শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪
Online Edition

বিল গেটস ও জবসের উদাহরণ

কোন কোন খবর আমাদের অবাক করে দেয়। এ প্রসঙ্গে বিল গেটস ও স্টিভ জবসের নাম উল্লেখ করা যায়। আমরা তো জানি, প্রযুক্তি উদ্যোক্তাদের তালিকায় বিল গেটস আর স্টিভ জবসের নাম সবার শীর্ষে। তাদের একজন মাইক্রোসফটের প্রতিষ্ঠাতা, আর একজন অ্যাপলের। অত্যাধুনিক সব ইলেক্ট্রনিক ডিভাইসের পরিবেশে তাদের সন্তানরা বেড়ে উঠবে এমন ভাবনাই তো স্বাভাবিক। কিন্তু বাস্তব অবস্থা পুরো উল্টো। বিল গেটস ও স্টিভ জবস হয়তো মনোবিজ্ঞানীদের কথা উপলব্ধি করতে সক্ষম হয়েছিলেন। মনোবিজ্ঞানীরা বলছেন, স্মার্ট ফোন কিশোর মস্তিষ্কের জন্য ক্ষতিকর। এক সাক্ষাৎকারে বিল গেটস বলেছিলেন, তাঁর মেয়ের বয়স ১৪ বছর হওয়ার আগ পর্যন্ত তাকে মুঠোফোন ধরতেই দেননি তিনি। ২০০৭ সালে মেয়ে একটি ভিডিও গেমে আসক্ত হয়ে পড়লে তিনি বিধি-নিষেধ আরোপ করেন। আর ২০১১ সালে নিউইয়র্ক টাইমসকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে স্টিভ জবস বলেন, তার প্রতিষ্ঠানের উদ্ভাবিত নতুন আইপ্যাড সন্তানদের ব্যবহার করতে দেননি তিনি। জবস বলেন, ‘আমরা বাড়িতে সন্তানদের প্রযুক্তির ব্যবহার সীমিত রেখেছিলাম’।
সন্তানদের প্রযুক্তি ব্যবহারের ক্ষেত্রে বিল গেটস এবং স্টিভ জবসের আচরণ আমাদের অবাক করে বৈকি! বর্তমান পৃথিবীতে দরিদ্র দেশের সন্তানরাও প্রযুক্তি ব্যবহারের ক্ষেত্রে যে অবাধ স্বাধীনতা ভোগ করছে, তার সাথে কিন্তু বিল গেটস ও স্টিভ জবসের দৃষ্টিভঙ্গি মিলছে না। তারা তো নিজ সন্তানদের স্মার্ট ফোন ও প্রযুক্তি ব্যবহারের ক্ষেত্রে বিধিনিষেধ আরোপ করেছিলেন, প্রযুক্তির ব্যবহার সীমিত করে দিয়েছিলেন। প্রশ্ন জাগে, তারা কি রক্ষণশীল ছিলেন কিংবা তাদের আচরণ কি ছিল মুর্খতাপ্রসূত? বিল গেটস ও স্টিভ জবসকে যারা জানেন তারা বোধ হয় এমন মন্তব্য করতে রাজি হবেন না। কারণ ওরা তো প্রযুক্তির উদ্যোক্তা এবং বিজ্ঞানমনষ্কও বটে। আসলে এই দুই ব্যক্তিত্ব প্রযুক্তি ব্যবহারের ভালমন্দ সম্পর্কে বেশ ভালভাবেই অবগত ছিলেন, তাই সন্তানদের ক্ষতির হাত থেকে রক্ষার ক্ষেত্রে সচেতন ভূমিকা পালন করেছিলেন। ভাবনার বিষয় হলো, তাদের উদাহরণ থেকে আমাদের অভিভাবকরা শিক্ষা নিতে সমর্থ হচ্ছেন না কেন?
