বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪
Online Edition

রোহিঙ্গা ইস্যুতে বাংলাদেশের স্বার্থ না দেখে সরকার মিয়ানমারের কাছে বিক্রি হয়ে গেছে -মির্জা ফখরুল

আইডিইবি মিলনায়তনে গতকাল রোববার বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানের জন্মদিন উপলক্ষে জাতীয়তাবাদী স্বেচ্ছাসেবক দল আয়োজিত আলোচনা সভায় বক্তব্য রাখেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর -সংগ্রাম

স্টাফ রিপোর্টার : রোহিঙ্গা ইস্যুতে বাংলাদেশের স্বার্থ না দেখে সরকার মিয়ানমারের কাছে বিক্রি হয়ে গেছে বলে অভিযোগ করেছে বিএনপি। গতকাল রোববার সন্ধ্যায় এক আলোচনা সভায় রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবর্তনে মিয়ানমারের সাথে সম্পাদিত সমঝোতার চুক্তির ওপর প্রতিক্রিয়ায় বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এই অভিযোগ করেন। তিনি বলেন, কী এমন কম্পালশন হলো যে, আপনি আপনার বাংলাদেশের স্বার্থটাকে বুঝে না নিয়ে মিয়ানমারের স্বার্থের কাছে নিজেকে বিক্রি করে দিলেন। চাপটা কোথায় হলো? আসল ঘটনাটা কোথায়? জাতির সামনে বলা উচিৎ। আমি অত্যন্ত দুঃখের সঙ্গে, লজ্জ্বার সঙ্গে আমাদের বলতে হয় এই সরকারের কোনো রকমের যে আত্ম সন্মানবোধ, সেই আত্ম সন্মানবোধ পর্যন্ত নেই।
কাকরাইলে ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স ইন্সটিটিউশন মিলনায়তনে জাতীয়তাবাদী স্বেচ্ছাসেবক দলের উদ্যোগে বিএনপির জ্যেষ্ঠ ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানের ৫৩তম জন্মদিন উপলক্ষে এই আলোচনা সভা হয়। আলোচনা সভার পর জন্মদিন উপলক্ষে চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতায় বিজয়ী শিশুদের
মধ্যে পুরস্কার বিতরণ করেন বিএনপি মহাসচিব। গত ২০ নবেম্বর ছিলো তারেকের ৫৩তম জন্মদিন ছিল।
সংগঠনের সভাপতি শফিউল বারী বাবু‘র সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক আব্দুল কাদের ভুঁইয়া জুয়েলের পরিচালনায় আলোচনা সভায় বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শওকত মাহমুদ, যুগ্ম মহাসচিব হাবিব উন নবী খান সোহেল, স্বেচ্ছাসেবক বিষয়ক সম্পাদক মীর সরফত আলী সপু, স্বেচ্ছাসেবক দলের কেন্দ্রীয় নেতা মোস্তাফিজুর রহমান, গোলাম সারোয়ার, ইয়াসীন আলী, সাইফুল ইসলাম ফিরোজ, সাদরেজ জামান, মহানগর দক্ষিণের এস এম জিলানী, রফিক হাওলাদার, উত্তরের ফখরুল ইসলাম রবিন, রেজাউল হোসেন রিয়াজ প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।
গত সপ্তাহের শেষে মিয়ানমারে পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন নিয়ে একটি সম্মতিপত্রে সই করেছে। ওই চুক্তি অনুযায়ী, ১৯৯২ সালে দুই দেশের মধ্যে স্বাক্ষরিত যৌথ ঘোষণার আলোকে ২০১৬ সালের অক্টোবর থেকে বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া নিজ দেশের অধিবাসীদের ফেরত নেবে মিয়ানমার। রাখাইনে দীর্ঘদিন ধরে জাতিগত নিপীড়নের শিকার হয়ে বিভিন্ন সময়ে ১০ লাখের বেশি রোহিঙ্গা বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে।
গতকাল রোববার ‘রাষ্ট্রদূত সম্মেলন’ এ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দেয়া বক্তব্যের প্রসঙ্গ টেনে বিএনপি মহাসচিব বলেন, আজকে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন যে, এতো বড় কূটনৈতিক অর্জন নাকী আর কখনো হয়নি। একে (সমঝোতা চুক্তি) আপনি বলছেন, সবচেয়ে বড় কূটনৈতিক অর্জন করেছেন। তিনি বলেন, কূটনৈতিক অর্জনটা কী? মিয়ানমারের সাথে চুক্তি হয়েছে একটা। সেই সমঝোতা চুক্তিতে (চুক্তির অংশ বিশেষ পড়ে) আপনি (সরকার) স্বীকার করে নিচ্ছেন, মিয়ানমার যে দাবি করছে যে, ট্যারোরিস্ট অ্যাটাক হয়েছে বলে তাদেরকে তাঁড়িয়ে দেয়া হয়েছে, তাদেরকে বিলং করা হয়েছে, ট্যারোরিস্ট অ্যাটাক হয়েছে বলেই তাদেরকে গণহত্যা করা হয়েছে। একবারের জন্য আপনি এখানে (চুক্তিতে) বলেননি গণহত্যা হয়েছে, একবারের জন্য আপনি এখানে (চুক্তিতে) বলেননি যে তাদের এথননিক কিনসিং হচ্ছে, তাদেরকে জাতিগতভাবে নিধন করা হচ্ছে। তিনি বলেন, মেনে নিয়েছেন যা যা বলেছে মিয়ানমার, তাই তাই মেনে নিয়েছেন। এর মধ্যে পুরো চুক্তিটা পড়লে দেখবেন পুরো বিষয়টা তাই।
