শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪
Online Edition

বইপত্র

“চির সংগ্রামী কবি ফররুখ”

একটি সুলিখিত সুবিন্যস্ত গ্রন্থ 

 

: মুহাম্মদ জাফর উল্লাহ্

প্রচ্ছদ : মুহাম্মদ ইমাম উদ্দীন ও

  ত্বোয়াসীন আরাফাত ত্বোয়াহা

: দ্বীন দুনিয়া প্রকাশন

  বায়তুশ শরফ্ কমপ্লেক্স

  ধনিয়ালাপাড়া, চট্টগ্রাম-৪১০০।

: ০১৮২২-৫৩৫৯৯৫, ০১৬৭৪-৪৫০০০৪

দাম : ২০০/-

 

মুহাম্মদ জাফর উল্লাহ একজন ফররুখ অনুরাগী চিন্তাশীল লেখক। সম্প্রতি তাঁর উপরোক্ত শিরোনামের গ্রন্থটির দ্বিতীয় সংস্করণ প্রকাশিত হয়েছে। গ্রন্থের শুরুতে গ্রন্থটি সম্পর্কে দু’জন বিশিষ্ট ব্যক্তির অভিমত তুলে ধরা হয়েছে। সেখান থেকে অংশবিশেষ নিচে উদ্ধৃত হলো:

“মুসলিম আমলেই বাংলা সাহিত্যের বিকাশ। এতে মধ্যযুগের মুসলিম কবি-সাহিত্যিকদের অবদান অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বিংশ শতাব্দীর প্রথম তিন দশকে এ উপমহাদেশে কয়েকজন কবির উত্থান মুসলিম গণ-মানসে তুমুল আলোড়ন সৃষ্টি করে। পরবর্তীতে দ্বিতীয় মহাযুদ্ধ, তেরশ’ পঞ্চাশের মন্বন্তর, হিন্দু-মুসলিম দাঙ্গা এবং আজাদী আন্দোলনের প্রেক্ষাপটে চল্লিশ ও পঞ্চাশ দশকের কবিরা ছিলেন সমাজ সচেতন ও স্বাধীনতা প্রত্যাশী। এদের মধ্যে মুসলিম জাগরণের অগ্রদূত কবি আল্লামা ইকবাল ও নজরুল পরবর্তী যুগে যাঁরা ইসলামী আদর্শ ও ঐতিহ্য-চেতনাকে পুনরুজ্জীবিত করার লক্ষ্যে সাহিত্য-সাধনা করেন, ফররুখ আহমদ ছিলেন তাঁদের মধ্যে অগ্রণী এবং স্বকীয় সত্তার অধিকারী। ব্যক্তি ও কবি জীবনে তিনি ছিলেন খাঁটি ইসলামের অনুসারী। তাঁর আচরিত ধর্মীয় আদর্শের মাধ্যমে, বিশেষত ইসলামের স্বর্ণ-যুগ-¯্রষ্টা খোলাফায়ে রাশেদীনের দর্শনে এ দেশ শাসিত হোক এবং এ দেশের প্রতি ঘরে মদীনার সুখ-সৌরভ ছড়িয়ে পড়–ক তা-ই ছিল তাঁর সমগ্র কাব্য-সম্ভারের মূলকথা।” (ডক্টর আবদুল করিম, প্রাক্তন ভাইস-চ্যান্সেলর, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়)।

অন্য আর একটি মন্তব্যের কিয়দংশঃ “আদি ও মধ্যযুগের কবিতা মূলত ধর্মভিত্তিক। শুধু ফররুখ আহমদ কেন, যে কোন করিবই নিজস্ব ধর্মবিশ্বাস থাকতে পারে। ধর্মবিশ্বাস নিয়ে কবিতা লেখা দোষের কিছু নয়। ধর্মের সঙ্গে রাজনৈতিক চেতনাকে মিশিয়ে ফেলার কারণে অনেক সময় সংকটের সৃষ্টি হয়। সুতরাং ব্যক্তি ফররুখ আহমদ এবং কবি ফররুখ আহমদ এই জায়গাতে পৃথক হয়ে গেছেন। কবি ফররুখ আহমদকে রাজনৈতিক দৃষ্টিকোণ থেকে বিচার করলে তাঁর কবি-প্রতিভার প্রতি অবিচারই করা হয়। তাতে ক্ষতি হয় বাংলা সাহিত্যের; ফররুখ আহমদের নয়। (ডক্টর আহমেদ মাওলা, সাবেক ডিন, কলা ও মানবিক অনুষদ, বিভাগীয় প্রধান, বাংলা বিভাগ, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়, কুমিল্লা)  

