শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪
Online Edition

১৬৮টি সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় জরাজীর্ণঃ শিক্ষা কার্যক্রম ব্যাহত

জামালপুরে রেলওয়ে সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের জরাজীর্ণ ভবনে পাঠদান চলছে -সংগ্রাম

জামালপুুর জেলার সাতটি উপজেলার ১৬৮টি সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের জরাজীর্ণ ভবনে ঝুঁকি নিয়ে চলছে শিক্ষা কার্যক্রম। এ সব পরিত্যক্ত ভবনে কঁচিকাঁচা শিক্ষার্থীদের নিয়ে শিক্ষকরা চালিয়ে আসছেন শিক্ষাকার্যক্রম। দীর্ঘদিন ধরে ভবনগুলি কোন সংস্কারের উদ্যোগ নেই।
জামালপুর জেলা শিক্ষা অফিস সূত্রে জানা গেছে, জেলার ৭টি উপজেলায় মোট ৫৮৭টি সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মধ্যে জরাজীর্ণ ও পরিত্যক্ত বিদ্যালয়ের ভবন সংখ্যা মোট ১৬৮টি। তারমধ্যে দেওয়ানগঞ্জ উপজেলায় ২৪টি, ইসলামপুর উপজেলায় ২১টি, মাদারগঞ্জ উপজেলায় ৩৭টি , জামালপুর সদর উপজেলায় ৩৩টি, সরিষাবাড়ী উপজেলায় ২৭টি, মেলান্দহ উপজেলায় ৯টি এবং বকশীগঞ্জ উপজেলায় ১৭টি মোট ১৬৮টি বিদ্যালয ভবন অতি জরাজীর্ণ এবং অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ বলে জানান।
সংস্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, গত ৬মাস আগে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর থেকে সারা জেলায় অতি জরাজীর্ণ ভবনগুলোর তালিকা প্রেরণের নির্দেশ দেয়া হয়েছিল। সে অনুযায়ী জামালপুর জেলা থেকে ১৬৮টি বিদ্যালয়ের জরাজীর্ণ এবং পরিত্যক্ত ভবন গুলোর নামের তালিকা, প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের পরিচালক বরাবর প্রেরণ করে। কিন্ত এখন পর্যন্ত এসব ভবন গুলো সংস্কার বা মেরামতের কোন উদ্যোগ নেয়া হয়নি। ফলে জরাজীর্ণ বিদ্যালয় ভবনগুলোর দেয়াল ও ছাদে বড় বড় ফাটল দেখা দিয়েছে। ধসে পড়েছে পলেষ্টার। যে কোন সময় ধসে জীবন বিপন্ন হতে পারে শিক্ষক- শিক্ষার্থীর। শিক্ষার স্বার্থে শিক্ষকরা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে পড়াশোনা চালিয়ে যাচ্ছেন শিশু শিক্ষার্থীদের। এ বিষয়ে জামালপুর জেলার সহকারী প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. আব্দুর রাজ্জাক এর সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি ঘটনার স্বীকার করে বলেন, গত ২৭ এপ্রিল/১৭ প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর  বরাবরে জরাজীর্ণ ও পরিত্যক্ত প্রাথমিক বিদ্যালয় ভবনগুলোর তালিকা প্রেরণ করা হয়েছে। এখনও সেগুলোর সংস্কারের কোন দিকনির্দেশনা আসেনি বলে উল্লেখ করেন।
জামালপুর ২৫ নং রেলওয়ে কলোনি সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়টি সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, বিদ্যালয়টি স্থাপিত হয়েছিল ১৯৫৯ সালে। বর্তমানে পলেস্তারা ধসে পড়েছে। দেখা দিয়েছে বড় বড় ফাটল। বৃষ্টি এলে ছাঁদ চুয়ে পানি পড়ে। একতলা বিশিষ্ট একটি ভবন রয়েছে। ভবনটি একপাশে প্রধান শিক্ষকের কক্ষ রয়েছে। বাকি কক্ষগুলি ক্লাস রুম হিসেবে ব্যবহার করে আসছেন। কিন্ত এ ভবনটি বিগত ৪বছর যাবত দেখা দিয়েছে অসংখ্য ফাটল। ধসে পড়েছে দেয়ালের পলেস্তারা  পানি পড়ছে ছাদ চুইয়ে।
এব্যাপরে রেলওয়ে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়েরে প্রধান শিক্ষিকা শারমিন আহমেদ বলেন, প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা জামালপুর সদর ,    উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান জামালপুরসহ শিক্ষা সংস্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে একাধিকবার বিষয়টি জানানো হয়েছে। কিন্ত প্রশাসনের পক্ষ থেকে ভবন মেরামতের আশ্বাস দিলেও আজ পর্যন্ত তা বাস্তবায়ন করা হয়নি বলে জানান।  এদিকে জামালপুর রেলওয়ে সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী তানজিলা আক্তার, উম্মে ইফসা, সুমি আক্তার, সানিয়া  আক্তারসহ কঁচিকাঁচা শিশু শিক্ষার্থীরা জানায় , তারা জরাজীর্ণ মৃত্যু ফাঁদে পরিণত হয়েছে। তারা ভয় ভীতি উপেক্ষা করে ক্লাসে উপস্থিত হয়ে পড়ালেখা  চালিয়ে যাচ্ছে। সেজন্য বিদ্যালয় ভবনটি দ্রুত মেরামত করে দিতে কর্তৃপক্ষের নিকট দাবী জানিয়েছেন।
অপরদিকে জামালপুর পৌর শহরের ২৭ নং উত্তর  দেউরপাড় চন্দ্রা সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, বিদ্যালয়টির ছাত্র-ছাত্রীর সংখ্যা ১৯০ জন। বিদ্যালয়টির পলেস্তরা ধসে পড়েছে। ছাদে দেখা দিয়েছে বড় বড় ফাটল। অত্যন্ত ঝুঁকি নিয়ে চালিয়ে যাচ্ছেন শিক্ষা কার্যক্রম। এ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা সুলতানা রাজিয়া জানান, গত ১৯৯৯ সালে বিদ্যালয়টি ভবন নির্মাণের পর গত ২০১৫ সালের ২৪ এপ্রিল ভূমিকম্পের ফলে দ্বিতীয় তলার ছাদে ফাটল দেখা দেয়। বর্তমানে সামান্য বৃষ্টি হলে শ্রেণী কক্ষে পানি জমে যায়। অত্যান্ত ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ার কারণে পরিত্যক্ত ঘোষণা করা হলেও বিষয়টি এলজিইডি জামালপুরের নির্বাহী প্রকৌশলী , উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা বরাবর বহু আবেদন করেও অদ্যাবধি কোন কাজ হয়নি। ফলে ২৪ এপ্রিল/১৭ তারিখ জেলা কর্মকর্তা বরাবরে ভবনের ছাঁদ ফাটলের বিষয় ছবি তোলে পুনরায় আবেদন করা হয়েছে। কিন্ত এখন পর্যন্ত কোন সংস্কারের কোন উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়নি বলে জানান।

অনলাইন আপডেট

আর্কাইভ