মঙ্গলবার ১৬ এপ্রিল ২০২৪
Online Edition

নিজ বাসায় মা ছেলের লাশ

স্টাফ রিপোর্টার : রাজধানীর কাকরাইলের নিজ বাসায় মা-ছেলে খুন হয়েছেন। গতকাল বুধবার সন্ধ্যায় নিজেদের ফ্ল্যাটে খুন হন তারা। নিজ ফ্ল্যাটের সামনের বারান্দায় ছেলে ও ঘরের ভেতর মায়ের লাশ পড়ে ছিল। ওই বাড়ির দারোয়ান পুলিশে খবর দিলে সাতটার দিকে পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছায়।

কাকরাইলের রাজমণি-ঈশা খাঁ হোটেলের বিপরীত পাশের গলির ৬ তলা একটি ভবনের ৫ তলায় থাকতেন তারা। ভিআইপি রোডের ৭৯/১, মায়াকানন নামের এই বাসায় ঘটনার সময় কাজের মেয়ে ছিলেন।

মায়ের নাম শামসুন্নাহার ও ছেলের নাম শাওন। মা গৃহিণী। আর ছেলে সম্প্রতি ‘ও’ লেভেল পরীক্ষা দিয়েছেন বলে ভবনের অন্যান্য ফ্ল্যাটের বাসিন্দারা জানিয়েছেন। পুলিশ বলছে লাশ উদ্ধারের সময় তারা দেখেছেন মায়ের গলাকাটা ছিল আর ছেলের শরীর ছিল রক্তাক্ত।

বাড়ির মালিক ও গৃহকর্তা আবদুল করিম তখন বাসার বাইরে ছিলেন। তার শ্যামপুরে ব্যবসা আছে।

বাসার কাজের মেয়ে বলেন, সন্ধ্যায় তিনি ফ্ল্যাটে ঢোকেন। এ সময় শামসুন্নাহার দরজা খুলে দেন। ঘটনার সময় তিনি রান্না ঘরে ছিলেন। কেউ একজন এসে বাইরে থেকে রান্না ঘরের দরজা লাগিয়ে দেয়। এরপর তিনি ‘ম্যাডাম’ শামসুন্নাহারের বাঁচাও বাঁচাও বলে চিৎকার শুনতে পান। কাজের মেয়ে বলেন, বাসার দারোয়ান এসে রান্না ঘরের দরজা খুলে দিলে সে সেখান থেকে বের হন।

বাসার দারোয়ান জানান, সিঁড়ি দিয়ে এক ব্যক্তি নিচে নামার সময় তাকে বলেছেন, গিয়ে দেখেন ৫ তলায় কোনো ঝামেলা হচ্ছে। তিনি ৫ তলায় গিয়ে দেখেন ফ্ল্যাটের ভেতরে দু’জনের লাশ পড়ে আছে।

পুলিশের কর্মকর্তারা বলছেন, ঘটনা সম্পর্কে জানতে বাসার দারোয়ান ও কাজের মেয়েকে থানায় নেয়া হয়েছে। পুলিশের আশা শিগগিরই এই হত্যার পেছনে কারা তা উদঘাটন হবে।

ঘটনাস্থলে স্থানীয়রা জানান, তারা খবর পেয়ে এসে দেখেন ফ্ল্যাটের ভেতরে মায়ের গলাকাটা লাশ পড়ে আছে। ২০/২২ বছর বয়সী ছেলের লাশ পড়ে রয়েছে ওই ভবনের সিঁড়িতে রক্তাক্ত অবস্থায়। ওই বাড়িতে মা-ছেলে খুন হওয়ার খবর শুনে রমনা থানা পুলিশের পাশাপাশি র‌্যাবও সেখানে গেছে। নিহত যুবকের নাম শাওন বলে জানিয়েছেন পাশের ভবনের এক বাসিন্দা। শাওনের বাবা আব্দুল করিম ওই ভবনের মালিক বলেও জানান এই প্রতিবেশী। তিনি বলেন, করিম ‘সিনেমার ব্যবসা’ করেন। শাওন, তার মা শামসুন্নাহার ছাড়াও তখন ঘরে ছিলেন গৃহকর্মী রাশিদা।

