শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪
Online Edition

আরাকানে মুসলমানবিরোধী বৌদ্ধ ভিক্ষুদের বিক্ষোভে আরো সহিংস হচ্ছে উগ্রপন্থীরা

গত ২২ অক্টোবর রোববার রাজ্যের রাজধানীতে রোহিঙ্গা মুসলমানদের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ করেছে ভিক্ষু সমাজ ও অতি জাতীয়তাবাদী বৌদ্ধরা

কামাল হোসেন আজাদ/ শাহজালাল শাহেদ/ শাহনেওয়াজ জিল্লু : গত ২২ অক্টোবর আরাকান রাজ্যজুড়ে উগ্রপন্থীরা বিক্ষোভ কর্মসূচির পর থেকে ক্রমশ উচ্ছৃঙ্খল হতে শুরু করেছে। বিভিন্ন স্থানে নতুন করে হামলার ঘটনা ঘটাচ্ছে এসব মুসলিমবিদ্বেষী চক্র। এক বৌদ্ধ ভিক্ষুর ডাকে পুরো আরাকানে মুসলমানদের বিরুদ্ধে এ বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে। ওই বিক্ষোভের অংশ হিসেবে নয়া করে সংগঠিত হয়েছে সন্ত্রাসবাদে স্বদলবলে অংশ নেয়া উগ্রপন্থীরা। মানুষ হত্যার মতো পাপকাজে লিপ্ত বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের উগ্রপন্থীরা এবার মগসেনা ও এলাকাভিত্তিক গঠিত সশস্ত্র সংগঠন নাডালা বাহিনীর সহযোগিতায় থেকে যাওয়া মুসলমানদের বাড়িঘরে নুতন করে আগুন দিয়ে জ্বালিয়ে ছারখার করে তাদের সপরিবারে বাস্তুচ্যুত করার জঘণ্যতম কর্মযজ্ঞ চালিয়ে যাচ্ছে। 

সূত্রমতে, কয়েক মাসব্যাপী চলা এ সহিংসতা বন্ধে বৈশ্বিকভাবে চাপ প্রয়োগে কিছুটা নমনীয় হলেও কট্টর মুসলিমবিরোধী বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের উইরাথু নামের বর্মীয় এক আধ্যাত্মিক ধর্মীয় গুরু আরাকান সফরকালে গোটা আরাকানে বিক্ষোভের উসকানি দেয়। ওই উসকানিকে আহবান হিসেবে নিয়ে একতরফা মুসলমানবিরোধী বিক্ষোভে নেমে পড়ে সেদেশের বৌদ্ধ ধর্মানুসারি ভিক্ষুসহ উগ্রপন্থী উশ্ছৃখল রাখাইনরা। 

বিশ্লেষকদের মন্তব্যে প্রকাশ, আরাকানে সেনাবাহিনীর তান্ডব চালাকালীন বাংলাদেশে পালিয়ে আশ্রিত রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন ঠেকাতে বৌদ্ধ সন্যাসীরা যে বিক্ষোভ করেছে তা প্রমাণ করে রোহিঙ্গা নিধনে ধর্মীয় বৈষম্যনীতির প্রয়োগ হয়েছে। শুধুমাত্র মুসলমান হওয়ার কারণে রোহিঙ্গাদের প্রতি জাতিগত বিভেদে নির্দয় আচরণের মাধ্যমে অত্যাচার চালানো হচ্ছে। 

বিশ্লেষকরা বলছেন, বৌদ্ধ ভিক্ষুদের কাজ তাদের ধর্ম প্রচার করা এবং সমাজের মানুষকে পূণ্যের পথে ধাবিত করতে পাপ কাজ থেকে বিরত রাখার প্রচেষ্টা করা। কিন্তু উল্টোভাবে বার্মার বৌদ্ধ ভিক্ষুরা পাপাচারে লিপ্ত হতে সাধারণ অনুসারিদের রীতিমতো সন্ত্রাসী কর্মকান্ডে উসকানি দিচ্ছে। মানুষকে হত্যা করা এবং হত্যা করতে উদ্বুদ্ধ করছে বার্মার ভিক্ষুসংঘ। বৌদ্ধবাদ পরিপন্থী এসব কাজের উসকানি দিচ্ছে উইরাথু নামের মুসলিমবিদ্বেষী এক বৌদ্ধভিক্ষু। তার উসকানিতেই গত ২২ অক্টোবর রোববার রাজ্যের রাজধানীতে রোহিঙ্গা মুসলমানদের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ করেছে ভিক্ষু সমাজ ও অতি জাতীয়তাবাদী বৌদ্ধরা। যাদের মধ্যে উগ্রপন্থীরাও সশস্ত্রভাবে অংশগ্রহণ করেছিলো ওই বিক্ষোভে। 

বিক্ষোভকারীদের অন্যতম নেতা অংহতে’র বরাত দিয়ে বার্মার সংবাদমাধ্যম ডেমোক্রেটিক ভয়েস অব বার্মা জানিয়েছে, আরাকান রাজ্য ছেড়ে বাংলাদেশে পালিয়ে যাওয়া রোহিঙ্গাদের (!) অনেকেই সন্ত্রাসী। আশঙ্কা করা হচ্ছে, তাদের ফিরিয়ে নিয়ে আসা হলে সহিংসতার পুনরাবৃত্তি ঘটবে।

বস্তুত: বাংলাদেশে পালিয়ে যাওয়া রোহিঙ্গাদের সিংহভাগ নারী ও শিশু। অগণিত পুরুষকে হত্যা করেছে সেনাবাহিনী ও তাদের লেলিয়ে দেয়া নাডালা দল। তবে কি এ নারী ও শিশুরাই সন্ত্রাসপনায় নিয়োজিত- জনমনে এমন প্রশ্ন আসাটাই স্বাভাবিক।

অংহতে নামের ওই ভিক্ষু সংবাদমাধ্যমকে আরও জানান, পালিয়ে যাওয়া রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নিয়ে আসার প্রকল্প রাখাইনের (আরাকান) বৌদ্ধ জনগণ মেনে নেবে না। তাদেরকে যে কোন মূল্যে প্রতিহত করা হবে। তারা সন্ত্রাসী। বিক্ষোভকারীদের আরেক নেতা বৌদ্ধভিক্ষু ইউধামিকা মন্তব্য করেন, সন্ত্রাসীদের (রোহিঙ্গা মুসলমান) সঙ্গে বসবাস করা সম্ভব নয়।

এদিকে তাদের এমন মন্তব্য থেকে বিশ্লেষকরা স্পষ্ট করেন যে, মুসলমানদের সাথে সহাবস্থান চাইছে না রাখাইন রাজ্যের বৌদ্ধ ধর্মানুসারি উগ্রপন্থীরা। তাই দফায় দফায় বেপরোয়া নির্যাতন-নীপিড়নের মাধ্যমে রোহিঙ্গা মুসলমানদের দেশ ত্যাগে বাধ্য করছে তারা।

অনলাইন আপডেট

আর্কাইভ