শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪
Online Edition

আমলাতান্ত্রিক জটিলতায় শতকোটি টাকার রাজস্ব হারাচ্ছে বিআরটিসি

বগুড়া অফিস : বিআরটিসি বগুড়া বাস ডিপোসহ দেশের ২১টি বাসডিপোতে একহাজারের বেশী বাস দীর্ঘ পনের বছর যাবৎ অকেজো অবস্থায় পড়ে আছে। এরমধ্যে মাত্র ১১৫টি বাস বেসরকারিভাবে লীজ দেয়া হয়েছে। কর্তৃপক্ষের উদাসীনতার কারণে পরিত্যক্তবাসগুলো লীজ না দিয়ে বছরের পর বছর ফেলে রাখা হয়েছে। ফলে গত ১৫ বছরে সরকার রাজস্ব হারিয়েছে কয়েক’শ কোটি টাকা।
বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্পোরেশন (বিআরটিসি) সূত্রে জানাগেছে, ২০০২ সালে নতুন ১২০০ বাস আমদানি করে বিভিন্ন রুটে পরিচালনা করার কারণে পুরাতন বাসগুলো দেশের বিভিন্ন ডিপোতে ফেলে রাখা হয়। বাসগুলো পড়ে থাকার কারণে নষ্ট হয়ে যাওয়ার পাশাপাশি এর বিভিন্ন যন্ত্রাংশ খোয়া যেতে থাকে। ফলে ২০০৪ সালে বাসগুলো পর্যায়ক্রমে বেসরকারিভাবে দীর্ঘমেয়াদী লীজ দেয়া শুরু হয়। ওই সময় দেশের ৩৬টি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের নামে ১১৫টি বাস দীর্ঘমেয়াদী লীজ দেয়া হয়। লীজ নেয়া প্রতিষ্ঠানের অধিনে বাসগুলো বিআরটিসি বাস ডিপোর নিয়ন্ত্রণে বেসরকারি ভাবে পরিচালনা শুরু করা হয়। এতে করে যাত্রী সেবার মান বাড়ার পাশাপাশি বিআরটিসি প্রতিটি বাস থেকে প্রতিদিন ১০০০ টাকা হিসেবে রাজস্ব পাওয়া শুরু করে। কিন্তু হঠাৎ করে ১১৫টি লীজ দেয়ার পর আমলাতান্ত্রিক জটিলতার কারণে বাকী ১০৮৫টি বাস লীজ দেয়া বন্ধ করে দিয়ে বিভিন্ন ডিপোতে ফেলে রাখা হয়। এভাবে বছরের পর বছর বাসগুলো পড়ে থাকার কারণে এর যন্ত্রাংশ বলতে এখন আর কিছু নেই। কোন বাসের চাকা পর্যন্ত উধাও হয়ে গেছে রাতের আঁধারে। বর্তমানে বাসগুলো বিভিন্ন ডিপোতে পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। বাসগুলো লীজ দেয়া হলে সরকার রাজস্ব পাওয়ার পাশাপাশি যাত্রী সেবা দিয়ে সচল থাকতো বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
বেসরকারি লীজ নেয়া প্রতিষ্ঠানগুলোর মালিকরা জানান, বিআরটিসির অকেজো বাসগুলো তারা লীজ নিয়ে প্রতিটি বাসে ৫-৭ লাখ টাকা ব্যয় করে চলাচলের উপযোগী করে যাত্রী পরিবহন করে আসছেন। এই বাসগুলো থেকে বিআরটিসি প্রতিমাসে ১ কোটি টাকার বেশী রাজস্ব পেয়ে থাকে। কিন্তু এই বাসগুলোর ফিটনেস সার্টিফিকটেসহ অন্যান্যকাগজপত্র কর্তৃপক্ষ হালনাগাদ করে দেয় না। ফলে বিভিন্ন সময় বাস দুর্ঘটনা কবলিত হলে কাগজপত্র হালনাগাদ না থাকায় আইনগত জটিলতায় দিনের পর দিন বাসগুলো পুলিশের কাছে আটক থাকায় বিভিন্ন হয়রানির শিকার হতে হয়। রংপুরের ওমর ফারুক নামের এক পরিবহন ব্যবসায়ী জানান, তার নামে দীর্ঘ মেয়াদী লীজ নেয়া বিআরটিসির একটি বাস দুর্ঘটনাজনিত কারণে রংপুরের বড়দরগা হাইওয়ে পুলিশ হেফাজতে আটক হয়। কিন্তু বিআরটিসি কর্তৃপক্ষ কাগজপত্র হালনাগাদ করে না দেয়ার কারণে গত এক বছরেও বাসটি তিনি আদালত থেকে জামিন করাতে পারেননি।
দিনাজপুরের হানিফ সরকার জানান, তার নামে লীজ নেয়া (পাবনা-ব-১১-০০২৫) বাসটি লীজ নবায়ন না করায় কর্তৃপক্ষ ২০০৬ সালে আটক করে বগুড়া বাস ডিপোতে রাখে গত ১১ বছরে ওই বাসটি মাটির সাথে মিশে যেতে বসেছে। অথচ বাসটি লীজ দেয়া থাকলে গত ১১ বছরে কোটি টাকার বেশী রাজস্ব পেতে বিআরটিসি। এদিকে, বিআরটিসি বগুড়া বাসডিপোতে গিয়ে দেখা গেছে ৮-১০টি বাস অকেজো অবস্থায় পড়ে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। এগুলো বাসের দরজা-জানালা বলতে কিছু নেই, কোন কোন বাসের চাকা পর্যন্ত উধাও হয়ে গেছে। বাসগুলোর ছবি তুলতে গেলে ১৫-২০ জন কর্মচারী বাধা প্রদান করে এবং জানান ঢাকা হেড অফিসের অনুমতি ছাড়া ছবি তোলা যাবেনা।
বগুড়া বাস ডিপোর ম্যানেজার ইঞ্জিনিয়ার আব্দুল লতিফ ও কর্মচারীদের সাথে সুর মিলিয়ে ছবি নেয়া যাবে না বলে জানান। তিনি আরো জানান, এখানে পড়ে থাকা বাসগুলো ২০০২ সালের। তখন থেকেই এখানে পরিত্যাক্ত অবস্থায় রয়েছে। তবে অচিরেই টেন্ডারের মাধ্যমে বাসগুলো বিক্রি করা হবে বলে তিনি জানান।
এবিষয়ে বিআরটিসি প্রধান কার্যালয়ের উপ-মহাব্যবস্থাপক (অপারেশন) আলমাস আলীর সাথে দুই দিন যোগাযোগ করলেও তিনি কোন তথ্য দেননি। তিনি রাজীব নামের এক কর্মকর্তার সাথে যোগাযোগ করতে বলেন। পরে ওই কর্মকর্তা মোবাইল ফোনে জানান, ‘বিআরটিসির কোন তথ্য আমরা দিতে পারবো না। কোন তথ্য না দেয়ার ব্যাপারে উপরের নির্দেশ আছে।’

অনলাইন আপডেট

আর্কাইভ