শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪
Online Edition

কেসিসি নির্বাচনে কারা পাচ্ছেন নৌকা-ধানের শীষ প্রতীক

খুলনা অফিস : এখনও দিন-ক্ষণ ঠিক না হলেও একটু আগে-ভাগেই আসন্ন খুলনা সিটি কর্পোরেশনের (কেসিসি) নির্বাচনকে কেন্দ্র করে বেশ তোড়জোড় শুরু হয়েছে। নগর জুড়ে শোভা পাচ্ছে পোস্টার, প্যানা, ফেস্টুন ও ব্যানার। বিভিন্ন সংগঠন ও শ্রেণি-পেশার মানুষের সাথে চলছে শুভেচ্ছা ও মতবিনিময়ও। সম্ভাব্য প্রার্থীরা প্রার্থীদের নাম নগরবাসীর মুখে মুখে এখন উচ্চারিত হচ্ছে। কিন্তু সব কিছুর পরও দেশের অন্যতম শক্তিশালী দু’টি দল বিএনপি ও আ’লীগের প্রার্থী কে হচ্ছেন, তা এখনো নিশ্চিত নয়। নানা মহলে এ নিয়ে চলছে চুলচেরা বিশ্লেষণ।

জানা গেছে, ২০১৩ সালের ১৫ জুন খুলনা সিটি কর্পোরেশনের সর্বশেষ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। হিসেব অনুযায়ী আগামী বছরের ১৫ জুন পাঁচ বছরের মেয়াদ শেষ হবে। ফলে কর্পোরেশনের পরবর্তী নির্বাচন ২০১৮ সালের প্রথম দিকে হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এ অবস্থায় এ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে এরই মধ্যে নগরীতে সম্ভাব্য প্রার্থীদের বেশ তোড়জোড় শুরু হয়েছে। নগরীতে পোস্টার, ফেস্টুন ও ব্যানারে ভরে গেছে। এছাড়া বিভিন্ন মহলে প্রার্থীরা শুভেচ্ছা ও মতবিনিময় করছেন। পাশাপাশি মনোনয়নের প্রত্যাশায় তারা কেন্দ্রে যোগাযোগও বাড়িয়েছেন। অন্যদিকে শক্তিশালী দু’টি দল বিএনপি ও আ’লীগের প্রার্থী নিয়ে নগরীর বাসিন্দা মধ্যে নানা জল্পনা-কল্পনা এবং চুলচেড়া বিশ্লেষণ শুরু হয়েছে।

দলীয় সূত্রে জানা গেছে, কেসিসি নির্বাচনের পরের বছর ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি তালুকদার আব্দুল খালেক বাগেরহাট-৩ আসনের সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। তাঁর জন-প্রতিনিধিত্ব এখন রামপাল-মংলা কেন্দ্রীক হওয়ায় কেসিসি’র ময়র প্রার্থী হিসেবে নতুন মুখ আসার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। সে হিসেবে সম্ভাব্য মেয়র প্রার্থীর তালিকায় নাম এসেছে চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি কাজি আমিনুল হক, যুবলীগের মহানগর সভাপতি এডভোকেট সরদার আনিছুর রহমান পপলু, খুলনা সদর থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি এডভোকেট সাইফুল ইসলাম, সোনাডাঙ্গা থানা সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান বুলু বিশ্বাস ও সাবেক ভারপ্রাপ্ত মেয়র আজমল আহমেদ তপন। তবে মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি ও কেসিসি’র সাবেক মেয়র তালুকদার আবদুল খালেক আগামী নির্বাচনে মেয়র প্রার্থী হলে পাল্টে যেতে পারে প্রার্থী মনোনয়নের হিসাব নিকাশ। এ অবস্থায় কে হতে পারেন বর্তমান ক্ষমতাসীন দলের প্রার্থী তা নিয়ে ধোয়াশার সৃষ্টি হয়েছে।