উপরোক্ত মন্তব্য থেকে আলোচ্য গ্রন্থ ও গ্রন্থের মূল বিষয় কবি ফররুখ আহমদ সম্পর্কে মোটামুটি ধারণা লাভ করা যায়। গ্রন্থটি সম্পর্কে আধুনিক বাংলা সাহিত্যের অন্যতম প্রধান কবি আল মাহমুদ লিখেছেন, “লেখকের ভাষা আধুনিক, বিষয়বস্তু ঐতিহ্যবাহী এবং আমাদের তরুণ পাঠকদের পাঠোপযোগী।” গ্রন্থটি সম্পর্কে বিশিষ্ট কবি ও সাহিত্য-সমালোচক আব্দুল মান্নান সৈয়দ মন্তব্য করেন- “সুলিখিত, সুবিন্যস্ত।” উপরোক্ত দু’জন বিশিষ্ট সাহিত্যবোদ্ধার সংক্ষিপ্ত অথচ সুচিন্তিত মন্তব্য থেকে গ্রন্থটির মান ও বিষয়বস্তু সম্পর্কে সুস্পষ্ট ধারণা পাওয়া যায়। 

এ গ্রন্থে লেখক অত্যন্ত আন্তরিকতা ও দরদের সাথে বাংলা সাহিত্যের অমর কবি ফররুখ আহমদের জীবন ও তাঁর সাহিত্যকর্ম সম্পর্কে আলোচনা করার প্রয়াস পেয়েছেন। এতে কবি সম্পর্কে অনেক অজানা বিষয় ও তথ্য তুলে ধরার আন্তরিক প্রয়াস বিদ্যমান। কবির ধারাবাহিক জীবন, সাহিত্য সাধনা ও সংগ্রাম মুখর কর্মময় জীবনের কাহিনী অত্যন্ত আন্তরিক ও মর্মস্পর্শী ভাষায় বিবৃত হয়েছে। কবির ব্যক্তিজীবন, সাহিত্যজীবন ও কর্মজীবনের নানাদিক এতে সুস্পষ্টভাবে বর্ণনা করা হয়েছে। কবিকে যারা জানতে চান, এ বইটি তাদের সে প্রত্যাশা পূরণ করতে সক্ষম হবে।

কবির সাহিত্যকর্মের একটা বিস্তৃত বিবরণ এ গ্রন্থে পাওয়া যায়। ফররুখ আহমদ বাংলা কাব্যের অন্যতম শ্রেষ্ঠ মৌলিক প্রতিভাধর কবি। তাঁর কাব্যের ভাব, বিষয়, ভাষা ও গঠনশৈলী স্বতন্ত্র মহিমায় উজ্জ্বল। নজরুল-পরবর্তী শ্রেষ্ঠ কবি ফররুখ আহমদ বাংলা কাব্যে এক নতুন ধারার প্রবর্তন করেন। তিনি রেনেসাঁ বা নবজাগরণের কবি। অধঃপতিত পরাধীন জাতিকে তিনি স্বাধীনতা, মুক্তি ও নবদিগন্তের আলোকিত পথে চলার অনুপ্রেরণা যুগিয়েছেন। কবি সত্য, সুন্দর ও কল্যাণের প্রয়াসী। তাঁর কাব্যের মাধ্যমে তিনি একদিকে যেমন সত্য-ন্যায়, সুন্দর ও কল্যাণের পথে চলার অনুপ্রেরণা যুগিয়েছেন, অন্যদিকে তেমনি অসত্য, অন্যায়, অসুন্দর ও অকল্যাণের বিরুদ্ধে কলমের তীব্র আঘাত হেনেছেন। ব্যক্তিগত জীবনে তিনি যেমন সত্যসন্ধ, ন্যায়পরায়ণ, সৎ, সাহসী ও ঈমানদার ছিলেন, সাহিত্যের মধ্যেও তিনি তাঁর প্রতিফলন ঘটিয়েছেন। তাঁর জীবনের স্বপ্ন ছিল মানবতার মুক্তি ও শাশ্বত সত্যের প্রতিষ্ঠা। আদর্শ রাষ্ট্র ও সমাজ প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে তিনি তাঁর এ স্বপ্ন বাস্তবায়নের প্রত্যাশী ছিলেন। লেখক আলোচ্য গ্রন্থে ফররুখ আহমদের যথার্থ পরিচয় তুলে ধরার প্রয়াস পেয়েছেন। 

আলোচ্য গ্রন্থে বিভিন্ন ঘটনা, তত্ত্ব ও তথ্যের উপস্থাপনা করে লেখক কবির জীবনীকে যথাসম্ভব সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের ছবিসহ প্রামাণ্য রূপ দেয়ার চেষ্টা করেছেন। এটি বিশেষভাবে প্রশংসাযোগ্য।

গ্রন্থের ভাষা সহজ, সরল ও প্রাঞ্জল। বইটির মনোরম প্রচ্ছদ, বিদেশি অফসেট পেপারে ঝকঝকে ছাপা ও মজবুত বাঁধাই বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। লেখকের দরদী মনের আন্তরিক ছোঁয়ায় গ্রন্থটি অত্যন্ত সুখপাঠ্য হয়েছে। আমি এ গ্রন্থের বহুল প্রচার কামনা করি। 

-অধ্যাপক মুহম্মদ মতিউর রহমান

অনলাইন আপডেট

আর্কাইভ