বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪
Online Edition

‘সংলাপ’ যেন ‘বিচার মানি তবে তালগাছ আমার’ মার্কা না হয়

দেশের ভবিষ্যৎ রাজনীতি কোন দিকে যাচ্ছে! বর্তমান জনগণের মাঝে সে ধরনের আশংকা এবং উদ্বেগ দিনে দিনে বেড়েই চলেছে। কেউ কোন কিছু বলতে পারছে না। যেভাবে চতুর্দিক থেকে ষড়যন্ত্র মাথা তুলে দাঁড়াচ্ছে তাতে মনে হচ্ছে দেশ আবারও গভীর সংকটের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে।  বিশেষ করে রাজনৈতিক সংলাপ নিয়ে বেশ সরব আলোচনা চলছে দেশের রাজনীতি অঙ্গনে। ইতোমধ্যে ২০১৯ সালের নির্বাচন নিয়ে বেশ কয়েকটি রাজনীতি দলের সাথে সংলাপ অনুষ্ঠিত হয়ে গেলো। একমাত্র জামায়াতে ইসলামীকে বাদ দিয়ে আর সব ছোট-বড় দলগুলোকে নিয়ে বিভিন্ন প্রতিনিধি দলের নেতৃবৃন্দের সাথে নির্বাচন কমিশনার সংলাপ হয়েছে। এতে প্রধান দু’দল আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে সরকার দল এবং বিএনপি’র নেতৃত্বে প্রতিনিধি দলের সঙ্গে সংলাপ হয়ে গেলো এবং তাদের স্ব-স্ব অবস্থান থেকে দাবিনামা পেশ করা হয়েছে।
এতে দু’দলের অবস্থান পুন:ব্যক্ত করেছে তাদের দাবির স্ব-পক্ষে। অর্থাৎ সরকারী দল চায় বর্তমান সাংবিধানিক পদ্ধতিতেই অর্থাৎ শেখ হাসিনার অধীনেই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে হবে। অপর পক্ষে বিএনপি চায় নিরপেক্ষ সহায়ক সরকারের অধীনে নির্র্বাচন অনুষ্ঠানের দাবি। কেউ কাউকে ছাড় দিতে রাজি নয়। এ নিয়ে সারা দেশে টান টান উত্তেজনা চলছে নির্বাচন প্রসঙ্গে।
মজার ব্যাপার হলো, গত কয়েকদিন আগে প্রধান নির্বাচন কমিশনার এক আলোচনায় শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানকে নিয়ে মন্তব্য করতে গিয়ে বলেছিলেন শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান ছিলেন বহুদলীয় গণতন্ত্রের পুন:প্রবর্তক।
বিশেষ করে স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে দেশ যখন সাম্রাজ্যবাদী গোষ্ঠীর খপ্পরে পড়ে এক দলীয় শাসনের যাঁতাপিষ্টে দেশ ভয়ংকর পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছিল, সেই সর্বনাশ রাজনীতির কবল থেকে উদ্ধার করে জিয়াউর রহমানই দেশকে গণতন্ত্রের উদার রাজনীতির পরিবেশ সৃষ্টিতে মুখ্য ভূমিকা নিয়েছিলেন এবং বর্তমান সরকারী দল আওয়ামীলীগকেও রাজনীতির সুশীল গণতান্ত্রিক পরিবেশে আসার সুযোগ সৃষ্টি করে দিয়েছিলেন।
এমন বক্তব্য রাখার পর আওয়ামী ঘরানার নেতৃবৃন্দের হঠাৎ করে যেন কালা জ্বরে ধরেছিল। ঝটপট সিইসি প্রধানের বিরুদ্ধে বিষোদগার করে তীব্র কটাক্ষ করলেন আওয়ামী লীগের চমক সৃষ্টি করা সেতু মন্ত্রী এবং দলীয় সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের সহ আরো অনেকে। বুৎপত্তি সম্পন্ন সিইসি প্রধান সহসাই অন্য একটি আওয়ামী প্রোগ্রামে বোল পাল্টিয়ে বাংলাদেশের স্বাধীনতার স্থপতি শেখ মুজিবুর রহমান সম্পর্কে উচ্ছ্বসিত প্রশংসা করে নিজের পদের পক্ষে অবস্থান কে সংহত করে দিলেন এবং সরকারী দলের নেতৃবৃন্দের দেমাগ শরীফকে কিছুটা হলেও শান্ত করে দিলেন।
কেননা, ডিজিটাল মন্ত্রীদের দেমাগ বিগড়ে গেলে সিইসি’র মাথায় ঘোল ঢালতেও বেশী সময় নিবে না। তাই সাধু সাবধান! নিজের অজান্তেও যেন বিরোধী পক্ষের কারো প্রশংসা করতে যাওয়া সমীচীন হবে না।
