছি। রায়ের পরিবর্তন, রায়ের এক্সপাঞ্জ করা, সংশোধন করা। হতে পারে। আমার প্রশ্ন ওই জায়গা নয়, আমরা প্রশ্ন হচ্ছে ফান্ডামেন্টাল প্রশ্ন। আপনি জুডিশিয়ারিকে নিরপেক্ষ রাখতে চান কী চান না- দেট ইজ মাই ফান্ডামেন্টাল কোসসেন। রায় কি হলো না হলো আমাদের মাথাব্যথা নাই। আমরা বলতে চাচ্ছি, জুডিশিয়ারিকে রক্ষা করতে হবে, আমার দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব-শাসনতন্ত্রকে রক্ষা করতে হবে। 

শারীরিক অবস্থা নিয়ে প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার নিজের বক্তব্য প্রমাণ করেছে, বিএনপির বক্তব্য সত্যÑ বলে দাবি করেছেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেন, প্রধান বিচারপতি যাওয়ার সময়ে গাড়ি থেকে নেমে যে বক্তব্য দিয়েছেন তা আমরা দেখেছি টেলিভিশনে। তার বক্তব্যে আমরা নিশ্চিত যে, আমরা যে কথাগুলো বলে আসছিলাম, জনমনের যে ধারণা সৃষ্টি হয়েছিলো, সুপ্রিম কোর্ট বার ও আইনজীবীরা যে কথাগুলো বলেছিলো তা সর্বাত্মক সত্য। তিনি বলেছেন সুস্থ আছেন। তাকে যখন ছুটি চাওয়ানো হয় তখন বলা হয়েছিলো অসুস্থ আছে। ক্যাটাগরিকেলি তিনি বলেছেন, তিনি সুস্থ আছেন। অথচ সরকার সবসময় বলেছে, তিনি অসুস্থ আছেন, চিকিৎসার জন্য বিদেশে যাবেন। 

আমার প্রশ্নটা হচ্ছে, আজকে কোন প্রেক্ষিতে প্রধান বিচারপতিকে দেশ ছেড়ে যেতে হচ্ছে। প্রেক্ষিতটা আমাদের মনে রাখতে হবে। ষোড়শ সংশোধনী বাতিলের রায়ের পরে সরকারি দলের দায়িত্বজ্ঞানহীন প্রতিক্রিয়া ছিলো অস্বাভাবিক ও নজিরবিহীন। উনি গেছেন সেটা নিয়ে আমি কথা বলছি না। আমি বলতে চাই, বিচার বিভাগ যেটা একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের তিনটি স্তম্ভের প্রধান স্তম্ভ, সেই বিচার বিভাগের প্রধান যিনি এটা পরিচালনা করছেন তাকে যদি এভাবে পুরোপুরিভাবে নিষ্ক্রিয় করে দিয়ে তার ওপর বলা যেতে পারে একটা শারীরিক মানসিক চাপ সৃষ্টি করে তাকে যদি তার স্বাধীন মতামত থেকে বিরত রাখা হয়। তাহলে এই বাংলাদেশ কোন রাষ্ট্র? নাগরিক হিসেবে এটা আমাদের জানার অধিকার আছে। আওয়ামী লীগ রাজনৈতিকভাবে ‘দেউলিয়া’ হয়ে গেছে বলেই বিচার বিভাগের বিরুদ্ধে তারা এহেন কর্মকান্ড করছে বলেও অভিযোগ করেন তিনি।

মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, প্রধান বিচারপতির বিবৃতির মধ্যে একটা কথা বেরিয়ে এসেছে। কথাটা খুব সিগনিফিকেন্ট। সরকারকে ভুল বুঝানো হচ্ছে, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী অভিমান করেছেন। আমি এই জিনিসটাকে সিরিয়াসলি দেখেছি। সরকারকে ভুল বুঝানো হচ্ছে- কে করছে? কারা করছে? কারা সেদিন তাকে(প্রধান বিচারপতি) বাধ্য করলো আপনার অফিস ছেড়ে চলে যেতে, যিনি জয়েন করার কথা। কারা বাধ্য করলো, কারা ফলস একটা ডকুমেন্ট তৈরি করলো?

আরেকটা ইম্পর্টেন্ট থিংক যে, প্রধান বিচারপতি ছুটিতে যাওয়ার পরে ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতির সঙ্গে আইনমন্ত্রী কয়েক ঘন্টা বসেছেন। বেরিয়ে আইনমন্ত্রী বলেছেন, বিচার বিভাগ কিভাবে চলবে, বিচার বিভাগের কর্মকর্তাদের নিয়োগ-এসব ব্যাপারে আমরা আলাপ করেছি। এটা ডাইরেক্ট ইন্টারভেশন ইন জুডিশিয়ারি, ইট ইজ পেরোগেটিভ অব দ্যা চিফ জাস্টিস। চিফ জাস্টিসের অফিসে অন্য কারো কোনো এখতিয়ার নাই, সেখানে তারা থাকতে পারে। এই কথাগুলো হালকা করে দেখার সুযোগ নাই।

বিচার বিভাগের এরকম অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে উচ্চ আদালতের নিষ্পত্তির অপেক্ষায় থাকা খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে দায়েরকৃত ‘মিথ্যা মামলায়’ নিম্ন আদালত গ্রেফতারি পরোয়ানা জারির ঘটনা তুলে ধরেন ফখরুল। আইন বলছে, উচ্চ আদালতে কোনো মামলা পেইন্ডিং থাকলে নিম্ন আদালতে ওই মামলার কার্যক্রম আপাতত স্থগিত থাকবে। কিন্তু ওই ঘটনার (প্রধান বিচারপতির ছুটিতে যাওয়ার ঘটনা) পর দেখা যাচ্ছে বিচার বিভাগের ওপর নির্বাহী বিভাগের হস্তক্ষেপ। দেশনেত্রীর বিরুদ্ধে এই গ্রেফতারি পরোয়ানা জারিতে সরকারের উদ্দেশ্য স্পষ্ট। তারা দ্রুত ওইসব মিথ্যা মামলার নিষ্পত্তি করতে চায় এবং প্রধান বিরোধী দল জনপ্রিয় নেত্রীকে সাজা দিতে চায়। এটা এদেশের মানুষ বুঝে কিন্তু কোন লাভ হবে না।

অনলাইন আপডেট

আর্কাইভ