রাশিদা সাংবাদিকদের বলেন, তিনি রান্নাঘরে কাজ করছিলেন। হঠাৎ কেউ রান্নাঘরের দরজা বাইরে থেকে বন্ধ করে দেয়। “চিৎকার করে বলেছিলাম, আম্মা দরজা বন্ধ করলেন কেন, দরজা খোলেন। কিন্তু কারও কোনো সাড়া পাইনি, দরজাও কেউ খোলেনি। এর মধ্যে চিৎকার শুনি। কিছুক্ষণ পর বাড়ির দারোয়ান এসে ছিটকিনি খুলে দেয়।”

দারোয়ান পুলিশকে জানিয়েছেন, ওপর থেকে একজন লোক নিচে এসে বলে, ‘ওপরে যান, সেখানে মারামারি লাগছে’। তখন দারোয়ান উপরে উঠে পাঁচ তলার সিঁড়িতে শাওনের লাশ ও ভেতরে শামসুন্নাহারের লাশ দেখতে পান।

ভবনের নিচ তলার একটি অফিসের কর্মচারী স্বপন বলেন, “আমরা নিচেই কাজ করছিলাম। কোনো ধরনের হৈ-হুল্লোড় শুনিনি। শুধু দারোয়ান বলেছিল, উপরে মারামারি লাগছে।”

সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে সেখানে লাশ উদ্ধারের প্রস্তুতি শুরু হয়। এরপর তাদের দু‘জনের লাশ ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল মর্গে নিয়ে যায় পুলিশ। খবর পেয়ে সিআইডির ক্রাইম সিন ইউনিটের সদস্যরা ঘটনাস্থলে গিয়ে হত্যাকান্ডের আলামত সংগ্রহ করেন।

ডিএমপির রমনা বিভাগের অতিরিক্ত কমিশনার নাবিদ কামাল গত রাতে বলেন, “কীভাবে ঘটনা ঘটেছে, আমরা তদন্ত করছি।” দুর্বৃত্তরা কীভাবে ঢুকেছে- জানতে চাইলে তিনি দারোয়ানের দেয়া বক্তব্যই বলেন।

ঢাকা মহানগর পুলিশের যুগ্ম কমিশনার কৃষ্ণপদ রায় গত রাতে এ রিপোর্ট লেখার সময় ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিলেন। তিনি তাৎক্ষণিকভাবে সাংবাদিকদের জানান, প্রাথমিকভাবে ঘটনাটিকে ডাকাতি বলে মনে হচ্ছে না। কারণ বাসার সবকিছু স্বাভাবিক রয়েছে। পারিবারিক বা অন্য কোনো বিরোধে এই হত্যাকান্ড হয়ে থাকতে পারে বলে ধারণা পুলিশের। ঘটনার সময় শাওনের বাবা আবদুল করিম বাসায় ছিলেন না। তিনি ব্যবসায়িক কাজে বাইরে বলে জানা গেছে। শাওনরা তিন ভাই। বাকি দুই ভাই লন্ডনে থাকেন।

ওই বাসার গৃহকর্মী রাশিদা বেগমের বরাত দিয়ে তিনি বলেন, মাগরিবের নামাজের আগে তিনি (গৃহকর্মী) ওই বাসায় কাজে যান। রান্নাঘরে বেসিনের নিচে বসে তিনি থালাবাসন পরিষ্কার করছিলেন। এ সময় হঠাৎ কেউ রান্নাঘরের দরজা বন্ধ করে দেয়। এ সময় তিনি বাসার ভেতর থেকে ‘মাগো’ শব্দ শুনতে পান। অনেকক্ষণ পরে তার ডাক-চিৎকারে দারোয়ান এসে দরজা খুলে দিলে তিনি এই ঘটনা দেখতে পান।

ওই ভবনের নিচতলায় প্রাইম এক্সেসরিজ নামে একটি কোম্পানির অফিস রয়েছে। সেই অফিসের কর্মচারীরা জানান, চার তলার সিঁড়িতে শাওনের লাশ পাওয়া গেছে। আর তার মায়ের লাশ পাওয়া গেছে জায়নামাযে।

অনলাইন আপডেট

আর্কাইভ