মিয়ানমারের সাথে সমঝোতা চুক্তি নিয়ে প্রশ্ন তুলে তিনি বলেন,গতকালই জাতিসংঘের ই্উএনএইচসিআর এর প্রধান বলেছেন যে, এই চুক্তি অত্যন্ত উদ্বেগজনক। এরা (রোহিঙ্গারা) কোথায় যাবে, কোথায় গিয়ে বাস করবে। তাদের ঘর নেই, বাড়ি নেই, সব পুঁড়িয়ে ফেলা হয়েছে, তাদের খাওয়ার কোনো সংস্থান নেই, বাঁচার কোনো সংস্থান নেই। তিনি বলেন, তাদের কোথায় কার কাছে নিচ্ছেন। বাঘের কাছ থেকে তারা প্রাণভয়ে এসেছে সেই বাঘের মুখে আপনি তাদেরকে দিয়ে দিচ্ছেন। আর আপনাকে আপনার দলের লোকেরা মাদার অব হিউমেনিটি বলে ঘোষণা দিচ্ছেন। এই যে ধোঁকাবাজী রাজনীতি চলছে।
১৯৭৮ সালে রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান ও ১৯৯২ সালে প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার আমলে রাখাইন থেকে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গোদের প্রত্যাবর্তন দ্রুততার সাথে করেছিলেন বলে দাবি করেন মির্জা ফখরুল। আগামী নির্বাচন আওয়ামী লীগ নয়, নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে হতে হবে বলে দাবি করেছেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
তিনি বলেন, এই সরকারকে কেউ বিশ্বাস করে না। আপনারা ক্ষমতায় এসেছেন বিনাভোটে। ২০১৪ সালের যে নির্বাচনের নাটক হয়েছিলো সেখানে ১৫৪টা বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত ঘোষণা করেছেন। সরকার তো সেইদিন করেছেন। ভোটে ৫% জনগণও ভোট দিতে যায়নি। তাহলে সরকার জনগণের নয়, আওয়ামী লীগের। তিনি বলেন, আমাদের স্পষ্ট কথা, আওয়ামী লীগের অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচন হতে পারে না। এটাকে একটা জনগণের নিরপেক্ষ সরকার তৈরি করতে হবে। সেই সরকারের অধীনে নির্বাচন হবে। সেই নির্বাচনে বাংলাদেশের জনগণ প্রকৃত প্রতিনিধিদের বেঁছে নিয়ে একটা প্রতিনিধিত্বমূলক সংসদ গঠন করবে। সেটা সকলে কাছে গ্রহণযোগ্য হবে, সবার অংশগ্রহণে হবে।
‘সংবিধানের দোহাই’ দিয়ে কোনো লাভ হবে না উল্লেখ করে মির্জা ফখরুল বলেন, সরকারকে বলতে চাই, এই ‘বো বো’ করে লাভ হবে না। সময় আপনাদের শেষ, এখন পরকালের চিন্তা করুন। তিনি বলেন, আমরা খুব পরিষ্কার করে বলেছি দেশনেত্রী বলেছেন, আমরা এদেশে শান্তির রাজনীতি চাই, হিংসা নয়, প্রতিহিংসা নয়, আমরা রিকসিলেশনের রাজনীতি চাই। সেই দিকে আসুন, আলাপ-আলোচনা করুন, সমঝোতা করুন। একটা সুষ্ঠু-নিরপেক্ষ-গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের দিকে যান। এলোমেলো করে আর ঘুরে লাভ হবে না। এটা বৃথা।
 প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার পদত্যাগের পরও প্রধান বিচারপতি পদে কাউকে নিয়োগ না করায় সাংবিধানিক সংকট তৈরি করছেন বলে উল্লেখ করেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেন, প্রধান বিচারপতিকে (সুরেন্দ্র কুমার সিনহা) দেশ থেকে বের করে দিলেন। সম্পূর্ণ বেআইনিভাবে অযৌক্তিকভাবে, অন্যায়ভাবে সাংবিধানিক সংকট তৈরি করেছেন। এখন প্রধান বিচারপতি দেশে নেই। যাকে দায়িত্ব দিয়ে রেখেছেন তিনি কিন্তু বাংলাদেশের প্রধান বিচারপতি নন। তিনি বলেন, সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতা হচ্ছে, কোনো কারণে যদি প্রধান বিচারপতি যদি দায়িত্ব করতে না পারেন অথবা পদত্যাগ করেন তাহলে সাথে সাথে প্রধান বিচারপতিকে নিয়োগ করতে হবে। সেটা আপনারা করেননি। তিনি বলেন, আজকে সরকার অর্থনীতিতে সংকট সৃষ্টি করেছেন। দেশের অর্থনীতি আজকে তাসের ঘরের মতো, একটা ফলস ফাউন্ডেশনের ওপর দাঁড় করিয়েছে মিথ্যা কথা বলে। বলে এখানে (বাংলাদেশে) সাংঘাতিক রকম উন্নয়ন হচ্ছে, উন্নয়নের রোল মডেল। রোল মডেলের অবস্থা এমন যে প্রতিদিন খবরের কাগজে দেখবেন ব্যাংকগুলো কাহিল হয়ে পড়েছে। তিনি বলেন, যেকোনোদিন ব্যাংকিং ব্যবস্থা ফেল করবে, কলাপস করবে। ব্যাংকগুলো ফোকলা করে ফেলা হয়েছে। উন্নয়নের নামে ‘মেগা প্রকল্পের নামে মেগা লুট’ করছে বলেও অভিযোগ করেন মির্জা ফখরুল।

অনলাইন আপডেট

আর্কাইভ