অন্যদিকে বিএনপি’র দলীয় মনোনয়নে নির্বাচিত মেয়র ও মহানগর বিএনপি’র সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান ফের প্রার্থী হয়ার সম্ভাবনা থাকা সত্ত্বেও একই দলের ব্যানারে নতুন প্রার্থীর উত্থান ঘটেছে। খুলনা জেলা বিএনপি’র সভাপতি এডভোকেট এস এম শফিকুল আলম মনা এবার মেয়র প্রার্থী হিসেবে জোরে সোরে প্রচার-প্রচারণায় নেমেছেন। তিনি ২০১৪ সালের নির্বাচনেও মেয়র প্রার্থী হিসেবে দলীয় মনোনয়ন চেয়ে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছিলেন। তবে দলীয় সিদ্ধান্তের কারণে সেটি প্রত্যাহার করেছিলেন তিনি। ইতোমধ্যে তার পক্ষে মেয়র প্রার্থী হিসেবে পোস্টার ও ব্যানারের মাধ্যমে নগরবাসীর কাছে দোয়া চেয়েছেন সমর্থকরা। প্যানেল মেয়র ও নগর বিএনপি’র স্বাস্থ্যসেবা বিষয়ক সম্পাদক (বর্তমানে পদটি স্থগিত) আনিছুর রহমান বিশ্বাষও আগামী নির্বাচনে মনোনয়ন প্রত্যাশী। ফলে এ দলের প্রার্থী নিয়েও রয়েছে ধ্রুম জাল।

এদিকে সদ্য যোগদানকারী মুশফিকুর রহমানকে মেয়র প্রার্থী হিসেবে ঘোষণা দেন জাতীয় পার্টির (জাপা) চেয়ারম্যান সাবেক রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ। গত ১৪ মার্চ খুলনা সার্কিট হাউসে কেক কেটে নির্বাচনী কার্যক্রম আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করা হয়।

অপর দিকে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মেয়র প্রার্থী মহানগর সভাপতি মাওলানা মুজ্জাম্মিল হক কাসেমী। গত ৬ এপ্রিল নগরীর বাবরী চত্বরের সমাবেশে তারসহ কাউন্সিলর প্রার্থীদের নাম ঘোষণা করেন ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের আমীর মুফতী সৈয়দ মুহাম্মদ রেজাউল করীম (চরমোনাই পীর)। ফলে এ দুই দলে একক প্রার্থী ঘোষণা হয়ায় তারা আগাম প্রচার-প্রচারণা নেমেছেন।

খুলনা মহানগর বিএনপি’র সভাপতি ও সাবেক সংসদ সদস্য নজরুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, এখন দল গঠনের সময়। নির্বাচনের এখনও বহু সময় বাকি। তাই দলের দিকে তাকিয়ে সবাইকে চলা উচিত। দলই প্রার্থী চূড়ান্ত করবে এবং তিনিই পাবেন ধানের শীষ প্রতীক।

খুলনা মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাবেক মেয়র তালুকদার আব্দুল খালেক এমপি বলেন, দলের প্রার্থী অনেকেই হতে পারেন, এটা স্বাভাবিক বিষয়। কিন্তু আ’লীগের মেয়র প্রার্থী নির্বাচন করবেন দলের সভাপতি শেখ হাসিনা। কারণ সংসদ নির্বাচনের আগেই মেয়র নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। তাই গুরুত্বের সাথে প্রার্থী চূড়ান্ত করবেন তিনি। এছাড়া নির্বাচনে আ’লীগের প্রতীক থাকবে নৌকা। তাই এবার বিরোধীতা করা কারও সাহস বা সুযোগ থাকবে না।

উল্লেখ্য, ২০১৩ সালের ১৫ জুন অনুষ্ঠিত কেসিসি নির্বাচনে বিএনপি সমর্থিত ঐক্যবদ্ধ নাগরিক ফোরামের প্রার্থী মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান (আনারস) এক লাখ ৮১ হাজার ২৬৫ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হন। নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী আওয়ামী লীগ সমর্থিত সম্মিলিত নাগরিক কমিটির প্রার্থী তালুকদার আব্দুল খালেক পেয়েছিলেন এক লাখ ২০ হাজার ৫৮ ভোট। ১৬ লক্ষাধিক মানুষের বসতি মহানগরীর ভোটার ছিল ৪ লাখ ৪০ হাজার ৫৬৬ জন। তবে আসন্ন নির্বাচনে বাড়বে ভোটার।

অনলাইন আপডেট

আর্কাইভ