প্রসঙ্গত এখানে যুক্তরাষ্ট্রের দুই শিক্ষাবিদ জো ক্লিমেন্ট ও ম্যাট মাইলস-এর কথা উল্লেখ করা যায়। তারা তাদের ‘স্ক্রিন স্কুলড : টু ভেটেরান টিচার্স এক্সপোজ হাউ টেকনোলজি ওভারইউজ ইজ মেকিং আওয়ার কিডস ডাম্বার’ নামক গ্রন্থে বিল গেটস ও স্টিভ জবস-এর কথা উল্লেখ করেছেন। উক্ত দুই শিক্ষাবিদ মন্তব্য করেছেন, প্রযুুক্তি প্রতিষ্ঠানের এই ধনবান নির্বাহীরা তাদের পণ্যের ব্যাপারে ভাল জানতেন, যা গ্রাহকরা জানেন না। তারা আরো বলেন, এটা খুব অবাক ব্যাপার যে আধুনিক স্কুলগুলোয় যেখানে শিশুদের আইপ্যাডের মতো প্রযুক্তি ব্যবহারে উদ্বুদ্ধ করা হচ্ছে, সেখানে স্টিভ জবস সন্তানদের ওপর বিধিনিষেধ আরোপ করেছিলেন। ওয়ালডর্ফ স্কুলের মতো সিলিকন ভ্যালির বেশ কয়েকটি বিশেষ স্কুলে এখনও পাঠদানে চক, বোর্ড ও পেন্সিলের ব্যবহার হয়। যুক্তরাষ্ট্রের ওই দুই শিক্ষাবিদের বক্তব্য পর্যবেক্ষণ থেকে বর্তমান বিশ্বের অভিভাবকদের শেখার মতো বিষয় রয়েছে বলে আমরা মনে করি।
মুঠোফোন, আইপ্যাডসহ বিভিন্ন প্রযুক্তির ব্যবহার নিয়ে বর্তমান সময়ে বেশ গবেষণা হচ্ছে। গবেষকরা বলছেন, বর্তমানে গড়ে ১০ বছর বয়সেই শিশুরা মুঠোফোন ব্যবহার শুরু করে দেয়। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহারের হার বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে অষ্টম গ্রেডের শিক্ষার্থীদের বিষণœতায় ভোগার ঝুঁকি ২৭ শতাংশ বেড়েছে। যে শিশু-কিশোররা দিনে ৩ ঘণ্টা বা তার বেশি সময় স্মার্টফোন ব্যবহার করে তাদের আত্মহত্যাপ্রবণ হয়ে ওঠার ঝুঁকি বেশি। যুক্তরাষ্ট্রে সাম্প্রতিকতম আরেক গবেষণায় বলা হয়েছে, সে দেশের কিশোরদের আত্মহত্যার হার হত্যাকা-ের হারকে ছাড়িয়ে যাচ্ছে। স্মার্টফোনই এ ক্ষেত্রে বড় কারণ বলে ওই গবেষণায় বলা হয়। এসব চিত্র, মতামত ও গবেষণালদ্ধ তথ্যের পর আমাদের অভিভাবকদের সঙ্গত কারণেই অধিকতর সচেতন হওয়া প্রয়োজন বলে আমরা মনে করি। ঝলমলে বিজ্ঞাপন ও উন্নত বিশ্বের অন্ধ অনুকরণের মধ্যে কোন কল্যাণ নেই। আমাদের জানা-শোনার পরিধি বাড়াতে হবে এবং চোখ-কান খোলা রেখে সন্তানদের জন্য যেটা কল্যাণকর সেটাই গ্রহণ করতে হবে। আর সন্তানদের প্রকৃত মানুষ হিসেবে গড়ে তুলতে হলে বিজ্ঞান-প্রযুক্তির পাশাপাশি নৈতিকতাবোধকেও গুরুত্ব দিতে হবে। কারণ, নৈতিকতাবোধ মানুষকে ভুল ও ভ্রষ্টতা থেকে রক্ষা করতে পারে।

অনলাইন আপডেট

আর্কাইভ