রাজনীতির আকাশে মেঘের ঘনঘটা থেমে নেই। অশনী সংকেত বার বার উঁকি দিচ্ছে। এ দেশকে নিয়ে বিশ্ব মোড়লেরা কোন খেলা খেলছে তা একমাত্র আল্লাহই ভাল জানেন। ভবিষ্যত অনাকাক্সিক্ষত আশংকা এবং ষড়যন্ত্র থেকে আল্লাহ আমাদের হেফাজত করুন। কথা হচ্ছিল রাজনৈতিক সংলাপ নিয়ে। বর্তমান রাজনৈতিক সংলাপগুলো থিতে প্রকৃতির মনে হচ্ছে। কেননা, দেশজুড়ে ভবিষ্যত রাজনীতি নিয়ে মানুষের মনে এমনিতেই নানা ধরনের আশংকা ও উদ্বেগ কাজ করছে, এরিমধ্যে রোহিঙ্গাদের নিয়ে বাড়তি চাপ এদেশকে আরো সংকটের দিকে ধাবিত করছে।
ইউরোপীয় ইউনিয়ন, জাতিসংঘ ও অন্যান্য আরো বহুদেশ মিয়ানমার সরকারকে চাপ দেওয়া সত্ত্বেও কোন সুরাহার দিকে যাচ্ছে না রোহিঙ্গাদের নিয়ে। আবার আমাদের চরম প্রতিবেশী দেশ ভারত ও বন্ধু রাষ্ট্র চীন রোহিঙ্গাদের প্রসঙ্গে নির্লিপ্ত ভাবেই রয়েছেন কোন ধরনের পদক্ষেপ না নিয়েই। রাজনীতির এমন সব ধূম্রজাল বাংলাদেশকে নিয়ে কোন অবস্থানে যেতে চায় তা এ দেশের জনগণের কাছে স্পষ্ট নয়।
এদেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতিকে ঘোলাটে করার জন্য বিদেশি গোয়েন্দা সংস্থার অপতৎপরতা বিদ্যমান বলে কোন কোন জাতীয় দৈনিক সূত্রে আশংকা ব্যক্ত করেছে। বিশেষ করে রোহিঙ্গা ইস্যুকে কেন্দ্র করে সন্ত্রাসবাদীতার প্রশ্রয় দেয়ার বিষয়টিকে উৎকন্ঠার সাথে দেখা হচ্ছে। ফিলিস্তিনীদের মত আরেকটি উত্তপ্ত স্পট করা যায় কিনা এ বিষয়ে সাম্রাজ্যবাদীদের একটি পক্ষ গোপনে অগ্রসর হচ্ছে বলে রাজনীতি বোদ্ধারা আশংকা প্রকাশ করছেন।
অতএব, এ বিষয়ে অবশ্যই দেশের জনগণকে এখন থেকেই সজাগ ও সচেতন থাকতে হবে। নতুবা ভারত-ইসরাইলী নী নকশার ফাঁদে পড়ে স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব হুমকীর সম্মুখীন যাতে না হয়, তা এখন থেকেই জনগণের সচেতন দৃষ্টি থাকতে হবে। ’৪৭ পরবর্তী সমস্ত হিসেব নিকেষ কোন ফাঁদে আটকে এদেশের সার্বভৌমত্বকে চ্যালেঞ্জ করে বসে ষড়যন্ত্রকারীরা। তা অবশ্যই দূরদর্শী চিন্তা চেতনায় অগ্রসর হতে হবে এ দেশের রাজনীতিবিদদেরকে।
যাই হোক, বর্তমান সিইসি কে এম নুরুল হুদা অবশ্য জোর দিয়ে বলছেন, তিনি একটি সব দলের অংশগ্রহণের মাধ্যমে যাতে সুষ্ঠু নির্বাচন হয়, সে বিষয়ে আন্তরিক প্রচেষ্টা চালাবেন এবং সরকারের কোন চাপ ও প্রভাবের শিকার হবেন না, এমনটাই আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন। সেহেতু সুষ্ঠু নির্বাচনের লক্ষ্যে যা যা করণীয় তিনি তাই করবেন। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে, ২০০৮ সাল এবং ২০১৪ সালে ৫ই জানুয়ারীর নির্বাচন দেখে জনগণ আর আস্থা রাখতে পারছেন না যে সুষ্ঠু নির্বাচন হবে বলে।
বিশেষ করে বর্তমান সরকার ক্ষমতাসীন অবস্থায়। তাই সব বিরোধীদলের বক্তব্য হচ্ছে সরকারকে অবশ্যই পদত্যাগ করে নিরপেক্ষ সহায়ক সরকারের মাধ্যমে নির্বাচন করতে হবে নির্বাচন কমিশনকে। যা শুধুমাত্র নির্বাচন কমিশন প্রভাব মুক্ত হয়ে নির্বাচন পরিচালনা যদি করতে পারে। নতুবা এ দেশের গণতন্ত্রের ভবিষ্যতে অপমৃত্যু ছাড়া আর কোন উপায় থাকবে না। তাই সংলাপে সিইসি সেই লক্ষ্যে যদি অটল থাকেন তবেই গণতান্ত্রিক উত্তরণে ‘সংলাপ’ কার্যকরী হবে। নইলে সিইসি’র ‘সংলাপ’ বিচার মানি, তবে তালগাছ আমার’-মার্কা পদ্ধতিতেই সংলাপের অর্থ দাঁড়াবে বলে জনগণ মনে করছে।
তাই সিইসি মহোদয়ের নিকট জনগণের প্রত্যাশা নীতিগত অবস্থানে থেকে সুষ্ঠু নির্বাচনের লক্ষ্যে এবং সব দলের অংশ গ্রহণ নিশ্চিত করার লক্ষ্যে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকার মাধ্যমে দেশের জনগণের ভালবাসা অর্জনের পথকে সুগম করুন।
-আবু মালিহা, সাংবাদিক ও কলামিষ্ট

অনলাইন আপডেট

আর্কাইভ